বেড়াজাল পর্ব-৩১ + বোনাস পর্ব

0
605

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩১

মাঝে কেটেছে একদিন। সবাই সবার কাজে বেশ ব্যস্ত। সিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকাতেই তার চিরচেনা মুখ অপূর্বকে দেখতে পেলো। হাত সরাতে গিয়ে দেখলো আগের দিনের মতোই তার হাত অপূর্বের হাতে বদ্ধ। সিয়া অবাক হলো কিছুটা, কারণ কাল সারাদিন অপূর্বের দেখা পায়নি সে। কখনও হসপিটাল কখনো মেহমানদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
সিয়া শেষ দেখেছিল তাকে গতকাল দুপুরে খাওয়ার টেবিলে। কিন্তু সবক্ষণ যেন আড়াল থেকে ওর খেয়াল রেখে গেছে। যখন যেটা মনে করেছে কেউ না কেউ এসে দিয়ে গেছে। সিয়া জিজ্ঞেস করলে বলেছে অপূর্ব ভাইয়া পাঠিয়েছে। তারপর সে রাতেও দেখেনি অপূর্বকে, সিয়া রাতে বিছানায় এসে পিঠ ঠেকাতেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি।

সিয়া হালকা করে হাতটা হাতটা সরিয়ে উঠতে গেলেই দেখলো তার অর্ধেক শাড়ি অপূর্বের হাতের নিচে। সিয়া লজ্জা পেলো এখন যদি অপূর্ব জেগে যায় তাহলে সে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়বে। তার শাড়ি পরার অভ্যাস একদম নেই। নতুন বউ বলে কাউকে সেই কথা বলতেও পারেনি।

সে বুঝতে পারে না রোজ রাতে অপূর্ব কেনো তার হাত এভাবে ধরে ঘুমায়। আচ্ছা তার আগে কোনো প্রেমিকা ছিলো না..? সিয়ামের বোন বলেই কি শুধু তার কথায় রাজি হয়ে বিয়ে করেছে তাকে..? উফফ এসব ভাবতে গেলেই একটা ছেড়ে হাজারটা প্রশ্ন এসে তাকে ঘিরে ধরে। বার বার তার মনে হয় সে অপূর্বকে বাধ্য করেছে এই বিয়েতে।
তারপর এসব ভাবনা বাদ দিয়ে সে ফ্রেশ হয়ে নীচে নামলো। কাল মেহমানদের নিয়েই সারাক্ষণ কেটে গেছে। সিয়া কারোর সাথেই তেমন কথা বলেনি শুধু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দিয়েছে। অথচ আজ সারা বাড়ি ফাঁকা। সব মেহমানরা কাল রাতেই বাড়ি ফিরে গেছে।

সিয়া রুম থেকে বেরোতেই অপূর্ব চোখ মেললো তার কাছ থেকে হাত সরানোর সময়ই তার ঘুম হালকা হয়ে গিয়েছিল। সিয়ার শাড়ির অবস্থা দেখে সে চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল। সে তখন উঠলে সিয়া ভীষণ রকম অসস্তিতে পড়তো সে জানে।

সিয়া ডাইনিং টেবিলের কাছে আসতেই দেখলো অপূর্বের বাবা অলীক সাহেব চেয়ারে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। সিয়া মাঝে মাঝে ভাবে অপূর্বের মা বাবাকে দেখে মনেই হয় না যে তাদের এতো বড়ো একটা ছেলে আর মেয়ে আছে। আসল বয়সের থেকে বয়স অনেকটা কম লাগে।
সিয়া টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করতে লাগলো।

অলীক সাহেব এবার মুখ তুলে সিয়াকে দেখে একমুখ হাসি নিয়ে বললেন “আরে আম্মু দাঁড়িয়ে কেনো বসো বসো” বলে তিনি নিজেই চেয়ার টেনে দিলেন।

সিয়া এবার আলতো হেসে বসে বললো “অপা কি স্কুলে গেছে আঙ্কেল…?”

অলীক সাহেব হাসি মুখে বললেন “হ্যাঁ আম্মু তার প্রাইভেট স্কুল তাই সকালেই যেতে হয়। কিন্তু তোমার উপর আমি বেশ রেগে আছি আম্মু। তুমি এটা ঠিক করলেনা” শেষ কথাটায় বেশ গম্ভীর মনে হলো অলীক সাহেবকে।

সিয়া ঘাবড়ে গেলো। কিন্তু তার মনে পড়ছে না সে কথার খেলাপ করে কিছু করেছে।
অলীক সাহেব সিয়ার চিন্তিত মুখ দেখে একইরকম গম্ভীর হয়ে বললেন ” আমি তোমায় আমায় মেয়ে ভেবে আম্মু বলছি অথচ তুমি দেখো আমায় নিজের বাবা ভাবতে পারছো না।”

সিয়া এবার অপরাধী চোখে তাকালো। তার নিজেরই খেয়াল নেই সে কখন আঙ্কেল বলে দিয়েছে। এবার সে মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললো “সরি বাবা।”

অলীক সাহেব এবার সিয়াকে দেখে জোরে হেসে বললো ” আরে আম্মু ভয় পেয় না। আমি মজা করলাম তুমিও অপু আর অপার মত আমায় আব্বু বলে ডেকো কেমন।”

সিয়া এবার একটা স্বস্থির হাসি দিয়ে ঘাড় নাড়লো। তখনই সায়মা বেগম রান্নাঘর থেকে প্লেট নিয়ে আসতে আসতে বললেন “কি কথা হচ্ছে বাপ বেটিতে…? আমায়ও একটু শোনাও।”

অলীক সাহেব বললেন “এই প্ল্যান করছিলাম ছেলের সাথে তোমার আমার আরেকবার হানিমুনটা সেরে নিলে কে কেমন হয়..?”
সায়মা বেগম এবার গরম চোখে তাকিয়ে বললেন “কিছুই আটকায় না নাকি মুখে তোমার..?এই বুড়ো বয়সে এসে আবার হানিমুন যাবে বলছো..?”

অলীক সাহেব এবার অবাক মুখ করে বললেন ” একি সায়মা তুমি আমায় বুড়ো বলতে পারলে..?এখনও অপূর্বের পাশে দাঁড়ালে লোকে আমায় তার বড়ো ভাই বলবে। এই আম্মু তুই বল আমায় দেখে কি তোর বুড়ো মনে হয়..?”
সিয়া এতক্ষণ অবাক হয়ে তাদের ঝগড়া দেখছিল। সে ভাবেনি এইরকম একটা শশুর বাড়ি তার ভাগ্যে আছে। কারন আতিফের মুখ থেকে শুনেছিল তার মা নাকি খুব গম্ভীর পান থেকে চুন খসলেই নাকি তার ভাবীর উপর চড়াও হতেন। আতিফ তাই বলেছিলো সিয়ার বেশি অসুবিধা হলে সে আলাদা ভাড়া বাড়ি নিয়ে থাকবে।

তাই সিয়ার কাছে এই পরিবেশ একদমই নতুন। অলীক সাহেবের এইরূপ প্রশ্ন শুনে সিয়া মুচকি হেসে বলল “হ্যাঁ আব্বু তোমায় জাওয়ান সিমেনার শাহরুখ খান লাগে।”

অলীক সাহেব গর্বের সাথে হেসে সায়মা বেগমের দিকে তাকালেন। সায়মা বেগম মুখ ভেংচে বললেন “ওইরম একটু আধটু মিথ্যে বলতে হয়।”

এরই মাঝে অপূর্ব নীচে নেমে এসে চেয়ার টেনে বসে বললো “গুড মর্নিং আব্বু আম্মু। তা আজ তোমাদের ঝগড়ার টপিকটা কি..?”

সায়মা বেগম উত্তর দিলেন “এইযে এলেন এলেন নবাবপূত্তুর এবার বাপ বেটা মিলে আমার পিছনে লাগবে। এই আম্মু আমি বলে দিচ্ছি তুই কিন্তু মোটেই এই বাপ বেটার দলে যোগ দিবি না।”
সিয়া হেসে বললো “না না আম্মু আমি অলওয়েজ তোমার দলে।”
সায়মা বেগম এবার হেসে সবাইকে খেতে দিলেন।
অপূর্ব সন্তুষ্ট চোখে তাকালো সিয়ার দিকে। তার বেশ ভালো লাগছে সিয়াকে এই পরিবেশে মানিয়ে নিয়ে এতটা হাসি খুশি দেখে। তার পূর্ণ ভরসা আছে তার পরিবারের উপর সিয়া এতদিন যা প্রাপ্য ভালোবাসা পায়নি তার কিছুটা হলেও সে পূরণ করতে পারবে।

____________________________________

রাত ১০ টা

চন্দ্রা একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর রেগে এইদিক ওইদিক করছে। সিয়াম আজ সেই কোন সকালে বেরিয়েছে অফিসে তখন চন্দ্রা ওঠেওনি। আর এখনও বাড়ি ফেরেনি। সারাদিন চন্দ্রাকে একটা মেসেজ বা কলও দেয়নি। চন্দ্রা কল দিয়েছিল সেটাও রিসিভ করেনি আর না তার মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছে। সিয়াম সেই কোন সকাল আটটায় একটা মেসেজ দিয়েছিল যে তার আজ একটু জরুরী কাজ আছে তাই তাড়াতাড়ি বেরোতে হয়েছে। বাড়ি সে তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবে। তাড়াতাড়ি তো দূরে থাক রাত দশটা বাজার পরও সে বাড়িতে ঢোকেনি। চন্দ্রা এবার দশবরের মাথায় ডায়েল করলো সিয়ামের নম্বর।
ওপাশ থেকে সুইচ অফ বললো। চন্দ্রা অবাক এবার তার চিন্তা বেশি হচ্ছে সে যখন আটটায়ও লোকটাকে ফোন করেছে তখনও ফোন গেছে সিয়ামের কাছে। এরই মধ্যে সুইচ অফ..? চন্দ্রা পিয়াসকে ফোন করতে যেতেই তার ফোনে কল ঢুকলো। নাম দেখলো সিনথিয়া।

চন্দ্রা একটু অবাক হলো। রাত দশটা বাজে এখন মেয়েটা কি কারণে ফোন দিয়েছে..? চন্দ্রার সাথে তার সেইদিনই গাড়িতে তার শেষ দেখা হয়েছিল। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে নরমাল হাই হেলো ব্যাস।
চন্দ্রা এবার ফোনটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বললো “হ্যাঁ সিনথিয়া বলো এতো রাতে ফোন করলে..?”

