বেলাশেষে part_12
#adrin_anisha
.
.
দরজার সামনে গিফট বক্স টা দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠল মেঘার। শুধু গিফট না সাথে একটা ফুলের তোড়াও আছে। তাও আবার টাটকা লাল গোলাপ। মেয়েরা এমনেই ফুলের পাগল, সেখানে কেও যদি এতো সুন্দর করে ফুলের তোড়া বানিয়ে রেখে যায় সেটা কি আর ফেলে রাখা যায়। এমনও হয়েছে যে শুধু মাত্র একটা ফুল পাবে বলে অনেক ছেলের প্রোপজ মেনে নিয়েছে অনেক মেয়ে।
মেঘা তাড়াতাড়ি ফুলের তোড়াটা এক হাতে আর গিফট বক্স টা অন্য হাতে নিয়ে ফুলের গন্ধ নিতে লাগলো মেঘা। দূর থেকে সেটা দেখে কেও একজন সস্তির নিশ্বাস ফেলল। মেঘা কে অপরূপ লাগছে দেখতে। এমনিতেই সকাল হলো পবিত্র সময়। তার উপর ঘুম ঘুম মুখ নিয়ে মেঘা দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো পেছনে খোপা করা। কিছু ছোট ছোট চুল দুপাশে বেড়িয়ে আছে। আর হাতে ফুল। কয়েকটা ছবি না তুলে পারল না নীল। দূর থেকে জুম করে তুললেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেঘাকে। একদম পরী।
-কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?
মেঘাকে পাশে না পেয়ে ঘুম ভেংগে যায় সুভার। তাকিয়ে দেখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে ফুল আর বক্স টা দেখতে পায় নি সুভা। মেঘাকে ডাকতেই তাড়াতাড়ি করে দরজা বন্ধ করে ঘরে এল মেঘা। মেঘার হাতে বক্স আর ফুল দেখে ঘুম উড়ে যায় সুভার।
– কিরে এগুলো কোথায় পেলি? এক সেকেন্ড আমার জন্য এনেছিস? কিন্তু আজকে কি আমার জন্মদিন নাকি?
তাড়াতাড়ি ফোন অন করে তারিখ টা দেখলো সুভা।
– কি রে আজ তো আমার জন্মদিন না। তুই কি আমার জন্মদিন ভুলে গেলি নাকি? আচ্ছা যাই হোক তুই এতো কষ্ট করে এনেছিস আমি কি না করতে পারি। আমি নেব এগুলো। দে।
এতক্ষন সুভার কথাগুলো শুনে প্রচুর হাসি পাচ্ছিল মেঘার। কিন্তু হাসি চেপে দেখতে চেয়েছিল সুভা আর কি কি বলে। কিন্তু এখন আর হাসি আটকে রাখতে পারল না মেঘা। বিছানার উপর শুয়ে পেটে হাত দিয়ে হাসতে লাগল। কিছুতেই যেন হাসি থামছে না। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল মেঘার। সুভা সেদিকে মুখ বাঁকা করে তাকিয়ে আছে।
– কি হয়েছে শুনি, এত হাসার কি আছে?
– হাসবো না তো কি করব? কিছু না জেনে বুঝেই তুই এতো বড় একটা রচনা লিখে ফেললি।
– কেন কি করলাম আমি?
– আরে পাগলি, এই গুলো ওখানে দরজার সামনে রাখা ছিল। কেও এসে কলিং বেল বাজিয়ে ছিল শুনিস নি?
– না তো। লক্ষ্য করিনি। কে ছিল?
– সেটা জানলে তো হতোই। দাড়া খুলে দেখি বক্স টা।
– হুম চল।
বক্স এর ভিতরে একটা নীল রঙের জামা ছিল। আর তার সাথে একটা একটা কার্ড সেটাতে সরি লেখা ছিল। মেঘা তো খুশিতে লাফ দিল। কিন্তু পরের মুহূর্তেই আবার ভাবল কে দিল গিফট টা। জামার রঙটা ও নীল।মেঘাও মনে মনে ভাবছে নীলের কথাই। নীলই আবার দিয়ে যায় নি তো?
সুভা মেঘার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল আর বলল,
– বাহ, “নীল রঙ,” “সরি মেঘা,” এতো সুন্দর ফুলের তোড়া। হায় মে মার জাওয়া।
– তোর কি মনে হয় এটা কে পাঠিয়েছে?
