বেলাশেষে part_14
#adrin_anisha
.
মেঘা ভয়ে কেদে দিয়েছে। এই প্রথম কোনো ছেলে ওকে এভাবে ধমক দেয়ার সাহস করেছে। আর তাও কিনা বলে সে ডেটিং করছে? এ কি মেনে নেয়া যায় নাকি। যে মেয়েটা ছেলেদের দিকে ভালো করে তাকায়নি পর্যন্ত তাকে কিনা আজ এসব শুনতে হচ্ছে?
মেঘা মনে মনে এগুলো ভেবেই কেদে চলেছে। কিন্ত নীলের রাগ এখনো কমেনি। তবে মেয়েটাকে এভাবে কাদতে দেখে ভীষণ মায়া হচ্ছে ওর।
– এই মেয়ে এই। কাদছ কেন শুনি? আমি কি মেরেছি নাকি তোমাকে। উলটো তুমিই আমার হাতের ১২ টা বাজিয়ে দিয়েছ কামড়ে।
নীলের কথায় রাগ হয় মেঘার। এবার আঙুল তুলে নীলের দিকে এগিয়ে গেল সে।
– এই এই এই। কি মনে করেন নিজেকে হ্যাঁ? আপনি তো দেখছি পুরা গুন্ডা। শিক্ষক হয়ে নিজের ছাত্রির সাথে এমন ব্যাবহার করতে লজ্জা করে না। তারউপর বলছেন আমি নাকি কোন ছেলের সাথে ডেটিং করছি। আজব, আমি তো কোনো ছেলের সাথে কথাই বলি না। শুধু শুভ্র ছাড়া।
শুভ্রর নাম শুনে আবার রাগ হলো নীলের। এগিয়ে গেলে মেঘার দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়। নীল মেঘার দুপাশে দুটো হাত রেখে মেঘার চোখে চোখ রেখে বলল শান্ত গলায় বলল,
– কেন শুভ্রর সাথে কথা বলতে হবে কেন? কি হয় ও তোমার? আর কালকে তো ওর সাথেই ছিলে তুমি রেস্টুরেন্টে তাই না। কত সুন্দর করে ও তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, আবার পানি খাইয়ে দিল। বাহ। খুব সুন্দর।
– কি বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে? সুভা শুভ্রকে ভালোবাসে, আর শুভ্রও সুভাকে ভালোবাসে। ওরা এখনো কাউকে বলতে পারেনি। আর কালকে সেখানে সুভাও ছিল সেটা দেখেন নি? বাই দা ওয়ে, আমি আপনাকে কেনো এসব বলছি। আপনার এসব জেনে কি হবে। আপনি শিক্ষক আর এখন আপনি লিমিট ক্রস করছেন। যেতে দিন আমায়।
মেঘা নীলকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছিল। মেঘার কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেল। নিজেকে অনেক ছোট মানষিকতার মানুষ বলে মনে হচ্ছে এখন। ভালোবাসায় সন্দেহ বা অবিশ্বাস বা হিংসা কোনোটাই আসা উচিত না। এতেই ভালোবাসা নষ্ট হয়। নীল এতো বড় একটা ভুল করলো কি করে। মেঘা দরজার কাছে নীল অনেক শান্ত করে মেঘাকে ডাকল,
– মেঘা
মেঘা না চাইতেও থেমে গেল। নীলের কন্ঠ শুনে প্রচুর মায়া হচ্ছে মেঘার। এতক্ষন তো ভালই রাগী ছিল হঠাৎ কি হলো আবার? পেছনে তাকাতেই লাফিয়ে উঠলো। নীল তার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে।
– আই লাভ ইউ মেঘা। অনেক ভালোবাসি তোমায়। আজ থেকে নয়, কাল থেকে নয়, যেদিন কলেজে তোমায় প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেও নয়। আরো অনেক আগে থেকে। যেদিন প্রথম তোমায় দেখেছিলাম সেদিন থেকেই। প্রথম যেদিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিন ছিল ১৬ ই ডিসেম্বর। তুমি গিয়েছিলে তোমার কলেজ থেকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে , কলেজ ড্রেস পড়ে, কড়া রোদ এ দাড়িয়ে ছিলে দলের ক্যাপ্টেন হয়ে। ঘেমে নেয়ে একাকার। সেদিম তোমার ওই ঘার্মাক্ত মুখ টা বড্ড টেনেছিল আমায়। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট। যদিও আমি এসবে বিশ্বাস করি না। কাউকে প্রথম দেখায় ভালোলাগা হয়, ভালোবাসা কখনোই হতে পারে না। অনেক কষ্টে তোমার আইডি জোগাড় করেছিলাম। মনে আছে আবির আহমেদ নামের আইডি টা। তোমাকে অনেক বার নক করেছিলাম তুমি সিন পর্যন্ত করনি। পরে জানতে পারলাম তুমি ছেলেদের সাথে কথা বলো না। তখন নতুন একটা আইডি খুললাম, সামিয়া ইসলাম দিয়ে। এখন নিশ্চই চিনতে পারছ। হুম, বলতে পারো আমি হাফ লেডিস, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কি করব বলো আমার কি আর কোনো উপায় ছিল? ছিল না।
.
.
মেঘা সবটা কাহিনি খুলে বলল নীল। মেঘা ভূত দেখার মত চমকে আছে। একটা কথাও বলতে পারছে না। কেও তাকে এতোটা ভালোবাসে সেটা ভাবতেই পারছে না। নীল মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলল,
– উইল ইউ মেরি মি মেঘা?
মেঘার যেন নিশ্বাস আটকে গেছে। আর এখানে থাকতে পারবে না সে। দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নীল সেদিকে তাকিয়ে ভাবিতে লাগল, ও কি একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে?
উফফ নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এখন নীলের। ও ঠিক করেছিল আগে মেঘার মনে ওর জন্য ভালোবাসা জাগাবে তারপর সব খুলে বলবে। কিন্তু এখন কি হবে সেটা একমাত্র আল্লাহ ই ভালো বলতে পারে।
.
মেঘা দৌড়ে ক্লাসরুমে গিয়ে বসে পড়ল। নীলের কথা ভাবতেই বেঞ্চের উপর হাত রেখে উপুড় হয়ে মাথা রাখল সেখানে। লজ্জায়, ভয়ে এ যেন এক অন্য রকম অনুভুতি। অন্যরকম ভালোলাগা।
সুভা এসে মেঘার মাথার টোকা দিতেই লাফিয়ে উঠলো মেঘা। তাকিয়ে দেখে সুভা দাঁড়িয়ে আছে।
– কিরে মাথা ব্যাথা?
– না তো। আয় বস।
সুভা বসেই বলতে লাগল কিভাবে শুভ্র আর ও মিলে প্লেন করেছে তারা অসহায় বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যাপারে। কিন্তু মেঘার সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
নীল কি সত্যিই তাকে এতোটা ভালোবাসে? সত্যিই কি এতোটা ভালোবাসা সইবে তার কপালে?
.
.
.
.
চলবে….
( কেমন হয়েছে তা অবশ্যই জানাবেন কিন্তু।)