সিনথিয়া ওপাশ থেকে বললো ” সরি সরি আসলে সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন করা হয়ে ওঠেনি। আসলে তোমায় কিছু বলার ছিল। তুমি ফ্রী তো এখন..?”

চন্দ্রা হেসে বললো “হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ফ্রী। তুমি নির্দ্বিধায় বলো কি বলবে।”

সিনথিয়া এবার বললো “কাল আমার জন্মদিন আপু, তাই ঘরে ছোটখাটো একটা পার্টি রেখেছি, বেশি না আমার দুইচারটে মেয়ে ফ্রেন্ড আসবে। আসলে ছেলে বন্ধু মম পছন্দ করে না। তাই যদি তুমিও আসো তো আমার ভালো লাগবে। দেখো না করো না।”

চন্দ্রা বেশ অবাক হলো। সে ভেবেছিল সিনথিয়া তাকে বলবেই না তার জন্মদিনে। সেখানে ফোন করে বলাটা একটু অবাক লাগলেও চন্দ্রা সেটা চেপে হাসি মুখে বললো “ঠিকাছে যাবো।”
সিনথিয়াও এবার হাসি মুখে বললো “ওকে দেন! কাল সকালে দেখা হচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু তুমি এলে তারপর কেক করবো।”
চন্দ্রা হেসে বললো ” আচ্ছা আচ্ছা তাই তাড়াতাড়ি আসবো।” বলে গুড নাইট বলে ফোন রেখে দিল।

চন্দ্রার চিন্তা হচ্ছে কাল সকালে কেক কাটার সময় সেখানে সুইটি বেগমও উপত্থিত থাকবেন। তাকে দেখলেই তো সে চিনে ফেলবে। চন্দ্রা কি করবে এখন..?
এসব ভাবতে ভাবতেই সিয়াম দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে ঘরের।
চন্দ্রা সিয়ামকে দেখে সারাদিনের কথা পুনরায় মনে পড়ে। সিয়ামের সাথে ঝগড়া করার মনোভাব থাকলেও সিয়ামের ক্লান্ত মুখ দেখে তার সিদ্ধান্ত পাল্টায়। না নিরবতায় শাস্তি দেবে সে লোকটাকে সেও বুঝুক কথা না বললে কেমন লাগে।
চন্দ্রা তাই চুপচাপ রান্নাঘর থেকে শরবতের গ্লাস আর খাবারটা এনে শব্দ করে টেবিলের উপর রাখলো। তারপর দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে সিয়ামের ফ্রেশ হওয়ার জামাকাপড়ও জোরেই বিছানায় রেখে একটা বই নিয়ে বসে পড়লো বিছানায়।
সিয়াম নিরবে তার কার্যকলাপ দেখলো। সে জানতো চন্দ্রা রেগে আছে তার উপর। সিয়াম আর কিছু না বলে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
চন্দ্রা পুরো মনোযোগ বইতে দেওয়ার চেষ্টা করতেই এক লোকমা ভাত তার সামনে দেখে মুখ তুলে তাকালো সিয়াম তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে আছে।
চন্দ্রার এবার আরো রাগ লাগলো সারাদিন সে খেয়েছে কিনা খোঁজখবর না নিয়ে দিন শেষে দরদ দেখাতে এসেছে। খাবে না সে।
চন্দ্রা গম্ভীর গলায় বললো “আমি খাবো না আপনি খেয়ে নিন।”
সিয়াম এবার অপরাধী গলায় বললো ” সরি চন্দ্র। আজ সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। নিজে দুপুরে খাওয়ার টুকু সময় পাইনি। আমি জানি রাতে তুমি আমায় ছাড়া খাও না এখন তুমি না খেলে আমি কীকরে খাই বলো..? তার থেকে থাক আমিও খাবো না।”

চন্দ্রার এবার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো। মানুষটা সারাদিন না খেয়ে আছে..? আর এখন সে জেদ দেখাচ্ছে। রাগ অভিমানের উপর তার মানুষটার ভালো থাকা আগে।

সিয়াম প্লেট টা রাখতে গেলে চন্দ্রা বললো “দাঁড়ান! আমি খাবো, দিন খাইয়ে।”
সিয়াম মুচকি হাসলো সে জানতো চন্দ্রা তার না খাওয়ার কথা শুনলেই আর বারণ করবে না। তাই সে চন্দ্রাকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজেও খেয়ে নিলো।

