বেলাশেষে ১৯
#বেলাশেষে
#part_19
#adrin_anisha
.
-কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটা তো কলেজের রাস্তা নয়।
– গেলেই বুঝতে পারবে কোথায় যাচ্ছি।
– আবার কোথাও পাচার করে দেবে না তো?
– হয়তো, দিলেও দিতে পারি।
নীল আর মেঘা দুজনই হাসলো৷ কেন জানিনা আজ মেঘার একটু ও ভয় করছে না নীলের সাথে। নীলের জায়গায় অন্য যে কেও থাকলে ও কখনোই আসতো না। নীলের প্রতি এতোটা বিশ্বাস কিভাবে জন্মালো মেঘার। এর উত্তর মেঘার কাছেও নেই। সত্যিই কি কাওকে মাত্র এ কয়টা দিনে ভালোবাসা যায়?
.
নীল বাইক টা একটা নির্জন জায়গায় দাড় করালো। নির্জন হলেও জায়গা টা ভয়াবহ নয়। চারপাশের দৃৃশ্য মনোরোম সুন্দর। মেঘা প্রকৃতি দেখতে এতোটা ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিল যে পেছনে যে নীল নেই সেটা দেখতেই পায়নি। হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখে নীল কোথাও নেই। রাস্তার পাশে গাছগাছালি। আর তার একপাশে ধান ক্ষেত অন্য পাশে মাটির উচু স্তুপ। সাধারণ মানুষের জন্য এটাই পাহাড়। আর তার ওপাশে মনে হয় পুকুর আছে। কিন্তু গাছের জন্য আর স্তুপ টার জন্য দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আশেপাশে কোথাও নীল নেই নীলের বাইক টাও নেই। এবার ভয় হচ্ছে মেঘার।
নীলের নাম ধরে কিছুক্ষন ডাক দিল কিন্তু কারো সাড়াশব্দ নেই। ভয়া কান্না এসে গেল মেঘার।
কাদতে কাদতে চারদিকে দৌড়াতে থাকলো আর নীলের নাম ধরে ডাকতে থাকলো৷ কিন্তু কোথাও নীলকে খুঁজে পাচ্ছে না মেঘা। শেষে মাটিতেই বসে গেল মেঘা। দুই হাটুর উপর হাত রেখে তারউপর মাথা রেখে কাদতে লাগল।
তখনি মাথায় কেও টোকা দিল। ভয়ে চমকে উঠে মেঘা। তাকাতেই দেখে নীল ২ হাতে ২টো কফির কাপ নিয়ে ওর দিকে ঝুকে দাড়িয়ে আছে৷
– কি হলো এখানে এভাবে কাদছ কেন?
মেঘা দাঁড়িয়ে নীলের বুকে ইচ্ছে মতো ঘুষি মারতে শুরু করল। নীল দুই হাত দুই দিকে দাঁড়িয়েছে যেন হাতের কফি না পড়ে যায় আর মুচকি হেসে মেঘার মার সহ্য করছে।
– কি করছ কি? এতো কষ্ট করে এতো দূর থেকে কফি নিয়ে এলাম সব পড়ে যাচ্ছে তো।
মেঘা এবার মারা বন্ধ করে উলটো দিকে হাটা শুরু করল, নীল ও তার পিছু পিছু যেতে লাগল। মেঘা সোজা মাটির স্তুপ / ছোট পাহাড়ের উপর উঠতে শুরু করল।
– স্ট্যাচু
নীলের কথায় মেঘাও দাঁড়িয়ে পড়ল। নীল তাড়াতাড়ি মেঘার কাছে গেল। মেঘার হাতে কফি দিয়ে ওর চোখ ধরল।
– এবার সামনে যাও। যেই সারপ্রাইজ টা দিতে এনেছি সেটা নিজে নিজেই দেখে ফেলবে তাহলে কেমন হবে?
