গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৯ (সমাপ্তির অন্তিম খন্ড)
দিন গড়িয়েছে, মাস গড়িয়েছে গড়িয়েছে বছর। প্রায় তিন বছর কেটে গেছে যেনো চোখের পলকে। যদিও ঠিক চোখের পলকে না। এই দিনগুলোতে কখনো সবাই ভীষণ আনন্দে কাটিয়ে ভেবেছে সময় এখানে থেমে যাক। তো আবার কখনও বিষাদের সময় গুলো চেয়েছে তাড়াতাড়ি পার করতে।
আজ সিনথিয়া আর পিয়াসের বিয়ে। এতদিন দুটো মিলে চুটিয়ে প্রেম করে দুই বছর পর এক হতে যাচ্ছে দুজন। সিয়ামদের বাড়িতে বেশ রমরমা পরিবেশ। সবাই বেশ ব্যস্ত কাজে। এইযে যেমন চন্দ্রা এখন তার দুই বছরের মেয়েকে অস্থির হয়ে খুঁজছে সাড়া বাড়িতে। সবরকম আয়োজন হচ্ছে চারিদিকে চন্দ্রা বেশ ভয় পেলো কই মেয়েটা তার..?
চন্দ্রা হটাৎ কি মনে করে চন্দ্রা সিরাজের ঘরের দিকে গেলো।
চন্দ্রা ঠিক যা ভেবেছিল তাই চন্দ্রার দুই বছরের মেয়ে চন্দ্রিমা সিরাজের জিনিস পত্র নিয়ে টানাটানি করছে। বোঝানোর চেষ্টায় আছে যে কেনো মানুষটাকে সে দেখতে পাচ্ছে না কয়েকদিন যাবত।
চন্দ্রা সামনে গিয়ে কোলে তুলে গালে একটা চুমু দিতেই চাঁদ ছোট্ট ছোট্ট দাঁত বের করে হাসি দিল। চাঁদ নামটা চন্দ্রিমার ডাক নাম যা বলে ওকে ঘরের সবাই সম্মোধন করে। এই নামটা যদিও সিয়ামের দেওয়া। চন্দ্রা তাকিয়ে দেখলো চাঁদ সিরাজের জামা গুলো টেনে টেনে নামিয়ে রেখেছে। চন্দ্রা হালকা হেসে চাঁদকে কোল থেকে নামিয়ে সিরাজের জামাগুলো তুলে একটা সাইডে রাখলো। চাঁদ ভালোবাসা, মন খারাপের মানে বোঝে না। কিন্তু তাও সিরাজকে দেখতে না পেয়ে তার মন খারাপ হয়েছে চন্দ্রা ভালোই বুঝেছে। সিরাজ দুদিন হলো অফিসের কাজে বাইরে গেছে। আর তাতেই চাঁদ এসে তার জামাকাপড় ঘেঁটে সিরাজের অনুপস্থিতি বোঝাতে চাইছে।
চন্দ্রা আবার চাঁদকে কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে আদর করতেই চাঁদ নিঃশব্দে হাসি হাসলো। চন্দ্রা করুন চোখে তাকালো সেই দিকে।
মেয়েটা তার কানে কম শোনে কথা বলতে পারে না ঠিকঠাক ডাক্তার বলেছে আরেকটু বড়ো হলে অপারেশন করালে ঠিক হয়ে যাওয়ায় চান্স আছে।
চাঁদ ঘরের সকলের চোখের মণি। কেউ ফুলের টোকাও লাগতে দেয় না তাকে। চন্দ্রার মনে হয় এইদিক দিয়ে চাঁদ ভীষণ লাকি।
চন্দ্রা নীচে নামতেই দেখলো সিয়া আর অপূর্ব হাসি মুখে ঢুকছে। চন্দ্রা আর চাঁদকে খেয়াল করেনি তখনও। সিয়ার পেটটা একটু ফোলা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। এই তিন বছরে তার দুই বার মিসক্যারেজ হয়েছে। ভীষণ মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল সে কিন্তু ভেঙে পরেনি অপূর্ব আর তার পরিবার। তারা সিয়াকে এই ট্রমা থেকেও বের করতে সক্ষম হয়েছে। অপূর্বর ইচ্ছে ছিলো না আবার সিয়ার জীবন এইভাবে ঝুঁকিতে ফেলার, কিন্তু সিয়ার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে সে।
অপূর্ব সিয়াকে ধরে ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিলো। বেশ গলুমোলু হয়েছে সিয়া। ফরসা টোপা টোপা গাল গুলো দেখলেই অপূর্বের মন চায় খেয়ে নিতে গাল গুলো। অপূর্ব এবার হালকা হেসে সিয়ার গালটা ধরে টিপে দিল। সিয়াও হাসলো খানিক। আগের দুই বারের প্রেগন্যান্সিতে প্রবলেম ছিলো বলে সিয়া ভীষণ শারীরিক দূর্বলতায় রোগা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবারে তার উল্টো হয়েছে।
চন্দ্রা হেসে চাঁদকে সোফার সামনে নিয়ে যেতেই চাঁদ নীচে নেমে সিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে হামি দিলো। সিয়াও হেসে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে দুটো চুমু খেল তার গেলে।
অপূর্ব তা দেখে চাঁদের সামনে মুখ ফুলে বসে রইলো। চাঁদ তা দেখে সিয়ার কাছ থেকে নেমে অপূর্বের কাছে গিয়ে তাকে একটা চুমু দিতেই অপূর্ব ধরে আদর করে দিলো চাঁদকে। চাঁদও প্রাণখোলা হাসি হেসে উঠলো।
সিয়া এবার চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল “বাকিরা কই ভাবী..? ভাইয়ারা..?সিনথিয়া..?”
চন্দ্রা হেসে বললো “সিয়াম অফিসে একটু পরেই চলে আসবে। সিরাজ নতুন ফ্যাক্টরির সাইড দেখতে গেছে আজ দুপুরের আগেই চলে আসবে। আর সিনথিয়া মহারানী এখন রূপচর্চায় ব্যাস্ত তার বিয়ে বলে কথা।
সিয়া হেসে উঠে বললো “যাই আমিও একটু রূপচর্চা করি ওর সাথে আমাকেও সাজতে হবে।”
অপূর্ব এই দেখে ঘোর আপত্তি করে বললো ” অতো গুলো সিড়ি চড়ে তোমায় রূপচর্চা করতে যেতে হবে না। এমনিই সুন্দরী হয়ে গেছো আগের থেকে। বেশি সাজলে যদি আবার কেউ বউ ভেবে বিয়ে করতে চায় আমার কি হবে তখন ..?”
সিয়া ভালোই বুঝলো অপূর্ব যতোই মজা করুক সিড়ি দিয়ে উঠতে দেবে না তাকে এই অবস্থায়। এমনকি নিজের ঘরেও সে সব জিনিস ওপর থেকে নীচে শিফট করেছে এই প্রেগনেন্সির পর। সিয়া নাকমুখ কুঁচকে বললো ” উফ আমি ঠিক আছি তো এখন। ডাক্তার বলেছে না বলো এবারে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে..? যেতে দাও না দাও না আমি সত্যি বেশি লাফালাফি করবো না।” অপূর্ব একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার সিয়ার দিকে তাকালো। দুটোর মধ্যে বেশি পার্থক্য সে খুঁজে পেলো না। অগত্যা রাজি হয়ে বললো “চলো আমি যাচ্ছি সাথে।”
সিয়া বড়োসড়ো একটা হাসি দিয়ে পা বাড়ালো উপরের তোলার দিকে।
___________________________________
বিয়ের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেলের পরে। কারণ সিয়াম সিরাজের বাড়ি ফিরতে দুপুর হবে।
চন্দ্রা হাতের কাজ শেষ করলো। চাঁদকে খাইয়ে ঘুম পাড়ালো। সিনথিয়াকে গিয়ে একবার তারা লাগালো। আজ আরও কিছু বিশেষ কাজ আছে দুপুরের দিকে।
চন্দ্রা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অলরেডি একটা বাজতে যায়। চন্দ্রা সিয়াম সিরাজকে আসতে দেখেই আগে খেতে বসিয়ে দিলো।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব সবার শেষ হতেই যে যার ঘরে চলে গেল। সিয়াম এসে চাঁদকে তার ঘুমের মধ্যেই আদর করলো। তারপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিতেই চন্দ্রা এসে তাড়া লাগলো বাইরে সবাই রেডি এখন ডাকছে সিয়ামকে। সিয়াম উঠে জামা বদলে বাইরে গিয়ে ডাইনিং রুম দেখে হেসে দিলো। বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বড়ো বড়ো করে এক সাইডে ” HAPPY BIRTHDAY SIRAJ” টাঙানো। তারপর চারিদিকে বেলুন মাঝে টেবিলে মাঝারি সাইজের কেক। পুরো প্ল্যান টাই সিয়ার আর সিনথিয়ার।
সিনথিয়া এবার সিরাজের কাছে গিয়ে বললো “ভাইয়া একটা জিনিস দেখবে..?”
সিরাজ ভ্রু কুঁচকে বললো “হ্যাঁ দেখা..”
সিনথিয়া এবার বড়ো করে হেসে বললো “নীচে আছে কিন্তু একটা শর্ত, তোমার চোখ কিন্তু আমি ধরে থাকবো।”
সিরাজ অবাক হয়ে বললো “এমন কি দেখবি রে যার জন্য এইভাবে যেতে হবে।”
সিনথিয়া জোড়াজুড়ি করতে সিরাজ রাজি হলো। কিন্তু সমস্যা হলো সিরাজের চোখ পিছন থেকে সিনথিয়া ধরতে পারলো না। কারণ সিরাজ বেশ লম্বা সিনথিয়া নিতান্তই তার সামনে লিলিফুট। সিরাজ এবার হাঁপ ছেড়ে বললো “তোকে আর চোখ ধরতে হবে না আমি নিজেই চোখ বন্ধ রাখছি চল কি দেখবি নিয়ে চল।” বলেই সিরাজ চোখ বন্ধ করতে সিনথিয়া সিরাজের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নীচে নামতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠলো “হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া/সিরাজ” সিরাজ ফট করে চোখ খুলে চারদিক তাকালো। এমনিতেই বিয়ে উপলক্ষে আগে থেকেই হালকা সাজানো হয়েছে তারউপর বলুন রঙিন কাগজ যেনো সেখানকার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করছে।
সিরাজ হালকা একটা হাসি দিল। সবাই এবার হামলে পড়লো কেক কাটার জন্য। সিরাজ চাঁদকে দেখা মাত্রই তার কাছে যেতে চাঁদ একপ্রকার সিয়ামের কোল থেকে লাফিয়ে চলে গেলো সিরাজের কাছে। সিরাজ তা দেখে হাসলো হালকা। এই ছোট্ট মানুষটা তার জীবনে আসার পর থেকে সে আবার হাসতে শিখেছে। তার এইসব বাচ্চাদের মত বার্থডে সেলিব্রেট তার ভালো লাগে না। তবে সবার উচ্ছসিত মুখ এতো উত্তেজনা সাথে চাঁদের আনন্দিত চেহারা তাকে এইসব ভালো লাগাতে বাধ্য করে। সিরাজ কেক কেটে প্রথমেই চাঁদকে দিলো। সে খেলো কি ঠিক বোঝা গেলো না সবটাই মুখে গেলে মেখে হেসে দিল। তাকে দেখে বাকি সবাইও হেসে দিল।
এইসবের মধ্যে পিয়াসও উপস্থিত ছিল। কারণ তার পরিবারে তার মা ছাড়া কেউ নেই। তিনিও অসুস্থ গ্রামে থাকেন তার ভাইয়ের বাড়ির পাশে তার নিজের স্বামীর ভিটেতে। পিয়াস জোর করেও তাকে শহরে আনতে পারেনি থাকার জন্য। পিয়াস ছোটো থেকেই শহরে হোস্টেলে বড়ো হয়েছে। পরে কর্মসূত্রেও এখানেই ফ্ল্যাট কিনেছে। পিয়াসের বাড়ি থেকে তার মা আসতে পারবে না বলে সবাই তাকে সিয়াম দের বাড়ি থেকেই বিয়ে দেবে ঠিক করেছে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হবে। পরে বড়ো করে রিসেপশন হবে।
কেক সবাইকে ভাগ করে দেওয়ার পর। সিনথিয়া সিয়াকে চোখের ইশারায় কিছু বললো। সিয়া আবার অপূর্বকে বলতেই অপূর্ব সিয়ামকে ইশারা করলো। সিয়াম চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো সবাইকে।
সবাই সবটা সিরাজের চোখের আড়ালে করলেও সিরাজের চোখে ঠিকই পড়লো। সিরাজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল “কি রে কি লুকচ্ছিস সবাই আমার থেকে..?”
সিয়া এবার হালকা কেশে একটা হাসি দিয়ে বললো “আসলে ভাইয়া আমরা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ এনেছি। কিন্তু তোমার সেটা পছন্দ হবে কি বুঝতে পারছি না তাই আর কি..?”
সিরাজ এবার স্বাভাবিক ভাবেই বললো “তোদের দেওয়া কোনো জিনিস কি কখনো আমার অপছন্দ হয়েছে যে আজ হবে..?”