চন্দ্রা খেয়ে চুপচাপ অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। সিয়াম বুঝলো তার চন্দ্রাবতীর এখনও তার উপর থেকে রাগ কমেনি।
সিয়াম এবার লাইট নিভিয়ে চন্দ্রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে তার ঘাড়ে মুখ গুঁজলো। সারাদিনের ক্লান্তির পর এটাই তার পরম শান্তির জায়গা। এই মানুষটার কাছে যেনো তার সুখের চাবিকাঠি আছে, এই মানুষটার কাছে এলেই তার দুঃখ কষ্ট রাগ সব যেনো একমুহূর্তে উড়ে যায়। তখন শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়।

চন্দ্রাও সারাদিনের পর কাছের মানুষটার সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে একটু গুটিয়ে নিলো। সিয়ামের শরীর থেকে ভেসে আসা তীব্র পুরুষালী গন্ধটা তাকে আকৃষ্ট করছে।

চন্দ্রা ঝট করে সিয়ামের হাত সরিয়ে বেড সাইড ল্যাম জ্বেলে উঠে গেলো বিছানা থেকে। তার এখন গলে গেলে হবে না। নইলে সিয়াম এই একই কাজ বার বার করবে। তাকে একটু বোঝানো দরকার।
সিয়াম চন্দ্রার উঠে যাওয়া দেখে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল। আজ একটু বেশিই অপেক্ষা করিয়েছে মেয়েটাকে। অফিসের কাজ তো ছিলোই প্লাস বিরোধী পক্ষের সাথে আজ ঝামেলা লেগেছিল। সব ঠিকঠাক থাকলেও সিয়ামের সাথে হাতাহাতিতে সিয়ামের ফোনটা ভেঙেছে। তার হাতেও একটু লেগেছে। যদিও এর শাস্তি স্বরূপ সিয়াম এক একটাকে দায়িত্ব সহকারে হসপিটালে পাঠিয়ে এসেছে। কিন্তু সেসব কথা এই পাগল মেয়েকে বলা যাবে না। এক্ষুনি উত্তেজিত হয়ে পড়বে। তার মাথাতে আগে থেকেই অনেকটা ভার দিয়ে রেখেছে সিয়াম।

সিয়াম চোখ ঘুরিয়ে চন্দ্রাকে দেখলো। চন্দ্রা সোফায় পা তুলে বসে ফোন ঘাঁটছে। সিয়াম এবার দু হতে ভর দিয়ে উঠে গিয়ে সোফায় চন্দ্রার কোলে মাথা রেখে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ল।
চন্দ্রা দু-একবার সরাবার চেষ্টা করেও যখন পারলো না তখন হাল ছেড়ে নিজের ফোন দেখার কাজে মন দিল।

কিছুক্ষন পর চন্দ্রার সাড়া শরীর শিরশিরিয়ে উঠলো। ঠান্ডা বরফের মতো জমে গেলো সে। সিয়াম চন্দ্রার শাড়ি হালকা সরিয়ে তার উন্মুক্ত উদরে মুখ ঘষছে। চন্দ্রার না চাইতেও তার হাত চলে গেলো সিয়ামের চুলের ভাঁজে।
সিয়াম ওভাবেই থেকে বললো ” এখনও রাগ করে থাকবে চন্দ্রাবতী..? বলছি তো আর হবেনা। এবার অন্তত ক্ষমা করো।”
চন্দ্রা বলতে পারলো না কিছু। সিয়ামের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার উন্মুক্ত উদরে। হৃদস্পন্দনের গতি বেড়েই চলেছে।
সিয়াম এবার উঠে বসলো। চন্দ্রাকে সেই ঘোর মেশানো কণ্ঠে ডাকলো ” চন্দ্রাবতী..?” চন্দ্রা নিজের অজান্তেই সাড়া দিলো ” হুঁম ”
সিয়াম পুনরায় জিজ্ঞেস করলো “এখনও রাগ কমেনি..?”
চন্দ্রা উত্তর না দেওয়ায় সিয়াম চন্দ্রার দিকে কিছুটা ঝুঁকলো। চন্দ্রার চোখের কোনে জলের অস্তিত্ব পেয়ে সিয়াম উদ্বিগ্ন হয়ে এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রার মুখ দুই হাতে তুলে বললো ” কি হয়েছে বউ..? কেনো কাঁদছো..? আমি বলছি তো আর হবে না। আচ্ছা ফাইন কি শাস্তি দেবে বলো আমি তাতেই রাজি। প্লিজ কান্না বন্ধ করো তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না।”

চন্দ্রা গড়িয়ে পড়ার আগেই শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললো ” কিচ্ছু করতে হবে না। তবে আপনি জানেন আজ আমি সারাদিন কি চিন্তায় ছিলাম..? প্রথমে তো ফোন তুলছিলেন না পড়ে করতেই দেখি সুইচ অফ। আমি যদি এইরকম কিছু করতাম আপনার কেমন লাগতো..?”

সিয়াম এবার বোধহয় অনুভব করলো তার কেমন লাগতো। এতক্ষণ সে শুধু অপরাধ বোধ থেকেই সরি বলছিলো। আসলেই চন্দ্রার জায়গায় সে হলে পাগল পাগল অবস্থা হতো তার। সিয়াম এবার চন্দ্রার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো ” আইম এক্সট্রিমলি সরি চন্দ্র। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি এতটা চিন্তা করবে। আর কক্ষনও হবে না বিশ্বাস করো। এই শেষ।”

চন্দ্রা বললো ” ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম কিন্তু। এইরকম ভুল যেনো দ্বিতীয় বার না হয়।”

সিয়াম হেসে বললো ” যথা আজ্ঞা মহারানী। তা বলছিলাম কি..!” বলেই সিয়াম কিছুটা চন্দ্রার দিকে এগোলো বিধায় চন্দ্রা কিছুটা নিজের মাথা পিছনে করে দুই ভ্রু নাচিয়ে বলল ” কি….?”

সিয়াম আরেকটু এগিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলল “এতোক্ষণ তো রাগ অভিমান দেখালে এবার একটু আদর দিয়ে পুষিয়ে দাও।”

চন্দ্রা এবার ফিক করে হেসে দিল। দিয়ে হালকা করে সিয়ামের বাহুতে মারতেই সিয়াম ” আহহ ” করে উঠলো।
চন্দ্রা চমকে সিয়ামের হাত নিয়ে দেখলো বেশ খানিকটা কাটা। আগে কিছু ওষুধ দেওয়ায় রক্তটা এখন আর পড়ছে না।
চন্দ্রা চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো ” এটা কি করে হলো..? আপনি আমায় আগে বলেননি তো..? ” বলেই হাতটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।

সিয়াম এবার বললো “তেমন কিছুই হয়নি চন্দ্র। সামান্য লেগেছে অসাবধানতায়। ডাক্তার দেখেছে ওষুধও দিয়েছে দুদিনের মধ্যে সেরে যাবে।”

চন্দ্রার তাও বিশ্বাস হলো না। মনে হলো সিয়ামের থেকে তার বেশি লাগছে একটু। ওই চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো “কোথায় আছে ওষুধ বলুন আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।” বলেই উঠতে গেলে সিয়াম টেনে বসিয়ে বললো ” শান্ত হও তো। আমার এখন ওই মেডিসিন না ভিটামিন ইউ মেডিসিন লাগবে বুঝলে।” বলেই চন্দ্রাকে কলে তুলে নিলো।

চন্দ্রা কিছু বলতে যাচ্ছিলো সিয়াম নিজের মতো করে তার মুখ বন্ধ করে দিলো। আস্তে আস্তে বেড সাইডের ল্যামটা নিভিয়ে পারি দিলো সুখের রাজ্যে।

#চলবে..?

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #বোনাস পর্ব

রাত ৩ টে।

ব্যালকনির কাছে হালকা হওয়ায় কাঁচের তৈরি ড্রিম ক্যাচারটা নড়ছে। বাইরে থেকে তাতে হালকা আলো পড়ায় দৃশ্যটা একপ্রকার অপূর্ব ঠেকছে চন্দ্রার কাছে। সে প্রিয় মানুষটার বুকে লেপ্টে একদৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখছে।

সিয়াম চন্দ্রার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মাথায় ঠোঁট স্পর্শ করে বললো “ঘুমাবেনা..?”

চন্দ্রা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো “একটা সত্যি কথা বলবে সিয়াম..?”
সিয়াম খানিকটা অবাক হলো আজ হটাৎ চন্দ্রা তার নামের সাথে তুমি সম্মধন করছে। তাও সেসব কিছু না বলে বললো “এভাবে বলো না চন্দ্রাবতী। আমায় নিজেকে অপরাধী মনে হয় তোমার।”

চন্দ্রা বললো “তুমি আমায় আগে থেকে চিনতে সিয়াম..?”
সিয়াম চমকালো। আজ হটাৎ এমন প্রশ্ন করছে মেয়েটা।

সিয়ামকে চুপ থাকতে দেখে চন্দ্রা সিয়ামের চোখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করল “উত্তর দাও। চিনতে..?”

সিয়াম চোখ নামিয়ে শুধু মাথা উপর নীচ করলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো ” কিন্তু তুমি কীকরে জানলে..?কে বলেছে তোমায় ইন্দ্রা..?”

চন্দ্রা চমকে বললো “দিভাইও জানতো..? শুধু আমি জানি না..?”
সিয়াম চোখ বুঝলো। আবার ভুল করে সে বেফাঁস কথা বললো।
চন্দ্রা এবার সিয়ামের কাছ থেকে সরে যেতে চাইলো। সিয়াম দিলো না শক্ত করে চেপে ধরে থাকলো নিজের সাথে।
চন্দ্রা মলিন কণ্ঠে বললো “ছাড়ো সিয়াম ভালো লাগছে না আমার।”
সিয়াম এবার করুন চোখে তাকিয়ে বললো ” শুনবে না কি করে চিনতাম..?”
চন্দ্রা একই ভাবে বললো “নাহ্ ইচ্ছে নেই। তোমার মনে হয়নি নিশ্চই বলা প্রয়োজন তাই বলোনি।”

সিয়াম নিষ্প্রভ গলায় বললো ” এভাবে বলো না চন্দ্র। তোমায় জড়িত সব কিছুই আমার কাছে প্রয়োজনীয়। তবে হ্যাঁ লুকিয়ে গিয়েছিলাম কিছু কারণবশত।”

