#বেলা_শেষে- ২
[০২+০৩]
বিছানায় বসে হতের নোখ কামড়াচ্ছি আর ভাবছি ওই হিটলার অভির কথা, কি করে তাকে শায়েস্তা করা যায়। আমাকে কান ধরে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। আমি ছাড়বো না ওই জলহস্তীটাকে। উহঃ পা-টা খুব ব্যথা করছে এখন। পায়ে হাত রেখে দুঃখী মন নিয়ে দুঃখীরামের মতো করে বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পর ভুমিকম্প শুরু হলো। আমার বিছানা কাঁপছে। ভূমিকম্পের সময় নাকি খাটের নিচে অথবা টেবিলের নিচে লুকাতে হয়। তাই আমি বিছানা থেকে নেমে পরলাম খাটের নিচে লুকাবো বলে। তখন খেয়াল করলাম আমার রুম কাঁপছে না আমিও কাঁপছি না। বিছানাটাও ঠিক আছে। চারিদিকে আবলোকন করে নিলাম। কই চারিদিকে সবকিছু তো ঠিকঠাক আছে। তাহলে এতক্ষণ আমি কেন কাঁপছিলাম। তখন আমার দৃষ্টি গিয়ে পরলো বিছানায় পরে থাকা আমার মোবাইলের দিকে। মোবাইলের স্কিলে অর্ণা নামটা জ্বলজ্বল করছে। কর্কশ আওয়াজ করে মাথায় হাত রাখলাম আমি। মোবাইল বাইব্রেট মুডে থাকার কারনে কাঁপছিল আর আমি ভাবছিলাম ভুমিকম্প হচ্ছে। এমন নির্বোধের মতো কান্ড দেখে নিজেই নিজের মাথায় চাপট মারলাম। তারপর বিছানা থেকে মোবাইল তুলে সেটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে অর্ণা বলল,
-আজ একটু আগে কলেজে আসিস তো মিষ্টি।
-কেন রে, আজ আবার কার সাথে দেখা করতে যাবি।
-আমার ছিয়ানব্বই নাম্বার বয়ফ্রেন্ড। ওকে বলেছিলাম ছুটির পর দেখা করবো বাট ও আমার কোন কথাই শুনলো না। বলল ও সকালেই দেখা করবে।
-তুই একা চলে যা আমি কারো সাথে দেখা করতে যেতে পারবো না। জানিস তো তুই ওই হিটলার অভিকে। যদি জানতে পারে না তাহলে সোজা আমার আব্বুর কাছে নালিশ করবে।
-অভিকেও সাথে করে নিয়ে আয়। ইশ কি হ্যান্ডসাম মাইরি। আমি যতবার তাকল দেখি ততবারই ক্রাশ খাই।
-তুই আবার কোন ছেলের উপর ক্রাশ খাসনা বোন। অভি ভাইয়া থেকে শুরু করে কলেজের সিনিয়র ভাই প্লাস কলেজের টিচার্সদের ও বাদ রাখিস না। এমনকি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বখাটে ছেলেদের উপর ও ক্রাশ খেয়ে বসে থাকিস। শুন অর্ণা এখনো সময় আছে ডক্টরের কাছে যা আর নিজের চিকিৎসা করিয়ে নি। বলেই কল কেটে দিলাম আমি। জানি এখন অর্ণা ওপাশে ঝড় তুলবে। তুলুক না তাতে আমার কি। আমি কি কিছু ভুল বলছি নাকি।
সুটকেস থেকে একএক করে সবগুলা জামাকাপড় বের করে নিলাম। কোন ড্রেসটা পরে কলেজে যাব বুঝতে পারছি না। একটা ড্রেসও পছন্দ হচ্ছে না আমার। আম্মুকে বলেছিলাম আমার জামাকাপড় গুছিয়ে দিতে কিন্ত আম্মু যে শুধু থ্রি-পিছ আমার সুটকেসে ভরে দিবে সেটা জানতাম না। মন খরাপ করে একটা করে জামা নিজের গায়ে জড়িয়ে আবার সেটা সুটকেস রেখে দিচ্ছি। তখনি মনে পরলো কালকের কথা। উৎফুল্ল হয়ে মামনির রুমে গেলাম। এবং মামনির কার্বাড থেকে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে আবার আমার রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে শপিং বেগ থেকে একটা ব্ল্যাক কালারের শার্ট বের সেটা মেলে ভালে করে পরখ করে নিলাম। নিজের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার কারনে নিজেই নিজেকে বাহবা দিতে লাগলাম। তারপর সেই শার্ট পরে রেডি হয়ে নিলাম আমি কলেজে যাওয়ার জন্যে।
মামনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি অতি আনন্দের সহিত খাচ্ছি। আর আমার সামনেই বসে খাচ্ছে অভি ভাইয়া। চোখ মুখে তার বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর একটু পর পর আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আসলে মামনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে এটা পছন্দ হচ্ছে না সাহেবের। সে বিরক্তি সহিত নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে। অভি আড় চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো। মামনি তখন তার অধরে হাসি ফুটিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে আমাকে। এটা দেখে ভাইয়া ভাইয়া মনে মনে বলতে লাগলো,
-মাঝে মাঝে মনে হয় আমি এই বাড়ির আশ্রিত কেও। এই মিষ্টির জন্যে -ই সব। ও যখন আমাদের বাড়ি আসে তখন মনে হয় আম্মু আব্বু কেওই আমাকে চিনে না। তারপর ভাইয়ার দৃষ্টি পরে আমার পরনে থাকা শার্টের দিকে। সে ভ্রু কুচকিয়ে তাকায় আমার দিকে। আমি খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে যখন ভাইয়ার দিকে তাকাই তখনই দেখতে পাই ভাইয়া আমার পরনে থাকা শার্টের দিকে তাকিয়ে আছে।সাথে সাথে খাবারটা আমার গলায় আটকিয়ে গেল। গলায় হাত রেখে বসে রইলাম আমি। তখন মামনি আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই ভাইয়া মামনির হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ডগডগ করে পুরো পানি খেয়ে ফেলে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি হাসে। আমি অসহায় ফেস নিয়ে মামনির দিকে তাকাতেই দেখি মামনি গ্লাসে পনি ঢালছে আর বলছে,
-দেখছিস মেয়েটার গলায় খাবার আটকে গেছে। তোর এখনি পানিটা খেতে হলো অভি। তারপর মামনি আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। ভাইয়া সেটাও মামনির হাত থেকে নিয়ে নিলো। মামনি রাগী লুক নিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ভাইয়া বলে উঠলো,
-পাপ করলে শুধু খাবার নয় পানিটাও গলায় আটকে যাবে আম্মু। আর পানি গলায় আটকে গেলে মিষ্টির বেশী কষ্ট হবে। তোমরা তো কেও মিষ্টির কষ্ট সহ্য করতে পারবে না। তাই বলছি ওর পানি খেতে হবে না। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় পানির গ্লাস দেখিয়ে সেটা খেতে লাগলো। এদিকে খাবার গলায় আটকে গিয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। এক হাত দিয়ে গলায় চেপে ধরে ভাইয়ার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ডগডগ করে পুরো পানি খেয়ে নিলাম। এবার মনে হয় নিজের দম ফিরে পেলাম। ভাইয়ার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকাতেই ভাইয়া তার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আপাদত খাওয়ার সময় সে কোন কথা বলতে ইচ্ছুক না। তারউপর এখানে আছে আরাভ আংকেল। তার সামনে তো ভাইয়া এক্কেবারে ভেজা বিড়াল।
খাওয়া শেষ করে ব্যাগটা কাদে ঝুলিয়ে নিলাম। তারপর মামনিকে বলে যখনি চলে আসার জন্যে সামনের দিকে এক পা বড়ালাম তখনি ভাইয়া আমার ঝুটি টেনে ধরলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে আহ শব্দ করলাম। ততক্ষণে ভাইয়া আমার চুল তার হাতে পেচিয়ে নিয়েছে। পিছনে ফিরে তাকাতেও পারছি না আর না সমনের দিকে যেতে পারছি। তখন আরাভ আংকেল ধমকের সুরে বলে উঠলেন,
-এসব কি হচ্ছে অভি। মিষ্টির চুল ছেড়ে দাও। মেয়েটা ব্যথা পাচ্ছে তো।
-দেখ আব্বু এখন তোমরা কেওই ওর হয়ে কোন কথা বলবে না। দেখ আমার পছন্দের শার্টটার কি অবস্থা করেছে। মাত্র এক দিন পরেছি আর এই শার্ট। এটাও চুরি করে নিয়েছে। এই মিষ্টি এই তোর জন্যে কি আমি কোন ড্রেস শান্তিমতো পরতে পারবো না। তোর লাগলে আমাকে বলতে পারিস চুরি কেন করিস বলতো। বলেই তার হাত টান দিলো। যেহেতু তার হাতে আমার চুল পেচানো ছিলো তাই তার হাত টান দেওয়ার সাথে সাথে আমার চুলে টান গেলে যায় আর আমি পিছিয়ে যাই। চুলে অতিরিক্ত টান লাগার কারনে খুব ব্যাথা লাগছে আমার। চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে। তখন মামনি এসে ভাইয়ার হাত ছাড়িয়ে নিলো। ভাইয়া রেগে গিয়ে মামনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-শুধুমাত্র তোমাদের জন্যে ওর এত সাহস বেড়েছে। তারপর আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
-দিস ইজ দ্যা লাষ্ট ওয়ার্নিং, নেষ্ট টাইম যদি এমনটা করছি তাহলে,,, রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নি। এই লুকে তুই কলেজে যাবি না।
-মানে, মিষ্টিকে কি এখন তোমার কথা শুনে চলতে হবে নাকি। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম আমি।
-ইয়েস, চলতে হবে।
আমি অসহায় মুখ করে মামনির দিকে তাকালাম তারপর বললাম, মামনি প্লিজ তুমি কিছু বলো, প্রতিউত্তরে মামনি বলল,আমি আর কি বলবো বল। অভি যা বলছে ঠিকই তো বলছে। এই লুকে কলেজে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আরাভ আংকেলের দিকে তাকালাম হয়তো সে ভাইয়াকে কিছু বলবে। সেটাও হলো না। আংকেলও ওই হিটলারের সাথে একমত। আমার আর কি করার, চলে আসলাম রুমে। বাসায় আম্মুর জন্যে পরতে পারি না আর এখানে তো এক হিটলার আছেই। রুমে এসে মিষ্টি কালারের থ্রি-পিছ পরে নিলাম।
ড্রয়িংরুমে আসতেই আরাভ আংকেল ভাইয়াকে বলল,
-মিষ্টিকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে এসো অভি। আংকেলের কথা শুনে আমি ঠায় দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এই হিটলারের সাথে আমি কিছুতেই কলেজে যাবো না। পরে দেখা যাবে সব মেয়ের দল এসে আমাদের গাড়ির সামনে ভীড় জমিয়েছে। আমার আর কলেজ পর্যন্ত পৌছানো হবে। আড় চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তার মুখ দেখে তো মনে হয়না এতে তার কোন আপত্তি আছে। তাই আমিই বলে উঠলাম,
-আমার কোন বডিগার্ড চাইনা।
-বডিগার্ড নয় মিষ্টি। অভির সাথে কোথাও গেলে তুই সেইভ থাকবি। ও তোকে সেইভ করে রাখবে।
মামনির কথা শুনে আমার টারমিনাটর মুভির কথা মনে পড়ে গেলো। সেখানে জর্জ কেন্টরের মাকে বাঁচাতে ভবিষ্যৎ থেকে যে মানুষটা এসেছিল সেই সারা কেন্টরের প্রেমে পরে যায়। আর দুজনের মাঝে ফিজিক্যালি রিলেশন হয় যার কারনে জন্ম হয় জর্জ ক্যান্টরের। আর ভাইয়াও এখন আমাকে সেইভ করতে যেতে চায়। তারমানে তো সেও আমার প্রেমে পরে যাবে। না এটা আমি হতে দিবো না। এই হিটলারের সাথে প্রেম কখনো না। আমি তড়িৎগতিতে জবাব দিলাম,
-না, ভাইয়া আমার সাথে যাবে না।
চলবে,,,,,,
#বেলা_শেষে- ২
[০৩]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।
রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ভূমি। অভি মিষ্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। যদিও মিষ্টি অভির সাথে যাবে না বলে নানা অজুহাত খুজছিলো বাট যেখানে ভূমির মতো একজন মানুষ আছে সেখানে যে কারো অজুহাত যে টিকে থাকবে সেটা শুধু কাল্পনিক। আদরের সময় যেমন কোমল ঠিক তেমনি কাওকে শাসন করার সময় সে বেশ কঠিন। ভূমির কঠোর নির্দেশে মিষ্টি অভির সাথে যেতে রাজি হয়। অভি মিষ্টিকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতেই ভূমি তার ওষ্ঠদ্বয় চেপে হাসে। তারপর সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আরাভ ওর হাত ধরে ফেলে। ভূমি তার চক্ষুদ্বয় কিছুটা ছোটছোট করে আরাভের দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকায়। আরাভ বিনা নিঃশব্দে ভূমির হাত ধরে টান দিয়ে ওকে তার কোলে বসিয়ে নেয়। দু-হাতে ভূমির কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কাঁদে মাথা রাখে সে। ভূমি আরাভের থেকে নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
– কি করছো তুমি আরাভ। ছাড়ো আমাকে ওদিকে আমার অনেক কাজ পরে আছে।
-সারাক্ষণ তো শুধু কাজ কাজ-ই করো। এখন তো আমাকে দেওয়ার মতো তোমার সময় নেই। ভূমিকে আরো শক্তকরে নিজের সাথে চেপে ধরে আরাভ। ভূমি এতক্ষণ নিজেকে ছাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও এখন সে শান্ত হয়ে বসে। সত্যিই তো। আরাভ ভুল কিছু বলেনি। ভূমি এখন তো ওকে সময়ই দিতে পারে না। পরিবারের সব দিকটা দেখতে গিয়ে কখন যে আরাভের সাথে ওর একটা দুরত্ব তৈরী হয়েছে সেটা সে বুঝতেও পারে নি। নিজের স্বপ্ন নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে পরিবারের মধ্যে বন্ধি হয়ে গেছে সে। যেখানে সে পরিবারের সকলের খেয়াল রাখে। শ্বশুড় শ্বাশুড়ি ছেলে আরাভ কে কখন কি খাবে না খাবে তার সব কিছুর খেয়াল রাখে সে। শুধু আরাভকে সময় দিতে পারে না সে। আগের মতো রাতের পর রাত জেগে চাঁদনি রাতে জ্যোৎস্না বিলাস করা হয় না দুজনের। বর্ষায় মন চাইলেই বৃষ্টিতে ভেজা হয় না দুজনের এক সাথে।
