বেলাশেষে part_10
#adrin_anisha
.
– দেখো তোমার জন্য আমার কোনো ফালতু টাইম নেই। যদি কালকের ফোন দেয়াটাকে ভাবো যে গিফট দিয়েছি তাহলে ভুল করছো। আমি জাস্ট তোমার পাওনা মিটিয়েছি। এখানে মাথায় উঠে নাচার মত কিছুই হয়নি, অথবা ধন্যবাদ বলার ও কোনো কারন নাই।
কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে চলে গেল নীল। আর মেঘা টলমল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে। কান্না পাচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে গলার মাঝেই আটকে আছে কান্নাগুলো। কিন্তু আসতে পারছে না। কারণ চোখ পর্যন্ত আসার।অনুমতি তাদের নেই। একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল মেঘা। পেছন থেকে সুভাও দেখলো সবটা।
কি এমন বলেছিল মেঘা। শুধু ধন্যবার ই তো বলতে এসেছিল। আর বলেছিল এতো কিছুর কোনো প্রয়োজন ছিলো না। আর এই ব্যাটা নীল খামখা কতোগুলো কথা শুনিয়ে দিল।
সুভারও অনেক খারাপ লাগছে মেঘার জন্য। এই প্রথম তো মেয়েটা কোনো ছেলের সাথে ভালো করে কথা বলতে গেল, এই প্রথম কোনো ছেলেকে ধন্যবাদ বলতে গেল আর এই প্রথম কোনো ছেলে তাকে এভাবে অপমান করল।
.
.
– একেই বলে শক্তের ভক্ত, নরমের গরম।
মেঘা একা একা বসে আছে ক্লাসরুমে। সামনে একটা বই, যদিও বইয়ের দিকে তার নজর নেই৷ সে কিছু ভাবছে। সুভার খুব মায়া হলো মেঘার জন্য তাই নিজেকে সংযত করে মেঘার মন ভালো করার জন্য কথাটা বলল।
– মানে?
– মানে আবার কি। এমনিতেতো অনেক বুদ্ধি মতি আর এটা বুঝিস না। দেখ, তুই যতদিন ছেলেদের পাত্তা দিতি না ততোদিন ছেলেরা তোর পিছুপিছু ঘুরতো। আর আজ যখন তুই ভালো ব্যবহার করতে গেলি তখন দেখ কি হলো।
– তাহলে কি তুই বলছিস আমি ভুল করেছি ভালো ব্যবহার করে?
– মোটেও না। মানুষ যা অস্ত্রের আঘাতেও করতে পারে না তা শুধু মাত্র ভালো ব্যাবহার দিয়েই করা যায়।
– তাহলে?
– তাহলে আর কি, তুই সেটাই করবি। ওর সামনে এলেই এমন ভাব নিবি যেন তুই তাকে চিনিস ই। তোর খারাপ ব্যবহার করারও প্রয়োজন নেই আবার বেশি মিল দেয়ারও প্রয়োজন নেই। তাহলেই দেখবি কিভাবে নিজেই ছুটে আসবে।
– কিন্তু একটু পরেই তো স্যারের ক্লাস। তখন কি আমি ইগনোর করতে পারব?
– কেন পারবি না, শোন তুই চোখ দুটো বইয়ের দিকে রাখবি আর কান দুটো স্যারের দিকে। এতে স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবি এবং ইগনোর ও করা হলো।
– বাহ দারুন আইডিয়া তো। এবার দেখ আমার ক্যালমা?
সুভা আর মেঘা দুজনেই শয়তানি হাসি দিয়ে হাই ফাইভ দিলো। তখনই ঘন্টা পড়ে গেল। এখন নীলের ক্লাস। মেঘা এমনিতেই ইংরেজিতে অনেক ভালো। তাই এই ক্লাসে তার ফুল কনফিডেন্স থাকে। তবুও আজ নীল আসার সাথে সাথে হার্টবিট বেড়ে গেছে। একবারের জন্যেও তাকায়নি ওই দিকে। মুখও হাসিখুশি রেখেছে কিন্তু নীলের চোখ বারবারই মেঘার দিকে পড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করেও আটকে রাখতে পারছে না চোখ দুটো কে। মেঘার হাসি খুশি মুখ যেন তীরের মতো বিধছে নীলের কাছে৷ আর মেঘার তাকে এভাবে ইগনোর করাটাও সহ্য হচ্ছে না নীলের। বুঝতে পারছে অনেকটা।কষ্ট দিয়ে ফেলেছে তাকে। কিন্তু নীল চায় মেঘা তাকে দেখুক। তাই বাধ্য হয়ে ডাক দিল মেঘাকে।
– মেঘা দাড়াও।
মেঘা নামটা শুনেই মেঘা থমকে গেল, নীলের চোখে চোখ পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলতে চাইলেও পারলো না। বেহায়া চোখ সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তবুও অনেক কষ্টে চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল মেঘা।
মেঘার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে একটা প্রশ্ন করল, মেঘা ওর দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিয়ে দিল। নিরুপায় হয়ে মেঘাকে বসতে বলল নীল৷
কোনোমতে তাড়াতাড়ি ক্লাস নিয়ে ঘন্টা শেষ হওয়ার আগেই চলে গেল ক্লাস থেকে। সবাই বেশ অবাক হয়ে গেল। সবাই ভাবলো স্যারের কোনো প্রবলেম হয়েছে হয়তো বাসায়। তবে সুভা বেশ বুঝতে পারছে মেঘার জন্যেই নীলের মন খারাপ হয়েছে। মনে মনে একটু খুশি হলো, কারন তার বেষ্টি যার উপর ফিদা, সেও তার বেস্টির উপর ফিদা।
কিন্তু মেঘাও বুঝতে পারল না নীলের হলো টা কি। বারবার দরজায় তাকাচ্ছে। ভাবছে এই হয়তো নীল আবার আসবে। কিন্তু ওর দিকেও যে বার কেও তাকাচ্ছে সেটা তো সে দেখেই নি।
সেও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে নীল আর মেঘার মাঝে কিছু তো আছে।
.
.
.
.
চলবে….