গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৬
সিয়ামের ফোন করার একঘন্টার ভিতর ভিতরই সব পৌঁছে গেলো সেই ঠিকানায়। সিরাজ বাড়িটির সামনে পৌঁছাতেই গার্ড গেট খুলে দেয়। সিরাজদের গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করার পর সিরাজ সিয়ামকে ফোন দেয়। সিয়াম বলে বাড়ির ভিতরে চলে আসতে।
সিরাজ, ইন্দ্রা, সিয়া আর অপূর্ব সবাই বেশ কৌতুহলী হয়েই ভিতরে প্রবেশ করলো। তারা তখনও বুঝতে পরেনি ভিতরে তাদের জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে।
চারজনেই ভিতরে ঢুকে দেখলো সিয়াম সোফায় পায়ের উপর পা তুলে কীসব পেপার্স দেখছে। আর উল্টোদিকেই সুইটি বেগম একটি মেয়েকে কিসব বোঝাচ্ছেন। তাদের মাথার কাছেই দুটো গার্ড দাঁড়িয়ে।
সিরাজ অবাক হয়ে ডাকলো ” ভাইয়া ”
সিয়াম পেপার্স গুলো রেখে উঠে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে বললো ” আয়..এদিকে সবাই।”
সিয়ামকে এই দাঁড়ানো অবস্হায় দেখে সিরাজ, অপূর্ব আর ইন্দ্রা তেমন চমকালো বলে মনে হলো না। কিন্তু সিয়া বেশ চমকালো। কৌতূহল না চাপতে পেরে জিজ্ঞেস করে বসলো ” ভাইয়া তুমি ঠিক কবে হলে…? আগে বলনি তো..?
সিয়াম গম্ভীর মুখ করে বললো ” সবটা বলবো একটু ওয়েট কর।”
সিয়া সুইটি বেগমকে দেখে আবার বলে উঠলো ” আর মা এখানে এখানে কি করছে সাথের মেয়েটা কে..?”
সিয়াম পকেটে হাত গুঁজেই সুইটি বেগমের কাছে গিয়ে বলল ” তা আমার সুইট মনি.. তুমি বলবে নাকি আমি বলবো পাশের মেয়েটা কে হয় তোমার..? থাক তোমায় আর কষ্ট করে বলতে হবে না। সিনথিয়া তোমার পাশে বসে থাকা মহিলাটি তোমার কে হন..?”
সিনথিয়া এতোক্ষণ অবাক হয়ে সবাইকে দেখছিলো। সিয়ামের কোথায় হুঁশ ফিরলে অস্ফুট স্বরে বলে ” মম ”
এই কথা শুনে সামনের দাঁড়িয়ে থাকা চারজনই চমকে উঠলো।
সিরাজ সম্পত্তির ব্যপারে সবটা জানতো, আর জানতো সুইটি বেগম সিয়ামের বাবা মাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করছে। তারপর থেকেই সিরাজ কম কথা বলতো সুইটি বেগমের সাথে। কিন্তু তারা মরে যাওযার পর সুইটি বেগম সিরাজকে ডেকে কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন তিনি কিছুই করেননি এইসব যা হয়েছে সব অ্যাক্সিডেন্টে হয়েছে। সিরাজ সরল মনে সবটাই বিশ্বাস করেছিল। ব্যাস এইটুকুই সে জানে। তার মম এর যে আরো একটা মেয়ে আছে সেটা তো সুইটি বেগম তাকে বলেনি।
সিরাজ অবাক হয়ে বললো ” কি বলছিস ভাইয়া..? মম এর মেয়ে মানে আমাদের আপন বোন হয় এই মেয়েটা..? কই আমরা কেউ তো কিছু জানি না।”
সিয়াম এবার বাঁকা হেসে সুইটি বেগমের দিকে তাকালো। তিনি দরদর করে ঘামছেন। এই জন্য নয় যে তার সম্মতি হাতছাড়া হবে, এই জন্য যে তার আদরের ছেলে আর প্রাণের টুকরো মেয়েটা সব জেনে তাকে ঘৃণা করবে। এতো বছর পর আজ হঠাৎ তার এমন অনুভুতি হচ্ছে কেনো তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি কাজ গুলো করার সময় তো ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভাবেনি। তাহলে এখন কেনো ভাবছে…?