– আজব তো। তুই যে এতো বোকা তা তো আমি আগে জানতাম না। নীল স্যার ছাড়া এটা আর কে পাঠাবে বল। যেহেতু সরি লেখা, তার উপর নীল ই তো তোকে কালকে এতো বোকা দিল।
– হুম তা ঠিক। কিন্তু স্যার শুধুমাত্র এই কারণে এতো কিছু করল?
– আমার মনে হয় স্যার তোকে পছন্দ করে। ভেবে দেখ যে ছেলেটা সামান্য তোর মন খারাপ হয়েছে বলে এতো কিছু করল সে তোকে ভালোবাসে কি কি করবে?
– চুপ কর সুভা। স্যার হন উনি। এসব চিন্তা করাও পাপ।
– হুম তা ঠিক কিন্তু৷ তুই ই বল স্যার আর ছাত্রীর কি বিয়ে হচ্ছে না? তার উপর নীল স্যার তো এতো টা বুড়া ও না। যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। মনে আছে যখন প্রথম ওনাকে দেখেছিলাম ভেবেছিলাম উনি হয়তো আমাদের সাথেই পড়েন অথবা আমাদের সিনিয়র হবেন। কিন্তু উনি যে টিচার সেটা কি সপ্নেও ভেবেছিলাম বল?
– হুম তা ঠিক। ধুর বাদ দে তো। দেখি জামা টা কেমন।
মেঘা জামা টা বের করে দেখল একদম প্রিন্সেস এর মতো একটা লং গাউন। জামা টা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেরনুপির ধরলো মেঘা। দারুন সুন্দর জামা। সফট এবং বুকের উপর পাথর দিয়ে কাজ করা।
.
আজ কলেজে অনেক ফুরফুরে মুড নিয়েই ঢুকলো মেঘা আর সুভা। দুজনেই খুব খুশি। মেঘার খুশির কারণ নীল। আর সুভার কারণ শুভ্র। কাল রাতে শুভ্রর সাথে কথা বলে একদম অন্যরকম লেগেছে৷ মনে হয়েছে সেও তাকে পছন্দ করে। নাহলে মন খারাপের সময় এতো জন থাকতে ওকেই কেন ফোন দিল সে?
কিছুটা সামনে গিয়ে প্রতিদিনের মতো আজও শুভ্রকে দেখা গেল ওই ছেলেগুলোর সাথে একটা বেঞ্চের উপর বসে আছে। জায়গাটাতে আগে কোনো বসার জায়গা ছিল না। এখন হয়তো ওরা এনেছে নিজেদের সুবিধার জন্য। জায়গাটা একদম গাছপালার ভিতরে। তাই সেখানে কেও যায় ও না আর সেদিকে কারো নজর ও পড়ে না। কিন্তু সুভার স্বভাব হচ্ছে যা কারো নজরে আসবে না সেটা ওর নজর এ আসবে। আজ হাতে বিরিয়ানি নেই। আছে ভাত, আলুর ভর্তা আর ডাল। সুভা এগিয়ে গেল সেদিকে। মেঘাও চলে গেল ক্লাসে।
– কি ব্যাপার, আজ হাতে বিরিয়ানি নেই। আছে ভাত, আলুর ভর্তা আর ডাল। ব্যাপার কি?
পেছন ফিরে সুভাকে দেখে মুচকি হাসলো শুভ্র। ওকেও বসার জন্য জায়গা করে দিল।
– প্রতিদিন বিরিয়ানি না তো এরা খেতে পারবে আর না তো আমি খাওয়াতে পারব। সেরকম ক্ষমতা আমার বা ওদের কারোরই নেই। তাছাড়া যতই সবাই বিরিয়ানির পাগল হোক না কেন। তৃপ্তি তো এই সাদা-মাটা খাবার গুলোতেই আসে।
– ইসস, চুপ করো তো। তোমার এতো ভালোমানুষি আমার আর সহ্য হয় না।
সুভার কথায় সবাই হেসে দিল।
.
মেঘা চারদিকে নীলকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। হয়তো আসেই নি এখনো। মন খারাপ করে আবার উল্টো দিকে ফিরতেই কারো সাথে ধাক্কা খেল।
মেঘা আহ বলে চোখ বন্ধ করে নিল। আর নাকে হাত দিয়ে ডলতে শুরু করল। নাকটা পুরো ফাটিয়ে দিয়েছে। মেঘা রেগে কিছু বলবে তার আগে তাকেই একটা ধমক শুনতে হয়।
.
.
.
চলবে…….
( সবার গঠনমূলক কমেন্ট আশা করছি।)