চন্দ্রা উত্তর দিলো ” ওইতো বলছি দরকার হয়নি তাই বলোনি। এখনও দরকার নেই। ছাড়ো আমায় ঘুম পাচ্ছে আমার।”

সিয়াম তাও ছাড়লো না উল্টে নিজের সাথে আরেকটু জড়িয়ে বললো ” না চন্দ্র আজ সব বলবো আমি তোমায় সব শুনতে হবে। আমার কাছ থেকে তোমায় দূরে করে দেয় এমন কিছু আমি আর লুকোতে চাই না। তাতে যা হবে হোক।”
চন্দ্রা উত্তর দিলো না।
সিয়াম এবার বলা শুরু করলো “তোমার মনে আছে চন্দ্র তুমি একবার পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়াতে গিয়েছিলে তোমার দিদি আর বন্ধুদের সাথে তখন তুমি বেশ ছোটো ছিলে।”

চন্দ্রা কেঁপে উঠলো থর থর করে। সে মনে করতে চায়না সেই কালো রাত। সিয়াম বুঝতে পেরে চন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো “কাম ডাউন চন্দ্র। আমি আছি তো..?তোমার উপর কোনো কালো ছায়া পড়ার আগে তাকে আমার সম্মুখীন হতে হবে। ”

চন্দ্রা আগের থেকে একটু স্থির হলেও ভয়ে কুঁকড়ে রইলো। সিয়াম আবার বলা শুরু করলো “আমি তখন সদ্য বাবার বিজনেসে জয়েন করেছি। বাবা আমায় অনেকটা ছোটো থেকেই ব্যাবসার কাজে তার সাথে এদিক ওদিক নিয়ে যেতেন, যাতে ভবিষ্যতে আমি আরো দক্ষ হয়ে উঠতে পারি।
সেইবারও গিয়েছিলাম বাবার সাথে একটা পাহাড়ি অঞ্চলের কাছাকাছি। বেশ কিছুদিন থাকায় সেখানকার কিছু মানুষদের সাথে সামনের পাহাড় গুলো রোজ ঘুরে দেখতাম। প্রায় পাহাড়ের কিছু অংশও আমার বেশ চেনা হয়ে গিয়েছিল। একদিন বিকেলের দিকে সেখানকার এক বন্ধুর সাথে ডেয়ার নিয়ে পাহাড়ে গিয়েছিলাম প্ল্যান মাফিক আলো পড়ার আগেই আমার বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিলো।
সেখানে অনেক ট্যুরিস্ট পার্টি ঘুরতে আসতো তাই সন্ধ্যে অবধি সেখানে কোনো ভয় ছিলো না। বেশ পুলিশও থাকতো। আমার ফেরার কথা আলো পরার আগে থাকলেও আমার বেশ দেরী হয় ফিরতে ততক্ষণে আলো কিছুটা পড়ে এসেছে দিনের।
হটাৎ ফেরার সময় দেখলাম একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে রাস্তার এক কোণে। আমি কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম জীবিত না মৃত ভেবে। তারপর বুকে সাহস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটির কাছে বসলাম মুখের কাছ থেকে চুলগুলো সরিয়ে শ্বাসের গতি চেক করলাম দেখলাম বেঁচে আছে শুধু অজ্ঞান হয়েছে। ডাকতে গিয়ে দেখলাম বেশ ভালো জ্বর গায়ে। আমি ভেবে পেলাম না কিকরা উচিৎ। ব্যাগ থেকে বোতল বেড় করে মুখে জল ছিটালাম বেশ খানিকক্ষণ পর মেয়েটা চোখ খুললো। আমি এবার পূর্ণ দৃষ্টি দিলাম মেয়েটার দিকে গোলগাল ফরসা মুখটায় মলিনতার চাপ ফুটে রয়েছে। মেয়েটা এককথায় বেশ মিষ্টি দেখতে ছিলো।
চোখ খুলতেই আমি তার নাম, আর এইসময় এখানে কেনো তা জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটি অস্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিলো চন্দ্রা। আমি স্পষ্ট ভাবে শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম “চন্দ্রাবতী..?” সে ঘাড় নেড়ে আবার অস্পষ্ট ভাষায় বললো “জ জ ল”
আমার বোতলের যতটুকু জল ছিলো সেটা সবটাই তার মুখে দিতে গিয়ে শেষ হয় গিয়েছিলো। আমি উঠে একটু দূরে আসলাম ওখানকার কিছু দোকান আমার চেনা ছিলো। তাই জানতাম কিছুটা দূরে গেলে জল আমি পেলেও পেতে পারি। পেয়েও গেলাম এক দোকানে দোকান বন্ধ থাকলেও সেখানে পানীয় জলের ব্যাবস্থা থাকে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো জল নিয়ে এসে। জল নিয়ে যেতেই কিছুটা দূরে থেকে দেখলাম কতক গুলো মানুষ মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চেয়েও এগোতে পারিনি। কারণ সেই সময় গায়ের শক্তি কোনো কাজে আসতো না আমার বুদ্ধি কাজে লাগাতে হতো।তারা বেশ অনেকজন ছিলো। আমি কিছুটা হলেও জানতাম তাদের সম্পর্কে, তারা সেখানকার পাহাড়ি কিছু মানুষ যাদের জন্য বিশেষ করে মানুষকে যেতে দেওয়া হয়না সন্ধ্যার পর সেখানে। তারা মেয়েটাকে আমার চোখের সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে গেলো। আমি জানতাম মেয়েটার সাথে এবার কি হতে চলেছে। আমি ভয় পেয়েছিলাম কিছুটা কারণ আমি নিজেও তখন খানিকটা ছোটো ছিলাম তাও ওই মুহূর্তে মেয়েটাকে ফেলে পালিয়ে আসতে পারিনি আমি।আমি ফোন বার করলাম কিন্তু নেটওয়ার্কের জন্য একটাও ফোন লাগলো না। আমার ভিতর হটাৎ করেই কেমন দায়িত্ত্ব বোধ কাজ করছিলো। তারপর…”

তারপরের দৃশ্য চন্দ্রার মনে পড়তেই আবার কেঁপে উঠলো সে। সে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল সবার সাথে এসে তখন তার কাছে ফোনও ছিলো না নিজের বিধায় কাউকে ফোনও করতে পারেনি। একটা মানুষের আবছা এক মানুষের অবয়ব দেখেছিল শুধু। তারপর কতকগুল লোক এসে তাকে তুলে নিয়ে গেলো। চন্দ্রার অবচেতন মন তখন সেই কিছুক্ষণ দেখা মানুষটিকে আসা করছিলো কেনো করছিলো সে নিজেও জানে না। চোখ দিয়ে শুধু একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছিল মনে হয়েছিল সেই রাতই তার জীবনের শেষ রাত।
তারা নিয়ে গিয়ে চন্দ্রাকে বেঁধে রেখেছিল। জল খাওয়াতে চন্দ্রা কিছুটা হুঁশে এসেছিল। চন্দ্রার সামনে তাকে মারার পরিকল্পনা হলে সে ভয়ে চিৎকার করেছিল। ফলস্বরূপ তাকে তাদের হাতের কড়া কটা চড় থাপ্পড় খেতে হয়েছিল। চন্দ্রার শরীর আগে থেকেই নিস্তেজ থাকায় আরো নুইয়ে পড়েছিল মেয়েটি। তারপর তারপর তার স্পষ্ট কিছুই মনে নেই একটু মানুষের অবয়ব ছাড়া। শুধু মনে আছে সকালে সে নিজেকে হোটেলে আবিষ্কার করেছিল। সেই রাতের বিশেষ কিছুই তার মনে ছিলো না সেই ঘটনার পর থেকেই চন্দ্রার মেন্টাল শকে ছিলো বেশ কিছুদিন তাই সবাই তাকে সেই রাতের কথা মনে করতে বারণ করতো। সেই ঘটনার পর থেকেই চন্দ্রা কেমন বদমেজাজি হয়ে গেছে। ছোটো ছোটো ব্যাপারে সিনক্রিয়েট করে ফেলে। সে আগে এমন ছিলো না। এসব ভাবতেই তার এসির মধ্যেও ঘাম ছুটে গেলো।
সিয়াম চন্দ্রার অবস্থা খারাপ দেখে বললো “আর শুনতে হবে না চন্দ্র এইটুকু যথেষ্ট আজকের জন্য বাকি আবার পরে শুনো।”
চন্দ্রা শুনলো না জোরাজুরি করলো সিয়ামকে বলার জন্য। সিয়াম খানিক বিরক্ত হয়ে বললো “তুমি বড্ড জেদি চন্দ্রাবতী।”
বলেই আবার বলা শুরু করলো সিয়াম ” ওই মানুষগুলোর কাছে গিয়ে দেখলাম তারা তোমায় বেঁধে রেখেছে আর সেখানে পাহারা দেওয়া। আমি অনেক্ষন ভাবলাম আমার ব্যাগে একটা দেশলাই ছিলো। আমি বেশ কিছু পাতা জোগাড় করে তাদের তাদের আগুন লাগলাম ঠিক তুমি যেই দিকটা চাইলে তার একদম উল্টো দিকে। তাতে তারা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমি ধীরে ধীরে গিয়ে তোমায় ছাড়িয়ে বোনের ভিতর টেনে এনে আড়াল হলাম। বিশ্বাস করবেনা চন্দ্র সেইদিন একটু উনিশ বিশ হলে দুজনেই প্রাণ হারাতাম। তারা সেখানে তোমায় না পেয়ে খুঁজতে থাকলো জঙ্গলে। আমি খুব সাবধানের সাথে তোমার মুখ চেপে ধরে বসে রইলাম। কারন তুমি কাঁদতে কাঁদতে হিচকী তুলে ফেলেছিলে। যতটা না ভয় পেতাম তার দ্বিগুণ ভয় পেলাম। খুব ভাগ্যবশত তারা খুঁজে পেলনা আমাদের। পাহাড়ি ভাষায় কিছু গালাগাল করে তারা ফিরে গেলো তাদের আস্তানায়। আমি যেমন তেমন করে সেই রাতটা সেখানে কাটিয়ে সকালে তোমায় কোলে তুলে নীচে এলাম। আমার গায়েও সেইসময় বেশি শক্তি ছিল না তাই অনেকটা সময় লাগলো আমার। এসে তোমার ব্যাগ ঘাটতেই একটা ছোট্ট ডায়েরি পেলাম। সেখানে তোমার পরিবারের বিভিন্ন জনের নাম্বার লেখা ছিল। আমি প্রথম নম্বর দেখে তোমার দিদিকে কল করলাম। তোমার দিভাই বন্ধুবান্ধবরা ছুটে এলো। আমিও পিয়াসকে ফোন করায় সেও ছুটে এলো আমার কাছে। তোমার দিভাই জানালো তারা অনেক খুঁজেছে তোমায় এদিক ওদিক। আর রাত বলে পুলিশ পাহাড়ে উঠতে দেয়নি। তোমার দিভাই কাঁদতে কাঁদতে তোমায় জড়িয়ে ধরে আমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। তোমার বাড়ির ঠিকানা বললো কথায় কথায়। আমি তোমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে এলাম নিজের বাড়ি। বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা ওইটুকু সময়ে কি অসম্ভব মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম আমি তোমার। তুমি বেশ বাচ্চা বাচ্চা দেখতে ছিলে যদিও এখনও আছো। তারপর বাড়ি এসে বুঝলাম তোমার ঐ অল্পসময়ের সান্নিধ্য আমার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে গেছে। তোমায় খোঁজার জন্য আমি বেড়িয়ে পড়লাম আমার সাথে পিয়াসও ছিলো। তখন আমার নিজের এতো বেশি সোর্স ছিলো না যা করার নিজেরাই করতাম দুজনে। দুই বছর খুঁজেও তোমার কোনো খোঁজ পেলাম না। অথচ তুমি আমার সামনেই ছিলে। তোমার খোঁজ পেয়ে আমি বাবাকে জানালাম তিনি আমায় তোমার বাড়ির ঠিকানা নিয়ে যেতে বললেন। আমি নিজে গেলাম তোমার বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোমার বাবার কাছে তারপর তোমার বাবা ইন্দ্রার কাছ থেকে শুনে সব রাজি হলেন কিন্তু সময় চাইলেন কারণ তুমি তখন সবে কলেজে উঠেছো। আমিও সময় দিলাম ইন্দ্রাকে কিছু বলতে বারণ করলাম কারণ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তোমায়। তারপর তো খবর এলো তোমার দিভাই ইন্দ্রা পালিয়ে গেলো একজনের হাত ধরে। তারপর আমার বাবা মায়ের সাথে যা ঘটলো।” বলেই সিয়াম থামলো।