সিয়াম এবার সবার দিকে একবার তাকালো। তারপর সিনথিয়ার কাছে গিয়ে বলল ” তুমি আমার জায়গাটায় বসো। আর এখন আমি যা যা বলবো ওদের সাথে তুমিও মন দিয়ে পুরোটা শুনবে। মাঝে একটাও কথা বলবে না।”
কথা শেষ করতেই সিনথিয়া ধীরে ধীরে উঠে সিয়াম যে সোফায় বসে ছিলো সেই সোফায় বসলো।
সিয়াম এবার বলা শুরু করলো সব। ঘটনার সূত্রপাত করলো তার মা আর সুইটি বেগমের বিয়ের আগে থেকেই। তারপর তার আর তার মা বাবার জীবন ঘটিত যা জড়িয়ে ছিলো সব কিছুর খোলসা করলো। এমনকি সুইটি বেগমের সাংসারিক সব কুকীর্তির প্রমাণ দেখলো সবাইকে, বিশেষ করে সিনথিয়াকে। সিনথিয়া সমেত সবাই অবাক নয়নে শুধু সিয়ামের কথা শুনেই গেলো কারোর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোলো না।
সেখানে উপস্থিত সবাই জানে সুইটি বেগম লোভী ও অহংকারী মানুষ। কিন্তু এই লোভের জন্য যে সে দুটো মানুষকে পর্যন্ত খুন করতে পারে তাও যারা তাকে অসময়ে ঠাঁই দিয়েছিল এইসব সবার ধারণার বাইরে ছিল।
সিয়াম ধীরে ধীরে এটাও বললো সিয়া আগের পক্ষের আর সিরাজ সিনথিয়া এই পক্ষের সন্তান। সিয়ামের আবার সম্মত্তি ফেরানোর প্রচেষ্টা এতো বছর অভিনয় করে থাকা সবটাই বললো সে।
একের পর এক চমক যেনো সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সিনথিয়া অবাক চোখে সুইটি বেগমের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো ” মম তুমি কি এগুলো সত্যিই করেছ..?”
সুইটি বেগম আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। রাগে ক্ষোভে চেঁচিয়ে উঠলেন ” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি করেছি সব আমি করেছি। আমিই আমার আপন বোন আর দুলাভাইকে মেরেছি। আমি আমার স্বামীকে ঠকিয়ে আরেকটা বিয়ে করেছি। আমিই সম্পত্তির লোভে চন্দ্রাকে মারতে চেয়েছি। তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছি সিয়ামের থেকে। ভেবেছিলাম লুকিয়ে বিয়ে দিলে মেয়েটা পরের দিনই ঝামেলা করে বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু গেলো না দিন দিন আমার বিরূদ্ধে চলে গেলো। তাই আমি তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে….. ”
” ব্যা-স-স ” সিয়াম গর্জে উঠলো। সবাই মোটামুটি সিয়ামের গর্জন শুনে থতমত খেলো। কারন সিয়ামকে কোনোদিনই তারা এই প্রকার রেগে যেতে দেখেনি। সিয়াম তাদের কাছে বরাবরই একটা শান্ত, কম কথা বলা, মিষ্টভাষী মানুষ তার এই রূপ দেখলে যে কারোর অবাক হওয়ারই কথা।
সিয়াম ওই রাগী ভারী কণ্ঠেই বললো ” প্লিজ থামো মনি। এতটা নীচে নামতে তোমার বুক কাঁপলো না..? ওই নিষ্পাপ ফুলের মতো মেয়েটা কি দোষ করেছিল তোমার..? তোমার আমার সাথে শত্রুতা ছিলো তো আমার ক্ষতি করতে এইসবে ওকে জড়ানোর কি দরকার ছিলো..? এইসবের শাস্তি তুমি পাবে মনি সবের। ইরফান কল দ্যা পুলিশ ”
সুইটি বেগম এবার সবার দিকে তাকিয়ে চোখের কোনের পানি মুছে বললেন ” দাঁড়াও সিয়াম। খেলা এখনও শেষ হয়নি। চন্দ্রা কিন্তু এখনও আমার কাছে আছে।”
এবার সিনথিয়া এগিয়ে এসে সুইটি বেগমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কান্নারত অবস্থায় বলল ” তুমি এতটা খারাপ মম..? এতটা..? আর আমি কিনা তোমায় ওয়ার্ল্ড বেস্ট মম ভাবতাম। ভাবতাম আর যে যাই করুক আমার মম কোনোদিন খারাপ কাজ করতে পরে না। আর তুমিই সেই এতটা জঘন্য কাজটা করলে..? আমার কাছে তো পুরো পৃথিবীটাই মিথ্যে হয়ে গেলো মম আমার আর এই পৃথিবীতে কেউ রইলো না। ” বলেই সিনথিয়া মুখ চেপে কেঁদে দিলো।
সিরাজও এবার শক্ত গলায় বললো ” ছিঃ মম ছিঃ! তুমি এতটা জঘন্য কাজ করতে পারলে..? আমি জানতাম তুমি লোভী কিন্তু এখন খুনিও..? আমি আর নিতে পারছি না ভাইয়া তুমি এই মহিলাকে চোখের সামনে দিয়ে সরাও নইলে আমিই রেগে কিছু করে ফেলবো।”
সুইটি বেগম এবার মুখ খুললেন ” বাহ্ ! যাদের জন্য করি চুরি তারাই বলে চোর..? এতো ছলনা নিজেকে অপরাধী করা কার জন্যে..? তোদের জন্যই তো..? নইলে এতো সম্পত্তি আমি কি করবো বল..?”
সিয়া পাশ থেকে ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো ” প্লিজ মম। নিজের পাপের ভাগীদার সবাইকে কোরো না। আর যাদের জন্য করলে মানে কি..? কেউ কি তোমায় কসম দিয়েছিল এইসব করার জন্য..?”
সিরাজ আবার বলে ” কারোর জন্য নয় মম। তুমি শুধু নিজের কথা ভাবো আর নিজের জন্যে এইসব করেছো। প্রতিশোধের আগুনে তুমি দুটো প্রাণ কেড়ে নিলে। কীকরে পারলে..? একবারও ভাবলে না তোমার এই পাপের আঁচ আমাদের গায়েও লাগবে..?”
সুইটি বেগম হতাশ হয়ে চেয়ে থাকলেন ছেলে মেয়ের দিকে। তিনি সত্যিই কি ভাবেননি ছেলে মেয়েদের কথা..? শুধু নিজের কথাই ভেবেছেন সারাক্ষণ..? নাহ্ এখন এইসব ভাবলে চলবে না। নিজেকে নিয়ে যখন সে ভাবেই তখন সবার কথা শুনে কাজ নেই। আগে নিজে বাঁচুক তারপর ছেলেমেয়েদের বোঝানো যাবে।
সুইটি বেগম এবার হেসে বললেন ” বেশ মানলাম আমি সার্থপর। আমিই খারাপ, তাহলে আরেকটু খারাপ হই কি বলো সব..? আচ্ছা সিয়াম তোমার চন্দ্রা কোথায়..?”
সিয়াম আসেপাশে সবাইকে একবার দেখে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়ালো।
সিনথিয়া চেঁচিয়ে উঠলো ” মম আর কতো নীচে নামবে তুমি..? চন্দ্রা আপু কই..? তুমি কোনো ক্ষতি করনি তো তার..?”
সিরাজ সিয়া দুজনেই উত্তেজিত হয়ে বললো ” সত্যি তো ভাবী কই..? আশা থেকে তো দেখলাম না। মম সত্যি বল ভাবী কোথায়..?”
