বেলা শেষে আলো পর্ব-০৩

0
866

#বেলা শেষে আলো
#০৩
#ইসরাত_জাহান_এশা

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হটাৎ দরজার বাইরে থেকে ছোট ছোট হাতে দরজার উপর ঠকঠক আওয়াজ দিচ্ছে আর বলছে বাবাই দরজা খোলো।
তনিমা রাতুলকে ডেকে তুলে। রাতুল গিয়ে দরজা খুলে রাইমাকে ঘরে নিয়ে আসে।

— বাবা উনি কে?
— উনি তোমার ছোট মা।
— ওহহ। তোমার কি হয়?
রাতুল চুপ করে থাকে।
— কেনো এই ছোট বাচ্চার সাথে এমন করলেন? কোনো মেয়ে চায় না স্বামীর ভাগ দিতে। বড় আপাও চাইবে না স্বামীর ভাগ দিতে। আবার আমিও চাইনা স্বামীর ভাগ দিতে চাই না৷
— তুমি যদি চাও আমি রিমাকে তালাক দিবো।
— হা হা হা, ডিভোর্স দেওয়া এতো সোজা? আপনার কি কলিজা বলতে কিছু নাই? ওনার অপরাধ কি? রাইমার বা কি অপরাধ? আপনি আমাকে ডিভোর্স দেন আমি আমার রাস্তা দেখে নিবো। তাও চাইনা এই ভাবে কারো সংসার ভাংতে।
— চুপ! বলছিনা তোকে আমি ভালোবাসি। তুই কোথাও যাবি না। বেশি চালাকি করার চেষ্টা করলে তোর বাপ মার ক্ষতি করে দিবো।

তনিমা ভয়ে চুপসে যায়। গরীব ঘরে জন্ম নেওয়াটা কি অন্যায়? যে যখন যেভাবে খুশি বাজাতে চায়। না পাওয়া যায় পরিবারকে সামনে না নিজের কোনো শক্তি থাকে আজকে একটু লেখা পড়া হলেও না হয় কিছু একটা ভাবতাম।
এই আজাব নিয়ে কি সারা জীবন থাকতে হবে?
— এই কি ভাবছ?
— নাহ কিছু না। বলছিলাম আমি কি বাপের বাড়িতে যেতে পারব না?
— না,,যখন আমি বলব তখনি যাবে।
— কেনো যেতে পারব না?
— ( হুমম আমি তোকে যেতে দেই আর তুই ওখানে গিয়ে ছাগলের মত খামি দিবি আর আসতে চাইবি না। এটা আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি) এখন যেতে পারবে না মানে না।
বলেই রাতুল রাইমাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে দিনের মনে দিন যাচ্ছে তনিমা মুখ বুঁজে সব সহ্য করে নিচ্ছে রাতুল ঘর থেকে বের হতে দেড়ি রিমার মুখ চালু হতে দেরি না।রিমা যতো তনিমাকে গালি দিতে পারবে ততই যেনো মনে শান্তি পায়। তনিমা চোখের পানিও এখন আর কাউকে দেখতে দেয় না। রিমা নিজের সংসার নিজের হাতেই রেখেছে সব আগের মতই আছে শুধু তনিমা ফেলনা জিনিসের মতো পরে থাকে৷

তিন মাস পর তনিমা বুঝতে পারে তনিমা প্রেগন্যান্ট। রাতুলকে বিষয়টা জানালে রাতুল প্রচুর পরিমানে খুশি হয়। যেই খুশি রাইমা হওয়ার সময়ও হয়নি।
রিমা তনিমার কথা শুনে জ্বলে পরে একা কার।
— তুমি এমন ভাবে খুশি হচ্ছো মনে হচ্ছে প্রথমবার বাবা হবে।
—এই তোর সমস্যা কি সব কিছুতে তোর বাগড়া না দিলে হয়না?

রিমা এবার চিন্তা করে অনেক হয়েছে আর না এবার কোনো একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে।কিভাবে কি করা যায় কিভাবে এই বাচ্চা নষ্ট করা যায়?

রাতুল মনে মনে ভাবে এখন তো তনিমাকে বেড়াতে যেতে দেওয়া যায় আর কখনো ও ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করবে না। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আর কিছু করার সাহস করবে না।
—তনিমা এখন তুমি তোমার বাবার বাড়ি যেতে পারো৷
—এখন কি আমাকে শক্ত করে বাঁধতে পেরেছেন? এখন কিছু করব না এই জন্য কি বাবার বাড়িতে যেতে দিচ্ছেন।
— তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছ।
তনিমা চিন্তা করে যাই আগে বাবার বাড়িতে বাবা মা কিভাবে আমাকে গ্রহন করে সেটাই দেখতে হবে। ভাইয়ের উপর ভরসা নেই ভাই তো পর করেই দিয়েছে বিক্রি করে দিয়েছে।
রাতুল তনিমাকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যেতে দেয়। তবে নিজে যায় না। রাসেল কে আসতে বলে রাসেল এসে নিয়ে যায়।

তনিমা বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই বাবাকে জরিয়ে কান্না করে দেয়।
— ও বাবা তোমরা এবার কি আমাকে দেখে শুনে বিয়ে দিতে পারলে না? এতই বোঝা ছিলাম তোমাদের? একটা মেয়ের সংসার ভাংতে পাঠালে? একটা নিষ্পাপ বাচ্চার সামনে অপরাধী তৈরি করলে।
— মা ক্ষমা করে দে। আমাকে কেনো দোষ দিচ্ছিস আমাকে কি তোর মা কিছু জানায়? লোভী একটা মহিলা বিয়ে করেছি তোর মা টাকার জন্য সব করতে পারে৷
— কি বলেন এসব টাকার জন্য করেছি মানে? ওর জামাই আমাদের বলেছে বিদেশ থেকে আসছে অনেক টাকা পয়সা। তনিমাকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে আমরা তো ওর কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি ছিলাম না। ও পরে টাকার লোভ দেখায় অনেক ওয়াদা বদ্ধ হয়।নানা রকম কথা বলে মস্তিষ্ক কে ধোলায় করে ফেলেছে নাহলে ওর মতো প্রতারকের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতাম। আমরাও তো জানতাম না ওর বউ বাচ্চা আছে তাহলে কখনোই দিতাম না তাতে যতই টাকা থাকুক। (তনিমার মা)
— থাক মা তুমি আর কথা বইল না। তুমি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে যাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম তার টাকা ছিলোনা ঠিকিই কিন্তু সে তো আমাকে ভালোবাসত আমার ভালোবাসায় কোনো ভাগিদার ছিলো না। করতে হতো না সতীনের সংসার। তুমি অতিরিক্ত টাকার লোভে ছল চাতুরী করে সবুজের সাথে আমার সংসার টা ভেংগে দাও।
— কি আবোল তাবোল বলছিস? আমি কেনো এসব করতে যাবো কোনো মা কি তার নিজের মেয়ের সংসার ভাংগে?
—- চুপ করো মা। আমি সবই শুনেছি তুমি সবুজকে পছন্দ করতে না কারন ও ছিলো বেকার বেড়াতে আসলে তুমি ওর সাথে কেমন ব্যবহার করতে তাও তো চোখে দেখেছি। কয়টা দিন ধৈর্য্য ধরলে কি হতো? ও তো বলেইছে আমাকে নিয়ে যাবে।
— তো কি সারাজীবন আমি বেকার জামাই কে কাঁধে নিয়ে ঘুরতাম? আর আমি কি করছি? ওর ভাইরাই তো তোকে পছন্দ করত না রাতে এসে গলায় ছুড়ি ধরে জবানবন্ধি নেয় যে তুই সবুজকে ছেড়ে দিবি।
— হা হা হা, মা তুমি কি ভেবেছো বলবে আমাকে? শোনো মা আমি সবই জানি তুমি ওর ভাইয়ের সাথে হাত মিলিয়েছিলে যাতে ওরা আমাকে ভয় দেখায় ডিভোর্স হয়ে যায়৷ সবুজ আমাকে বার বার বলেছিলো তনিমা তুমি ভুল করছো রাতের ঘটনার সাথে আমি জড়িত না। আমি আজ বেকার কাল আমার টাকা পয়সা হবে চেষ্টা তো করতেছি আর আমি তো মূর্খ না একটু সময় দাও প্লিজ৷
— তুই তাহলে ছাড়লি কেনো? গা কামড়ে থাকতি।
— ওরা আমাকে ভয় দিখিয়েছে যদি সবুজকে না ছেড়ে দেই তাহলে সবুজকে মারধর করবে আর সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।আমি ওকে বাঁচানোর জন্য ঐদিন বুকে পাথর চাপা দিয়ে ডিভোর্স দেই। আমি যদি তখনও বুঝতাম এটা পুরোটাই তোমার চাল তাহলে কখনো এমন ভুল আর করতাম না কিন্তু যখন জানতে পেরেছি সব ঘটনা তোমার সাজানো তুমি সিনামাকেও হার মানিয়েছ তখন অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।

তনিমার কথা শুনে তনিমার বাবা তনিমার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি এতো কিছু ঘটিয়ে ফেলেছ? আর আমার কাছে মিথ্যা নাটক সাজিয়েছ? আমি নিজে সবুজের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম আর তুমি কিনা ছি ছি।

ফ্লাশব্যাক,,,

তনিমা তখন ক্লাস নাইনে ছিলো। তুখন ওদের বাসায় সবুজ এসে প্রাইভেট পড়াতো। আরো আসে পাশে যে মেয়েরা ছেলেরা ছিলো সবাইকেই সবুজ পড়াতো। কিছু দিন পরে তনিমার সাথে ভালোবাসার একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সবুজ তনিমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখলে তনিমার বাবা রাজি হয়৷ তখন সবুজ বেকার ছিলো তাই নিজের মেয়ের বিয়ের খরচ নিজেই বহন করেন।
নিজেই তনিমার জন্য লাল বেনারসী কিনে দেন। এভাবে তনিমার নতুন জীবন শুরু হয়৷ সবুজ মাঝে মাঝে আসত বেড়াতে চাকরি হলেই তনিমাকে নিয়ে যাবে এখান থেকে। তবে তনিমার মা এই বিয়েতে বিন্দু পরিমান রাজি ছিলেন না তাই এক বছর যেতে না যেতেই ছল চাতুরী করে তনিমার সাথে সবুজের ডিভোর্স করিয়ে নেয়।

— পুরোনো সৃতিচারণ করে কোনো লাভ হবে? যা হয়েছে হয়েছে। তুই রাতুল কেও ছেড়ে দে আর এসবে জড়িয়ে লাভ নেই তোকে ভালো ছেলে দেখে আবার বিয়ে দিবো।
—- হা হা হা,, কতো সহজেই তুমি একটা সম্পর্ক ভাংগার কথা বলো। আমি গর্ভবতী এখন কি চাইলেও সম্ভব? পারবে আমার সন্তান কে খাওয়াতে?
— তুই ছেড়ে চলে আয়। বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবি।

—- মা,,, তোমার মুখে কি কোনো কথা বাঁধে না?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে