বেলাশেষে part_21(শেষ পর্ব)
#adrin_anisha
.
আজ সুভার বিয়ে৷ কতদিন যে অপেক্ষা করেছে এই দিন টার জন্যে তার কোনো হিসেব নেই৷ ৪ বছর পর আজ সেই মহা প্রতিক্ষিত দিন। সুভার মনে নানান রকম অনুভুতি৷ খারাপ লাগা, ভালোলাগা, সব একসাথে ফিল হচ্ছে৷ মনের কোথাও এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে আবার কোথাও কাজ করছে বিষন্নতা।
মেঘা একা হাতে সব সামলাচ্ছে আজ৷ এই চার বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। মেঘা এখন কলেজে ইংরেজি প্রফেসর। শুভ্র এখন তার বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে। আর সুভা তার এসিস্ট্যান্ট। তাই খুব সহজেই দুজনের পরিবার মেনে নেয় একে অপরকে। খুব ধুমধাম করেই বিয়ে হচ্ছে ওদের।
.
মেঘা চারদিকের ডেকোরেশন দেখছে আর সব মিলিয়ে নিচ্ছে। তখনই একটা ছেলে এসে ওর হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিল। মেঘা প্রথমে ভেবেছিল কোনো প্রেম পত্র হবে হয়তো৷ কিন্তু পরে চিঠি পড়ে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল মেঘার।
নীলের চিঠি…..
.
“””কেমন আছো মেঘা? হয়তো ভালো, হয়তো খারাপ। ভালো থাকারই কথা। আমিই ছিলাম তোমার খারাপ থাকার কারন এখন তো আর আমি নেই। এখন তো ভালো থাকারই কথা।
হয়তো আমার চিঠি পেয়ে অনেক পুরোনো আঘাত আমার তাজা হয়ে গেছে তোমার। সত্যিই চাইনি তোমায় আবার আমার কথা মনে করিয়ে দিতে, কিন্তু সারাজীবন তোমার ঘৃণা নিয়ে আমার আত্না যে শান্তি পেত না। প্লিজ সব শোনার পর আর ঘৃণা করো না আমায়।
সেদিনের কথা মনে আছে কি তোমার? যেদিন আমি কলেজ আসতে পারিনি, সারাদিন অনলাইনে আসিনি। সেদিন হঠাৎই সকালে আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়। তারপর সেন্সলেস হয়ে যাই, যখন চোখ খুলি নিজেকে হাসপাতালে পাই। ডাক্তার সেদিন অনেকগুলো পরীক্ষা করতে বলে। আর ২ দিন পরে রেজাল্টের জন্য যেতে বলে। কেন যেন আমার তখনই মনে হয়েছিল আমি হয়তো আর বাঁচবো না। তাই পরের দিন তোমায় নিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে ছিল তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দ টা শোনার৷ কিন্তু তুমি বলোনি। যাই হোক, সেদিন রাতেই রিপোর্ট চলে আসে৷ আমার ব্র্যাইন ক্যান্সার ধরা পরে। ডাক্তার বলেছিল আমি যদি তখনি চিকিৎসা শুরু করি তাহলে সুস্থ হয়ে যাব। আমি মরতে চাইনি সুভা। তোমাকে সাথে নিয়ে বাচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তবুও মনে মনে যেন বুঝে গিয়েছিলাম আর দেখতে পাবো না তোমায়৷ তাই তোমাদের আমার ভাইকে দিয়ে সবার ওই মিথ্যে কথাগুলো ছড়িয়েছিলাম কলেজে। আজ ৩ বছর ৮ মাস ১২ দিন পরে জানতে পারলাম, আমার আর বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। শেষ বারের মতো দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই তোমার খোঁজে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু তোমায় সেদিন একটা ছেলের সাথে দেখে ভেবেছিলাম তুমি হয়তো এগিয়ে গেছ তোমার জীবনে। নিজেকে আর জড়াতে চাইনি তোমার সাথে। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম জানো। তাই আজ এই চিঠিটা লিখছি। আমি চাই না তুমি আমায় ঘৃণা করো। আমি জানি না আসলে ঠিক কি কি বলব তোমায়? এতো বছরের এত কথা জমে আছে। থাক না হয় সেসব কথা। কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো। তবে একটা কথা বলতে চাই, জীবনের প্রথম ভালোবাসা তুমিই ছিলে, তুমিই আছো, আর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তুমিই থাকবে ইনশাআল্লাহ।
ভালো থেকো সবসময়। আশা করি মুনাজাতে আমার জান্নাত কামনা করবে। কারো মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান। আমি তোমার মন ভেঙেছি। জানি না আমার স্থান জান্নাতে হবে কি না।
চিঠি পেয়ে আমাকে দেখতে ইচ্ছে করবে কি তোমার? তাহলে এসে দাড়িয়ো আমার কবরের পাশে। আমার আত্না শান্তি পাবে।
আর কিছু বলব না, ভালো থেকো সবসময়। বিদায়।
ইতি
তোমার ফাহিন ( নীল মেঘ)””
চিঠিটা পড়েই মাটিতে বসে পড়ল মেঘা। এখনো পাথর হয়ে আছে। মেঘাকে এভাবে দেখে সুভাও এসে দাড়ালো মেঘার পাশে। যে ছেলেটা চিঠি এনে দিয়েছিল সে নীলের ছোট ভাই ফাহিম। ফাহিম সুভাকে সব খুলে বলল কিভাবে নীল নিজেকে অপরাধী করে মেঘার জীবন থেকে দূরে চলে গিয়েছিল। আর কেন গিয়েছিল। মেঘা আর কিছু ভাবতে পারছে না।
একটা চিঠি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা আজ বুঝতে পারছে মেঘা। ফাহিনের দেয়া শেষ চিঠিটা হাতে নিয়ে কাঁদছে মেঘা। ভাবছে, আর কি সত্যিই কখনো দেখতে পাবে না সে তার ফাহিন কে?
পাশে বিয়ের কনে সেজে বসে আছে মেঘার বেস্ট ফ্রেন্ড সুভা , মেঘাকে নানান ভাবে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। কেও ই ভাবে নি এমন একটা শুভ দিনে এমন একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যাবে। কিছুক্ষন আগেও তো সব ঠিক ছিল। একা হাতে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ের সব কাজ করছিল মেঘা। একটা মাত্র চিঠি কিভাবে পারে সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি এলোমেলো করে দিতে? একটু আগেও যাকে অপরাধী ভেবে গালি দিয়েছিল সুভা এখন তার চোখেও করুনা আর অপরাধ বোধের অশ্রু।
.
.
নীলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা, সুভা আর শুভ্র। শুভ্র কবর জিয়ারত করে নীলের আত্নার শান্তি কামনা করল।
মেঘার চোখে জল নেই, আছে অনুশোচনা, সুভার চোখেও আছে অপরাধবোধ।
সত্যিই জীবনে কখনো কখনো কারো আগমনে যেমন মোড় পালটে যায়, তেমনি কারো চলে যাওয়াতেও জীবনের মোড় ঘুরে যায়। জীবন কারো জন্যে কখনোই থেমে থাকে না। তবে মনটা কখনো কখনো থেমে যায়।
কবরের পাশে গিয়ে একটা গোলাপ রেখে দিল মেঘা। মাটিতে হাত রেখে মনে মনে বলল,
– বিষন্নতার আড়ালে লুকিয়ে ছিল অনন্ত ভালোবাসা, যা বুঝেও হওতো তুই বুঝিসনি। জিতেও আজ হেরে গেছি আর হেরেও তুই আজ বিজয়ী।
.
.
( গল্পটার অনেক সুন্দর একটা এনডিং ভেবে রেখেছিলাম কিন্তু ফোনের সমস্যার জন্য ভালো করে লিখতে পারিনি। কেমন লেগেছে জানাবেন তার ভিত্তিতেই নেক্সট গল্প টা দেব। নাহলে বাদ দেব)