চন্দ্রা সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম আবার বললো “আমি তারপর আর চাইনি তোমায় আমার সাথে জড়াতে। তাই তোমার খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করলাম। শুনলাম তুমি কারোর সাথে রিলেশনে গিয়েছো। শুনে বুকটা আমার খালি হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল অবশেষে আমি তোমায়ও হারিয়ে ফেললাম। পরে এটাও আমার কানে এসেছিল তোমার ব্রেকআপ হয়েছে।তাও আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি।”

চন্দ্রা চমকে উঠলো সিয়াম যদি জানে ছেলেটা সিরাজ ছিলো তাহলে..? তাকে ভুল বুঝবে..? এতদিন তো এইভয়ে সে সিয়ামকে সত্যিটা বলেনি। সে সত্যিটা বলতে গিয়েও গলায় আটকে ফেললো। এতো এতো জিনিস সে মাথার নিতে পারছে না। মাথাটা তার আবার সেই অসহ্য যন্ত্রণায় ঘিরে ধরলো।
চন্দ্রা দুই হাত দিয়ে মাথার চুল চেপে ধরলো। সিয়াম ঘাবড়ে গেল। এই কারণেই মেয়েটাকে সে কিছু বলতে চায়নি। সে জানতো মেয়েটা আবার উত্তেজিত হয়ে যাবে। সিয়াম পাশের ওয়ারড্রয়ার থেকে একটা ওষুধ বের করে চন্দ্রাকে খাইয়ে দিল। তাও চন্দ্রা শান্ত হচ্ছে না দেখে চন্দ্রাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। তার উষ্ণ স্পর্শ গুলো আবার এঁকে দিতে লাগলো চন্দ্রার শরীরের ভাঁজে। চন্দ্রা না চাইতেও সিয়ামকে আগলে নিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলো সে।

সিয়াম দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে এসিটা একটু বাড়িয়ে চন্দ্রাকে ভালো করে ব্ল্যানকেট দিয়ে ঢেকে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজেও তলিয়ে গেল ঘুমে।

সিয়ামের নিজেরও যেন বেশ ভার মুক্ত লাগছে চন্দ্রাকে সব বলতে পারে।

#চলবে ..?

( রিচেক হয়নি।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে