গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৮
সকাল বেলা সূর্যের কিরণে চন্দ্রার ঘুম হালকা হয়ে আসতেই ব্লঙ্কেট টার ভিতর আরেকটু নিজের শরীরটাকে ঢুকিয়ে নিলো। শুধু মুখটা বের করে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো সিয়াম সদ্য স্নান সেরে এসে চুল ব্রাশ করছে। পড়নে শুধু একটা ট্রাউজার। উন্মুক্ত লোমহীন রেগুলার জিম করা পারফেক্ট শেপ বডিতে কয়েকটা বিন্দু বিন্দু জলকণা লেপ্টে আছে।
চন্দ্রা নিজের অজান্তেই হাঁ করে চেয়ে রইল সেইদিকে। সিয়াম মিররে তা দেখে হেসে বেডের কাছে এগিয়ে এলো।
চন্দ্রা তা বুঝতে পেরে ব্ল্যাঙ্কেটটা দুই হাত দিয়ে টেনে মুখ ঢাকলো। এখন দেখা যাচ্ছে শুধু তার ওই মায়াবী চোখ জোড়া। সিয়াম বেডে বসে চন্দ্রার দিকে একটু ঝুঁকে চুলগুলো আরেকটু এলোমেলো করে বললো “ম্যাডামের কি আজ আর ওঠার ইচ্ছে নেই..?”
এতোটা কাছে আসায় শিয়ামের গা থেকে আসা শাম্পু জেলে মিশিয়ে একটা চরা পুরুষালী সুবাস চন্দ্রার নাকে ঠেকতেই সে হুট করে দুই হাত ব্ল্যাঙ্কেট থেকে বের করে সিয়ামের গলার পিছনে দুই হাত আটকে বললো ” নাহ..! চলো আজ তুমিও অফিসে ছুটি নিয়ে নাও, আমিও ক্লাসে যাবো না।”
সিয়াম এবার গলায় শব্দ করে হেসে চন্দ্রার নাকে নাক ঘষে বললো “আমার সাথে থাকতে থাকতে ম্যাডামের দেখছি আমার হাওয়া লেগেছে। কিন্তু সরি বউ আজ এই আবদারটা রাখতে পারবো না অফিসে জরুরী মিটিং আছে একটুপরে, তাই যেতেই হবে।”
এর পর চন্দ্রা দুই হাত সরিয়ে মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো “ব্রেকফাস্ট করে যেও।”
সিয়াম চন্দ্রার এই রকম মুখ ফোলানো দেখে মুখটা তার কানের নিয়ে গিয়ে নাকটা আরেকটু ঘষে বললো ” এগেইন সরি চন্দ্রাবতী। সত্যি বলছি আজ সময় থাকলে ব্রেকফাস্ট টাও বেডেই সেরে যেতাম।”
এই কথার পিঠে কি কিছু বলা যায়..? চন্দ্রা ভেবে পেলো না, নিজের লাল টুসটুসে গাল তাকে নিয়ে এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালো। সিয়াম তা দেখে মুচকি হেসে চন্দ্রার জামাকাপড় বের করে দিয়ে নিজে রেডি হতে লাগলো।
____________________________________________
সিরাজ বসে আছে একটা গোলাকৃতি সোফায়। তার হাত পা অনবরত কেঁপছে। এই প্রথম বার বোধহয় তার এতো চিন্তা হচ্ছে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামই তার প্রমাণ দিচ্ছে।
এরই মধ্যে ইন্দ্রা একটা ট্রে তে করে কফি আর স্নাক্স নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখলো।
কফিটা ইন্দ্রা সিরাজের দিকে এগিয়ে দিতেই সিরাজ ছোট্ট করে ” থ্যাংকস ” বলে গরম কফিটা এক ঢোকে অর্ধেকটা খেয়ে নিল। তা দেখে ইন্দ্রা চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠল “আরে কি করছেন টা কি..? ওটা অনেক গরম।”
ইন্দ্রা কথা শেষ হওয়ার আগেই সিরাজ অর্ধেক কফি খেয়ে ডান হাতের দুটো আঙুলের উল্টো পিঠ ঠোঁটে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে বসে রইলো কয়েক সেকেন্ড। তারপর চিন্তিত মুখে ইন্দ্রাকে বললো ” আমার খুব টেনশন হচ্ছে ইন্দ্রা। তোমার আব্বু যদি আমার কাছে তোমায় না দেন..?”
ইন্দ্রা হালকা হেসে বললো “আপনি অযথা উল্টোপাল্টা চিন্তা করে টেনশন করছেন। শুভ শুভ ভাবুন দেখবেন সব ভালোই হবে।”
সিরাজের তাও টেনশন তো কমলই না উল্টে বেড়ে গেলো কয়েকগুন। সামনে বসা মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলার ভয় চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরলো তাকে।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই চয়ন সাহেব গম্ভীর মুখ করে এসে বসলেন সিরাজের সামনের সোফায়। সিরাজকে কয়েক পলক দেখে গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করলেন ” তা কতদিন ধরে চলছে এইসব..?”
সিরাজ একটু ভরকে বললো ” জ্বি..? না মানে ওই ” সিরাজের গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে এলো।
চয়ন সাহেব এবার বললেন ” দেখো আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে ভালোবাসি তাই সরাসরি বলছি আমার মেয়েকে পছন্দ করার আগে নিশ্চই তার পাস্ট জেনেছ..?”
সিরাজ ঘাড় হেলায় অর্থাৎ হ্যাঁ। চয়ন সাহেব ফের বললেন “সব জেনে বুঝেই যদি তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তবে আমার কোনো আপত্তি নেই। মেয়েদের খুশিতেই আমার খুশি। কিন্তু তোমার মা..”
সিরাজ এবার শান্ত গলায় বললো “ওইসব নিয়ে আপনি ভাববেন না আংকেল। তিনি তার পাপের সাজা ভোগ করছেন। উনি ফিরে এলেও ওই বাড়িতে তার আর জায়গা হবে না.. আপনার মেয়ের ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।”
চয়ন সাহেব এবার মাথাটা হালকা নাড়িয়ে বললেন ” তবে তাই। পরের দিন সিয়াম চন্দ্রার সাথে আমি কথা বলে সব ঠিক করি।”
সিরাজ এবার হালকা একটা হাসি দিয়ে হ্যাঁ বোধক ঘাড় হেলালো আলতো করে। চয়ন সাহেব দুজনকে কথা বলতে দিয়ে চলে গেলেন উপরে।
চয়ন সাহেব যেতেই ইন্দ্রা একগাল হেসে সিরাজের পাশে বসে বললো “দেখলেন খামোখা টেনশন করছিলেন আপনি।”
সিরাজ এবার ইন্দ্রার বাম হাতের উল্টো পিঠে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে বললো “তোমার জন্যে টেনশন কখনই আমার কাছে খামোখা নয়।”
_______________________________________
সিনথিয়া রেডি হয়ে গাড়ি আসার অপেক্ষা করছে। আজ সিয়া আপূর্ব আর অলীক সাহেব সবাই কাজে বেড়িয়ে যাবেন। সায়মা বেগম আর অপা সকাল হতেই অপূর্বের নানীর বাড়ি গেছেন। ওনার শরীরটা নাকি হুট করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই সিনথিয়া নিজেই জেদ করেছে ওই বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। ওই বাড়িতে থাকা কালীন নিজের রুম থেকে খুব একটা বের হয়নি সে। এখন তার ওতো বড়ো বাড়িটা ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। তার জেদের কাছে হার মেনেই সিয়া সিয়ামকে ফোন করে বলেছে সিনথিয়ার জন্য গাড়ি পাঠাতে।
তার যে নিজের একটা বড়ো ভাই আছে তা যেনো তার বিশ্বাসই হয় না। আর শুধু একটা কেনো তার দুটো ভাই ভাবী একটা বড়ো আপু সবাই আছে, তারা সবাই সিনথিয়ার নিজেরই তো।
তার মম তাকে ছোট থেকেই বলেছিলো তার আগে পরে কোনো ভাই বোন বা রিলেটিভ নেই। তাই বন্ধুদের ভাই বোন দেখলে আর ভীতর থেকে একটা চাপা কষ্ট বেরোতো। যদিও সে সেটা কখনোই তার মমকে বুঝতে দেয়নি।
এইসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি এসে গেটের মুখের কাছে থামতেই সিনথিয়া এগিয়ে গিয়ে গাড়ির ভিতরের মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো। এই মানুষটাকে সে দিনে কতোবার লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো তার হিসেব নেই। অথচ সিনথিয়া যতবার কোননা না কোনো কারণে কথা বলতে গেছে পিয়াস ততবারই এড়িয়ে গেছে তাকে। সিনথিয়া এতে কষ্ট পেয়ে তার সামনে যাওয়া কমিয়েছিল তবে তাকে লুকিয়ে দেখা না। কিন্তু তাকে এইসময় এখানে দেখাটা সিনথিয়ার ডেস্টিনি বলে মনে হলো।
গাড়ির ভিতর থেকে পিয়াস দরজা খুলে দিলো। সিনথিয়া এবার চুপচাপ গাড়িতে বসলো।
পিয়াস এবার বললো ” সিটবেল্টটা লাগিয়ে নিন।”
সিনথিয়া হটাৎ পুরুষালী কণ্ঠ শুনে চমকে গিয়ে বললো ” জ্বী..?”
পিয়াস পুনরায় স্বাভাবিক গলায় বললো ” সিটবেল্টটা লাগিয়ে নিন।”
সিনথিয়া এবার হকচকিয়ে বললো ” ও হ্যাঁ- হ্যাঁ ” বলে সিটবেল্ট লাগিয়ে নিলো।
আধ ঘণ্টা পর গাড়ি সিয়ামদের বাড়ির সামনে থামতেই সিনথিয়া গাড়ি থেকে নেমে শুধু থ্যাংকস বলে সামনের দিকে এগোতে নিলেই পিয়াস পিছন থেকে ডাকলো “শুনুন”
সিনথিয়া থেমে পিছনে ঘুরে বললো ” হ্যাঁ বলুন..? ”
পিয়াস এবার স্বাভাবিক মুখ করে বললো ” পরের বার থেকে প্রায়ই সামনা সামনি দেখা হবে আমাদের। তাই আর গাছের পিছনে লুকিয়ে বা গাড়ির মিররে লুকিয়ে দেখার দরকার পড়বে না।” বলেই একটা তেছরা হাসি দিয়ে সানগ্লাস পরে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল ওখান থেকে।
স্ট্যাচু হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল সিনথিয়া। মানে লোকটা সব বোঝে..? ইস কি লজ্জা। কি লজ্জা। এক্ষুনি যদি কোনো যাদু হয়ে মাটিটা ফাঁক করা যেত তাহলে সিনথিয়া এক সেকেন্ডও সময় না ব্যয় করে টুপ করে ঢুকে যেত সেখানে। কিন্তু আফসোস সেসব কিছুই হবে না।
পিয়াস কিছুটা দূরে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে সানগ্লাসটা খুলে হেসে ফেললো। মেয়েটা তার থেকে অনেকটাই ছোটো, মেয়েটা একবার তাকে গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাঁচিয়ে ছিলো। তারপরে পরপর দুদিন তার সাথে ভালো ভাবেই কথা হয়েছিল। কিন্তু তারপরই সিয়াম মেয়েটার আসল পরিচয় জানিয়ে তার সাথে কথা বেশি কথা বলতে বারণ করেছিল। যদিও কারণটা সুইটি বেগম ছিলো। কিন্তু এখন তো সুইটি বেগম নেই তাই তার কোনো বাঁধাও নেই কথা বলায়। মেয়েটার তার প্রতি পাগলামি দেখে তার খুব ভালো লাগে। তার কলেজে একটা সো কোল্ড রিলেশনশিপে ব্রেকআপ হওয়ার পর সে আর কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি। তাই এই প্রেম হওয়ার আগের অনুভুতিটা তার কাছে একদম নতুন, নিজেকে এখন যেনো উনিশ কুড়ির যুবক মনে হলো পিয়াসের।
________________________________
আজ অপূর্বদের বাড়িতে সায়মা বেগম আর অপা থাকবেনা বলে অপূর্ব আর সিয়া ঠিক করেছিলো তারা সন্ধ্যে ছয়টার পরপরই ফিরে যাবে বাসায়। কারন অলীক সাহেবকে খেতে দেওয়া চা দেওয়ার ভার সায়মা বেগম সিয়ার উপরে দিয়ে গেছে। সিয়াও সেই কাজ সানন্দে করছে। এই ছোটো ছোট কাজ গুলোই তাকে এই বাড়ির অংশ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
সিয়া এবার অলীক সাহেবকে সন্ধ্যেতে চা দিয়ে নিজের ঘরে এসে বিছনায় বসলো। একবার ঘড়ির দিকে তাকালো সন্ধ্যে সাতটা বাজতে যায়। অপূর্ব এখনো ফিরলো না। সিয়া এবার নিজের ফোনে ফেসবুক ওপেন করে স্ক্রল করতে লাগলো।
মিনিট কয়েকের মধ্যেই কারোর পায়ের আওয়াজ পেয়ে উপরে তাকাতেই অপূর্ব এসে দুম করে সিয়ার কোলের মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।
সিয়া বিচলিত হলো না। সেদিন তার এই সম্পর্কের প্রতি এক ধাপ বাড়ানোর পর অপূর্ব নিজে থেকেই এখন এই সম্পর্কে অনেক সরল হয়ে এসেছে। বন্ধুত্বের দিক থেকে একটু একটু করে সম্পর্কটা স্বামী স্ত্রীর দিকে এগোচ্ছে। এতে দুজনেই সমান এফোর্ট আছে, এবং তারা নিজেরাও ভীষন খুশি।
সিয়া অপূর্বের মাথায় বিলি কেটতে কাটতে বললো “ফ্রেশ হবে না..? আর আজ এতো দেরি হলো যে…?”
অপূর্ব ক্লান্ত গলায় বললো “উম একটু পরে। আর আজ অনেক পেসেন্ট ছিলো। তাও তো অনেক পেসেন্টকে কালকের ডেট দেওয়া হয়েছে।”
সিয়া অপূর্বের ক্লান্ত গলা শুনে বললো ” চা বা কফি কিছু খাবে..?”
অপূর্ব মৃদু গলায় বললো ” হম কফি।”
সিয়া সেটা শুনে উঠতে গেলে অপূর্ব ধরে বলে ” আরেকটু বিলি কেটে দাও।”
সিয়া মুচকি হেসে বসে আবার বিলি কেটে দিতে থাকে। প্রায় আধ ঘণ্টার কাছাকাছি হয়ে এলে সিয়া অপূর্বকে আলতো স্বরে ডাক দেয়। অপূর্বের ঘন ঘন শ্বাস দেখে সিয়া বুঝে নেয় সে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু তার তো এখানে বসে থাকলে চলবে না রাতের রান্না করতে হবে। সে যেচে সায়মা বেগমের থেকে রাতের রান্নার দায়িত্ব নিয়েছে।
সিয়া এবার অপূর্বের মাথাটা আসতে করে বালিশে রাখতে গেলেই অপূর্ব জেগে যায়। সিয়া তা দেখে অপরাধী গলায় বলে ” ইস জাগিয়ে দিলাম..? সরি সরি আমি বুঝিনি.. আসলে রাতের রান্না বাকি ছিল তাই…”
অপূর্ব সিয়াকে মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বললো ” রিলাক্স সিয়া, ভালো করেছো উঠিয়ে আমি ফ্রেশ হতেও ভুলে গিয়েছিলাম দেখো। যাও তুমি নীচে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
সিয়া নীচে কিচেনে গিয়ে রান্না চাপলো রাতের। অল্প অল্প সব সবজি পাতি কাটলো। এরই মধ্যে অপূর্বও এলো কিচেনে। সিয়াকে দেখে মুচকি একটা হাসি দিতেই সিয়াও বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি ফিরিয়ে দিল।
অপূর্ব এবার নিজেই কফির কাপ বের করে জল গরম বসলো। তা দেখে সিয়া হকচকিয়ে বললো ” একি একি তুমি কেনো করছো..? ইস দেখেছো তোমার কফির কথা একদম ভুলে গেছি তুমি সর আমি করে দিচ্ছি।”
অপূর্ব হেসে গরম জলটা নামতে নামতে বললো ” তাতে কি হয়েছে সিয়া..? সংসার যখন দুজনের তখন দুজনকেই তো সমান ভাবে হাত লাগাতে হবে। শুধু কি আমি একাই কাজ করে এসেছি নাকি..? তুমি যে ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে কাজ করে এসেছো তার বেলা..? আর আমি এতটাও অকৃতজ্ঞ নই যে নিজের কাজটা শুধু বড়ো করে দেখে ঘরে ফিরে তোমায় কাজ করতে দেখে পায়ের উপর পা তুলে বসে কফি খাবো আর তুমি ওই ক্লান্ত শরীর নিয়ে সব কাজ করবে। আজ থেকে যখনই এইভাবে তোমার হাতে সংসারের দায়িত্ত্ব আসবে তুমি সবসময় আমায় এইভাবেই পাশে পাবে।”
সিয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে। সে আসলেই এতটা ভাগ্যবতী..? মনের ভিতর থেকে উত্তর এলো অবশ্যই নইলে কি আর এইরকম একটা স্বামী শশুর শাশুড়ী আর বোনের মত ননদ পায় সে.? সিয়ার কেমন আলাদা সুখ সুখ অনুভূতি হলো প্রায় “অনেক অনেক” দিন বাদ।
_____________________________________
আজ সাড়ে সাতটা বেজে যাওয়ায় পরও চন্দ্রা বাড়ি ফিরতে পারেনি ক্লাস থেকে। আগামীকাল তাদের একটা শো আছে তাই নিয়েই আজ বেশিক্ষণ প্র্যাকটিস হয়েছে অন্যান্য সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সে আগেই সিয়ামকে জানিয়ে দিয়েছিল তার ফিরতে দেরী হবে সে ফ্রী হলে মেসেজ দেবে। আর কল না তুললে যেনো টেনশন না নেয় তার ফোন সাইলেন্ট থাকবে।
চন্দ্রা এবার ফোনটা হতে তুলতেই দেখলো তার বাবা চয়ন সাহেব তিন বার কল করেছেন। চন্দ্রা সিয়ামকে তাড়াতাড়ি মেসেজ করে দিয়েই চয়ন সাহেবকে ফোন লাগালো।
চয়ন সাহেব ফোন রিসিভ করে হাসি মুখে ইন্দ্রার বিষয়টা বললেন।
চন্দ্রা সব শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো সে তো এইসবের চাপে তার দিভাইয়ের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলো। না না আর দেরী করা যাবে না অঘটন ঘটার আগেই তাকে আটকাতে হবে। ওইরকম একটা ছেলের হাতে চন্দ্রা কিছুতেই নিজের দিদিকে আর তুলে দিতে পারবেনা। আপাতত নিজেকে সামলে বললো ” কই দিভাই আমায় কিছু জানালো না তো..? আর দাঁড়ায় আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই বাড়িতে আসছি।”
চয়ন সাহেব সেটা শুনে বললেন ” ও হয়তো লজ্জায় বলতে পারেনি। কেনো তুই খুশি হোসনি..? আমি তো ভাবলাম তুই সবথেকে বেশি খুশি হবি একই বাড়িতে নিজের দিদিকে পেয়ে।”
চন্দ্রা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল ” তেমন কিছু না বাবা। আমি একটু দিভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাই, আসছি আমি।”
বলেই চন্দ্রা ফোন রেখে দ্রুত বেরোলো ওইবাড়ির উদ্দেশ্যে।
চন্দ্রা বাড়িতে ঢুকেই হরবড়িয়ে ইন্দ্রার রুমে ঢুকলো। ইন্দ্রা চমকে গিয়ে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে বললো ” ও তুই..? আয় আয় এভাবে আচমকা কেউ আসে..? ভয় পাবো না..?”
চন্দ্রা ইন্দ্রার হাতের ফোনের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো “কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে তোর সাথে আমার।”
ইন্দ্রা অবাক হলো কিছুটা তারপর ফোনটা কানে তুলে বললো ” পরে ফোন করছি চন্দ্রা এসেছে, হুম ।” বলেই ফোনটা রেখে দিতেই চন্দ্রা এসে ওর উপর একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েই জিজ্ঞেস করলো ” হ্যাঁরে সিরাজের ব্যাপারে তুই সব জেনে এই সম্পর্কটাতে রাজি হয়েছিস তো…?”
ইন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “সব জেনে মানে…? কিছু হয়েছে কি যা আমি জানি না..?”
চন্দ্রা এবার দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে ইন্দ্রাকে সবটা খুলে বললো। চন্দ্রার সাথে প্রথম দেখা, প্রেমে পড়া, তারপর বিশ্বাসঘাতকতা, জ্বেলে যাওয়া সবটা।
ইন্দ্রা কিছুটা জানতো সে সিরাজ আগে কেমন ছিল কিন্তু পুরোপুরি না। চন্দ্রার মুখ থেকে সব শুনে ইন্দ্রা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল “ও তো এখন ভালো হয়ে গেছে তাই না..? পাস্ট তো আমারও আছে..”
চন্দ্রা চেঁচিয়ে উঠলো “পাস্ট..? তুই জানিস সিয়ার বিয়ের দিন বিদায়ের পর সিরাজ অজানা অচেনা একটা মেয়েকে নিয়ে গিয়ে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার দেখলাম অনেকগুলো টাকাও দিয়েছে তাকে। সর মানে বুঝতে পারছিস তুই..?”
ইন্দ্রাকে সিরাজ এই ব্যাপারে কিছুটা বলেছিলো যে মেয়েটার সাথে নাকি ওর আগে রিলেশন ছিলো তাই সেদিন তাকে কিছু ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিয়েছিল। ইন্দ্রা সেটাই বললো চন্দ্রাকে।
চন্দ্রা একটু চুপ হলেও দমলো না আবার বললো “দেখেছিস তো ওর পাপ ওকে বর্তমানেও শান্তি দিচ্ছে না। তুই এইরকমই একজনের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছিস দিভাই আবার একই ভুল করিস না।”
ইন্দ্রা কাঁদতে কাঁদতে বললো ” কিন্তু…”
কথা শেষ করার আগেই চয়ন সাহেব দরজার বাইরে থেকে ভিতরে আসতে আসতে বললো “কোনো কিন্তু না ইন্দ্রা।”
বাবার গলা শুনে দুই মেয়েই বেশ চমকে তাকালো। তারমানে চয়ন সাহেব সব শুনেছেন..?
ইন্দ্রা বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো ” আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি বাবা। আর ও তো ভালো হয়ে গেছে বলো।”
চয়ন সাহেব এবার বললেন “আমি তোমার খুশির জন্যই এই সম্পর্কে রাজী হয়ে ছিলাম ইন্দ্রা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি আবার ভুল মানুষকে বেছে নিচ্ছ আর আমি বাবা হয়ে সেটা কখনোই চাইবো না। আমি চাই তোমার যখন ভিসা এসে গেছে তুমি ইউ এস এ গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করো। যাতে পরবর্তীতে পূর্বের ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। ততোদিন সিরাজ যদি পারে অপেক্ষা করুক আর যদি অপেক্ষা না করতে পারে তাহলে ভাববে সে তোমার ছিলোই না কোনোদিন। আগের মতো একই ভুল আবার করো না ইন্দ্রা। আমি কাল পরশুরই ফ্লাইটের টিকিট ম্যানেজ করছি তুমি রেডি থেকো। ”
ইন্দ্রা কান্নারত অবস্থায় বলে ” ঠিক আছে বাবা তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। কিন্তু যাওযার আগে কি একটিবার আমি সিরাজের সাথে কথা বলতে পারি..?”
চয়ন সাহেব বললেন “এটা শুধু সিরাজের না তোমারও ধৈর্য্যের পরীক্ষা মা। আজ এখন থেকেই তোমার ওর সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ। যা বলার ওকে আমি বলে দেবো। তুমি ফিরে এসো ততদিনও যদি তোমাদের দুজনের সিদ্ধান্ত একই থাকে তাহলে আমরা কেউই আপত্তি করবো না।”
ইন্দ্রা আবার মুখ চেপে কেঁদে ঘাড় হেলালো।
#চলবে..?