বেলাশেষে part_16

0
810

বেলাশেষে part_16
#adrin_anisha
.

” যদি চাও বৃষ্টি হব,
তোমার ভালোলাগার কারণ হব।
তোমার মাথার উপরের ছাদ হব,
রোদ, বৃষ্টি, ঝড় সব সয়ে যাব,
লুকিয়ে রাখব তোমায় আমার মনে।
যদি চাও, লাইব্রেরি হব,
তোমার গর্বের কারণ হব।
যদি চাও, বাতি হব
আলোতে ভরিয়ে দেব তোমার পৃথিবী।
যা চাও তাই হব,
তবুও বিনিময়ে তোমাকেই চাইব। ”
.
.
সুভার সামনে গোলাপের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। অন্য হাতে তার মায়ের দেয়া আংটি। কবিতা শেষ করেই লজ্জা পেল শুভ্র। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” আমি কবি নই, কবিতা আমার কখনোই পছন্দের ছিল না। তবে, সবাই বলে প্রেমে পড়লে নাকি সবাই কবি হয়ে যায়৷ আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তোমাকে ভালোবাসার পর থেকেই কেন জানিনা খুব লিখতে ইচ্ছে হয়। আরো অনেক কিছুই লিখেছিলাম। কিন্তু মনে হলো এটাই হয়তো ভালো বেশি। কিন্তু এটাও ভুলে গেছি। কিছু ভুল বললে কিছু মনে করোনা প্লিজ।”

– আর এ ভাই, তোর কবি হোয়ার ইতিহাস ই শোনাবি নাকি প্রোপজ ও করবি?

পেছনে সবাই হাসতে শুরু করল৷ শুভ্র সুভাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। সেখানেই একটা হল বুক করেছে সে। রিয়ারা সবাই আশে পাশেই ছিল। শুভ্রর কিছু বন্ধুও ছিল কিছুটা দূরে। শুভ্রর বোকা বোকা কথা শুনে কিছু না বলে পারল না তারা। ওদের কোথায় শুভ্র আবার লজ্জা পেল।
একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে সুভার দিকে আংটি টা এগিয়ে দিল। আবার বলতে শুরু করল,

” এটা আমার মায়ের আংটি, মা আমায় দিয়েছিল তাকে দেয়ার জন্য যাকে আমি জীবনসঙ্গী করতে চাই। আজ মনে হচ্ছে তাকে আমি পেয়ে গেছি। হ্যাঁ সুভা, তুমিই সেই মেয়ে। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানি না কিভাবে প্রোপজ করতে হয়। একটু এডজাস্ট করে নিও প্লিজ। আর একটা কথা আমি তোমার কতটা ভালোবাসি, একদিন হয়তো এই প্রশ্নটা আসবে তোমার মাথায়। এখনি বলে দিচ্ছি, কতটা ভালোবাসি জানিনা, তবে চোখ বন্ধ করলে মায়ের পড়ে তোমার মুখটাই ভেসে আসে। ”
নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল শুভ্র। এবার একবার সুভার দিকে চোখ তুলে দেখলো সুভার চোখ ভিজে গেছে। আবার একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলল,
” তুমি হয়তো ভাবছ আমি সবার মতো তোমার সামনে হাটু গেড়ে বসছি না কেন? হুম, আমি বসছিনা, কারণ, আমি মানি না যে ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য আমাকে নিচু হতে হবে, নাহ এটা আমার ইগো নয়। আমি কখনোই আমাকে তোমার চেয়ে নিচু ভাবতে পারব না, আবার ঠিক সেভাবেই তোমাকে কখনো আমার চেয়ে।নিচু ভাবতে পারব না। আমি সমানে বিশ্বাস করি। তোমার জায়গা আমার বুকে। আমি জানি না কিভাবে আমি তোমাকে বোঝাবো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। ”
সুভার চোখ থেকে পানি পড়ছে। এবার অসহ্য লাগছে শুভ্রর।
– আমি এতো কিছু বলছি আর তুমি কাদছো? এতোক্ষন ধরে তোমার সামনে হাত বাড়িয়ে আমার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে আর তুমি এমন অনুভুতিহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছ কিভাবে, তোমার কি মায়া হচ্ছে না সুভা? তুমি কি একটুও ভালো……

কথাটা শেষ করতে পারেনি শুভ্র। তার আগেই সুভা তাকে জরিয়ে ধরেছে। শুভ্রও যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। দুজনই দুজনকে জরিয়ে কান্না করে দিয়েছে।
সাথে সাথে চারদিকে তালি বাজা শুরু হয়। সুভা চমকে উঠে ছেড়ে দেয় শুভ্রকে। শুভ্র ও থমকে যায়। এতক্ষন হুশ ই ছিল না যে তাদের বন্ধুরাও আছে তাদের পাশে। চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সুভা।লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে তার। তখনি পাশ থেকে মেঘা এসে জড়িয়ে ধরল সুভাকে। তারপর সুভার বাম হাত টা এগিয়ে দিল শুভ্রর দিকে। শুভ্রকে ইশারা করতেই শুভ্রও আংটি পড়িয়ে দিল সুভাকে।
খুশিতে একলাফ দিল মেঘা। শুভ্রকে কনগ্রেটস করে হ্যান্ডশ্যাক করল মেঘা।
সুভাও এবার ওর আংটির দিকে একনজর তাকিয়ে, শুভ্রর বাহুতে একটা আস্তে চড় দিয়ে বলল,
” গাধা, এই কথাটা বলতে এতো সময় লাগলো কেন তোমার শুনি?”
মেঘাও এবার মুখ ভার করে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
– দুলাভাই, আমিও কিন্তু রাগ করেছি। আমাকে কিনা এই সিন থেকে এভাবে সরিয়ে দিলে তুমি?
শুভ্র এবার একটু লজ্জা পেল আর বলল,
” মেঘা তুমি যদি আমাকে শুভ্রই ডাকো তাহলেই খুশি হব, আর এটা আমি সকালেই ভেবেছিলাম যে সুভাকে তোমার থেকে আলাদা করা এতো সহজ নয়, আর আমি যদি তোমাকে বলে দিতাম যে আমি আজ কি করতে চলেছি.. তাহলে তুমি অবশ্যই সুভাকে বলে দিতে, সরি, বাট আমার কিছু করার ছিল না।

– আচ্ছা আচ্ছা, বুঝেছি। যাই করেছ ভালই করেছ। তবে একটা কথা, কবিতা টা অনেক মিনিংফুল ছিল, কিন্তু ততোটা ভালোছিল না। এখনো অনেক কাচা তুমি??

সবাই হাসতে শুরু করল। তারপর সবাই মিলে লাঞ্চ করতে শুরু করল। শুভ্র আর সুভা একই প্লেটা খাচ্ছে। এতে নাকি ভালোবাসা বাড়ে। সুভা যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছে।
মেঘা সেদিকে তাকিয়ে খুব রোমেন্টিক ফিল করল৷ সুভার জায়গায় নিজেকে আর শুভ্রর জায়গায় নীলকে কল্পনা করতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল মেঘা। পাশেই রিয়া বসেছিল,
– কি রে তুই তো দেখছি সুভার চেয়েও বেশি লজ্জা পাচ্ছিস৷ ব্যাপার টা কি, কারো কথা মনে পড়ে গেল নাকি?
মেঘাকে কথাগুলো বলেই, চোখ টিপ দিল রিয়া। মেঘা মুচকি হেসে পা দিয়া এক লাথি দিল রিয়া কে। আবারো আনমনে ভাবতে লাগল, সত্যিই কি তা হবে যা সে সপ্ন দেখছে?
সত্যিই কি এতো সুখ আছে ওর কপালে?
.
.
.
.
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে