#বেলা শেষে আলো
#০২
#ইসরাত_জাহান_এশা
তনিমার ভাই রাসেল পাঁচদিনের দিন আসে তনিমার শশুর বাড়িতে তনিমার খোঁজ নিতে কিন্তু এসেই রাসেলের রক্ত যেন মাথায় উঠে যায়।
তনিমা রুমে বসে কাঁদছে। পিছন থেকে রাসেল তনিমা বলে ডাক দেয়।
তনিমা চোখ ভর্তি জল নিয়ে রাসেলের দিকে তাকায় আর রাসেল কে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।
রাসেল তনিমাকে কাঁদতে দেখে বলে কি হয়েছে তুই কাঁদছিস কেনো? তোর ফোন বন্ধ কেনো? চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস।
তনিমার মুখ থেকে যেনো কথাই বের হচ্ছে না।
কিছুক্ষন পর তনিমা চোখ মুছে বলে ভাইয়া এ কোথায় এসে পড়েছি? আমি আবারো হেরে গেছি জীবন যুদ্ধের কাছে।
— আরে কি হয়েছে খোলসা করে বল।
— ভাইয়া রাতুলের বউ আছে সাথে একটা সন্তানও আছে।
— কি বলছিস এসব?
— ভাইয়া তুমি কি আগে খোঁজ খবর নেওনি?
রাসেল চুপ করে আছে কি উত্তর দিবে আসলেই তো খোঁজ নেয়নি।
রিমা তনিমার রুমে পুরুষ কন্ঠ শুনে দ্রুত তনিমার রুমের দরজায় গিয়ে দাড়ায়।
— কে উনি?
— আপা উনি আমার ভাই।
— হা হা হা,, তোমার বলদের মতো ভাইও আছে আমি তো ভেবেছিলাম তুমি অনাথ। দুনিয়ায় কেউ নেই৷
— কি বলছেন এসব? (রাসেল)
— কি বলছি মানে কি? কেমন ভাই আপনি যে খোঁজ খবর না নিয়ে বোনকে এইরকম একটা বিবাহিত ছেলের কাছে তুলে দিছেন? যার ঘরে একটা কন্যা সন্তানও আছে। আমার পাঁচ বছরের সংসারে আগুন জ্বালালেন। আপনার মতো ভাই থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো।
এক শ্বাসে কথা গুলো বলতে থাকে রিমা। পিছন থেকে রাতুল রিমা কে থামিয়ে দিয়ে বলে তোকে এতো কথা এখানে কে বলতে বলেছে?
— কথা বলতে আমাকে এখন অনুমতি নিতে হবে?
— তুই বলবি না।
— আমার সংসার নষ্ট করতছে আর আমি চুপ থাকব! এর শেষ দেখে ছাড়ব।
রাসেল রাতুল কে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই এতোটা ঠক, ছলনা করে আমার বোন কে বিয়ে করেছিস। তোকে আমি জেলে পাঠাবো। আমার বোনকে আজই নিয়ে যাবো এই বাড়ি থেকে।
— রাসেল গলা নামিয়ে কথা বলো তুমি কি করতে পারবে আমার ভালো করেই জানা আছে। আর তোমার বোনকে আমি অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত এক পাও যদি বাইরে দেয় তাহলে ঠাং ভেংগে ঘরে রেখে দিবো৷ আমাকে অপরাধী করার আগে নিজের বিবেকের কাছে আগে ধরা দাও তুমি কতটা ভালো৷
রাতুলের কথা শুনে রাসেল চুপ হয়ে যায়। মাথা নিচু করে সাথে সাথে বেড়িয়ে যায়।
— এখানে যেনো আমি কোনো ঝামেলা না দেখি রিমা চুপচাপ রান্না ঘরে যাও আর সবার জন্য রান্না করো।
— পারব না।
— মেজাজ খারাপ করবি না। যা বলছি তাই কর যা না হলে তোকে উল্টা করে পিটাবো৷
রিমা আর কথা বাড়ায় না রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায়।
রাতুল তনিমার হাত ধরে বলে প্লিজ তনিমা তুমি বাস্তবতা কে মেনে নাও এমন করো না। তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি এই যে তোমার রুম একদম খালি৷ আমি আজই তোমার রুমে খাট,আলমারি, তোমার জন্য নতুন কাপড় এনে দিবো৷ প্লিজ তুমি সবটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো। আমি আর সব দিক সামলে নিবো কোনো কিছুতে কষ্ট দিবো না৷
তনিমা কোনো প্রতি উত্তর করে না। রাতুল তনিমার উত্তর না পেয়ে বাজারের দিকে যায়।
এদিকে রাতুলের মা তনিমাকে নানা রকম খোঁচা মেরে কথা বলা শুরু করে। বাপের থেকে কি আনছ? তোমার বাবা মা কে বলবে যেনো ঘর সাজিয়ে দেয়।
তনিমা রাতুলের মায়ের কথা শুনছে আর চোখের জল ফেলছে কোনো উত্তর করছে না৷ রিমা রান্না করছে আর তনিমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে।
দুপুরে রাতুল বাড়িতে আসে না। রিমা, রাতুলের মা কেউ তনিমাকে খাবারের জন্য ডাকে না। নিজেরাই খেয়ে যে যার রুমে শুয়ে থাকে।
বিকালে রাতুল বাজার থেকে একটা খাট,ছোট একটা আলমারি আর একটা ড্রেসিং টেবিল কিনে আনে। সাথে তনিমার জন্য দুইটা কাপড় পেটিকোট ও ব্লাউজের কাপর।
রিমা এসব দেখে রাগে কটমট করে ইচ্ছে করেই রিমা নিজের মেয়েকে মারে। রাতুলের সব রাগ রাতুলের মেয়ে রাইমার উপর ঝারে। রাতুল রাইমার কান্না শুনে রাইমার কাছে গিয়ে রাইমাকে কোলে নিয়ে বলে ঐ ডাইনিটা তোকে মারছে তাই না। আমার রাগ তোর উপর ঝারতেছে।
রাতুল রাইমাকে কোলে নিয়ে তনিমার কাছে যায়।
— আজ থেকে আমরা ছোট একটা সংসার তৈরি করব। এই যে তোমার সব কিছু এনে দিয়েছি৷ তুমি এখন তোমার সংসার ঘুছিয়ে নাও।
তনিমার কানে যেনো কথা গুলো বিষের মতো লাগছিলো। তনিমা কান্না জরিত কন্ঠে আবার বলল কেনো করলেন আমার সাথে এমন? এক মাস আপনার সাথে আমার কথা হয়েছিলো একবারের জন্যও আপনি কেনো বললেন না? যিনি সমন্ধ নিয়ে আসছে তিনিও বা কেনো বলেনি।
— এতো প্রশ্ন করবে না তনিমা সবাইকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। ঐ যে তোমার ভাইকে দেখছ। ওকেও আমি টাকা দিয়েছি। না হলে এতো দূরে সমন্ধ হতো না।
— কি? ভাইয়া আপনার থেকে টাকা নিয়েছে?
— হ্যাঁ টাকা নিয়েছে তুমি হলে সংসারের বোঝা বোঝা কমানোর জন্যই তোমাকে এখানে বিয়ে দিয়েছে। তুমি যদি চিন্তা করো বাবার বাড়ি তোমার ঠাঁই মিলবে তাহলে তুমি ভুল।
রাতুল তনিমার গাল চেপে ধরে বলে যা বলছি তাই করো সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আংগুল ব্যকা করতে আমার একটুও সময় লাগবে না। আশা করি বুঝতে পারছ?
বলেই তনিমাকে হালকা ভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো।
তনিমা ভাগ্যকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ আস্তে আস্তে নিজের রুম ঘুছাতে শুরু করে৷ তনিমার রুম গুছানো শেষ। রাতের খাবার নিয়ে রাতুল তনিমার ঘরে যায়। তনিমা প্রথম প্রথম খেতে না চাইলেও রাতুলের ধমকে পুরোটা খেয়ে নেয়। আর খাবেই না বা কেনো এই কয়দিন তো তেমন পেটে কিছু দেওয়া হয়নি ঝামেলায় কখন দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন হয়েছে সেই খেয়ালি তো ছিলো না।
খাওয়া শেষে রাতুল তনিমার মোবাইল তনিমার হাতে দেয়৷
—- এই নেও তোমার ফোন। তোমার বাড়ির সবাই এখন এমনি সবটা জেনে গেছে। আর শোনো আগেও বলেছি এখনো বলছি এখান থেকে পা বাড়ানোর চেষ্টা করো না। তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
— হুমম।
— কাল আমার বড় দুই বোন আসবে তাদের সাথে খুব ভালোভাবে কথা বলবে। অবশ্য তুমি যে ঠান্ডা বোম মারলেও কথা বের হয়না মুখ থেকে। আচ্ছা ভালো কথা তোমাকে যে গহনা গুলো দিয়েছিলাম সেগুলো কোথায়? আমার হাতে দেও।
— ঐগুলো তো প্রথম দিনেই আপনার মা নিজের হাতে আমার গা থেকে খুলে নেয়। আচ্ছা ঐস্বর্ন গুলো কি আর আমি পাবো? নাকি পড়ার কাপরের মতো ওগুলো সব আপনার প্রথম স্ত্রী?
— আসলে কিছু গয়না রিমার আর কিছু মায়ের।
— বেনারসী?
— ওটাও রিমার।
— ওহহ আচ্ছা। আমার ভাগ্য এতই খারাপ বিয়ের জন্য একটা বেনারসী ও জুটলো না৷ তনিমা চোখের পানি আটকে রাখতে চেয়েও যেনো পারছে না।
রাতুল তনিমাকে স্বান্তনা দিয়ে বলে কেঁদোনা আমি তোমাকে আস্তে আস্তে সব গড়িয়ে দিবো। তোমারো একদিন সব হবে দেখো।
এই কথা বলে রাতুল পকেট থেকে একটা পাথর বসানো সোনার আংটি বের করে তনিমার হাতে পড়িয়ে দেয়।
— এটা আমার খুবই প্রিয় আংটি এটা বিদেশে থাকতে কিনে ছিলাম। কিন্তু কখনো কাউকে দেইনি আর এটা সম্পর্কে কেউ জানেও না। আর পুরুষের জন্য স্বর্ন পড়া হারাম এর জন্য আমি কখনো পড়িনি। তোমার ভাগ্যে ছিলো আর আজ থেকে এটা তোমার। আর হ্যাঁ তুমি কি আপনি আপনি ডাকা শুরু করেছো? আপনি ডাকটা এখন কেমন যেনো শুনায় তোমার মুখে তুমি ডাকটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়৷
—-এখন আর তুমি ডাক ভিতর থেকে আসেনা৷ আপনি এখন আমার কাছে বড্ড অচেনা। আমি যেই রাতুলকে চিন্তাম আপনি তো সেই রাতুল না।
— বাজে কথা বলো না তো। বাদ দেও তোমার যা খুশি ডেকো। তাও প্লিজ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো।
,,,,,,,,
তনিমার সকালে ঘুম ভাংলে দেখে জানালা ভেদ করে সোনালী রোদ রাতুলের মুখের উপর পরে মুখটা ঝলমল করছে । তনিমা এক দৃষ্টিতে রাতুলের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে কি মায়াবি মুখ কিন্তু এই মুখেই যতো শয়তানি আর হিংস্রতা লুকানো।
তনিমা রাতুলের গালের উপর হাত রেখে মনে মনে চিন্তা করে। সকালটা কতো সুুন্দর! এই সুন্দর মিষ্টি সকালের মতো আমার জীবনটাও যদি সুন্দর হতো কতই না ভালো হতো।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে হটাৎ দরজার বাইরে থেকে ছোট ছোট হাতে দরজার উপর ঠকঠক আওয়াজ দিচ্ছে আর বলছে বাবাই দরজা খোলো,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,