সিনথিয়া এবার বললো “সিয়া অপুই তাহলে দিয়েই দি বলো গিফ্টটা তারপর ভাইয়া ঠিক করবে পছন্দ কি অপছন্দ” সবাই সম্মতি জানালো।
সিরাজকে আবার চোখ বন্ধ করতে বলা হলো। সিরাজ আর তর্কাতর্কিতে না গিয়ে বাচ্চাদের মত চোখ বন্ধ করলো।
সবাই ” থ্রি, টু, ওয়ান ” বলতেই সিরাজ চোখ খুলে চমকে গেলো। এই উপহারটা সে মোটেই আশা করেনি। কিছুমুহূর্তের জন্য প্রতিক্রিয়া করতেই ভুলে গেলো সিরাজ। তার চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার সামনে স্বয়ং ইন্দ্রা দাঁড়িয়ে। সিফনের হালকা শাড়িতে অপূর্ব লাগছে তাকে। আগের থেকে বেশ সুন্দর হয়েছে যেনো।
সবাই তাদের দেখে মিটিমিটি হাসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। সবাই বুঝতেই পেরেছে সিরাজ বেশ শক খেয়েছে সারপ্রাইজ টায়।
সিরাজ পারছে না তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে পিষে ফেলতে। এক মুহূর্ত যেন তার এই সামান্য কয়েক হাতের দূরত্ব টুকু সহ্য হচ্ছে না।
এরই মধ্যে কাজী এসে যাওয়ায়। এবার সিরাজের ধ্যান ভাঙলো, নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো চোখ লাল করে। না ছেলে মানুষদের চোখের জল ফেলতে নেই।
এবার সবচেয়ে বড়ো ধামাকাটা দিলো সিয়াম। সে জানালো আজ একই সাথে পিয়াস-সিনথিয়ার সাথে সিরাজ-ইন্দ্রারও বিয়ে পড়িয়ে নেওয়া হবে।
বিয়েতে ইন্দ্রার আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে সে লাজুক হেসে মাথা নামিয়ে নিলো, এতেই সবাই সবার উত্তর পেয়ে গেলো। সিরাজে একইভাবে নীচের দিকে শুধু বললো “যা ভালো বুঝিস সবাই তাই কর।” বলেই গট গট করে উপরে চলে গেলো।
ইন্দ্রা সেই দিকে তাকিয়ে মুখটা মিলন করে ফেললো। সিয়া এগিয়ে গিয়ে ইন্দ্রাকে বললো “মন খারাপ কোরো না আপুই ভাইয়া মনে অভিমানের পাহাড় হয়ে আছে। যদিও সেটা তোমার থেকে বেশি বড়ো নয় ওর কাছে তাও। ব্যাপার না আজ বাসরে সব মিটমাট করে করে নিও কেমন..?” বলেই সিয়া চোখে টিপ মারলো। ইন্দ্রা তা দেখে লাল নীল হয়ে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
____________________________
রাত দশটা বেজে দশ।
বিকেলের দিকেই দুই জুটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এতোক্ষণ বাড়িতে খুব বেশি না হলেও বেশ মেহমান ছিলো। সাথে গ্রাম থেকে পিয়াসের মা আর তার মামা এসেছিলেন সিয়াকে আশীর্বাদ করতে। চয়ন সাহেবও ছিলেন সবটা সময়। বিকেল থেকে রাতের সময় টুকু বেশ ব্যস্ততায় কেটেছে সবার।
সব মেহমানকে বিদায় দিয়ে সিনথিয়া ও ইন্দ্রাকে পাঠানো হলো তাদের ঘরে।
___________________________________
ইন্দ্রার বাসরঘরে বসে থাকার আধ ঘণ্টার ভিতরই সিরাজ এলো। ইন্দ্রা লাজুক হেসে মুখ নীচু করে ঘোমটাটা আরেকটু টেনে বসে রইল। কিন্তু তার আশানুরূপ কিছুই হলো না। সিরাজ এসে ঘড়ি খুলতে খুলতে ইন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর হয়ে বললো ” চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো।”
ইন্দ্রা এবার লাজুক মুখটা বিষাদে ছেয়ে গেল। মানুষটার তার উপর এতো অভিমান জন্মেছে..?যে একটা বারও তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না সিরাজ।
ইন্দ্রা এবার বেড থেকে নেমে সিরাজের কাছে গিয়ে করুন স্বরে বলল “এখনও রেগে আছেন..?আমাকে নিজের টুকু বলতে তো দিন..?”
সিরাজ কিছু বললো না। টুকটাক এদিক ওদিক কীসব ঘাঁটতে লাগলো। যদিও দেখেই বোঝা হচ্ছে এটা তার নিজেকে ব্যস্ত দেখানোর চেষ্টা।
ইন্দ্রা তা দেখে নিজেই বললো ” আমার সেইসময় কিছু করার ছিলো না সিরাজ। বাবাকে আমি কথা দিয়েছিলাম, আপনি তো জানেন চন্দ্রা আর বাবা আমার জন্যে কি..? আমি আগেই একবার সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে ভীষণ অসন্তুষ্ট হতো আমার উপর আমি চাইনি আবার এমন কিছু করতে যাতে তাদের আবার কষ্ট দিই”
সিরাজ এবারেও কিছু বললো না। ইন্দ্রার সিরাজের এই নীরবতা সহ্য হলো না। সিরাজের পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলতে লাগলো “কিছু তো বলুন সিরাজ আপনার নীরবতা যে আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি আর পারছি না সহ্য করতে আমার বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সিরাজ।”
আকস্মিক ঘটনায় সিরাজ হকচকিয়ে গেলো। সিরাজ কল্পনাও করেনি ইন্দ্রা এইরকম কিছু করবে। সিরাজ দ্রুত ইন্দ্রাকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো ” চুপ চুপ হও ইন্দ্রা, আমি রাগ করে নেই তোমার উপর বিশ্বাস করো। তবে হ্যাঁ একটু অভিমান হয়েছিল । যাওযার পর থেকে তুমি একবারও যোগাযোগ করনি বলে। তাও আমি তোমার সব খবর এখানে বসে থেকেই নিয়েছি। তবে হ্যাঁ তোমায় দেখার পর আমার আর একটু অভিমান হয়েছিল বটে তবে তার এখন আর যায়গা নেই।” বলে সিরাজ ইন্দ্রার মুখ দুই হতে তুলে চোখের জল মুছিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসলো। তারপর আলমারি থেকে একটা বক্স এনে ইন্দ্রাকে দিলো।
ইন্দ্রা জুয়েলারি বক্স দেখে সিরাজের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সিরাজ ইশারা করলো সেটা খোলার জন্য। ইন্দ্রা সেটা খুলতেই নজরে এলো একটা সেট তাতে সরু একটা হার সমেত লকেট, ছোটো দুটো ইয়াররিং , হাতের একটা সরু আংটি, হাতের একটা সরু ব্রেসলেট আর একটা নোসরিং সবকটাই ডায়মন্ডের।
ইন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “এতো দামী জিনিস..?”
সিরাজ হেসে বললো “আমার উপার্জনের টাকায় তোমায় দেওয়া এই প্রথম উপহার আমার ইন্দ্রা। এটা নিয়ে যতটা না তুমি খুশি আমি তোমায় দিতে পেরে তার থেকে দ্বিগুণ খুশি। এই জিনিস গুলো তুমি সবসময় পরে থাকবে কেমন..?”
ইন্দ্রা হেসে বললো ” আমার কাছেও এই উপহারটি সবথেকে প্রিয়। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর অনুভুতি মেশানো একটা উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু একটা বিষয় আমার ভালো লাগলো না।” শেষ কথাটা বলেই ইন্দ্রা মুখটা বেশ গম্ভীর করলো। সিরাজ তা দেখে বললো “মানে ঠিক বুঝলাম না ইন্দ্রা কোন জিনিসটা তোমার ভালো লাগেনি বলো আমায়।”
ইন্দ্রা এবার বললো “বউকে কেউ এইভাবে উপহার দেয়..?নিজের দেওয়া উপহার নিজের হতে পরিয়ে দিতে হয় আপনি জানেন না..?”
সিরাজ এবার ঠোঁট এলিয়ে হেসে বেডের সামনের দিকে হেলান দিয়ে বললো “হ্যাঁ তাই তো। আগে এই নিয়মটা মনে পড়লে একটা শাড়িও আনতাম সঙ্গে।”
ইন্দ্রা বিড়বিড় করলো “দূর এই লোকটার সামনে কথা বলাই ঠিক না।” বলেই ইন্দ্রা জুয়েলারি বক্সটা পাশে রাখতে যেতেই সিরাজ হ্যাঁচকা টান মেরে ইন্দ্রাকে নিজের উপর ফেলে দিল। তারপর এক এক করে তার গায়ে থাকা গয়না গাটি গুলো খুলে নিজের দেওয়া গয়না গুলো পড়িয়ে দিলো। এই পুরো সময়টায় সিরাজের আঙুল গুলো যে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ভাবে স্পর্শ করে গেলো তা অনুভব করতেই ইন্দ্রা কেঁপে কেঁপে উঠলো মাঝে মাঝে।
গয়না পড়ানোর শেষে ইন্দ্রা বেড থেকে নামতে গেলেই সিরাজ টেনে নেশালো গলায় বললো “কোথায় যাচ্ছো..?”
ইন্দ্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল “চে-ঞ্জ ক-র-তে।”
সিরাজ টান মারে ইন্দ্রাকে নিজের কাছে নিয়ে বললো “তার আর দরকার নেই।”
ইন্দ্রার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়লো নিজের অতি নিকটে সিরাজের গরম নিঃশ্বাসে। ইন্দ্রা ওইভবেই বললো ” আপনিই তো বললেন চেঞ্জ করে নিতে।”
সিরাজ ইন্দ্রার থেকে আরেকটু দূরত্ব কমিয়ে মুখের পাশে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো “হুম এখন আমিই তো বলেছি আবার দরকার নেই তার। আমি থাকতে বেকার বেকার আজ রাতে তুমি এতো কষ্ট কেনো করতে যাবে বলো..?”
ইন্দ্রা চোখ বুজে নিলো। দম বন্ধ হলো বলে তার। কিন্তু তার দম বন্ধ হওয়ার আগেই সিরাজ রুমের লাইট বন্ধ করে দিল।
সূচনা হলো আরো একটি নতুন দম্পত্ত জীবনের।
_______________________________
পিয়াস তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকলো। মা আর মামাকে ছেড়ে আসতে গিয়ে একটু বেশিই দেরি হয়েছে তার। সিনথিয়া বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষনে।
পিয়াস রুমে ঢুকে দেখলো তাই সিনথিয়া শুধু নিজের শাড়িটা পাল্টে একটা স্লীভলেস কুর্তি পরে এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে। না মেকাপ না গয়নাগাটি কিচ্ছু খোলেনি। পিয়াস হেসে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে সিনথিয়া সামনে গিয়ে পাশে বসে তাকে দেখতে লাগলো। বেশ অময়িক লাগছে তাকে আজ। এলোমেলো হয়ে থাকায় কুর্তিটা বেশ খানিকটা সরে গেছে। পিয়াস কুর্তিটা ঠিক করে আবার তাকালো সিনথিয়ার পানে। কিভাবে যে তার মতো এত বড়ো একটা ছেলে এই পিচ্চি মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে গেলো সে ভাবতেই হেসে ফেললো পিয়াস। অবশেষে এই শহরে আর পুরোপুরি নিজস্ব একটা মানুষ হলো।
পিয়াস উঠে সিনথিয়ার গয়নাগাটি ধীরে সুস্থে খুলে রুমের লাইট অফ করে সিনথিয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। সিনথিয়াও ঘুমের মাঝে হালকা হেসে পিয়াসকে জড়িয়ে ধরলো।
______________________________
“আমি এক্ষুনি চাউমিন খেতে চাই। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।” বলেই সিয়া বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
অপূর্ব অসহায় দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে বললো “সারাদিন আজ এটা সেটা খেয়েছো সিয়া। আজ থাক আবার কাল খেয়ো কেমন..? আমি কাল সকালেই বানিয়ে দেবো।”
সিয়া জেদ ধরে বললো ” না না আমার এক্ষুনি চাই। নইলে আমি সারারাত বসেই থাকবো।”
অপূর্ব তাকালো সিয়ার দিকে এই মেয়েটার জেদের কাছে সে বারবার পরাজিত হয়। সে জেদ ছোটো হোক কি বড়ো। অপূর্ব তারপর হেসে সিয়ার গাল টিপে বললো “জো হুকুম মহারানী এক্ষুনি বানিয়ে আনছি আমি।”
বলেই অপূর্ব নীচে কিচেনে গেলো চাউমিন বানাতে। আজ তার উপর দিয়ে ভীষন ধকল গেছে সারাদিন ছোটাছুটি করেছে এদিকওদিক। কিন্তু সিয়ার আবদার সে কখনই ফেলতে পারে না সে ও যেই পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেনো। এই মেয়েটাকে সে সবসময় এমনই দেখতে চায়। সিয়ার মিসক্যারেজের পর সিয়ার কষ্ট দেখে ওর যে কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ও বলে বোঝাতে পারবে না।
অপূর্ব চাউমিনের প্লেট হাতে নিয়ে সিয়ার ঘরে ঢুকতেই দেখলো সিয়া বসে বসে কাঁদছে। অপূর্ব চাউমিনের প্লেটটা পাশে রেখে সিয়ার কাছে বসে তার মুখটা দুই হতে তুলে বললো “হে সিয়া, কাঁদছো কেন..? আমি তো চাউমিন বানিয়ে এনেছি দেখো।”
সিয়া এবার অপূর্বের হাতের উপর হাত রেখে বলল ” আমি তোমায় খুব জ্বালাই তাই না..? এই দখো আজ সারাদিন তুমি খেটে খুটে ক্লান্ত শরীর নিয়ে এসে কই একটু বিশ্রাম নেবে, তা নয় আমি কেমন বাচ্চাদের মত আবদার জুড়ে দিলাম আর তুমিও সেই আবদার রাখতে চাউমিন বানাতে চলে গেলে নির্দ্বিধায়। আমি কি করবো বলো আমার এতো ঘন ঘন মুড সুইং হয় কিন্তু তুমি কেনো আমায় ধমকে দাও না বলো..?”
অপূর্ব সিয়ার চোখের জল মুছে বললো “দূর পাগলি এই জন্য তুমি কাঁদছো..?তুমি জানো না তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না..? আর ধমকাবো কেনো আমি কি বলেছি আমি এইসব কাজে বিরক্ত হই কখনও। তুমি যদি আমার অংশকে পৃথীবিতে আনতে মা হয়ে এতো কষ্ট করতে পারো তাহলে আমি বাবা হয়ে কি এই টুকু কষ্ট করতে পারবো না..? আর আমার তো ভালই লাগে তোমার এই ছেলে মানুষী আবদার আর আবদার পূরণ করার পরের রিটার্ন গিফ্ট গুলোও।” বলেই এক চোখ টিপ মারলো অপূর্ব।
সিয়া কান্না মুছে হালকা হেসে অপূর্বকে ধাক্কা মারে বললো” ধ্যাত তুমিও না।”
অপূর্ব চাউমিনের প্লেট থেকে চাইমিন তুলে সিয়ার সামনে ধরে বললো “হম আমি তোমার ওয়ান অ্যান্ড ওনলি সুইট হ্যান্ডসাম জামাই।”
সিয়া হেসে দিয়ে বললো “তুমিও একটু খাও।”
অপূর্ব বললো ” নাহ্ আমার পেট ভরা পুরো।”
সিয়া জেদ ধরে বললো ” না না একটু খাও। খেতেই হবে তোমায়। এই নাও এই একটা চাউমিন খাও।” বলেই সিয়া একটা চাউমিন তুলে অপূর্বের মুখের কাছে ধরলো।
অপূর্ব সিয়ার এমন বাচ্চামী দেখে হেসে ওই একটা চাউমিন মুখে না নিয়ে সিয়ার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা চাউমিনটা ঠোঁট দিয়ে জিভ স্পর্শ করে মুখে নিয়ে নিল।
সিয়া আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের টমেটোর মতো লাল হয়ে যাওয়া মুখটা নিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
_____________________________________
চন্দ্রার দায়িত্ত্ব শেষ হলো সবার পরে। সব গোছগাছ করে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কানের হার খোলার জন্য। তখনই ওর নজর পড়লো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। আজ ব্যস্ততায় নিজেকে দেখাই হয়নি তার আয়নায়।
চন্দ্রা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। আজ প্রায় কতোগুলো দিন বাদ সে এইভাবে সেজেছে। সারাদিন সংসারের কাজ চাঁদকে সামলে তার নিজের দিকে খেয়াল করায় তেমন সময় হয় না। মাঝে মাঝে সিয়াম বেলী ফুল সাজের টুক টাক জিনিস এনে দেয় ঠিকই তবে সেইরকম ভাবে তার সাজা হয়ে ওঠে না। তাই আজ হটাৎ সেই পুরোনো চন্দ্রার রূপ দেখে চন্দ্রা নিজেই থমকে গেলো।
টানা টানা চোখের সারাদিনের ক্লান্তির কাজল হালকা লেপটানো, সুন্দর ডিজাইনার খোঁপা থেকে কিছু কুঁচো চুল এদিক ওদিক দিয়ে বেরিয়ে আছে। লিপস্টিকের রঙটা আসল রঙের থেকে একটু হালকা হয়ে এসেছে। আর সাদা ডিজাইনার শাড়ি গায়ে নিজেকে দেখে চন্দ্রা নিজেই নিজের একটু প্রশংশা। পরিপাটির থেকে বেশি এই ভাবেই তাকে যেনো বেশি সুন্দর লাগছে।
নিজেকে দেখায় যখন ব্যস্ত ছিল চন্দ্রা সে বুঝতেই পারেনি তার শাড়ী পড়ার পর থেকেই কেউ একজোড়া দৃষ্টি দিয়ে তার প্রতিটা অঙ্গ স্পর্শ করে যাচ্ছে।
সিয়াম অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছিল চন্দ্রার রুমে আসার। চাঁদকে সে আগেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্রার নিজেকে এইভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেখে সিয়াম এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো “কি ম্যাডাম আপনিও কি আমার চন্দ্রাবতীর প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি…?” চন্দ্রা হালকা হেসে আয়নায় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বললো ” না আমি চন্দ্রাবতীর অস্তিত্বের প্রেমে পড়েছি সেই কবেই। যাকে ছাড়া চন্দ্রাবতীর নিঃস্ব, অচল।”
সিয়াম হেসে চন্দ্রাকে আরেকটু পিছন থেকে জড়িয়ে নেশালো গলায় বললো “আজ তোমায় সেই আগের মতো প্রাণোচ্ছল লাগছে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে যে আমার চন্দ্রাবতী এর দায় ভার কে নেবে বলো তো।”
চন্দ্রা হালকা হাসলো। সিয়াম চন্দ্রাকে টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো। আজ পূর্ণিমা আকাশে গোল থালার মতো চাঁদটা নিজের জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে চারদিকে।
সিয়াম চন্দ্রাকে কলে নিয়ে দোলনায় বসলো। না বেশি কিছু পাল্টায়নি তারা আগের মতোই একে অপরকে বিশ্বাস করে ভরসা করে দিনশেষে একে অপরের সান্নিধ্য খোঁজে।
সিয়াম যেমন বাইরে থেকে এটা ওটা নিয়ে এসে চন্দ্রার মন ভালো করে চন্দ্রাও তেমন নতুন নতুন রান্না, ঘর টাকেই সিনেমা হল বানিয়ে সিনেমা দেখা ইত্যাদি করে সিয়ামের মন ভালো রাখার চেষ্টা করে। সময়ের সাথে যতটুকু পরিবর্তন হওয়ার তারা শুধু ততটুকু হয়েছে। সিয়াম একজন দায়িত্ববান স্বামী থেকে একজন দায়িত্ববান বাবা হয়েছে। তেমনই চন্দ্রাও একজন দায়িত্ববান স্ত্রী থেকে দায়িত্ত্ববান মা হয়েছে। এই তিন বছরে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি হয়নি বললে ভুল হবে। আর পাঁচটা সম্পর্কের মতোই তাদেরও সম্পর্কে এই সব হয় কিন্তু তাতে তারা কখনোই এইসব জিনিসকে বড়ো করে দেখে নিজেদের একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেয় না। একে অপরের দোষ গুন ধরিয়ে দেয়। আর এতে ভালোবাসা কমে তো নাই উল্টে বেড়ে যায়।
চন্দ্রা সিয়ামের বুকে মাথা রেখেই বললো ” আমার এখন মনে হয় জীবনে কিছু কিছু ভুল হয়তো ভালোর জন্যই হয় সিয়াম। নইলে কি আর আমি তোমায় পেতাম বলো..?”
সিয়াম হেসে চন্দ্রার মাথার হাত বুলিয়ে বললো ” অবশ্যই পেতে তুমি না পেলেও আমি তোমায় ঠিক খুঁজে নিতাম। নিজের সুখ নিজের হাতেই থাকে সর্বদা। আর আমার ভাগ্যে ছিলে তুমি আমার আলাদা হতে কিকরে বলো..?”
চন্দ্রা হালকা হাসলো। ততক্ষনে সিয়ামের হাতের বিচরণ অবাধ্য হয়েছে। চন্দ্রার সারা শরীরে ঘুরে বাড়াচ্ছে সিয়ামের শক্তপোক্ত আঙুলগুলি। চন্দ্রার ঘন ঘন শ্বাস ফেলা দেখে সিয়াম চন্দ্রার মুখটা তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো। দীর্ঘ চুম্বনের পর দুজনে একে অপরের কপালে মাথা ঠেকালো।
চন্দ্রা হটাৎ বলে উঠলো “একটা গান শোনাও না ওই গিটারে।”
সিয়াম নিজের হাত ঘড়ি দেখে বললো “এখন..?”
চন্দ্রা করুন স্বরে বলল “প্লিজ প্লিজ একটা।”
চন্দ্রার এইরকম করুন মুখ দেখে সিয়াম উঠে গিয়ে ঘর থেকে গিটার নিয়ে এসে চাঁদকে একবার দেখে ব্যালকনির দরজাটা হালকা বন্ধ করে বললো ” সিয়ামের চন্দ্রাবতীর ইচ্ছের লঙ্ঘন স্বয়ং সিয়ামও করতে পারে না।”
বলেই গিটারে সুর তুললো –
” গোটা পৃথিবীতে খুঁজো আমার মতো কে তোমারে এত ভালোবাসে..? ”
চন্দ্রা সেই সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠলো –
” এই মনের ঘরে এসো এই বুকের বাঁ পাশেতে তোমার নামই জপে ”
বলেই দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে এক প্রাপ্তির হাসি দিল। আজ তাদের ভরা সংসার পরিপূর্ণ।
অবশেষে সবাই নিজের দুঃখ কষ্টের #বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে ভালোবাসার #বেড়াজালে আবদ্ধ হলো।
_________________সমাপ্তি ___________________