বেলাশেষে part_15
#adrin_anisha
.
.
চারদিকে কোকিল ডাকছে। বসন্তের ছোঁয়া শুধু যে প্রকৃতিতে লেগেছে তা নয়, মেঘা আর সুভার মনেও লেগেছে। বসন্ত যায় যায় অবস্থা, অথচ ওদের মনে যেন এখনো বসন্তের শুরু।
.
রান্না করছে মেঘা। সুভা এখনো ঘুমাচ্ছে। প্রতিদিন তো সুভাই রান্না করে তাই আজ সুভাকে সারপ্রাইজ দেবে ভাবল মেঘা। আজ আগেই ঘুম ভেংগে গেছে মেঘার। বলা যায় রাতে ঘুমই হয়নি মেঘার। সারারাত নীলের কথা ভেবেই কেটে গেছে। কালকের ঘটনা মনে পড়তেই লজ্জায় পড়ে গেল মেঘা।
– ইসসস, কি রোমেন্টিক নীল। এতোটা ভালোবাসে আমায়। অথচ আমি জানতাম ই না যে কেউ আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে এতো টা ভালোবাসে।
.
মায়ের দেয়া শেষ চিহ্ন, মায়ের ডায়মন্ড রিং টা দেখছে শুভ্র। এই ডায়মন্ড টা খুব স্পেশাল শুভ্রর কাছে। এটা তার মা তাকে দিয়েছিল, এবং বলেছিল এটা তাকে দিতে যাকে সে জীবনসঙ্গী বানাবে। একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় শুভ্রর মা। সেদিন শুভ্র আর ওর মা ওদের ফার্মহাউস এ গিয়েছিল। শুভ্রর বাবা অফিসে ছিল। তখন ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না। মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতে হতো। কোনোভাবে মোমবাতি থেকে আগুন লেগে যায় ঘরে। আশেপাশের মানুষ আগুন নেভাতে থাকে। একজন সাহস করে ভিতরে গেলে শুভ্রর মা শুভ্রকে পার করে দেয় তার হাতে। কিন্তু নিজে বের হতে পারেনি।
মায়ের সাথে সেদিন মায়ের সব স্মৃতি গুলোও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর থেকেই সম্পুর্ণ একা হয়ে যায় শুভ্র। বাবাও এখন আরো বেশি করে বিজনেসে মনোযোগ দেয়া শুরু করেছে।আর বিয়ে করেননি তিনি। এখনো ভুলতে পারেনি তার প্রিয়তমাকে। শুভ্রর থেকেও দূরে রাখেন নিজেকে। ওনার কাছে তো শুভ্রই শেষ স্মৃতি ওনার স্ত্রীর। যতবার শুভ্রকে দেখে তার স্ত্রীর কথা মনে হয়। নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাই ইচ্ছে করেই দূরে থাকেন তিনি। শুভ্রও সবটা বোঝে তাই ভালোবাসার একটু ও কমতি হয়নি ওদের মাঝে।
সেই থেকে এই ডায়মন্ড রিংটাই ওর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এই ডায়মন্ড এর আর একটা স্পেশাল দিক আছে। এই ডায়মন্ড টার ভিতরে আর একটা হার্ট শেপ এর পাথর আছে নীল রঙের। আংটিতে আলতো করে চুমু দিয়ে চোখ বন্ধ করে একটা জোড়ে নিশ্বাস নেয় শুভ্র।
আজ তার কাছে দিন টা অনেক স্পেশাল। আজ তার মায়ের জন্মদিন। তাই, আজই সে তার মনের কথা বলবে। সবাইকে জানিয়ে দেবে সে পেয়ে গেছে তার মনের মানুষ। ফোনের গ্যালারি তে গিয়ে ওর, সুভার আর মেঘার ছবি গুলো দেখতে থাকে। মেঘার ছবি জুম করে একটা মুচকি হাসি দিল শুভ্র।
.
.
খাবার রেডি করে সুভা কে ডাক দেয় মেঘা। সুভা অবাক হয়ে গেল। অনেক প্রশংসা করল।
তারপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের জন্য বেরিয়ে পড়ল। দরজা খুলতেই আরেকটা সারপ্রাইজ।
আবারো দরজার সামনে গিফট। এবার আর ফুলের তোড়া নয়। এবার একটা ঝুড়িতে অনেকেগুলো কাঠগোলাপ রাখা। মেঘা তাড়াতাড়ি ঝুড়িটা নিয়ে গন্ধ নিতে লাগল। কাঠ গোলাপের গন্ধ টা অসম্ভব ভালো লাগে মেঘার। ইচ্ছে করে ফুল গুলো কে সারাজীবনের জন্য নাকের কাছে বেধে রাখতে। মেঘা খুশিতে লাফাচ্ছে। ইসস, নীল জানলো কি করে যে এটা মেঘার সবচেয়ে প্রিয় ফুল।
সুভার দিকে তাকাতেই হাসি থেমে গেল মেঘার। না জানি এখন কি কি বলবে? কি কি জিজ্ঞেস করবে? কি বলবে এখন ও সুভাকে? সুভাকে তো বলাই হয় নি যে নীল ওকে কি বলেছে।
কিন্তু আশ্চর্য সুভা কিছুই বলল না, উল্টো মুচকি হেসে একটা কাঠফুল মেঘার চুলে লাগিয়ে দিল, দারুন মানিয়েছে মেঘাকে। বাকি ফুলগুলো ঝুড়ি সহ ভিতরে রেখে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে পড়ল দুজনে।
দূর থেকে মুচকি হাসি দিল নীল। নিজের মাথার চুল গুলো ঠিক করে সেও চলে গেল তার গন্তব্যে।
.
.
কলেজে আসতেই চারদিক থেকে মেয়েরা এসে মেঘাকে ঘিড়ে দাড়ালো। মেঘা আর সুভা দুজনই অবাক হয়ে গেল। যাদের সাথে ভালো করে প্রতিদিন কথাও হয় না তারাও এসেছে। এদের মধ্যে রিয়ার সাথেই ওদের একটু ভালো সম্পর্ক।
– এই মেঘা চল না তোর সাথে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে… (রিয়া)
– হুম চল, এতে এতো ড্রামা করার কি আছে। এই সুভা চল,
মেঘার সাথে সুভা যেতে নিলেই সবাই মিলে সুভাকে আটকে দিল।
– এই সুভা, তুই কোথায় যাচ্ছিস? আমাদের মেঘার সাথে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। তুই থাক এখানেই।
সুভা কিছুটা মন খারাপ করে মেঘার দিকে তাকালো। মেঘাও রেগে গেল,
– ওই আমার আর সুভার মাঝে কোনো সিক্রেট নেই। যা আমাকে বলতে পারবি তা ওকে বলতে পারবি না, এটা কেমন কথা।
– এটা এমনি কথা। বোঝার চেষ্টা কর মেঘা। সত্যি দরকার।
– আমি গেলে সুভার সাথেই যাব, না হলে যাব না। তাছাড়া ও এখানে কি করবে একা একা।
– আর এ একা না তো। না মানে, জাস্ট একটুর ব্যাপার ১ মিনিট সত্যি।
– এই মেঘা, জেদ করিস না, তুই যা। আমি এখানে ওয়েইট করছি, তুই ওদের কথা শুনে আয়। অনেক দরকার বলেই তো এভাবে বলছে। যা তুই।
মেঘাকে কোনোমতে টেনে নিয়ে গেল সবাই। সুভা একা দাঁড়িয়ে ফোন বের করে গেম খেলতে লাগল।
.
.
.
চলবে….