ইন্দ্রা এতক্ষণে কাঁদা শুরু করে দিয়েছে চন্দ্রাকে না দেখতে পেয়ে।
সুইটি বেগম কারোর কথায় পাত্তা না দিয়ে এবার সিয়ামের সামনে গিয়ে বললেন ” তা সিয়াম তোমার প্রাণপ্রিয় বউকে চাই নাকি এই পুরো সম্মতির মালিকানা..? ভেবে বলবে আমার একটা কলে কিন্তু তার প্রাণ নিয়ে টানাটানি পরে যাবে। এতগুলো পাপ করেই ফেলেছি যখন আরেকটা নয় করেই জেলে গেলাম।”
সবাই এবার বেশ ভয় পেল। শুধু ভাবভঙ্গি পাল্টানো না সিয়ামের মুখের সে আগের মতই স্বাভাবিক থেকেই বললো ” চন্দ্রর সামনে এই সম্পত্তি এক কানাও মূল্য আমার কাছে নেই সেটা এখানে উপস্থিত প্রায় সবাই জানে। তবে হ্যাঁ আমার বাবা মায়ের এতো কষ্টের অর্জন করা জিনিস আমি তোমার মতো একজন খুনির হাতে নীরবে তুলে দিলে তারা আমায় কোনোদিনও ক্ষমা করতেন না। আর রইল চন্দ্রার কথা..? এই পিয়াস ভিতরে আয়।”
পিয়াস ভিতরে আসতেই সুইটি বেগমের মাথায় যেনো এবার বাজ পড়লো। তার শেষ দান তাও যে এভাবে মাঠে মারা যাবে তা তিনি কল্পনাও করেননি।
পিয়াস চন্দ্রার একহাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসছে। চন্দ্রার মাথায় হাতে ব্যান্ডেজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে সে সামনের দিকে আসছে। চন্দ্রাকে এভাবে দেখে ইন্দ্রা আর সিয়া দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরলো।
সিয়াম বাঁকা হেসে সুইটি বেগমকে বললো ” আরেহ মনি..? চমকে গেলে নাকি..? এতোটা আশা করনি তাইনা..? তোমারও বোঝা উচিত ছিল আমি আর সেই ছোটো সিয়াম নেই যে কিনা তার মনির অন্ধ ভক্ত ছিলো, যার এককথায় সিয়াম নিজের প্রাণ দিতেও প্রস্তুত ছিলো। তোমায় মায়ের আসনে বসিয়েছিলাম মনি তবে আমি ভুলে গিয়েছিলাম কাক ময়ূরের পালক লাগলেও ময়ূর হতে পরে না।”
সুইটি বেগম আবার চেঁচিয়ে উঠলেন ” সিয়াম..!! কথা সংযত করো।”
পিয়াস সুইটি বেগমকে এভাবে চেঁচাতে দেখে গার্ড দের ইশারা করতেই তারা মিনিট কয়েক মধ্যেই পুলিশ নিয়ে এলো।
সুইটি বেগম এতক্ষণে বোধহয় উপলব্ধি করলেন সব পাওয়ার আশায় তার কাছে আর কিচ্ছু নেই। সে নিঃস্ব, না আছে তার কাছে পয়সা এর না আপনজন। তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে হুহু করে কেঁদে দিলেন।
সিয়ামের ইশারায় পুলিশ সব পেপার্স দেখে সুইটি বেগমকে অ্যারেস্ট করলেন।
সিনথিয়া এই দৃশ্য সহ্য না করতে পেরে জ্ঞান হারালো। পিয়াস সামনে থাকায় সিনথিয়াকে ধরে ফেললো। সবাই জল নিয়ে এসে সিনথিয়ার মুখে ছিটাতে লাগলো। সবার মনের মধ্যেই এখন যেনো এক নীরব ঝড় চলছে কিন্তু কেউই তা প্রকাশ করতে রাজি নয়। সবাই স্বাভাবিক যেনো কিছুই হয়নি একটু আগে।
#চলবে..?
গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৭
সেই ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেছে। যে যার মতো কর্মস্থলে ফিরে গেছে আগের মতোই। সিয়া সিরাজ কষ্ট পেলেও সামলে নিয়েছে নিজেদের। শুধু ব্যতিক্রম সিনথিয়ার, সে মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছে। সেই দিনের পর তাকে সিয়াম নিজের বাড়িতে এনেই রেখেছে আর সিরাজ সিয়ার আর নিজের বোন বলে পরিচয় দিয়েছে সিনথিয়াকে।
সিয়া সিরাজও বেশ সুন্দর ভাবেই আপন করে নিয়েছে সিনথিয়াকে। সিয়া দুইদিন এই বাড়িতেই থেকে গেছে সিনথিয়ার জন্য, ইন্দ্রা বাড়ি ফিরে গেছে তার।
ফোনটা দুই মিনিটে তিন বারের উপর বাজায় বিরক্ত হয়ে সিয়া ফোনটা আবার সাইলেন্ট করে দিলো।
সে সিনথিয়ার সাথে কথা বলছিলো আর তাকে সব মজার মজার জিনিস বলছিলো যাতে মেয়েটার মন ভালো হয়। কিন্তু সিয়া এই বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে অপূর্ব যে মুখ বেজার করে ওই বাড়িতে গেলো। যাওযার পর থেকেই মিনিটে মিনিটে ফোন মেসেজ করে জিজ্ঞেস করছে কখন সে ফিরবে..? পারলে সিনথিয়াকে নিয়েই যেনো তার বাড়ি চলে আসে। এক এক করে তার বোন মা সবাইকে দিয়েই ফোন করিয়ে এক কথা বলেছে সে।
সিয়া এবার ফোনটা রেখে সিনথিয়াকে আবার গল্প বলার জন্য রেডি হতেই, সিনথিয়া মুচকি হেসে বলল “অপূর্ব ভাইয়া তোমাকে খুব ভালবাসে তাইনা আপুই..?”
সিনথিয়ার এমন প্রশ্নে সিয়া কিছুটা থমকাল। তারপর হেসে কথাটা ঘুরিয়ে বললো ” আর বলিসনা পাগল লোক একটা। সারাদিন যে কতবার ফোন করলো এই নিয়ে তার হিসাব নেই, প্রত্যেকবার এক একটা বাহানা। সিয়া এই খুঁজে পাচ্ছি না, সিয়া ওইটা কই রেখেছ..? অথচ সব ঘুছিয়ে রেখে এসেছি আমি।”
সিনথিয়া হাসলো, সিয়া তা দেখে খুশি হলো, যাক মেয়েটাকে সে সরল করতে পেরেছে কিছুটা।
হটাৎই সিনথিয়া আচমকা সিয়াকে জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা ওই যে ছেলেটা সিয়াম ভাইয়ার সাথে ছিলো সেটা কে..?”
সিয়া একটু অবাক হলেও তার রেশ চেপে বললো “ওহ ওইটা তো সিয়াম ভাইয়ার বন্ধু পিয়াস ভাইয়া, বিজনেস পার্টনারও বলতে পারো। আমি সিরাজ, সিয়াম ভাইয়া, পিয়াস ভাইয়া সব একসাথেই বড়ো হয়েছি। পিয়াস ভাইয়া খুব ভালো সিয়াম ভাইয়া যখন বাইরে কোথাও যায় পিয়াস ভাইয়াই আমাদের দেখভাল করে সব দরকারি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে ছোটো ছোটো জিনিসও পিয়াস ভাইয়া আমাদের এনে দেয়।”
সিনথিয়া সব শুনে শুধু বললো ” ও ”
সিয়া এবার একবার সিনথিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো “বসো তুমি আমি তোমার রাতের খাবারটা নিয়ে আসি।” বলে সিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
_______________________________
এই দুইদিন সব ঠিকঠাক থাকলেও চন্দ্রার জীবনে যেনো বেশ বড়সড় ঝড় চলছে। সেই দিন সেই ঘটনার পর থেকে সিয়াম তার সাথে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে। যদিও নীরবে চন্দ্রার সব খেয়ালই রাখছে। চন্দ্রা অনেক চেষ্টা করেও সিয়ামের সাথে কথা বলতে পারেনি। এই কারণে সে বেশ কষ্টে আছে।
এই মানুষটা তার সবচেয়ে বড় বেস্ট ফ্রেন্ড যার সাথে কোনো কথা শেয়ার না করলে চন্দ্রার রাতে ঠিকঠাক ঘুম হয় না। অথচ দুইদিন ধরে এক বিছনায় শুয়েও সিয়াম ওর থেকে দূরে দূরে থেকেছে।
চন্দ্রা এর কারণটা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও কিছুটা পেরেছে। সেই দিন তার সত্যিই নিজেকে মারপিটের ঝামেলায় জড়ানো উচিৎ হয়নি, সত্যিই সেদিন যা খুশি হতে পারত।
এসব ভাবনার মাঝেই চন্দ্রা ডোর বেলের আওয়াজ শুনতে পেলো। খুশি হয়ে নিজের শাড়িটা ঠিক করে দৌড় দিল দরজার দিকে। সে আজ একটা সুন্দর সাদার উপর শাড়ি পড়েছে, শাড়িটা বেশ পাতলা অনলাইন থেকে নেওয়া তার আজই এটা। ন্যাচারাল মেকআপে বোঝার উপায় নেই সে মেকআপ করেছে কিনা।
চন্দ্রা হাসি মুখে দরজা খুলতেই সিয়ামকে সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলো। এখন সে আর হুইলচেয়ার ব্যাবহার করে না।
সিয়াম চন্দ্রাকে এভাবে দেখে মাথা থেকে পা পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু কুঁচকে চন্দ্রার পাশ দিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেলো।
চন্দ্রা বেশ হতাশ হলো। সে ভেবেছিল সিয়ামের রাগটা একটু হয়তো পড়বে তাকে এভাবে দেখে কিছুতো অন্তত মন্তব্য করবে কিন্তু সিয়াম তার একটাও করলো না।
অগত্যা চন্দ্রা চুপচাপ দরজাটা বন্ধ করে গুটি গুটি পায়ে সিয়ামের রুমে ঢুকে দেখলো সিয়াম ফ্রেশ হতে ঢুকছে। চন্দ্রা তা দেখে ঝটপট বললো ” আমি তোমার খাওয়ারটা ঘরে নিয়ে আসছি।”
সিয়াম ভারী কণ্ঠেই বললো ” দরকার নেই, আমি ডাইনিং টেবিলেই খাবো।”
চন্দ্রা এবার কিছু না বলেই চলে গেল খাবার বাড়তে। সিয়ামের এভাবে তার সাথে কথা বলাটা সে নিতে পড়ছে না মোটেই। সিয়াম কোনোদিনই তার সাথে এভাবে ভারী কণ্ঠে কথা বলেনি। কিন্তু এই তিনদিন ধরে বলছে আর এটা ভেবেই চন্দ্রার বুক ভার হয়ে আসছে।
চন্দ্রা খাবার সাজিয়ে দিতেই সিয়াম এসে বসলো টেবিলে। চন্দ্রা এবার আড়চোখে তাকালো লোকটাকে তার একটু বেশি সুন্দর লাগে সবার থেকে। এই সে এলোমেলো চুল খানিকটা কপালে পরে, ঘরের সাধারণ পেলো টিশার্ট আর ট্রাউজার এতেই যেনো তাকে কি সুদর্শন ঠেকছে চন্দ্রার চোখে। কিন্তু তার থেকেও আরও বেশি সুদর্শন পুরুষ আছে এই পৃথিবীতে কিন্তু চন্দ্রার শুধু তাকেই কেনো এতো ভালো লাগে..? ভালোবসে বলেই কি..?
চন্দ্রা এবার সিয়ামের সামনের চেয়ারটাতে বসলো। সিয়াম একটা খাবারের প্লেটে খাবার তুলে চন্দ্রার সামনে রাখলো। চন্দ্রা খাওয়া শুরু করলো। ঘটনার দিন সে সিয়ামকে খাইয়ে দিতে বলায় প্রথম বার সিয়ামের থেকে খাওয়া নিয়ে ধমক শুনেছিল সেইদিন, তাই এই দুই দিন খাওয়া নিয়ে আর জেদ করেনি সে।
খেতে খেতে চন্দ্রা সিয়ামের দিকে তাকাতেই তার চোখা চোখি হয়ে গেলো, চন্দ্রা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। তার বুঝতে বাকি নেই সিয়াম তাকে হাত দিয়ে না স্পর্শ করলেও চোখ দিয়ে তার প্রতিটা অঙ্গ স্পর্শ করে যাচ্ছে। চন্দ্রার এটা অনুভব করেই গা শিরশিরিয়ে উঠলো। সে শাড়ির আঁচলটা বুকের কাছে আরএকটু টেনে নিল। কিন্তু পাতলা শাড়ি আর ডিপ নেক ব্লাউজে তেমন কিছু লাভ হলনা।
চন্দ্রার এইরকম শাড়ি পরার অভ্যাস নেই। আজ বাড়িতে কেউ নেই, সিরাজ অফিসিয়ালি কাজে বাইরে আর সিয়া অপূর্বের জোড়াজুড়িতে তাড়াতাড়ি ডিনার সেরেই সিনথিয়াকে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে তার শশুর বাড়ি।সিয়ামকে রাগ ভাঙ্গানোর ভালো সুযোগ ভেবেই সে এই শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে সেজেছে। কিন্তু এইরকম অসস্তিতে পড়বে জানলে সে অন্য কিছু পড়তো।
এতো জড়তা তার থাকতো না যদি সিয়াম তার সাথে কথায় সহজ হতো। কিন্তু এই এড়িয়ে চলা ব্যাপারটাই তার মধ্যেই আলাদা কষ্ট তৈরি করছে।
সিয়াম খেয়ে দেয়ে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল। চন্দ্রাও খেয়ে সব গুছিয়ে ঘরে গিয়ে দেখলো সিয়াম দাঁড়িয়ে একটা বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। চন্দ্রা এবার সব জড়তা কাটিয়ে সিধে গিয়ে সিয়ামকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
সিয়াম বুঝতে পেরে চন্দ্রার হাত দুটো ছাড়িয়ে বইটা রেখে অন্যদিকে গিয়ে ঘরের সাথে অ্যাটাচ সোফায় বসে ল্যাপটপ নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো ।
চন্দ্রা এবার গিয়ে টেনে ল্যাপটপটা সরিয়ে টেবিলে সিয়ামের মুখোমুখি বসলো।
সিয়াম এবার বিরক্তি নিয়ে বললো “কি হচ্ছে কি চন্দ্র সামনে থেকে সর কাজ করতে দাও।”
চন্দ্রা এবার করুন মুখ করে বললো “কেন এইরকম করছো সিয়াম..? আমার যে আর ভালো লাগছে না এই এড়িয়ে যাওয়া। একই ছাদের নীচে থেকেও আমরা দুজন অপরিচিতদের মত থাকছি। কেন সিয়াম কেন এমন করছো..?”
সিয়াম এবার চোখ মুখ কঠিন করে চন্দ্রার চোখে চোখ রাখল। চন্দ্রা ভরকালো, এই দৃষ্টি তার অচেনা কারণ সে সিয়ামকে খুব একটা রেগে যেতে দেখেনি কখনও।
সিয়াম ওভাবেই চোখ মুখ শক্ত করে বললো “তুমি সত্যিই জানো না চন্দ্র আমি ঠিক কি জন্যে রেগে আছি..?”
চন্দ্রার দৃষ্টি এলোমেলো দেখে সিয়াম নিজেই পুনরায় বললো “সেই দিন তোমার সাথে কি কি হতে পারতো তুমি কল্পনা করতে পারছ চন্দ্র..? আমি যদি সেদিন ঠিক সময় ওখানে না পৌঁছাতাম তা-হ-লে…….আমার তো ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে এখনো। ওখানে গিয়ে তোমায় ওই অবস্থা দেখে সেদিন আমার কি অবস্থা হয়েছিল তুমি ধারণাতেও আনতে পারবে না চন্দ্র। তুমি ছাড়া যে আমি নিঃস্ব তুমি তা ভালো ভাবেই জানো তাই বারবার আমার বারণ করার সত্বেও নিজেকে এভাবে বিপদে জড়াও তাই না…? খুব ভালো লাগে আমায় এভাবে তরপাতে দেখে..?”
চন্দ্রা এতক্ষণ মুখ নীচু করে বসে ছিল এবার ছলছল চোখ নিয়ে মুখ তুলে সিয়ামের চোখের দিকে তাকালো। তারপর হাত বাড়িয়ে সিয়ামের হাতটা ধরতে যেতেই সিয়াম হাতটা সড়িয়ে নিলো।
চন্দ্রা তা দেখে ফুঁপিয়ে উঠে বললো “সরি সিয়াম আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যদি তুমি পেপার্স গুলো না পাও যদিও আমি তোমায় বলেছিলাম কোন কোন জায়গায় লুকোতে পারি, তাও আমার ভয় হচ্ছিল যদি তুমি সেগুলো পাওয়ার আগেই মনির হাতে পরে যায়। তাহলে তো আমাদের এতদিনের প্ল্যান তোমার এতদিনের কষ্ট সব ব্যর্থ যেত তাই আমি রিস্ক টা নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আর তুমি তো সকালে আমার ব্রসলেটে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়ে দিয়েছিলে তাই আরও…”
সিয়াম আগের মতোই রেগে বললো ” তাই আরও কি চন্দ্র..? তুমি নিজের লাইফ রিস্ক নিয়ে অতগুলো লোকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে..? একবারও আমার কথা ভাবলে না..? আমার উপর তোমার একটুও ভরসা নেই তাইনা..? হাহ্ জিজ্ঞেস করছি কি থাকলে আমার জন্য ওয়েট করতে সেখানে একা একা লড়াই করতে যেতে না। আমি ভীষণ হতাশ হয়েছি চন্দ্র তোমার এই কাজ দেখে। আমি আগেও বলেছিলাম তোমার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে কোনো কিছুই না। কাজ না হলে না হতো, আমি ঠিক কোনো না কোনো ভাবে সামলে নিতাম পরে। আমার শত্রুর অভাব নেই চন্দ্র। এখন তো মনে হচ্ছে তোমায় আমার লাইফের সাথে জড়িয়ে সত্যিই ভুল করেছি।”
চন্দ্রা কান্নারত অবস্থায় বলল ” এরকম করে বলো না সিয়াম। তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির মধ্যে একটা। তুমি যেমন তোমায় আমায় ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারো না তেমনি আমিও পারি না তোমায় ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে। আমার তখন মাথা কাজ করছিলো না তাই হুটহাট যা করার করে ফেলেছি। আমি সত্যিই বুঝিনি এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হবো। আমায় এইবারের মতো মাফ করো প্লিজ।” চন্দ্রা শেষ কথাটা সিয়ামের এক হাত নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বললো।
সিয়াম হাতটা এবার আলতো করে ছাড়িয়ে বললো ” ইটস ওকে। ডিনারের পর যে ওষুধটা আছে ওইটা খেয়ে নাও। আমি শুতে গেলাম ঘুম পাচ্ছে আমার।” বলেই সিয়াম উঠে গিয়ে বেডের একপাশে শুয়ে পড়ল।
চন্দ্রা কিছুক্ষণ সিয়ামের দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে ওষুধ না খেয়েই লাইট নিভিয়ে বেডের অন্য পাশে শুয়ে পড়লো। চোখের জল ঠোঁট কামড়ে চাপতে চাইলেও পরলো না বেশিক্ষণ মুখ চেপে হু হু করে কেঁদে দিল। এই একটা মানুষের এড়িয়ে চলা তার বুকে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ ঘটায়।
প্রায় এক ঘণ্টার বেশি চন্দ্রাকে একইভাবে কাঁদতে দেখে সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো। বেশি বলে ফেললো নাকি মেয়েটাকে..? এতদিন যে সে নিজেও ভীষণ কষ্টে ছিলো তার চন্দ্রের সাথে কথা না বলে। কিন্তু এই পাগল মেয়েকে সেই তার ভিতরের এই কষ্ট কি করে বোঝাবে..? সেই দিন চন্দ্রাকে ওই অবস্থায় দেখে যে তার কি অবস্থা হয়েছিল সে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না।
অনেকক্ষণ কাঁদার দরুন চন্দ্রার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। সিয়াম এবার আস্তে করে একটু এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রার শাড়ির ফাঁক গলিয়ে তার উন্মুক্ত উদর টেনে তাকে নিজের দিকে নিয়ে আসলো। তারপর হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে বললো “এইভাবে আর আমায় না বলে কোনো কাজ করবেনা চন্দ্র। আমি ভীষণ কষ্ট পাই।”
চন্দ্রা হিচকি তুলে বললো ” সত্যি ক্ষমা করেছো তো..? আর রাগ করে থাকবেনা বলো..?”
সিয়াম চন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ” আমি রাগ করিনি চন্দ্র। আমি শুধু উপলব্ধি করতে চেয়েছিলাম তোমায় তোমার ভুল টা।”
সিয়াম এবার চন্দ্রার মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে বললো “শুয়ে পরো অনেক রাত হয়েছে। ”
চন্দ্রা এবার নিজেই একটু এগিয়ে এসে সিয়ামের ঘাড়ে মুখ গুঁজল। পিছনে টি-শার্ট খামচে ধরলো ওর। সিয়াম এবার হাঁস ফাঁস করতে লাগলো। চন্দ্রাকে পিছনে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো ” এমন করো না চন্দ্র, এরপর আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না, তোমার শরীর এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়। এমনিই যা মোহনীয় রূপ নিয়ে আমার সামনে এসেছো আমার পক্ষে খুব কষ্টকর নিজেকে আটকানো।”
চন্দ্রা সিয়ামের ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে ভাঙা গলায় বললো “কিচ্ছু হবে না, আমি একদম ঠিক আছি।”
এই আকুল আবেদন কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়..? নাহ্ সিয়ামও পারলো না। জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। নিজের মধ্যে শুষে নিতে লাগলো নিজের প্রিয় নারীটির শরীরের সেই মনমাতানো চিরচেনা ঘ্রাণ। চন্দ্রাও নিজেকে পুরোপুরি সিয়ামের হাতে ছেড়ে দিলো। দুই দিনের অপেক্ষা, মনোমালিন্য সব ধুয়ে মুছে গেলো প্রতিটি স্পর্শে।
#চলবে..?