#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৫
লেখাঃ Mst Liza
,
আমি আধ ঘন্টা পর বাড়িতে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি বাড়ির মেইন দরজাটা খোলা।কোনও সাড়া শব্দ কিচ্ছু নেই।আমার পায়ের শব্দ পেয়ে কেউ একজন এগিয়ে আসলো।দেখি ছোট বোন রেখা।মায়ের রুমের দরজাটা হালকা করে ভিজিয়েই আমাকে দেখে দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে ব্যাগগুলো কেরে নিয়ে,
-আমাদের জন্য কি কি এনেছিস রে ভাইয়া?
-এইতো তোদের জন্য ঈদের কাপড় সর তো!
আমি ওর সাথে কথা বলছি আর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজছি বোরখাওয়ালী গেল কোথায়?
-কি রে ভাইয়া ওভাবে কাকে খুঁজছিস তুই? আর ওইভাবে গা ঝারা দিয়ে কেন কথা বলছিস?
-কোই না তো বাবা-মাকে দেখছি না, বাবা-মা কোথায় রে?
-বাবা এখনও বাড়িতে ফিরে নি।আর মা রুমে আছে সাথে আরিয়া আপুও।
কি ভাবছিস আরিয়া আপু কে? আরে তুই বলতি না আশরাফ মামার একটা মেয়ে ছিল সেই মেয়ে।চল দেখবি আয়।বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে মায়ের রুমে নিয়ে যাই।মা দেখ আবির ভাইয়া এসেছে।
গিয়ে দেখি বিছানায় মায়ের কোলে মাথা রেখে বোরখাওয়ালী শুয়ে আছে আর মায়ের চোখে পানি।আমি যেতেই বোরখাওয়ালী উঠে বসে আমাকে দেখে অবাক!!
-আপনি??
মা, রেখা দুজনেই প্রশ্ন করল কি হলো??
রেখার মুখে ভাইয়া শব্দটা শুনে ও হয়তো বুঝে গেছে আমি আবির!
-এইটা কি তোমার ছেলে ফুপ্পি??
-হ্যাঁ কেন?
-তোমার ছেলেটা খুব পচাঁ ফুপ্পি।আজ সারাটা রাস্তা সেই ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত আমার সাথে আমার পাশের সিটে বসে একই বাসে করে এসেছে।আমি তোমাদের বাড়ির ঠিকানা দেখিয়েছিলাম।আমার নামও বলেছিলাম।বলেছিলাম আমার ফুপ্পির বাড়িতে যাব!কিন্তু আমাকে একবারের জন্যও নিজের পরিচয়টা দিল না।কেন এমন করল?? (একদমে বলল কথাগুলো)
আমি তখন কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না তবুও নিঃশ্বংকোচে বললাম।সরি আরি।আসলে আমি তোমাকে প্রথমে দেখে চিনতে পারছিলাম না।পরে যখন চিনলাম তোমাকে আমি তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।তুমি তো আমাকে কিছুই বল নি।পরিচয় না যেনে কিভাবে..
-আচ্ছা ঠিক আছে।সরি বলার কোনও দরকার নেই।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
মেয়েটা এখনও সেই বোরখা পরেই আছে। চেন্জ করে নি।
-কি হলো মা ওকি এই বোরখা পরেই সারাজীবন থাকবে নাকি?
-আরে কথা বলতে বলতে চেনন্জ করার সময় পাই নি! এখানে আই আমার কাছে বস্ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে?
বসতে বসতে বললাম,
-কি কথা?
-পরসু তো তোর মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা ভুলে গেলি?
আমার মনে পরল হ্যাঁ বাবা-মা তো আমাকে বলেছিল আমার জন্য মেয়ে পছন্দ করে রেখেছে।আর পরসুই তো দেখতে যাওয়ার কথা।কিন্তু আমি তো কখনও ভাবি নি এইভাবে আরির সাথে আমার আবার দেখা হয়ে যাবে।কি করব এখন আমি?
-কিরে কি ভাবছিস?
-মা অপরাধ নিও না, আমি এখন কোনও বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না!
-কেন,,বড় হয়েছিস।ভাল জব করছিস তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়?
-মা আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও তারপর!
-দেখ মেয়েটাকে দেখে আসতে তো সমস্যা নেই! প্রথমে তুই দেখ তারপর নাহয় পছন্দ হলে সেইভাবে পাকা কথাবার্তা বলে সময় নিয়ে পড়ে বিয়ে করিস!
আমি হ্যাঁ না কিছুই বলি নি।মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে এসে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি সোফায় বোরখাওয়ালী বসে আছে।আমি গিয়ে পাশে বসলাম।
-কি হলো এখনও আপনি এই বোরখা পরেই থাকবেন নাকি?
-মানে?
-চেন্জ করবেন না? বাসার মধ্যেও বোরখা পরে থাকবেন?
-সেই তো তুমি করে কথা বলছিলেন এখন আবার আপনি তে ফিরে আসলেন যে??
-এখানে তো আপনার মাহারাম নেই তাই! একান্তে কথা বলতে গিয়ে খারাপ কিছু যেন না ঘটে তাই আরকি!!
-আসলে আমি আসার সময় পরনের কোনও পোষাক সাথে করে আনি নাই।শুধু কিছু টাকা আর এই ঠিকানাটাই ছিল!!
কথাটা শুনে আমি একটু থমকে গেলাম,
,
-আচ্ছা আরি মামি কেমন আছে? আর কি এমন হয়েছিল যার জন্য এইভাবে পালিয়ে আসতে হলো?
-আসলে সেদিন আপনারা খুলনায় চলে আসার পর।কিছু লোক এসে বলেছিল বাবাই তাদের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার নিয়েছে।সুদসমেত ১৫লক্ষ টাকার মতো দাড়ায়। মা সেই সময় কোনও উপায় না খুজেঁ পেয়ে সবকিছু বিক্রি করে তাদের সব পাওনা মিটিয়ে আমাকে নিয়ে খালার বাসায় যায়।খালা মাকে একটা চাকরি যোগার করে দেই আর সেইখানে মা চাকরি করে আমাকে নিয়ে খালার সংসারেই ভালোভাবে এতোবছর ছিল।দুইবছর আগে মা ইন্তেকাল করেন।তারপর খালা আমাকে আর পড়ালেখা করাতে চান নি।কিছুদিন আগে খালা আমার বিয়ে ঠিক করে এক বিশাল ধনী লোকের সাথে।যারা খুব মর্ডাণ।খালা বলে দিয়েছে বিয়ে করলে ওই পরিবারেই করতে হবে।খালা বলেছিল ওই পরিবারে বিয়ে হলে আমি নাকি জীবনটা আরাম, আয়েশে কাটাতে পারব।কিন্তু যখন শুনলাম-বিয়ে, গায়ের হলুদ, বউ ভাতের দিন আমাকে সঙ সেজে স্টেজে বসে থাকতে হবে।আর শহর ভর্তি হাজার হাজার নিমন্ত্রিত পরপুরুষের চোখ পরবে আমার দিকে।তখন আমার মনে হল, এই বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি জাহান্নামে যেতে চাই না!
আমি চাইনা এমন আরাম আয়েশ, চাইনা এমন ধনী বর।আমার তো একজন দ্বীনদার স্বামী চাই।যে আল্লাহর ভয়ে আমাকে ভালোবাসবে।আমাকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে।
ওখানে বিয়ে হলে আমি আল্লাহর পথে ঠিকভাবে চলতে পারতাম না।আমি আল্লাহকে খুব ভয় পাই।আমার তো যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।আপন বলতেও তো আমার আর কেউ ছিল না দুনিয়াতে। দুদিন আগে আমার পুরোনো বাড়িটাতে ঘুরতে গিয়েছিলাম।যেখানে আমার বাবাই আর মায়ের স্মৃতি মিশে আছে।আছে আমার ছোটবেলার সেই সুন্দর দিনগুলো মিশে।ওখানে গিয়েই কথায় কথায় এক বৃদ্ধা মহিলা আমাকে আপনাদের বাড়ির ঠিকানাটা দেই।তারপর আর কিছু ভেবে না পেয়ে, কিছু টাকা আর এই ঠিকানাটা নিয়ে এখানে পালিয়ে চলে আসি।আমি যানি না আমার এভাবে পালিয়ে আসা ঠিক হয়েছে কিনা! আমি এটাও যানি না এখন আমার কি করা উচিৎ।তবে এটোটুকু যানি আমি যা করেছি আল্লাহ সেটা বুঝবে। (কথাগুলো বলতে বলতে আরির ডান চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে নেকাবের উপর পরতে দেখলাম)
ওর কথাগুলো শুনে আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম।ভাবলাম যে রকম জীবনসঙ্গী ও চাই আমি তো তার কিছুই না।ঠিক মতো ৫ ওয়াক্ত নামাজটায় আদায় করা হয় না।কিভাবে ওকে বলব আমি কতটা ভালোবাসি? ওর সাথে সারাটাজীবন কাটাতে চাই!!
কিছুক্ষণ পর,,,
-আচ্ছা আপনি তাহলে এখন কি পরবেন? কাপড় চোপড় কিছুই তো আনেন নি! রেখার সেলোয়ার আপনার গায়ে খাটবে না।আমি কি মাকে একটা শাড়ি দিতে বলব?
-না আমি শাড়ি পড়ব না।শাড়িতে সঠিকভাবে পর্দা রক্ষা হয় না।তার থেকে আমি এভাবেই ঠিক আছি।কোনও অসুবিধা হচ্ছে না আমার!
-আশ্চর্য, এইভাবে বোরখা পরে কতক্ষণ থাকবেন আপনি?
-আমি পারব! সে আপনার চিন্তা করা লাগবে না!
কিছুক্ষণ পর আমি মায়ের রুম থেকে মায়ের বোরখাটা এনে দিলাম,
-নিন গোসল করে এটা পড়ে নিন!
চলবে…..