আগে আরাভ যখন গভীর রাতে অফিস থেকে ফিরতো তখন ভূমি ওর জন্যে খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করতো। আরাভ আসলে দুজনে মিলে একসাথে গল্পকরে করে খাবার খেতে। ভূমি খাবার খাওয়ার ফাঁকেফাঁকে আরাভের অফিসের সব কাজ সম্বন্ধে জেনে নিতো। তারপর দুজনে একসাথে ডিনার শেষ করে ঘুমাতে যেত।সেখানেও ছিলো তাদের কত স্মৃতি। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে সব কিছুরই পরিবর্তন হতে থাকে। অভিও বড় হতে থাকে। সারাদিন কাজ করে রাতে অভিকে নিয়ে পড়তে বসানো ছিলো ভুমির রুটিন। তারপর তাকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে ভূমি।
এখন যখন আরাভ অফিস থেকে ফিরে তখন সে দেখে ভূমি ঘুমাচ্ছে। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমায় ভূমি তাই আর আরাভ তাকে ডাকে না। লাকি এসে আরাভের খাবার রেডি করে দেয় আর আরাভ খেয়ে ভূমির অপর পাশে শুয়ে ভূমির একটা হাত শক্তকরে ধরে ওকে দেখতে দেখতে ঘুমের রাজ্যে পারি জমায় সে। আর সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ভূমি তার কাজে ব্যাস্ত থাকে। কখনো অভিকে নিয়ে ব্যস্ত আবার কখনো তার শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে নিয়ে ব্যস্ত সে। আরাভকে তার ব্রেকফাস্ট দিয়ে অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। আরাভ চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।
-কি হলো জানপাখি, কোন কথা বলছো না যে। ভূমির ঘাড়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিয়ে বলল আরাভ। ভূমির থেকে কোন জবাব না পেয়ে সে আবারও ভূমির ঘাড়ে চুমু খেয়ে নিলো।
-আ-আরাভ এটা ড্রয়িংরুম। ভূমির জড়ানো কন্ঠ।
-ও আচ্ছা, তাহলে চলো রুমে যাই। ঠোঁট চেপে হেসে বলল আরাভ। আরাভের এমন লাগামহীন কথাবার্তা শুনে ভূমি ওকে পিছনের দিকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ঘটনাক্রমে একটু পিছিয়ে যায় আরাভ। ভূমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কড়া গলায় বলে,
-লাজলজ্জার মাথা খেয়ে নিয়েছো। এত বড় একটা ছেলের বাপ হয়ে এরকম লাগামহীন কথা বলতে লজ্জা করে না তোমার।
-না করে না। সোজাসাপ্টা জবাব আরাভের। বউয়ের সাথে প্রেম করতে আবার লজ্জা কিসের। বলেই ভূমিকে ধরার জন্যে হাত বাড়িয়ে দেয় আরাভ। আরাভের হাত বাড়িয়ে দিতেই দু-পা পিছিয়ে যায় ভূমি। চক্ষুদ্বয় ছোটছোট করে বলে,
– একদম অসভ্যতামি করবে না বলে দিলাম। কিছুদিন পর বুড়ো দাদু হইবা আর এখনো তোমার অসভ্যতামি গেলো না।
– এই রকম সুইট কিউট বউ যদি সবসময় পাশে থাকে তাহলে কি অসভ্যতামি যাবে বলো। আমার তো মনে হয় পুরনো প্রেমটা নতুন করে শুরু করে দেই। কি বলো জানপাখি। বলেই চোখ টিপ দেয় আরাভ। ভূমি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে শাড়ির আঁচলে হাত পেঁচাতে পেঁচাতে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। তারপর সে ব্যাস্ত হয়ে পরে তার রান্নাঘরের কাজে।
আরাভ এতক্ষণ বসে বসে ভূমির কাজ দেখছিল। তারপর সে উঠে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়। ভূমির পাশে এসে দাঁড়াতেই ভূমি কাজ করার ফাঁকে বলে উঠে,
-আজ অফিস নেই তোমার??
-না, আজ বাসায় থেকে বউকে আদর করবো।
-নির্লজ্জের মতো কথাবার্তা। বিরবির করে বলে ভূমি। তবে সেটা আরাভের কানে ঠিকই পৌঁছালো। কিন্ত আরাভ কোন রকমের প্রতিক্রিয়া করলো না। সে সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যখন বুঝতে পারলো ভূমির কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। তখন সে নিজেই ভূমির সাথে কাজে হাত লাগায়। এতে ভূমি বারন করলেও কথা শুনে না আরাভ।
গাড়ির জানালায় হেলান দিয়ে বসে বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্যবলি দেখছি আমি। গাড়ি চলার সাথে সাথে বাহিরে থাকা গাছ বাড়িঘর কেমন দ্রুত চোখের আড়াল হচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা যেন দৌড়ে যাচ্ছে। বাহির থেকে ধমকা হাওয়া এসে পড়ছে আমার মুখের উপর। তাই মাঝে মাঝে দু-চোখ বন্ধকরে নিচ্ছি আমি। তখন যেন এই প্রকৃতিকে আরো ভালো করে অনুভব করছি। আর ভাইয়া সমনের দিকে তাকিয়ে একমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ব্রেক করায় সামনের দিকে ঝুকে পড়লাম আমি। আর তখন ভাইয়া তার এক হাত বাড়িয়ে দেয় আমার সামনে আর আমাকে আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়। ভাইয়ার এমন কান্ডে আমি অবাকের চরম সিমানায় পৌঁছে গেলাম। হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ততক্ষণে মহাশয় আমাকে সোজা করে বসিয়ে দিয়ে নিজের সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলে,
-সিটবেল্ট বাঁধিস নি কেন?
আমি কোন জবাব দিলাম না। এখনো হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আমার থেকে কোন জবাব না পেয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায় ভাইয়া। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে বলে উঠে,
-এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? মুখটা বন্ধকরে নে। ভাইয়ার এমন শান্ত গলায় কথা শুনে আমি আপনমনে মাথা নাড়িয়ে মুখ বন্ধকরে নিলাম। তারপর আমার হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
– আমাকে একটা চিমটি কাটতো??
ভাইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো। তারপর সে আমার হাত ধরে চিমটি কাটার নাম করে আমার তর্জনীতে কামড় বসিয়ে দিলো। তাতে আমি হালকা ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠলাম। আর তখনি সে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দুই ঠোট প্রসারিত করে ভুবল ভুলানো হাসি দিলো। আমি হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে ভাইয়ার দুটো দাত বসে গেছে। চোখে একরাশ ক্রোধ নিয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে আর ঝাঁঝালো গলায় বললাম,
-রাক্ষস নাকি তুমি হুম। ইশ আমার হাতের কি অবস্থা করছে।
-গাড়িতে বসে বসে স্বপ্ন দেখছিলি তাই তো তোর স্বপ্নটা ভেঙে দিলাম। ওকে ফাইন বল, এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিলি।
-কোন স্বপ্ন টপ্ন দেখছিলাম না আমি। ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকালো। মানে তাহলে আমি তাকে চিমটি কাটতে কেন বললাম। ভাইয়ার চাওনি উপেক্ষা করে আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম।কারন আমি কলেজের সামনে পৌঁছে গেছি। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই ভাইয়াও নেমে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো তারপর আমাকে ঞ্জান দিতে লাগলো। ওনার ঞ্জান দেওয়া শেষ হলে আমাকে সামনের দিকে ইশারা করে বলে,
– এবার যেতে পারিস।
আমি এক পা ও সামনে এগিয়ে গেলাম না। মৌনতা অবলম্বন করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়াও পকেটে দুই হাত গুজে দিয়ে তাকিয়ে রইলো কলেজের দিকে। এটাই সুযোগ, আমি ভাইয়ার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম। ঘটনার আকস্মিক কিছুই বোধগম্য হয়নি তার। সে হিতাহিত ঞ্জানশুন্য হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। ততক্ষণে আমি দৌড়ে কলেজের ভেতরে চলে আসলাম। ততক্ষণ পর্যন্ত ভাইয়া সেখানেই দাঁড়িয়ে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
চলবে,,,,,,
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।