#বেলা শেষে আলো
#০১
#ইসরাত_জাহান_এশা
শশুর বাড়িতে যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই শাশুড়ী মা আমার গায়ের স্বর্ন গুলো নিজ হাতে খুলতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন শোনো বউ আমাদের এদিকে চোর ডাকাতের অভাব নেই বুঝলে তো, তাই স্বর্ন গুলো আমি আমার কাছে যত্ন করে রেখে দিচ্ছি। যখন দরকার হয় চেয়ে নিবে। মনে মনে একটু মন খারাপ হলেও তারপর শাশুড়ি মা কে হাসি মুখে স্বর্ন গুলো নিজেই খুলে দিলাম।
শাশুড়ী মা যাওয়ার সময় বলে গেলো তনিমা যাও এখন ফ্রেস হয়ে এই যে রাখা শাড়িটা এটা পরে বিয়ের বেনারসিটা টেবিলে ভাজ করে রাখো আমি এখনি এসে নিয়ে যাবো।
তনিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তনিমার শাশুড়ী চলে গেলো। তনিমা কিছুক্ষন ঝীম হয়ে বসে থাকে স্বর্ন না হয় নিলো ঠিক আছে তাই বলে বেনারসীটাও উনি নিয়ে যাবে? বেনারসী টা কি আমার কাছে রাখা যায় না?
কি আজব পরিবারে আসলাম এমন তো হওয়ার কথা না রাতুলের ব্যবহার তো খুবি ভালো। তাহলে ওর মা এমন কেনো?
এসব ভাবতে ভাবতে তনিমা ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে আর মনে মনে ভাবে ওরা এতো বড়লোক হয়েও ব্যবহার করা শাড়ি দিলো আমাকে পড়ার জন্য?
কিছুক্ষণ পর তনিমার শাশুড়ী এসে বেনারসী টা নিয়ে যায় আর বলে রাতুল একটু বাইরে গেছে আসতে সময় লাগবে তুমি রেষ্ট করো।
— আচ্ছা।
তনিমা মনে মনে ভাবে রাতুল আমাকে না বলে কই যেতে পারে। তনিমা একটা টেনশনেই পরে যায়। কি হচ্ছে এসব আমার সাথে আজকের একটা দিন আর এমন সময়ই রাতুল আমাকে না বলে কোথায় গেলো আর সেটা শাশুড়ী মা কে বলে গেছে? আমাকে কেনো বলল না কি এমন কাজ।আসুক আজ আচ্ছা করে বকে দিবো।
তনিমা রাতুলের উপর অভিমান করে মুখভার করে বসে আছে৷
–উফফস ভালো লাগছে না।আর কতো অপেক্ষা করতে হবে? মনে অনেক অশান্তি লাগছে ফোন দিয়ে দেখি।
রাতুল তনিমার ফোন পেয়ে কেটে দেয়। পরে আবার ফোন দিলে ফোন বার বার সুইচ অফ বলছে। তনিমা কান্না শুরু করে দিলো কোথায় এসে আমি পড়লাম আজ কি আবারো ঠকে গেলাম আমি?আবারো কি সুখের মুখ দেখতে পাবো না? কাঁদতে কাঁদতে বাম কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
★
— তুই নাকি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিস তোর এতো বড় সাহস কিভাবে হয়?
— কে বলেছে তোমাকে এসব কথা?
— চুপ! মিথ্যা বলবি না আমি জানি তুই বিয়ে করেছিস আর এতে তোর আর তোর মায়েরও হাত আছে। আমি এখুনি বাড়ি যাবো।
— এতো রাতে?
— তুই আমার সংসারে আ*গুন লাগিয়ে এখন ঢং করতেছো? আমার দিন রাত এখন সমান তোকে ইচ্ছে করছে কাঁচা লবন দিয়ে খেয়ে ফেলি। তুই বিয়ে করার জন্যই আমাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়েছিস? এই কয়দিন এতো আদর যত্ন করেছিস।
— আচ্ছা আমি যদি বিয়ে করতাম তাহলে কি এখন তোমার এখানে আসতে পারতাম?
— আবার মিথ্যা বলো?
— সত্যি মিথ্যা কাল প্রমান হবে সকালে গিয়ে দেখে এসো এতো রাতে যাবার দরকার নেই। আমি বাসায় যাচ্ছি মা একা বাড়িতে।
— আহা! আহা! কি ভালোবাসা তুই এটা বল যে তোর নতুন বউ তুই বাড়িতে রেখে আসছ। তুই কোথাও যাবি না।
—তুই আটকাবার কে? আমি যাবোই যাবো।
— আমিও যাবো এক সেকেন্ডও এখানে থাকব না।
সাথে আমার ভাই, বাবা, মা সবাই যাবে। দেখুক তারা তার মেয়ে কি চরিত্রবান ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে। এতোদিন শুধু আমার দোষ ছিলো আজ দেখুক কে খারাপ।
★
সকাল সকাল তনিমা শুনতে পায় বাইরে অনেক চিল্লা চিল্লির আওয়াজ। স্পষ্ট একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসছে।
তনিমা দ্রুত মুখে পানি ছিটা দিয়ে রুম থেকে বের হয়। নিচে গিয়ে দেখে রাতুল একটা ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর একটা মেয়ে তনিমার থেকে চার-পাচঁ বছরের বড় হবে ফ্লোরে বসে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করছে।
তনিমা এসব কাহিনি দেকে হতভম্ব হয়ে যায়। সামনে এগিয়ে রাতুল কে প্রশ্ন করে সারারাত কই ছিলে তুমি? আর এই বাচ্চা কার? ফ্লোরে বসাও বা মেয়েটি কে?
ফ্লোর থেকে রিমা উঠে বলে ওহহ এই তাহলে তোর নতুন বউ? তুই কালকে এই মেয়েকেই বিয়ে করেছিস? এই মেয়ে তোর এতো বড় সাহস তুই একটা বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করিস৷ আমার সংসার টা ধংস করে ফেললি। তুই একটা ডাইনি বলেই রিমা তনিমাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়। রাতুল রিমাকে ঠাস করে একটা চর দিয়ে বলে এতো বড় সাহস তোর তুই আমার নতুন বউকে ধাক্কা দেস।
— ঐ তুই আমার সাহসের কি দেখছস?তোকে আমি জেলের ভাত খাওয়াব। তোর সাহস কিভাবে হয় বর্তমান বউ থাকতে একটা সন্তান থাকতে তুই আবার দ্বিতীয় বিয়ে করো।
তনিমা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সব মনে হচ্ছে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবে আছে নাকি স্বপ্ন দেখছে কিছুই বুঝতে পারছে না। দাড়িয়ে রাতুল আর রিমার কান্ড কারখানা দেখছে।
— করব না তো কি করব? তুই একটা ডাইনি এতোদিন আমার সাথে দূর ব্যবহার করছ। তোকে দিয়ে আমি কোনো শান্তি পাইছি? সব সময় অশান্তি করতি সন্দেহ আর সন্দেহ। কিছু হলেই বাপের বাড়ি দৌড়াতি৷ আর তোরে আমার আগেও পছন্দ ছিলো না এখনো পছন্দ না শুধু সমাজ আর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এতোদিন তোর যন্ত্রণা সহ্য করেছি। আর তুই তো বলতি তোর নাকি নাগরের অভাব নাই তোর বাবা মা তোকে জোর পূর্বক বিয়ে দিছে। কিছু হলেই ডিভোর্স এর কথা বলতি। যা তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তুই আমার মেয়ে রেখে সোজা বের হয়ে যাবি।
— ওয়েট, ওয়েট রাতুল তুমি বিবাহিত? তোমার সন্তান আছে তুমি তাও কেনো আমার জীবন নষ্ট করলে? কেনো খেলা করলে আমাকে নিয়ে? বলো রাতুল বলো? (রাতুলের সামনে দাড়িয়ে)
আমি তো কারো সংসার নষ্ট করতে চাইনি তাও কেনো তুমি আমার সাথে এটা করলে?
আমি তোমাকে খুব বিশ্বাস করছিলাম ভরসা করেছিলাম। তুমি কিভাবে পারলে এমনটা করতে?
— দেখো তনিমা হ্যা আমার সন্তান আছে বউ আছে। কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি। আমি যতটা না শান্তি তোমার সাথে কথা বলে পেতাম ততটা শান্তি রিমার কাছে কখনো পাইনি। রিমাকে কখনো মনে যায়গা দিতে পারিনি।
— চুপ করো প্লিজ আর এসব কথা বলো না। ছিঃ তুমি এতটা নীচ নিষ্পাপ বাচ্চার কথা মনে করেও তো তুমি মানিয়ে নিতে পারতে। আমার জীবন ধংস করতে হলো তোমার?
— এই মেয়ে তুই এই শাড়ি খোল এটা আমার শাড়ি তোকে কে পড়ার অধিকার দিছে? খোল বলছি।
রিমা তনিমার চুল ধরে হ্যাচকা টান দেয়। সাথে সাথে রাতুল রিমার হাত চেপে ধরে।
— ঐ তোর যা কথা সব আমার সাথে বল। ওর গায়ে হাত দিবি না। আর ওকে কোনো কথাও শুনাবি না ও আমাদের সম্পর্কে কিছুই জানে না।
— একদিনেই বউয়ের জন্য দরদ উথলে পড়ছে।
রাতুলদের ঘরে চিল্লা চিল্লি শুনে গ্রামের মানুষ সবাই এক জায়গায় হয়। সবাই যে যার মন মতো গবেষণা শুরু করে দিয়েছে।
এদিকে তনিমা উপরে গিয়ে রিমার শাড়ি খুলে ওর মায়ের দেওয়া শাড়ি পরে একটা ব্যাগ নিয়ে বাইরে বের হয়।
— কোথায় যাচ্ছ?(রাতুল)
— চলে যাচ্ছি। (তনিমা)
— চলে যাচ্ছি মানে কি? এখন চাইলেই কি চলে যেতে পারবে?
— কেনো পারব না? আমার পক্ষে সম্ভব না কারো সংসার ভাঙ্গা।
( ভাগ্যিস সব কিছু খুলে রেখেছিলাম। নাহলে সব সাথে করে নিয়ে যেতো(রাতুলের মা)
—চুপ! আমি তোকে কোথাও যেতে দিবো না। আমি তোকে ভালোবাসি আর তুই এখানেই থাকবি। গেলে ও যাবে।
— আমি যাবো মানে? আমি এই বাড়ির বড় বউ আমার অধিকার বেশি গেলে ঐ মেয়েটা যাবে আমি কখনো যাবো না। ( রিমা)
— ইসলামে চারটা বিয়ে জায়েজ আছে। তো তোমরা এখন মিলে মিশে থাকো। বড় বউ মেনে নাও আর ঝামেলা কইরো নাতো। ( রাতুলের মা)
— বাহ! ভালোই তো হাদিস দিতে আসছেন। বছরেও একবার আপনার ছেলে বা আপনারে সেজদা দিতে দেখি না। আর এখন আসছেন চার টা বিয়ে জায়েজ এই হাদিস শুনাতে?
— বড় বউ!
— একদম চুপ! কি পেয়েছেন আপনারা আপনাদের আমি দেখে নিবো জেলের ভাত খাওয়াব চারটা বিয়ে জায়েজ এই হাদিস কেমনে মুখে আসে দেখব। আগে বড় বউয়ের পুরো অধিকার দিবেন। ইসলামে আরো মৌলিক বিষয় আছে ঐগুলো মানবেন তারপর আসবেন এই সব ফাফর বাজ কথা বলতে৷
‘…তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)…।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩)
দ্বিতীয় বিয়ের সর্ত আছে আগে ঐগুলো দেখেন। আপনার ছেলে আমার সাথে কখনো ভালো ব্যবহার করেনি সব সময় ঝামেলা করছে এদিক ওদিক চোখ দিছে এখন তো আবার বিয়ে করে আনছে। ও জীবনে সুবিচার করতে পারবে?
রাতুলের মা একদম চুপ হয়ে যায়। এখানে এখন কথা বলা বিপদ। ধুর আমি চুপ থাকি যা হবার হবে আমার কি।
অনেকক্ষণ ঝামেলা হওয়ার পর রিমা মেয়েকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। রুমে গিয়ে তনিমার সব কিছু রুম থেকে বের করে ভিতর থেকে আটকে দেয়।
রাতুল তনিমাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে যায়।
— আজকে থেকে এটা তোমার রুম। তুমি এখানেই থাকবে।বাইরে বের হওয়ার মোটেও চেষ্টা করবে না তাহলে জানে মেরে দিবো। তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালো রূপ দেখতে পাচ্ছো। আমাকে তোমার উপর রাগিয়ে দিয়ে আমার ভিতরের খারাপ রূপ বের করো না।
রাতুল তনিমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে যায়। যাতে বাড়িতে কন্টাক্ট করতে না পারে।
তনিমার রুমে কোনো খাট নেই শুধু একটা টেবিল আর পুরোনো কয়টা টিনের ট্রাং। তনিমা ট্রাঙের উপর মাথা দিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছে আর ভাবছে। বার বার কেনো আমার সাথে এমন হয়? কেনো আমার সংসার বার বার ভেংগে যায়। আমি তো কখনো কারো ক্ষতি চাইনি। তাও কেনো আমি সব সময় দোষী হই? কেনো ঠকে যাই।
এদিকে তনিমার ভাই তনিমার কোনো খোঁজ খবর পায়না। তনিমার ফোন অফ সাথে রাতুলের ফোন অফ।
তনিমার ভাই রাসেল পাঁচদিনের দিন আসে তনিমার শশুর বাড়িতে তনিমার খোঁজ নিতে কিন্তু এসেই রাসেলের রক্ত যেন মাথায় উঠে যায়,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,