বেলাশেষে part_11
#adrin_anisha
.
শুভ্র সবটা লক্ষ্য করেছে। বুঝতে পারছে নীল আর মেঘা দুজনই একে অপরের প্রতি দূর্বল। একটা হতাশা ভরা নিশ্বাস নিল সে।
নাহ ওর মনে কোনো হিংসা নেই। হিংসা করতে সে শেখেনি। শুধু একটু খারাপ লাগল। বুঝতে পারল এবার তাকে মেঘার রাস্তা থেকে সরে আসতে হবে।
.
.
অফিসরুমে বসে আছে নীল। মনটা বড়ই বেহায়া। বারবার কেন মেঘার কথাই ভাবছে?
– মেঘা, মেঘা, মেঘা।
শান্ত গলায় বারবার নামটা উচ্চারণ করছে নীল। খুব শান্তি লাগছে। মেঘা যে তার রক্তে মিশে আছে। তাই ওর নামটাও নীলকে শান্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রথম যেদিন মেঘা কে দেখেছিল সেদিন থেকেই ভালোলাগে তাকে। আর সেই ভালোলাগার জন্যেই মেঘার বিষয়ে জানতে খুব ভাল লাগত তার। যখন সব জানতে পারল, বাবা ছাড়া মেয়েটার জন্য অনেক মায়া হলো তার। কখন যে সেটা ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেছে নিজেই বোঝে নি নীল। ফেসবুকে একটা ফেক আইডি দিয়ে কথা বলেছিল মেঘার সাথে, রিয়েল আইডি দিয়ে, রিয়েল পরিচয় দিয়ে কথা বলার সাহস হয়নি কখনো। কথা বলতে বলতে মেঘার মনুষ্যত্ব দেখে পাগল প্রায় নীল। ভালোবাসা পরিমাপ করা গেলে নীলের ভালোবাসা হয়তো সব সীমা অতিক্রম করতো। তাই দেরী না করে মা-বাবা কে মেঘার বিষয়ে সব বলে দিল নীল। আর তারাও মেঘাকে দেখে খুব পছন্দ করেছেন। তাই পরের দিনই মেঘার মায়ের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যান তারা। মেঘার মায়ের ও বেশ পছন্দ হয় নীলকে। কিন্তু, নীলের তখনো চাকরী হয়নি তাই মেঘার মা এতোটা সাহস পায়নি। বাবা ছাড়া মেয়েটাকে তো আর যার তার হাতে তুলে দেয়া যায় না। তাই সব কিছু বুঝিয়ে বলে দিল নীলের বাবা মা কে৷ তারাও বুঝতে পারেন এবং অপেক্ষা করতে রাজী হন৷ নীল কিছুদিন আগে থেকেই মেঘার কলেজে শিক্ষকের পদে আবেদন দিয়েছিল, আশ্চর্য ভাবে যেদিন মেঘা নীলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল সেদিনই কলেজ নীলের প্রস্তাব মেনে নেয়। নীল চাইলে বলতে পারত মেঘার মা কে যে তার চাকরি হয়ে গেছে। কিন্তু সে ভাবলো আগে মেঘার মনে জায়গা করে নিতে হবে। সে জন্যেই তো তার পরিচয় এখন নীল। নীলের আসল নাম ফাহিন আহমেদ নীল। মেঘার মা কে ফাহিন নামটাই বলা হয়েছিল। নীল নাম টা তিনি জানেন না। তাই এখানে সেই নাম টাই ব্যাবহার করল নীল। যাতে মেঘার সন্দেহ না হয়।
কিন্তু এখন নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হলো নীলের। যার জন্য এতো কিছু তাকেই কষ্ট দিচ্ছে সে। কিন্তু না বেশিদিন আর কষ্ট সহ্য করতে হবে না। খুব তাড়াতাড়িই মেঘাকে নিজের করে নেবে নীল।
.
.
.
চারদিকের আলো জ্বলে উঠেছে, প্রাকৃতিক আলোর সমাপ্তি আর কৃত্রিম আলোর শুরু। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সুভা। চাঁদ খুঁজছে সে। কিন্তু আজ তো অমাবস্যা। আকাশের মতো সুভার মনটাও খুব খারাপ আজ। আজকে শুভ্র একটা কথাও বলেনি সুভার সাথে। তাহলে কি কোনো কারণে মন খারাপ শুভ্রর? এসব ভাবতে ভাবতেই শুভ্র কল এলো৷ মুহুর্তেই হাসি ফুটে উঠল সুভার মনে। মেঘা দেখলো বিষয় টা। সেও মুচকি হাসলো। এখন আর রাগ নেই শুভ্রর উপর। সত্যিই ভালোবাসা মানুষকে বদলে দেয়।
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন আপনি?
– ভালো, আপনি?
– এই তো ভালই,
– সত্যিই কি ভালো?
– না মানে মন টা একটু খারাপ, তাই তো আপনাকে কল দিলাম,
– ওহ, তাই?
– হুম, কিন্তু আপনি জানলেন কি করে যে আমি ভালো নেই?
– হয়তো মনের মিল
কথাটা বলেই খিক করে হেসে দিল সুভা।
আরো কিছুক্ষন কথা বলে হাসি-দুষ্টামি করে ফোনটা রেখে দিল সুভা। মেঘা সবটা দেখে সুভাকে খেপাতে শুরু করল। আর সুভাও স্বিকার করে নিল যে সে শুভ্রকে ভালোবাসে। মেঘা ধরেছে সুভাকে ট্রিট দেয়ার জন্য, নাছোড়বান্দা। অবশেষে সুভাও রাজি হয়ে গেল।
.
.
সুভার সাথে কথা বলে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে শুভ্রর৷ মেয়েটা সত্যি যাদু জানে। যতক্ষন ওর সাথে থাকে মনটা খুব ফুরফুরে থাকে। অনেক ভালোলাগে মেয়েটাকে। মেঘাকে ভুলতে এতোটুকুও কষ্ট হচ্ছে না শুভ্রর। কারন টা শুভ্রও জানে। মেঘার প্রতি যেটা ছিল সেটা শুধুই ভালোলাগা, আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে ক্রাশ। আর ক্রাশ তো নায়িকাদের প্রতিও থাকে তাই বলে তাদের তো আর ভালোবাসা যায় না। মেঘাও তেমন ছিল। ব্যাপারটা সঠিক সময়ে বুঝতে পারল শুভ্র আর বেশি দেরী হলে হয়তো ভালোলাগাটা ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যেত। অনেক বেচে গেছে। কিন্তু সুভার প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করে, ওকে সারাক্ষন দেখতে ইচ্ছে করুক আর না করুক ওর কথাগুলো সারাক্ষন শুনতে ইচ্ছে করে।
তাই তো মন খারাপের সময়টাতে এত এত বন্ধু থাকা সত্ত্বেও সুভার কথাই সবার আগে মনে পড়ল শুভ্রর।
সুভার কথা ভাববেই ঘুমিয়ে পড়ে শুভ্র।
.
কলিং বেল এর শব্দে ঘুম ভেংগে যায় মেঘার৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৭ টা বাজে। হয়তো বুয়া এসেছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলল মেঘা। কিন্তু কেউ নেই। হয়তো ঘুমের ঘোরে ভুল শুনেছেম দরজা বন্ধ করতেই আবার শব্দ। এবার ঘুম উড়ে গেল মেঘার। আবার দরজা খুলল, কিন্তু এখনো কেও নেই। এবার বিরাট বিরক্ত হলো মেঘা। দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন দেখলো ওই দিনের মতো আজও একটা গিফট বক্স রাখা।
.
.
.
চলবে…
( আপনারা গল্প পড়ে যদি না জানান কেমন হচ্ছে তাহলে তো আমি লেখার উৎসাহ পাই না। আশা করি সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন)