বেড়াজাল পর্ব-৩২

0
519

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩২

অপূর্ব রেডি হচ্ছে। আজ তাকে ডিউটিতে যেতেই হবে। বিয়ে উপলক্ষ্যে দুই দিন অলরেডি ছুটি নিয়েছে সে। সিয়া ঘরে অপূর্বের রুমাল, জলের বোতল নিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো। আড়চোখে অপূর্বকে দেখলো একবার। সে দাঁড়িয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করছে।
সিয়া কি করবে ভেবে না পেয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে গেলে অপূর্ব ডেকে উঠলো তার নাম ধরে।

সিয়া পিছনে ঘুরে বললো “হুম বলুন। কিছু লাগবে আপনার আর..?”
অপূর্ব কিঞ্চিৎ হেসে বললো “তোমাকে ”
সিয়া ভরকে গেল। ইতস্তত করে বললো ” মা-মা-নে..?”
অপূর্ব কথাটা এড়িয়ে হাতঘড়িটা পড়তে পড়তে বলল ” শাড়ি সামলাতে না পারলে পড়ার দরকার নেই। এই বাড়িতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই পোশাকের উপর। শালীনতা বজায় রেখে তোমার মনের মতো পোষাক পরতে পারো। এমন জড়িয়ে পেঁচিয়ে হাঁটার চেয়ে ওইটা বেটার।” অপূর্বের এই শেষ বাক্যটাই কি মজার আভাস লুকিয়ে আছে..? ধরতে পারলো না সিয়া। তার মনে চলছে তাহলে মানুষটা খেয়াল করেছে তার শাড়ি পড়ে হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হচ্ছে..?

সিয়াকে এভাবে ভাবতে দেখে অপূর্ব কিছুটা সিয়ার কাছে এগিয়ে গেল। সিয়ার স্তভিত ফিরে সামনে তাকিয়ে অপূর্বকে এতো কাছে দেখে চমকে গেলো। কয়েক পা পিছিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো কি..?
“আজ কোমরটা ভাঙল বোধহয়..!” এই মনে মনে বলে চোখ বুঝতেই একটা হাত এসে ওকে জড়িয়ে নিলো। টেনে নিল আরো কাছে।
সিয়া চোখ খুললো পিটপিট করে। মাথা তুলে অপূর্বকে এতো কাছে দেখে দ্রুত সরে গিয়ে বললো ” সরি সরি আমি আসলে ঐ। মানে আপনি…!”

অপূর্ব এবার কিছুটা রাগ মিশ্রিত গলায় বললো ” ইটস ওকে। তবে এক্ষুনি শাড়ি ছেড়ে অন্য কোনো জামা পরো। আর সিয়া আগে যেমন বন্ধু হিসেবে তুমি করে বলতে তেমনই ডেকো। আপনি ডাকটা দূরের লাগে বড্ড।” শেষ কথাটা বেশ নরম কণ্ঠে বললো অপূর্ব।
সিয়া শুধু মাথা নাড়লো।

অপূর্ব তাকে সাবধানে থাকতে বলে বেড়িয়ে গেলো।
সিয়া বিছনায় বসে পড়লো। সে যথা সাধ্য মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে জীবনের এই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে। কিন্তু অদেও কি সে আর পাঁচটা বউয়ের মতো লক্ষ্মী বউ হয়ে উঠতে পারছে..? সে জানে পারছে না, কিছু করতে গেলেই পুরোনো দিনের কিছু জমানো স্মৃতি বারে বারে ধাক্কা দেয় তার মস্তিষ্ককে। অপূর্ব নিশ্চই এইরকম বউ ডিজার্ভ করে না। আচ্ছা তার উপর সে করুনা করেনি তো অসুস্থ বলে..? সিয়া মাথা চেপে ধরলো। বার বার কেনো সেই একই প্রশ্নে এসে থামে তার চিন্তা..?

