গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৫
চন্দ্রা পিট পিট করে চোখ খুললো। বুঝতে একটু দেরী হল তার বর্তমান অবস্থান। হাত পা নড়াতে না পেরে তড়াক করে উঠলো। তার পুরোপুরি হুঁশ আসতেই আসতে আসতে মনে পড়লো আগের কথা। তারমানে সুইটি বেগম সব বুঝে গেছেন…? যতদূর মনে হচ্ছে তিনিই তাকে কারণবশত এখানে নিয়ে আসতে পারেন এইভাবে। চন্দ্রার পেপার্স গুলো নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। সেগুলো ওই সোফার কভারের নীচেই রয়েছে এখনো। চন্দ্রা মনে মনে উপরওয়ালাকে ডাকলো যাতে ওই পেপার্স গুলো সুইটি বেগমের হাতে না পড়ে। কিন্তু তাকে আপাতত এখান থেকে বেরোনোর উপায় বের করতে হবে।
মুখও বাঁধা তার। চন্দ্রা চারিদিক খেয়াল করলো জায়গাটা কোনো একটা স্টোর রুমের ভিতর। তার মাথা এবার খালি খালি লাগছে। বেরোবে কি করে এখান থেকে সে এখন যদিও জানে সিয়াম তাকে খুঁজে নেবে তাও বেশি দেরী করা যাবে না তার নিজেকেই কিছু করতে হবে।
অনেক কষ্টে সে উঠে বসে পাশের দেওয়ালের কাছে গেলো ঘসরে ঘসরে, ঘরটা যে নতুন তৈরি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিধায় রং প্লাস্টার কিছুই হয়নি। চন্দ্রা এবার কি মনে করে সেই দেওয়ালের বের হয়ে থাকা কোনের দিকে নিজেকে পিছন করে দড়িটা ঘষতে লাগলো দেওয়ালে। সময় লাগলো, হাতও বেশ খানিকটা ছিলে গেলো তবে দড়িটা কেটে গেলো। চন্দ্রা ঝটপট মুখ খুলে পায়ের দড়ি খুললো।
চারিদিক দেখলো সবই তো হলো এবার বেরোবে কীকরে এখান থেকে..? দরজা তো বাইরে থেকে বন্ধ।
চন্দ্রা এবার চোখ বুঝে আবার খুললো। এবারের যে কাজটা করতে যাচ্ছে বেশ রিস্কি তার জন্য। সে আসতে আসতে ঘরের ভিতর থাকা কিছু জিনিস ফেলতে লাগলো বেশ শব্দ করে যাতে সেই আওয়াজ বাইরে অবধি যায়। তারপর গিয়ে বন্ধ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো।
মিনিট দুয়েক বাদ একটা লোক দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। এদিক ওদিক তাকানোর আগেই চন্দ্রা তার ঘাড়ে সপাটে মারলো। লোকটা ঘাড় ধরে কিছুসময়ের মধ্যেই অজ্ঞান হলো। চন্দ্রা হাঁপ ছাড়লো। তার এতো দিনের ক্যারাটে শেখার আসল পরিক্ষা আজ বোধহয় দিতে হবে তাকে।
চন্দ্রা ধীরে ধীরে বেরোলো দরজা দিয়ে, কিন্তু সামনে যাওয়ার তিনটে রাস্তা দেখে কনফিউজ হলো সে। হাতে বেশি সময় নেই দেখে প্রথম দিকের গলি মতো রাস্তায় ঢুকলো। কিছুটা যেতেই দুটো লোককে বসে মদ্যপান করতে দেখলো। চন্দ্রা প্রস্তুত ছিলো এইরকম কিছুর জন্য কিন্তু সামনের দুটি লোককে দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ অবাক হয়েছে তারা।
তারা কিছু একটা বুঝতে পারে এগিয়ে এলো চন্দ্রার কাছে তাকে ধরার জন্য। হাত বাড়িয়ে তাকে ধরতে গেলেই চন্দ্রা হাতটা ধরে ফেললো, আরেকটা হাত দিয়ে সপাটে মেরে দুই পায়ের মাঝ বরাবর মারলো। লোকটা সঙ্গে সঙ্গে নীচে পরে গেলো। তাকে এভাবে দেখে আরেকজন এগিয়ে এলো চন্দ্রা তার ফাইটিং স্কিল অনুযায়ী মরলেও শাড়িতে জড়িয়ে নীচে পরে কপালে বেশ আঘাত পেল। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো তার। এমনিই অজ্ঞান থাকার জন্য মাথায় বেশ প্রেশার পড়েছে তার।
ওভাবে মাথা চেপেই উঠে ওই রাস্তা থেকে বেড়িয়ে অন্য রাস্তা ধরলো। কিছুটা দূর এগোতেই আরও চারজনকে দেখতে পেলো।
চন্দ্রা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের মতো লড়তে লাগলো। শাড়ি পরে থাকায় বেশ অসুবিধা হলো তার পা চালাতে। নিজে পড়লও মুখ থুবড়ে। শরীর এবার তার দিচ্ছে না। লড়ার মতো আর শক্তি নেই তার। হাতের কিছু দূরে কোনের দিকে পরে থাকা লাঠিটা কৌশলে নিয়ে ওকে ধরতে আসা লোকদুটোর মাথায় বেশ জোরেই মারলো। আর দুজনের আগেই পা ভেঙে মাথা ফাটিয়েছে সে।
আজ জীবনে প্রথম বার সে এতো সাহস দেখলো। কিন্তু নিজের উপর গর্ব করার সময় এখন তার নেই, পালাতে হবে তাকে। শাড়ি টা আঁচলের দিকে বেশ খানিকটা ছিঁড়ে গেছে ওই নিয়েই আবার দৌড় দিল সে। কিছুটা দূরে যেতেই আরও দুটো লোক এলো। চন্দ্রা মাথা চেপে ধরে চোখ বুঝলো তার শরীরে একটুও জোর নেই। লোকদুটো এসে চন্দ্রাকে ধরতেই সামনে দিয়ে আরো লোক আসার আওয়াজ পেলো সে।
চোখের কোন দিয়ে তার দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়তেই সে বিড়বিড় করে বললো “সিয়াম কোথায় তুমি..?তোমার চন্দ্রাবতী যে আর পারছে না লড়তে।” বলেই জ্ঞান হারালো সেখানে।
.
.
.
সুইটি বেগম তন্ন তন্ন করে সারা বাড়ি খুঁজে ফেলেছেন। অথচ ফাইলস গুলো কোথাও নেই। সিসিটিভিতেও তেমন কিছু ধরা পরেনি। তিনি চন্দ্রাকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় সময় মহিলা সার্ভেন্টকে দিয়ে চেক করিয়েছেন তার কাছেও তো নেই। আর না সে বাড়ি থেকে কোথাও বেরিয়েছে তাহলে গেলো কোথায় ফাইলস গুলো..? তিনি আবার নিজের আলমারির সব ঢেলে খুঁজতে লাগলো।
” কি মনি ফাইলস খুঁজছো..? দেখোতো এইগুলো কিনা..?”
সুইটি বেগম চমকে তাকালেন দরজার দিকে।
সিয়াম পা ক্রিস ক্রস করে এক হাত পকেটে গুঁজে আর এক হাতে পেপার্স গুলো নিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে লেগে বাঁকা হাসি।
সুইটি বেগমকে দেখে মনে হলো না সিয়ামের দাঁড়ানো দেখে তিনি যতটা চমকেছেন, তার থেকে বেশি না তার হাতে পেপার্স গুলো দেখে চমকেছেন। তার এতো কিছুর পরও কি তাহলে শেষ রক্ষা হলো না..?
তিনি এবার নিজেকে ধাতস্থ করে উঠে গিয়ে সিয়ামের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন “বাহ্..! মায়ের মতো হয়েছ দেখছি। আমার কোনো জিনিসই সহ্য হয়না সব ছিনিয়ে নেওয়া স্বভাব তোমার আর তোমার মায়ের তাইনা..?”
সিয়াম এবার রক্তলাল চোখ করে চগর্জে উঠলো “শাট আপ মনি, জাস্ট শাট আপ.! তোমার ঐ পাপী মুখে আমার মায়ের কথা উচ্চারণও করবে না তুমি…! আর কি বললে তুমি তোমার কাছ থেকে তোমার জিনিস ছিনিয়ে নিয়েছি আমি আর মা..? হাহ্। বলেই সিয়াম ঠোঁট বেকিয়ে একটু হেসে আবার বললো “নিজেদের জিনিস ছিনিয়ে নেওয়ার দরকার পড়ে না। ভাগ্যে থাকলে সেটা নিজের থেকেই এসে যায়। কিন্তু তোমরা এসব বুঝবে না বুঝলে তোমার মতো অসৎ, লোভী, অহংকারী, খুনি মানুষদের পক্ষে এইসব কথা হজম করা কঠিন। কুকুরের পেটে কি আর ঘি সহ্য হয়..?” শেষের টুকু বেশ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো সিয়াম।
সুইটি বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন “সিয়াম লিমিট ক্রস কোরো না। আর ফাইলস গুলো দাও আমার কাছে, দাও বলছি।”
বলেই তেড়ে নিতে গেলে সিয়াম সরে দাঁড়ালো। সুইটি বেগম দরজায় ধাক্কা খেলেন। তারপর মাথা ধরে ঘুরে দৌড়ে নীচে নেমে জোরে জোরে সিকিউরিটি গার্ডদের ডাকতে লাগলেন। সিকিউরিটি গার্ডরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে দেখে সুইটি বেগম চেঁচাতে লাগলেন “তোমরা থাকতে এই ছেলেটা ভিতরে আসে কিভাবে হ্যাঁ..? এখন দাঁড়িয়ে মুখ কি দেখছো যাও ওই রাস্কেলটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করো এক্ষুনি।”
সিয়াম সুইটি বেগামের এইরকম চেঁচামেচি দেখে সামনের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো “ওদের উপড় চেঁচিয়ে লাভ নেই মনি, ওরা এখন তোমার না আমার গার্ড। এক্ষুনি আমার এক কোথায় ওরা তোমায় এখন থেকে ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দেবে।”
সুইটি বেগম অবাক চোখে তাকালেন সবার দিকে। বড্ড অসাবধান হয়ে গিয়েছিলেন এই কদিন টাকা আর অহংকারের লোভে। কিন্তু তার শেষ ঘুটি তার কাছেই আছে ভেবে পিছন ফিরে সিয়ামের উদ্দেশ্যে বললেন “কি চাও তুমি..? শুধু সম্পত্তি..? দিয়ে দেবো তোমায় এই বাড়িতে সিনক্রিয়েট করো না।” শেষ কথাটা আড়চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন।
সিয়াম সেই বরাবর তাকিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখলো সিনথিয়া আর তার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চই সুইটি বেগমের চেঁচামেচি শুনেই এখানে এসেছে তারা।
সিয়াম একটা গার্ডকে চেঁচিয়ে বলল “সিনথিয়ার সব বান্ধবীকে দায়িত্ব সহকারে গাড়ি করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দাও।”
গার্ডও সেই অনুসারে তাদেরকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। সিনথিয়া নীচে নেমে এসে সিয়ামকে রুক্ষ স্বরে বললো “আপনি কে..? আমার মমের সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো..?”
সিয়াম একবার সুইটি বেগমের দিকে তাকিয়ে সিনথিয়ার মাথার একপাশে হাত রেখে হালকা হেসে বললো ” আমি তোমার দূর সম্পর্কের বড়ো ভাইয়া। তুমি হয়তো আমায় চেনো না, সমস্যা নেই কিছুক্ষণ পরই চিনে যাবে।” বলে আবার মুচকি হাসলো সিয়াম।
ওমনি সুইটি বেগম তাড়াতাড়ি এসে সিনথিয়াকে সিয়ামের কাছ থেকে নিয়ে বললো “ওকে এসবের মধ্যে জড়িও না। বলছি তো সম্পত্তি যা চাই সব দিয়ে দেবো।”
সিনথিয়া অবাক হয়ে বললো ” তুমি সব সম্পত্তি এমনি এমনি কেনো দিয়ে দেবে মম..? আর এই ভাইয়াটাই বা কে..? তুমি তো আগে কোনোদিন বলোনি আমার ভাইয়া আছে..?”
সুইটি বেগম এই প্রথম মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন ” চুপ করো সিনথিয়া। আমাদের কথার মাঝে কথা বলবেনা। যাও উপরে রুমে যাও আমি না ডাকা অবধি আসবে না নীচে।”
সিনথিয়া ধমকে একবার সিয়ামের দিকে তাকিয়ে উপরে যাওযার জন্য পা বাড়ালো। সিয়াম এবার গম্ভীর স্বরে বললো ” দাঁড়াও সিনথিয়া, তোমার মম নিজের স্বার্থের জন্য কতগুলো ছেলেমেয়ের জীবন নষ্ট করেছে তার কাহিনী শুনবে না..?”
সিনথিয়া দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরে অবাক হয়ে বললো “মানেহ..?”
সুইটি বেগম রেগে চেঁচিয়ে বললেন “সিয়াম..! বলছি না ওকে এসবের থেকে দূরে রাখতে ও এসবের কিছুই জানে না।”
সিয়াম এবার হালকা হেসে সুইটি বেগমের দিকে এগিয়ে এসে বললো ” হ্যাঁ জানে না। তবে ওর ও তো সবটা জানার অধিকার আছে তাই না মনি..? যে ওর ওয়ার্ড বেস্ট মম কতজনের মা বাবাকে কেড়ে নিয়েছে তাদের কাছ থেকে..?”
___________________________________
সন্ধ্যে ৭ টা
সিরাজ অফিসের ঝামেলা মিটিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আজ সে একটু বেশিই ক্লান্ত। সেই কোন সকাল আটটায় গিয়েছে অফিসে, সেই যে একটা স্যান্ডুইচ আর এক কাপ কফি খেয়েছিল তারপর আর কিছু খেতেই পারেনি। আর না ইন্দ্রাকে কল মেসেজ দিতে পেরেছে। কে জানে মেয়েটা কি ভাবছে।
সিরাজ আর কিছু না ভেবে ইন্দ্রার ফোন কল লাগালো।
.
.
ফোনের রিং বাজতেই একপ্রকার খপাৎ করেই ধরলো ইন্দ্রা। আজ সারাদিন এই মানুষটার জ্বালানো খুব মিস করেছে সে, মুখে যতই না না করুক এই মানুষটার প্রতি যে তার আসলেই টান কাজ করে, আর এই জিনিসটা আজ বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করতে পেরেছে সে। বেশ অভিমানও হয়েছে তার সেই সকাল সাড়ে আটটার শুধু একটা মেসেজ “আজ ব্যাস্ত থাকবো, নিজের খেয়াল রেখো।”
এইটুকু ছাড়া আর একটাও মেসেজ বা কল আসেনি তার ফোনে সারাদিন যে সে চাতক পাখির মতো ফোনের দিকে চেয়ে বসে ছিল সেটা কোনোভাবেই সিরাজকে বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাই বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর সে ফোনটা রিসিভ করলো।
সিরাজ ওপাশ থেকে ক্লান্ত গলায় বললো ” ইন্দ্রা..? কই ছিলে ফোন রিসিভ করতে এতোক্ষণ লাগলো যে..?”
ইন্দ্রা বেশ ধীর গলায় বললো ” আপনার কি আমি যেখানেই থাকি যা খুশি করি আপনাকে বলবো কেনো..?”
সিরাজ ইন্দ্রার এইরকম অভিমানী গলা শুনে হেসে বললো ” সাধে কি আর বাচ্চা বলি তোমায় ইন্দ্রা..? এই দেখো এখন কেমন বাচ্চাদের মতো অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছো..!”
ইন্দ্রা ফুঁসে উঠে বললো ” তাহলে এই বাচ্চাকে বার বার ফোন দেন কেন..? আমি রাখছি ফোন, আজকের মতো আর ফোন দেবেন না আমায় হূহ।”
বলেই ফোন রাখতে গেলে সিরাজ এবার চমকে উঠে বলে ” আরে ইন্দ্রা… শোনো তো..”
ইন্দ্রা আবার ফোন কানে নিয়ে বিরক্ত গলায় বললো “কি..?”
সিরাজ এবার নরম গলায় বললো ” আজ সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম ইন্দ্রা। অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছিল। দাদাভাইও ছিলো না তাই সবটা আমাকেই দেখতে হয়েছে। এখনও বাড়ি ফিরিনি আমি।”
ইন্দ্রা এবার একটু নরম হলো বোধহয় বললো “আচ্ছা বুঝলাম। তাহলে এখন রাখি..? আপনি বাড়ি গিয়ে রেস্ট নিন তবে।”
– ইন্দ্রা..
– হুমম
– তোমার বাড়ির গেটের কাছে আসতে পারবে এখন..?
ইন্দ্রা বিস্ফারিত নয়নে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো “এখন…? আপনি কি এখন আমার বাড়ির গেটের সামনে আছেন..?”
সিরাজ বললো না তবে আসছি। আর শোনো পারলে কিছু খাবার এনো সাথে। সেই সকাল থেকে কিছু খাইনি কাজের চাপে। আজ ভাবী বাড়িতে নেই আর সার্ভেন্টের হাতের রান্না খেতে ভালো লাগে না।”
ইন্দ্রা প্রথমে না বলবে ভাবলেও এবার তার ভীষণ মায়া হলো। তাই আর কিছু না ভেবে শুধু বললো “এসে ফোন করুন।”
সিরাজ মুচকি হেসে গাড়ি ঘোরালো।
সিরাজ এসে ফোন করার কয়েক মিনিট পরেই ইন্দ্রা একপ্রকার দৌড়েই এলো। সিরাজ গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে আসতে বললো। চন্দ্রা ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে টিফিন বক্সটা এগিয়ে দিল সিরাজের দিকে।
সিরাজ ভ্রূ কুচকে তাকিয়ে বললো “আমাকে দিচ্ছ কেন খাইয়ে দাও।”
ইন্দ্রা বড় বড় করে তাকিয়ে বললো ” আমি..? না না আমি পারবোনা আপনার খেতে হলে খান নয়তো ঘরে নিয়ে চলে যান। নিন ধরুন..”
সিরাজ তা দেখে আফসোসের সুরে বলল “আজ আর খাওয়া হবে না তোর বুঝলি সিরাজ। নইলে এই কাটা হাত নিয়ে কীকরে তুই একা একা খাবি..? কি আর করার পৃথিবীর সবাই নিষ্ঠুর।” বলেই ব্যান্ডেজ করা ডান হাতটা বুকে রাখলো।
ইন্দ্রা এবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো ” কি হয়েছে আপনার ডানহাতে..?”
সিরাজ এবার একটু কঠিন স্বরে বলল ” তোমার না জানলেও চলবে দাও টিফিন বক্সটা দাও। দিয়ে চলে যাও বাড়ি।”
ইন্দ্রা এবার মিনমিন করে বললো ” আরেহ সরি সরি। আমি বুঝতে পারিনি আপনি রাগ করবেন না, আমি কি জানতাম বলুন যে আপনার হাত কাটা আছে। দাড়ান খাইয়ে দিচ্ছি।”
বলে ইন্দ্রা টিফিন বক্স খুলে ভাত মাংসের ঝোল দিয়ে মেখে সিরাজকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
খাওয়ার মাঝখানে সিরাজ বললো ” উমম, ইন্দ্রা তোমার হাতের রান্না তো আমি আগেও খেয়েছি কই এতো টেস্ট লাগেনি তো আগে..?”
ইন্দ্রা তার লাল টুকটুকে হওয়া গাল টাকে নিয়ে চুপ করে বসে রইল। সে জানে সিরাজ এইরকম তাকে রাগাবার জন্য বলছে। এই যে প্রতিবার এক লোকমা ভাত মুখে দেওয়ার সময় সিরাজের ঠোঁট ইচ্ছাকৃত বার বার তার আঙুল স্পর্শ করছে এর জন্যই সিরাজ এইধরনের কথা বলছে। ইন্দ্রা জানে সে এখন কিছু বললে আবার সেটাকে তার দিকেই ঘুরিয়ে দিয়ে তাকেই লজ্জায় ফেলে দেবে। তাই এখন চুপ চাপ থাকাটাই শ্রেয় তার জন্য।
এরই মাঝে সিয়ামের কল দেখে সিরাজ তুলে বললো ” হ্যাঁ ভাইয়া বল।”
সিয়াম ওপাশ থেকে কি বললো ইন্দ্রা শুনতে পেলো না। তবে ফোন রাখতেই ইন্দ্রা জিজ্ঞেস করলো তাকে।
সিরাজ চিন্তিত মুখ করে বললো ” ভাইয়া আমায় তোমায় অপূর্ব আর সিয়াকে নিয়ে এই ঠিকানায় যেতে বললো।” বলে ফোনের ঠিকানাটা ইন্দ্রাকে দেখলো।
সিরাজ বললো “তুমি ঘরে তালা দিয়ে এসো আমি সিয়া আর অপূর্বকে ফোন করি।”
ইন্দ্রা ঘাড় নাড়িয়ে চলে গেলো তার বাড়িতে।
__________________________________
সিরাজ কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্দ্রাকে নিয়ে সিয়ার শশুর বাড়ির সামনে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো তারা দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই বাইরে। সিরাজ যেতেই দুজনে গাড়ির পিছনে উঠে বসলো।
উঠতেই দুজনে প্রশ্নের বান শুরু করলো “কেনো ডেকেছে তাদের..? কোন জায়গা এটা..?”
সিরাজ বিরক্ত হয়ে বলল “এই বস তো তোরা দুজন চুপ করে। আমি কি নিজেও জানি নাকি কেনো ভাইয়া ডেকেছে..? তোরা যতটুকু জানিস আমিও ততটুকুই জানি।”
সিয়া এবার মুখ দিয়ে ” চিহ ” বলে বিরক্তিকর শব্দ করলো। তারপর হটাৎই সিরাজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো “এই ভাইয়া তোর হাতে কি হয়েছে..?”
সিরাজ ইতস্তত করে বললো ” আরে এমনি কিছু না।”
সিয়া চিন্তিত হয়ে বললো ” মিথ্যে বলিস না ভাইয়া তুই বরাবরই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন। কিছু হলে বলতে চাস না মোটে।”
সিয়ার কোথায় তাল মিলিয়ে অপূর্বও বললো “হ্যাঁ ঠিকই তো সিরাজ। পরে ইনফেকশন হলে..? এখন যাওযার পথে ফার্মেসিতে দেখিয়ে কিছু মেডিসিন কিনে নি চো। কিছু না নিলেও একটা টিটেনাস নিয়ে নিবি।”
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সিরাজ ইনজেকশনকে ভীষণ ভয় পায়। কিন্তু সিয়া অপূর্ব যা ধরেছে আজ তাকে ইনজেকশন নিয়িয়েই ছাড়বে।
সিরাজ এবার মহাবিরক্ত হয়ে বলল “আরে কিছু হয়নি আমার বলছি তো..!”
সিয়া বললো “কিছু হয়নি বললেই হলো..?এতো খানি ব্যান্ডেজ কি এমনি এমনি করেছিস নাকি..?”
সিরাজ এবার অসহায় মুখ করে ব্যান্ডেজ খুলে বললো “দেখ এবার বিশ্বাস হলো কিছু হয়নি আমার…!”
ইন্দ্রা এতোক্ষণ সব চুপচাপ শুনলেও এবার একটা এত্তবড় হাঁ করে সিরাজের হাতের আর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।মানে এতক্ষণ তাকে বোকা বানিয়েছে এই লোকটা..?
সিয়া বললো ” উফ ভাইয়া কিছু হয়নি তো এইরকম হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে কেনো রেখেছিস..?আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কত্ত।”
সিরাজ ইন্দ্রার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললো “মাঝে মাঝে ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাওয়ায় জন্য কত কি করতে হয় রে বোন তুই বুঝবি না ওসব।”
ইন্দ্রা জানলার দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বসে রইলো সাড়া রাস্তা। মনের ভিতর কোথাও ভালো লাগা জন্ম নিলেও প্রশ্রয় দিল না সে সেটাকে, বরং নিজের মনকেই ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে রাখলো।
#চলবে..?