বেলাশেষে ১৮
#adrin_anisha
.
.
– এই মেঘা শোন না। আমার অনেক ভয় হচ্ছে রে?
– কেন শুনি?
– কেন আবার, এই প্রথম প্রেম করছি, তাও আবার বাবা, মা কেও ই জানে না। ওনারে জানলে কি হবে বলতো?
– তুই কি পাগল? বাবা-মা কে জানিয়ে কেও কখনো প্রেম করেছে নাকি?
– তা ঠিক, কিন্তু তুই তো জানিস, আমি আজ পর্যন্ত কখনো ওনাদের মিথ্যে বলিনি। তুই প্লিজ একটু সামলে নিস। আমাদের বিয়ের কথাও তোকেই বলতে হবে মা কে।
– হুম, সেটা তো আমি জানিই, তোর ঘটকালি আমাকেই করতে হবে। সেসব নিয়ে চিন্তা করিস না। আমি আছি না?
– লাভ ইউ দোস্ত।
– এটা আমাকে না বলে শুভ্রকে বলিস।, খুশি হবে।
– ওকে তো বলবই, তোর জায়গা তো আর কেউ নিতে পারবে না তাই না?
– বুঝছি আর পাম দিতে হবে না।
– এই কি হয়েছে বলতো তোর? মুখটা অমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
– কিছু না রে, নীল স্যার নাকি অসুস্থ জানিস?
– কেন কি হয়েছে?
– জানি না।
– ধুর চিন্তা করিস না। তেমন কিছু হয়নি হয়তো। নরমাল জ্বর হয়েছে হয়তো৷ এমনিতেই তো ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে।
– হুম, হয়তো।
.
.
সুভা শুভ্রর সাথে কথা বলছে। মেঘা ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, তাই মেসেঞ্জারে ঢুকলো। কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সবাইকে গুড নাইট বলে বিদায় নিয়ে নিল। চ্যাট অফ করে নীলের আইডি তে ঢুকলো। এখনো একটিভ হয়নি নীল। অথচ আগে প্রায় যখনই নীলা অনলাইনে যেত ততোবারই নীলকে একটিভ দেখতো।
নীলের নিকনেম ফাহিন লিখে সেভ করল মেঘা।
– ঠিক করে নিয়েছি, যতক্ষন তুমি আর আমি কলেজে থাকবো ততক্ষন তুমি ফাহিন নও নীল স্যার থাকবে। এবং তখন তুমি আপনি হয়ে যাবে। আর এরপরের বাকি সময় তুমি তুমিই থাকবে। আর নামটাও ফাহিন হয়ে যাবে। আমার ফাহিন।
মনে মনে কথাগুলো ভেবেই লজ্জা পেল মেঘা।
আজ সারাদিন নীলকে যতটা মিস করেছে এতে সেও খুব ভালোকরে বুঝে গেছে যে সে নীলকে কতটা ভালোবাসে৷
– তোমার নীল নামটার সাথেই কিন্তু আমার মেঘা নামটা মিলে যায়। “নীল মেঘ”
নাহ, কিন্তু আমি ফাহিনই ডাকবো।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছে মেঘা।
.
সকালে সুভা তৈরী হয়ে আগে বেরিয়ে গেল। আজ সুভা কলেজ যাবে না৷ শুভ্রর সাথে এক শিশুসনদ এ যাবে। মেঘাকেও নিতে চেয়েছিল কিন্তু সে কলেজে যাবেই৷ তাই সুভা একাই বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর মেঘাও রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলো। দরজা খুলে আজও সারপ্রাইজড মেঘা।
আজ সামনে কোনো গিফট নেই। আছে শয়ং গিফট দাতা। মেঘার ঘরের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীল। সাদা শার্ট ইং করা, কালো সানগ্লাস। জাস্ট নায়ক। নীলকে দেখেই মেঘার মুখে হাসি ফুটে উঠলো৷
– ফাহিন?
মেঘার মুখ থেকে ফাহিন শুনে অবাক হলো নীল। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল
– বাহ, স্যার নয় নীল নয় একেবারে ফাহিন। নামটা কি তোমার পছন্দের?
– নাহ, তেমন কিছু না, যেহেতু তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ফাহিন হিসেবেই হয়েছে সেহেতু কলেজ টাইম বাদে বাকি সব টাইম আমি তোমাকে তুমি বলে ডাকবো আর ফাহিন বলেই ডাকবো। কলেজে আপনি নীল স্যার।
– হুম, গুড আইডিয়া। বাট একটু উল্টো হয়ে গেল।
– কেন?
– চল বলছি। এসো বসো।
নীল বাইকে উঠে পেছনে মেঘাকে বসতে ইশারা করল। মেঘা প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করলেও নীলের জোরাজোরি তে উঠে বসল। নীল বাইক স্টার্ট দিল।
– আজ সুভা কোথায়?
– শিশুসনদে গেছে শুভ্রর সাথে।
– শুভ্রর সাথে? বাহ তাহলে ওদের মাঝেও কিছু আছে নাকি এমনি জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে।
– নাহ। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে৷ ওইদিন রেস্টুরেন্টে শুভ্র প্রোপজ করেছিল সুভাকে।
– হুম, বুঝলাম।
কিছুক্ষন নীরবতা ছেয়ে গেল দুজনের মাঝে। চোখ বন্ধ করে প্রকৃতি উপোভোগ করছিল মেঘা। খোলা চুল উড়ছে মেঘার। লম্বা চুল মেঘার। কোনোমতেই ঠিক রাখতে পারছে না চুলগুলোকে। বার বার নিজের আর নীলের গায়ের উপর গিয়ে পড়ছে।
– তুমি এতো অধৈর্য হচ্ছো কেন? চুপচাপ বসো। চুলগুলো মোটেও অসুবিধা করছে না আমার। বরং আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে। তুমি তো চুপ আছো, কিন্তু তোমার চুল গুলো অনেক কথা বলছে।
– আচ্ছা তাই নাকি? কি বলছে শুনি?
– বলছে ওরা আমাকে ভালোবাসে। তাই তো দেখছো না তুমি বারবার ওদেরকে দূরে নিতে চাইলেও ওরা আবার আমার কাছেই ফিরে আসছে৷
নীলের কথায় মেঘা প্রচুর লজ্জা পেল। কিন্তু তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মুচকি হাসলো মেঘা। মেঘা নীলকে ধরে বসেনি। শুধু একহাত দিয়ে বাইক টা কে ধরেছে আর অন্য হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে৷ এমন ভাবে বসেছে যেন সে নরমাল একটা চেয়ারে বসে আছে৷ নীল ইচ্ছে করে বারবার ব্রেক করছে, স্পীড বাড়াচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মেঘার হাত নিজের কাধের উপর আনতে পারছে না।
– আচ্ছা তুমি এর আগে আর কতোবার বাইকে উঠেছ?
– কেন?
– তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি এই প্রথম বাইকে উঠেছ।
– হুম, অনেক ছোটবেলায় মামার সাথে বাইকে উঠেছিলাম। এর পর আর ওঠা হয়নি। আমার অনেক ইচ্ছা ছিল আমি বাইক চালানো শিখবো। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ইচ্ছে টা আর কখনো পূরন হয়নি। আর কে সেখাবে আমায় বাইক চালানো বলো? মামাও বিয়ে করে সবাইকে নিয়ে বিদেশ চলে গেছে। অনেক ইচ্ছে ছিল আমি স্কুটির চালিয়ে কলেজে যাব। পেছনে থাকবে সুভা। আমরা কতো মজা করে কলেজে যাবো।
মেঘা একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে। স্কুটির কথা বলতেই মেঘার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠল। নীল সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। বুঝতে পেরেছে মেঘা চলে গেছে কল্পনার রাজ্যে।
– সত্যিই কতো সাধারণ চিন্তাভাবনা এই মেয়েটার। কতো ছোট ছোট জিনিসে ওর খুশি লুকিয়ে থাকে৷ কতো সাধারণ ওর ইচ্ছে গুলো৷ কিন্তু ও যে আমার লাইফের কোনো সাধারণ মানুষ নয় সেটা কবে বুঝবে ও?
মেঘার হঠাৎ মনে হলো ওরা অচেনা রাস্তায় যাচ্ছে। এটা ওদের কলেজের রাস্তা নয়।
– এই কোথায় যাচ্ছি আমরা। এটা তো কলেজের রাস্তা নয়।
মেঘার কথা শুনে মুচকি হাসলো নীল।
.
.
.
চলবে…….
( আককের পর্বটা হয়তো ভালো হয়নি। কি যে লিখেছি আমি নিজেও জানি না। যাই হোক আজই আরেকটা পর্ব দেয়ার চেষ্টা করব, তাহলে হবে তো?)