সিয়া আর পারলো না বসে থাকতে। উঠে নীচে গেলো। একদিক থেকে সে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে করে নিজেকে সে, এতো সুন্দর শশুর বাড়ি পাওয়ার জন্য। অপূর্বের মা-বাবা সিয়ামকে সত্যি বলেছিলো বিয়ের সময়, তারা সত্যি সিয়াকে বিয়ের পর তাদের মেয়ে বানিয়েই রেখেছে।

দুইদিনেই সিয়াকে তারা অনুভব করিয়েছে যে তারও বাবা মা আছে। যাদের যখন খুশি জড়িয়ে ধরা যায়, যাদের উপর অভিমান করা যায়, আবদার করা যায়। সময়টা কম হলেও সিয়ার ভালোবাসার পরিমাণটা শুধু বেড়েই গেছে।

সিয়া নীচে নেমে রান্নাঘরে সায়মা বেগমের কাছে গিয়ে কাধেঁর একপাশে মুখ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। সায়মা বেগম তাকে দেখে হেসে দিয়ে বললেন ” কি ব্যাপার আম্মু মন খারপ..?”
সিয়া অবাক হয়ে বললো “তুমি কি করে বুঝলে..?”

সায়মা বেগম এবার মিষ্টি হেসে তরকারি নাড়তে নাড়তে বললো ” মায়েদের এসব বোঝাতে হয় না তারা ছেলেমেয়েদের চোখ দেখেই বুঝতে পারে। অপু আর অপা এতো বড়ো হওয়ার পরও মন খারাপ হলে আমার আসেপাশে এসে ঘুরঘুর করে। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে এমনই ঘুরছে। কিছুক্ষণ আমি কথা বলে সহজ করলে তারপর মন খারাপের কারণ খুলে বলে।”

সিয়া হালকা হাসলো। কেনো যেন এখন তার মনটা আগের থেকে ভালো লাগছে। একটা বাটি নিতে নিতে বললো “আমি কিছু সাহায্য করি আম্মু..?”

সায়মা বেগম অবাক হয়ে বললেন ” সেকি কথা আজ অফিস নেই তোমার..? সবাই তো বেড়িয়েই গেলো কাজে।”
সিয়া বাটিতে থাকা সবজি গুলো নাড়তে চাড়তে বললো “তিন দিনের ছুটি নেওয়াই ছিলো আগে থেকে। তবে আজ যাওযার কথা ভেবেছিলাম কিন্তু এখন ভালো লাগছে না।”

সায়মা বেগম হেসে বললেন ” তাহলে ঠিকাছে। আজ তাহলে সারাদিন মা বেটি মিলে জমিয়ে আড্ডা দেবো কেমন..?” সিয়া বেশ খুশি হলো।
দুই মা মেয়ে মিলে একসাথে রান্না শেষ করলো। সায়মা বেগম গল্পের সাথে সাথে ধীরে ধীরে সংসারী হওয়ার কিছু নিয়মও বলে দিলেন। তার এতো দিনের সংসার জীবনের কিছু মজার কিছু দুঃখের গল্প তুলে ধরলেন। সিয়া সেসব শুনে কখনো খিলখিলিয়ে হাসলো তো কখনো অবাক হয়ে শুনলো সেসব। বিকেলের পর সেই আড্ডায় যোগ দিলেন অলীক সাহেব আর অপাও। ঝগড়া খুনসুঁটি লুডো খেলা সবটা মিলিয়ে সিয়ার দিন আজ এককথায় ” খুব খুব ” ভালো কাটলো।

রাতে অপূর্ব বাসায় ফেরার পর থেকেই সিয়াকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখলো। তখন বেশ খুশি হলেও এইমূহুর্তে ঘরে সিয়ার অপেক্ষা করতে একদমই তার ভালো লাগছে না। আচ্ছা সারাদিন তো কাটলো সবার সাথে তার জন্য কি এই রাত টুকুর কটা ঘন্টাও দেওয়া যায় না। বেজায় বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বসলো ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। যদিও তার তেমন কাজ নেই কোনো কিন্তু বিরক্তি তো কমাতে হবে।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিয়া বেশ ফুরফুরে মেজাজে একপ্রকার প্রজাপতির মতো উড়তে উড়তেই একটা প্লেট হাতে নিয়ে এসে বসলো অপূর্বের পাশে।
অপূর্ব আড়চোখে তাকালো সিয়ার দিকে আর প্লেটের দিকে। কিছু একটা পকোড়া হবে আছে।
অপূর্বের আপাতত সেই বিষয়ে ইন্টারেস্ট নেই। মুখ ল্যাপটপের দিকে করেই বলল “এখন এই অধমের কথা মনে পড়লো ম্যাডামের..?”
সিয়া এবার হাসি মুখ পালটে বললো “ওমনি বলছো কেনো..? তোমায় কি ভুলে গেছি নাকি যে মনে করতে হবে সময়ে সময়ে।”
অপূর্ব হাসলো। ল্যাপটপটা পাশে বন্ধ করে রেখে বললো ” তা এতো খুশির কারণ কি..? আজ কি কি করলে সারাদিন আমিও একটু শুনি..?”