পাহাড়ে উঠে মেঘার চোখ ছাড়লো নীল। চোখ খুলে রীতিমতো অবাক হয়ে গেল মেঘা৷ তার সামনে একটা বিশাল নদী। সাধারনত পাহাড়ের সাথে নদী থাকাটা একেবারেই কল্পনা করার মতো নয়। কিন্তু এখানে আছে। আর পাহাড়ের উপর উঠেছে বলে নদীটা কে অপরূপ লাগছে৷ মেঘার যেন সব মন খারাপ উধাও হয়ে গেল।
– বাহ এতো সুন্দর জায়গা আমাদের এতো কাছেই ছিলো অথচ আমি জানতাম ই না৷
– হুম প্রায় লোকই জানে না। তাই তো জায়গাটা এতো নির্জন।
কিছুক্ষন নীল আর মেঘা নীরবতা উপভোগ করল। নীল মেঘার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলল। আর বলল,
– জানো মেঘা, আকাশ কিন্তু প্রকৃতি তে অনেক ভালোবাসে। সে জানে সে কখনো প্রকৃতিকে কাছে পাবে না তবুও ভালোবাসে। কেন জানো?
মেঘা নীলের দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকালো,
– কেন?
-কারণ ভালোবাসার জন্য কাছে আসার প্রয়োজন হয় না। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়। আকাশ কে দেখ, সে তার বুকে মেঘ জমায়, তারপর সেই মেঘ কে বৃষ্টি রূপে ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির কোলে। আর সেই বৃষ্টিই প্রকৃতিতে প্রাণ দেয়৷ এছাড়াও দেখো, আকাশ কেমন সারাক্ষন ঢাকনার মতো ঢেকে আছে প্রকৃতিকে। আদোও কি প্রকৃতি কখনো জানবে আকাশ তার জন্য কি কি করছে? বা কি কি করেছে।
– হুম, বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ এসব নিয়ে কথা বলছো কেন?
– আমার কি মনে হচ্ছে জানো? আমরাদের ভালোবাসাও ওদের মতোই হবে।
নীলের মুখে এমন কথা শুনে অনেক কষ্ট হলো মেঘার। কিন্তু তবুও এড়িয়ে গেল।
– ভালোবাসা মানে? আমরা আবার ভালোবাসলাম কবে?
– আমি তো অনেক আগে থেকেই, কেন তুমি আমায় ভালোবাসো না?
মেঘার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মুচকি হেসে বলল মেঘা৷ মেঘাও কিছুটা পেছনে চলে গেল।
– নাহ মোটেও না। আমি কেন ভালোবাসবো?
মুচকি হেসে বলল মেঘা। নীল এবার আবারো গম্ভীর হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
– মেঘা, যা মনে আছে বলে দাও হয়তো আর কখনো সময় পাবে না। “যো হে সামা, কাল হো না হো”
– বাব্বাহ, আজ এতো স্যাড মুড কেন?
নীল আর কিছু বলতে পারল না। তার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। দুজন তাড়াতাড়ি করে বাইকে উঠে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। পুরো রাস্তা ভিজেই যেতে হলো ওদের৷ মেঘার বাসার সামনে ওকে নামিয়ে দিল নীল।
– তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে নাও মেঘা। ঠান্ডা লেগে যাবে।
– হুম আপনিও।
.
.
.
শুয়ে শুয়ে নীলের বলা কথাগুলো ভাবছে মেঘা। আজ কেন নীল এমন কথা বলল। মেঘার বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে বারবার। উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো মেঘা। আকাশ দেখছে। কেন যেন তার মনে হচ্ছে আকাশ হচ্ছে নীল আর প্রকৃতি মেঘা।
– নাহ আমি আর নিতে পারছি না। ফাহিনের কথা তো ঠিকই। যা বলার বলে দেয়া উচিত। কে জানে এই সময়টা আর পাবো কি না। আমি কালই ফাহিনকে সব বলে দেব৷ হুম, বলবই।
একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মেঘা। কালকে ভালো পারফর্মেন্স দিতে হলে আজকে ভালো ঘুম দরকার।
.
.
.
চলবে…..