সিয়া এবার হেসে উত্তেজিত হয়ে হিসাব দিতে লাগলো তার সারাদিনের। অপূর্ব কতটা শুনলো বোঝা গেলো না তার দৃষ্টি শুধু ওই হাসৌজ্জ্বল মুখটায়। কত্তোগুলো দিন বাদ সে সিয়াকে এইরকম হাসিখুশি দেখছে। প্রশান্তির এক হাওয়া বয়ে গেলো শরীরে তার। সে পারছে ধীরে ধীরে সিয়াকে কষ্টের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে।

______________________________

ডোর বেল বেজেই চলেছে।
ইন্দ্রা বিরক্ত হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বিড়বিড় করতে লাগলো “এতো সকালে এইভাবে কে ডোরবেল বাজাচ্ছে..? উফফ আসছি আসছি।” শেষ বাক্য একটু জোরেই বললো।

গিয়ে দরজা খুলতেই চমকে গেলো ইন্দ্রা। তার সামনে স্বয়ং সিরাজ দাঁড়িয়ে। ইন্দ্রা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো “আপনি এইসময়ে এইখানে..? কোনো দরকারে এসেছিলেন..?”
সিরাজ বুঝলো না সামনের মেয়েটি কি তার সাথে মজা করছে..? রাগ চাপলো মাথায় এক হাত দরজায় রেখে মাথাটা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো “ইয়েস মিস ইন্দ্রাকে দরকার। তার অমূল্য কিছু সময় থেকে আমায় কি কিছু সময় ভিক্ষে দেওয়া যাবে তা জানা দরকার।”

ইন্দ্রা মিন মিন করে বললো ” এইরকম করে কেনো বলছেন..? আসুন ভিতরে এসে বলুন কি বলবেন।”

সিরাজ চোখ বুঝে মনকে “কন্ট্রোল কন্ট্রোল ” বলে সামলে গম্ভীর গলায় বললো “তোমার বাবা বাড়ি আছেন..?”

ইন্দ্রা ঘাড় নাড়িয়ে বললো ” না কয়েকদিনের জন্য বাইরে গিয়েছেন কাজের সূত্রে, একটা বারণ শোনেননি আমার।”

সিরাজ ইন্দ্রাকে পা থেকে মাথা অবধি দেখে বললো “তাহলে বাইরে কোথাও কফিশপে চলো। একা একটা মেয়ের বাড়িতে যাওয়াটা ঠিক দেখাবে না।”

ইন্দ্রা ইতস্তত করলেও সিরাজের গরম মেজাজ দেখে কিছু বলল না শুধু ওড়না তো পাল্টে চুল ঠিক করে লিপবাম লাগিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ইন্দ্রা।
সিরাজের গাড়িতে উঠার সাথে সাথেই শুরু হলো তার প্রশ্নের বান “কই ছিলে ইন্দ্রা এই দুইদিন। না একটা ফোন না মেসেজ ফোনটা অবধি সুইচ অফ করে রেখেছ। জানো আমার কেমন পাগল পাগল অবস্থা হয়েছিলো..? এই সব কেনো করছো..? শুধু চন্দ্রার জন্যে..?”

ইন্দ্রা থমকালো। সিরাজ এইভাবে ব্যাপারটা ধরে ফেলবে সে ভাবেনি সে আসলেই চন্দ্রার ফোনকল থেকে বাঁচতেই এই দুইদিন ফোন অফ করে রেখেছে। সিরাজের এইরূপ প্রশ্নে শুধু মাথা উপর নীচ করলো।

সিরাজ নিশ্বাস ছাড়ল। দুইবোনের মধ্যে কিছু বলতে চায়না সে। সিরাজ এতদিনে যা দেখেছে বুঝেছে তাদের সম্পর্কটা এতোটাও ঠুনকো নয় যে এই সামান্য মনোমালিন্যে ভেঙে যাবে। আপাতত কিছু সমস্যাকে তাদের মতোই ছেড়ে দিতে হয়। তারা নিজে থেকেই যেনো কিভাবে ঠিক হয়ে যায়।

সিরাজ চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। ইন্দ্রা তা দেখে জিজ্ঞেস করলো “কোথায় যাচ্ছি আমরা এখন..?”

সিরাজ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো “দেখি আশে পাশে কোনো বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরার যায়গা আছে কি..?”

ইন্দ্রা আবার ফুঁসে উঠলো ” আপনি আবার আমায় বাচ্চা বললেন। গাড়ি থামান, গাড়ি থামান বলছি। যাবো না আমি আপনার সাথে।” বলে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।

সিরাজ হেসে দিলো এই মেয়েটা নাকি তার থেকে বড়ো..?কেউ বিশ্বাস করবে..? সারাক্ষণ বাচ্চাদের মতো ছটপট করে তারপর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এদিক সেদিক পরে যায়। আবার কিছু বললেই বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। সে যাই হোক এই ছোটো ছোটো বাচ্চামো গুলোতেই তো সে ডুবে মরেছে। এই সব জিনিস মোটেই কমের চোখে দেখবে না সে।

সিরাজ গাড়ি পার্ক করে ইন্দ্রাকে নামতে বললো। ইন্দ্রার হাতের শুধু দুটো আঙুল নিজের আঙুলে আবদ্ধ করে চোখে সানগ্লাস পরে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। ইন্দ্রা একবার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে হাঁটতে লাগলো।
যাওয়ার সময় এক ভদ্রলোক সিরাজকে কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখলো। সিরাজের চোখ এড়ালোনা। হটাৎ ইন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলো ” আচ্ছা আমায় লোকে এইরকম ভাবে দেখছে কেনো..? মুখে কি কিছু লেগে আছে দেখো তো একবার।”

ইন্দ্রা এবার ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো সিরাজকে। গায়ে পরা শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা দেখেই বোঝা যাচ্ছে শার্টটা ভীষণ তাড়াহুড়োয় পড়া হয়েছে। সাথে তো উসকাখুশকো চুল আছেই। আচ্ছা মানুষটা কি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এভাবেই চলে এসেছে..?
একজন জিম করা পারফেক্ট শেপের বডি ওয়ালা সুদর্শন ছেলেকে এইরকম এলোমেলো রূপে দেখে যে কেউ দুই বার ঘুরে দেখবে। সেটা হোক কৌতূহলের দৃষ্টিতে আর হোক মুগ্ধতার। কিন্তু এখন ইন্দ্রার ভীষণ রকম হাসি পেলো সিরাজের এই রূপ দেখে। কিছু না বলে স্থান কাল বয়স ভুল খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রাস্তার মাঝেই। আগে যাও বা একটা দুটো মানুষ দেখছিল এখন রাস্তায় যাতায়াত প্রায় সব মানুষই তাদের দিকে ফিরে ফিরে চাইছে।

ইন্দ্রার হাসি দেখে অপলক চেয়ে রইলো সিরাজ। এই প্রথম মেয়েটাকে এইরকম হাসতে দেখলো সে নয়তো ইন্দ্রাকে সবসময় সব বিষয়ে মুচকি হাসতেই দেখেছে সে।
ইন্দ্রা হাসি থামিয়ে বললো “এইরকম পাগল বেশে ঘুরলে তো সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবেই।”
সিরাজ হকচকিয়ে বললো “মানে..?”

ইন্দ্রা এবার আসে পাশে দেখে একটা শপের বাইরের কাঁচের দরজার সামনে সিরাজকে দাঁড় করিয়ে বললো “দেখুন কি অবস্থা আপনার।”

সিরাজ দেখে চেঁচিয়ে বললো “শিট! এভাবে ছিলাম এতক্ষণ..? আগে বলনি কেন..?” বলেই গাল ফুলিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো। তার চুল আগাগোড়াই একটু ঝাঁকড়া টাইপের তাই জেল দিয়ে সেট করে রাখে সে কিন্তু এখন আর উপায় কি..?

ইন্দ্রা একটু এগিয়ে এসে সিরাজের শার্টের দুটো বোতাম লাগিয়ে দিল। সিরাজের সাথে চোখা চোখি হতেই অসস্তিতে সরে দাঁড়ালো আবার।

সিরাজ মুচকি হেসে একটা হোটেলের ভিতর গিয়ে দুই জনের একটা টেবিলে বসলো। খাবার অর্ডার দিয়ে দুজনে টুকটাক কথা বলতে থাকলো। খাওয়ার আসার পর সিরাজ এক চামচ তুলতেই তার পায়ের কাছে একটা বাচ্চা এসে হাসি মুখে দাঁড়ালো। বেশি না হলেও অন্তত বছর চার হবে বাচ্চাটার। সিরাজ হেসে নাম জিজ্ঞেস করলো তার। সেও হেসে বললো ” ইহাদ “। সিরাজ এবার তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো “তোমার বাবা মা কই ইহাদ..? এখনে একা কেনো..?” বাচ্চাটি তার মতো করে উত্তর দিলো “ওয়াসরুমে পাপা ওখানে মা ”
বেশ অনেক্ষণ ধরে সিরাজ আর ইন্দ্রা বাচ্চাটার সাথে গল্প আর আদর করলো।

কিছুক্ষন পর একটি লোক এসে বললো “এক্সকিউজ মি..?”
সিরাজ তাকিয়ে বললো ” ইয়েস..?”
লোকটি কিছু বলার আগেই বাচ্চাটা পাপা বলে এগিয়ে গেলো। লোকটি এবার হাসি মুখ করে বললো ” সরি ওর জন্য। খুব জ্বালিয়েছে না..? আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কোথায় না কোথায় গেলো। থ্যাংক ইউ আপনাদেরকে আমার অনুপস্থিতিতে ওকে দেখার জন্য।”

সিরাজ হেসে বললো ” আরে না না অসুবিধার কি আছে ও খুব ভালো। আর আমাদেরও ভীষণ ভালো লাগলো। তবে পরবর্তীতে একটু খেয়াল রাখবেন ওর দিকে।” বলেই আবার বাচ্চাটার গালে মুখ ঘষতেই বাচ্চাটা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

লোকটি হেসে ইহাদকে নিতে নিতে বললো ” আপনার বাচ্চা ভীষণ পছন্দের মনে হয়..?”

সিরাজ এবার আড়চোখে ইন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো ” হ্যাঁ খুব বাচ্চাগুলো এতো কিউট হয় যে দেখলেই মনে হয় সারাদিন কলে নিয়ে বসিয়ে রাখি।” বলেই বড়োসড়ো এক হাসি দিল। তারপর বাচ্চাটাকে হেসে বাই বললো।

ইন্দ্রার দৃষ্টি এড়ালো না সেই কথাটা। আচ্ছা ” বাচ্চা ” কথাটা কি সিরাজ তাকে উদ্দেশ্য করে বললো তখন। ভাবতেই ইন্দ্রার রাগ হওয়ার পরিবর্তে একরাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো তাকে।

______________________________________

চন্দ্রা সময়মতো সিনথিয়া দের বাড়ি চলে এসেছে। প্রথমে আসতেই তাকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিলো না। পরে সিনথিয়াকে ফোন করে গার্ডদের বলে তাকে ঢুকতে হয়েছে। তাও তারা চন্দ্রার ব্যাগ চেক করতে ছাড়েনি। চন্দ্রা এতে খুবই বিরক্ত।

সিয়ামকে সকালে সুইটি বেগমের কথাটা বলতে সিয়াম বলেছিলো ওই দিকটা সে সামলে নেবে। তবে চন্দ্রা যাতে মাথা ঠান্ডা করে যা করার করে। চন্দ্রা আজ বুকে অনেক সাহস নিয়ে এসেছে। যা করার আজকের মধ্যেই করতে হবে তাকে।

সিনথিয়া চন্দ্রাকে দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো। চন্দ্রা পুরো বাড়িটা চোখ বুলিয়ে বললো ” বাহ্ বেশ সুন্দর তো তোমার বাড়িটা আমায় একটু ঘুরে দেখাবে..?”
সিনথিয়া রাজি হলো। খুশি মনে চারদিক প্রত্যেকটা ঘোর ঘুরিয়ে দেখলো চন্দ্রাকে।

চন্দ্রা জিজ্ঞেস করলো ” এখনও তোমার বন্ধুরা আসেনি..?”
সিনথিয়া মুখ ভার করে বললো ” না তারা বললো আরেকটু দেরি হবে। ”
চন্দ্রা হেসে বললো চিন্তা করো না চলো। বলে দুজনে ডাইনিং টেবিলে বসলো। চন্দ্রাকে কিছু স্যানকস খেতে দিলো সিনথিয়া। চন্দ্রা সাবধান বশত কিছুটা জোলাপ বের করে একটু খানি মিশিয়ে দিলো সিয়ার জুসে। তার খারাপ লাগলো কিন্তু তার কাছে আর উপায় নেই। সিনথিয়াকে আসতে দেখেই চন্দ্রা দ্রুত জুসটা এগিয়ে রাখলো।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে