বেড়াজাল পর্ব-২৯

0
579

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৯

সিরাজ নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে ছুঁড়ে মারলো সামনের মেয়েটিকে।
সামনের মেয়েটি পরে যেতে নিলেও নিজেকে সামলে ঘুরে দাঁড়ালো। মুখে তার আময়ীক হাসি। অত্যাধিক সুন্দরী না হলেও আধুনিকতায় সেটি চাপা পড়ে গেছে। পড়নে হালকা সিফন শাড়ি আর স্লীভলেস ব্লাউজ। শাড়িটা একদম বুকের মাঝ দিয়ে নিয়ে একপাশে ফেলে রাখা। মেয়েটি সেটি হাত দিয়ে একবার ঠিক করে সিরাজের দিকে এগিয়ে এলো।

সিরাজ রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। পারছে না সামনের মেয়েটিকে দুটো কষিয়ে থাপ্পড় দিতে। সিরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো “কি চাস কি তুই..?আর তোকে এখানে কে ডেকেছে..?”

মেয়েটি হেলেদুলে বললো “আমি তোমার প্রাণের বোনের কলিগ সুইটহার্ট।”
সিরাজ চোখমুখ কুঁচকে বললো “মেহমানদের মতো এসেছিস দাওয়াত খাবি চলে যাবি। আর লিসেন আমি আর আমার জীবনের পুরোনো নোংড়া আবর্জনা ঘেঁটে সুন্দর জীবনটাকে দুর্গন্ধে ভোরাতে চাই না।”

মেয়েটা আলতো হাসলো। নিরসন্দেহে মেয়েটার হাসি চমৎকার। হেসে এগিয়ে এসে সিরাজের কপাল থেকে চিবুক অবধি নিজের তর্জনী আঙুল স্লাইড করে বললো “কি ব্যাপার ডার্লিং..?এক সময় তো রাতে আমার সাথেই মজে থাকতে। এখন আমাকে দেখেই নোংরা মনে হচ্ছে..? তোমরা পুরুষরা পরও বটে রং বদলাতে।” বলেই হাসতে হাসতে আরেকটু কাছে এগোলো।

সিরাজ তাকে ধাক্কা মারে সরিয়ে দিয়ে বলে “তুই নিজের ইচ্ছেতে আসতিস আমার কাছে পয়সার জন্য।”

মেয়েটি এবার একহাতের নখের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে ” তা আসতাম বটে। আমার আবার পয়সার খিদেটা একটু বেশিই। তবে তোমায় কি কম ভালবাসতাম বলো তাই দেখো এখনও এসেছি তোমার কাছে।”
সিরাজ আবার বাঁজখাই গলায় বললো “কি চাস সাফসাফ বল, নয়তো এক্ষুনি সবার সামনে দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে আমার দুই মিনিট লাগবে না।”

মেয়েটা এবার একটু সিরিয়াস হলো। স্ট্রেট চুল গুলো বাম হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে বললো “দেখো আমি কিছু চাই না তেমন। শুধু কটা টাকা চাই। বেশি না এই পাঁচ লাখ মতো।”

সিরাজ ক্ষিপ্ত মেজাজ বললো “তোর সাথে সব লেনদেন সেইসময়ই চুকে গেছে। এখন কোন মুখ নিয়ে টাকা চাইতে এসেছিস..?আমি এক টাকাও তোকে দেবো না যা করার করে নে।”
মেয়েটা শয়তানি হেসে বললো ” যা করার করবো তো..? এটা দেখায় পর ভেবে চিন্তে বলো কিন্তু।”
বলেই ফোন ঘেঁটে কয়েকটা তার সাথে সিরাজের ঘনিষ্ট ছবি সিরাজের সামনে ধরলো।

সিরাজ রেগে ফোনটা কেরে নিতে গেলে মেয়েটা হাত সরিয়ে দিলো। এবার একটু জোরেই হেসে বললো “কাম ডাউন ডার্লিং আমার কাছে আরো কপিস্ আছে।”
তারপর আরেকটু এগিয়ে এসে সিরাজের কানের কাছে বললো “খবর পেলাম তুমি নাকি প্রেমে পড়েছ..? মেয়েটি তো দেখলাম বেশ সুন্দরী। বেশ ভালো মাল পটিয়েছ। তা তাকে পাঠাবো নাকি তোমার এইসব কুকীর্তির ছবি..? সইতে পারবে তো সে..?”

সিরাজ এবার মেয়েটার গলা চেপে ধরলো। মেয়েটি ছাড়াতে চেয়েও পারলো না চোখ উল্টে এলো তার। সিরাজ যে এতো হিংস্র হয়ে যাবে সে ভাবেনি। সিরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো “খবরদার যদি এইরকম কোনো কাজ করার কথা তুই কল্পনাতেও ভাবিস জ্যান্ত পুঁতে দেবো তোকে।” বলেই ধাক্কা মেরে মেয়েটিকে সরিয়ে দিলো।

মেয়েটি দূরে গিয়ে গলায় হাত দিয়ে কাশতে লাগলো। সিরাজ বললো “তোর টাকা চাই তো..? আগে আমার সামনে এই প্রত্যেকটা ফোটো ডিলিট কর। আমি এক্ষুনি দিয়ে দিচ্ছি তোকে টাকা।”

মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে ফোন থেকে আর বাকি ফোন করে তার ল্যাপটপ থেকে সব পিক ডিলিট করে দিলো।
সিরাজ আসতে করে সিয়ামের ঘরে গিয়ে চেকবুকটা নিয়ে এলো। সিয়াম সিরাজ বা সিয়ার দরকারের জন্য সে চেকবুক টা রেখেছিল সেটায় চেক লিখে মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিলো। তার নিজের কাছে এখন এতগুলো টাকা নেই।

মেয়েটিকে সাবধান করে দিয়ে বললো “এর পর তোর এই অভিশপ্ত মুখ যেনো আমি এই এলাকার আসে পাশে না দেখি। নয়তো আই সোয়ার সেখানে দেখবো সেখানেই পুঁতে রেখে দেবো।

মেয়েটি শুধু অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

সিরাজ নিজের মাথার চুল টেনে বসে পড়লো তার বিছানায়।

________________________________

সিয়াম বিদায়ের শেষে খাওয়ার দাওয়ার পর আবার গেলো সেই কুঠুরিতে। এবার আর তাকে ধমকি ধামকি দিতে হলো না লোকটি নিজে থেকেই বলতে শুরু করলো “আমি কিছু জানি না স্যার সত্যি। আমাকে রাফি আর সুইটি বেগম বলেছিলেন যাতে চন্দ্রার এইরকম অ্যাক্সিডেন্ট করাই। অনেক দিন ধরেই চেষ্টায় ছিলাম কিন্তু কোনোনা কোনো ভাবে হয়ে উঠছিল না। সেই দিন সুযোগ পেয়েছিলাম তাই…” বলার শেষ হতে দিলো না সিয়াম অতিরিক্ত রাগে আঘাত করে বসলো লোকটির মাথায়।
দ্বিতীয় বার আঘাত করার আগে পিয়াস আটকালো টেনে নিয়ে এলো তাকে।

পিয়াস একধারে সিয়ামকে টেনে নিয়ে এসে বললো “ওকে মারিস না আর। ওর শাস্তি ও পেয়েছে বাকিটা পুলিশকে দেখতে দে। তুই রাঘব বোয়াল গুলোকে ধরতে নাম এবার। আর রাফি তোর হাতের এতো মার খেয়ে জেলে গিয়েও শোধরালো না ওকে আমি দেখে নেবো। তুই ওইদিকটা চিন্তা করিস না। ”

সিয়াম আর কথা বাড়ালো না। লোকটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলে বেরিয়ে এলো কুঠুরি থেকে। সিয়াম জানে পুলিশের কাছে সে মুখ খুলবে না সুইটি বেগমের নামে, আর খুললেও সুইটি বেগম টা টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেবেন। সিয়াম এখন চায় না পুলিশের কিছুতে জড়াতে। সে আগে সব কটা প্রমাণ হাতে পাক তারপর লাস্ট চালটা সে চালবে।

সিয়াম আগের দিনের গার্ডেনের কাছে জায়গা টায় এলো যেখানে তারা সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিয়েছিল।
এখন তার মনটা ভীষণ ভার হয়ে আছে।
সিয়া শুধু তার বোন ছিল না মাও ছিলো তার। তার খুঁটিনাটি খেয়াল রাখতো চন্দ্রা আসার আগে অবধি। সিয়ার বিদায়ের সময় বুক ফেটে কান্না আসলেও সে কাঁদতে পারেনি সবার সামনে। সে সবার বড়ো তাই সে তখন কাঁদলে সবাই ভেঙে পড়তো আরও। কিন্তু এখন সে কিছুতেই চোখের জল আটকাতে পারলো না। চোখের কোন দিয়ে গড়িয়ে পড়লো জল। এই কষ্টটা শব্দে ব্যাখ্যা করতে পারবে না।

_____________________________

সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হতে সব মেহমানরা জোর করলো ইন্দ্রাকে আজকের রাতটা থেকে যেতে। তাদের সাথে এতক্ষণে বেশ সাক্ষাত গড়ে উঠেছে তার। ঐদিকে বাবা ফোন দিয়ে বলছে আজকের রাতটা চাইলে যেনো থেকে যাই। বিয়ে বাড়ীতে অনেক কাজ থাকে চন্দ্রা একা হাতে হিমশিম খাবে। ইন্দ্রা চুপ করে ঘড়ির দিকে তাকালো সে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছে সে আজ রাতে থাকবে কি না..?
চন্দ্রাকে দেখতে পেয়ে ইন্দ্রা দৌড়ে গেলো তার কাছে। চন্দ্রা যেনো অন্যমনস্ক হয়ে জলের বোতল গুলো রাখছিলো।
ইন্দ্রা গিয়ে ডাকতে তার হুশ ফিরলো। ইন্দ্রা বললো “আজ কি রাতে আমি এখানে থাকবো…? মানে তোর যদি কোনো সাহায্য লাগে তাই আর কি…”

চন্দ্রার সব রাগ এবার পড়লো ইন্দ্রার উপর সে স্থান কাল ভুলে চেঁচিয়ে উঠলো “কেনো থাকবি..? এটা কি তোর শশুরবাড়ি নাকি যে তোকে সব দায়ভার নিতে হবে..?আমি একা সব করতে পারবো। আর বাবাকে একা ছেড়ে এখানে পড়ে থাকবি বলছিস কীকরে তুই, তোর বিবেকে বাঁধছেনা..?আমার সংসার আমি ঠিক কোননা কোনোভাবে সামলে নেবো তুই কি সারাজীবন এভাবে এসে সাহায্য করবি নাকি..?”

ইন্দ্রা হতভম্ভ। চন্দ্রা আর সিয়ার শরীর খারাপের জন্যই তো সে এখানে এতকটা দিন ছিলো। তারপর তার বাবা বাইরে গেলেই চন্দ্রা ফোন করে বার বার ডাকতো এখানে এসে থাকার জন্য। আর আজ তার সেই বোন কিনা তাকে এইভাবে কথা শোনালো।

ইন্দ্রার চোখে জল এলো। আলতো স্বরে বললো “সরি আমি আসলে তোদের একটু বেশিই আপন ভেবে ফেলেছিলাম। আমার লিমিটটা বোঝা উচিত ছিলো। আ আমি এক্ষুনি ওবাড়ি ফিরে যাচ্ছি।” বলেই ইন্দ্রা রুম থেকে নিজের ব্যাগ এনে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো বাড়ির দরজা দিয়ে।

এতক্ষণ পিয়াস সব দাঁড়িয়ে দেখলেও কিছু বলেনি তার অধিকার নেই বলার। চন্দ্রা পিয়াসের দিকে তাকাতে পিয়াস হকচকিয়ে গেল।

চন্দ্রা গম্ভীর গলায় বললো “ভাইয়া আপনি একটু ওর পিছনে যাবেন মানে এতো রাত..”
পিয়াস তাড়াতাড়ি করে বললো “হ্যাঁ ভাবী আমি দেখছি তুমি চিন্তা কোরো না।” বলেই পিয়াসও বেরিয়ে গেলো।
.
.
সিরাজ ব্যালকনিতে একটা সিগারেট নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিসেব মেলাচ্ছিল তার জীবনের। হঠাৎই ইন্দ্রাকে চোখ মুছতে মুছতে ব্যাগ নিয়ে বাইরের দিকে যেতে দেখে সিরাজ হকচকিয়ে গেলো। এতো রাতে কি বাড়ি ফিরে যাচ্ছে মেয়েটা..? তাও কাঁদতে কাঁদতে হটাৎ এমন কি হলো..?
সিরাজের বুকের ভিতরটা চিনচিন করে উঠলো সূক্ষ্ম ব্যাথায়। মা বোনের পর এই প্রথম বোধহয় কোনো নারীর জন্য এই অনুভুতির সৃষ্টি হলো। পিয়াস কেও যেতে দেখলো ইন্দ্রার পিছনে।
সিরাজ আর না ভেবে হাতের সিগারেট ফেলে পিয়াসকে ফোন করে কি হয়েছে জানতে চাইলো। পিয়াস শুধু বললো চন্দ্রা আর ইন্দ্রার কথা কাটাকাটি হয়েছে। সিরাজ অবাক হলেও পিয়াসকে বললো “তুমি একটু ওয়েট করো আমি ছেড়ে আসতে যাচ্ছি ওকে। আমার একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ওর কাছে রয়েছে ।”
পিয়াস সম্মতি জানালো। সিরাজ দেরি না করে দৌড়ে গেলো।

______________________________________

চন্দ্রা ওই ঘটনার পর রুমে চলে এলো। তার এবার হাঁসফাঁস লাগছে। রাগের মাথায় একটু বেশিই বলে ফেলেছে সে। কিন্তু কি করবে সে এইরকম একটা অসুস্থ সম্পর্কে তার দিদিকে জড়াতে দিতে পারে না সে। সে ঠিক করলো কাল অথবা পরশুর মধ্যে গিয়েই তার দিভাইকে সব সত্যি খুলে বলবে। তারপর বাকি সিদ্ধান্ত দিদির।

চন্দ্রা নিজের মনকে বুঝিয়ে শান্ত করে ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত একটা বেজে দশ। চন্দ্রা দরজার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করলো লোকটা গেলো কোথায় এতো রাত হয়ে গেলো এখনও এলো না..?
বলেই বিছানা ঝেড়ে নিলো। ভাবলো এর দশ মিনিট ওয়েট করে সিয়ামকে বাইরে খুঁজতে যাবে।
এরই মধ্যে সিয়াম প্রবেশ করলো ঘরে। চন্দ্রা তাকিয়ে দেখলো সিয়ামের চোখ নাক লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এতোক্ষণ কাঁদছিল। চন্দ্রার খারাপ লাগলো সে জানে সিয়া সিয়ামের জন্য কি ছিল।

সিয়াম হটাৎ করে চোখ তুলে বললো “তুমি ঘুমাওনি এখনও..? এতো রাত হয়ে গেলো।” বলেই হুইচেয়ার থেকে উঠে ঘড়ি খুলে রাখলো আয়নার সামনে। তার মনটা এখনও ভার হয়ে আছে। কিন্তু এখন আর চোখের জল ফেললে চলবে না। এবার আগের মত শক্ত হতে হবে তাকে। তার উপর নির্ভর করে তার ভাই বোনের দায়িত্ব ব্যাবসা তার এতো নরম হলে চলে না।

চন্দ্রা সিয়ামের দিকে একদষ্টিতে তাকিয়ে বললো “কষ্ট হচ্ছে সিয়ার জন্য..? চিন্তা করবেন না অপূর্ব ভাইয়া আপনার মতোই সুখে রাখার চেষ্টা করবে তাকে।”

সিয়াম কিছু বললো না শুধু ঘুরে তাকালো চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রা সিয়ামের ওই রক্তবর্ণ চোখ দেখে দুই হাত বাড়িয়ে দিল। যেমন করে মা দেয় তাদের বাচ্চাদের কলে আসার জন্য।

সিয়াম এক দৌড়ে এসে চন্দ্রকে ঝাপটে ধরলো। এতক্ষণের আটকে রাখা কান্নার বাঁধ ভাঙলো। তার চোখের জল ভিজিয়ে দিলো চন্দ্রার কাঁধ।
চন্দ্রাও নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে থাকলো সিয়ামকে। সিয়ামের কান্না থামলেও কিছুক্ষণ পরে রইলো ওভাবে। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে চন্দ্রার চোখে চোখ রেখে বললো “আজ তোমাতে মিশে বিলীন হতে হতে চাইলে কি তুমি বাঁধা দেবে..?”
চন্দ্রা উত্তর দিলো না। একটা মেয়ে হয়ে তারপক্ষে এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর মুখে দেওয়া সম্ভব নয়। তার শ্বাসের গতি বাড়লো লজ্জায়।
সিয়াম তাকিয়ে রইলো সেই মুখপানে। এই মুখটা দেখে সে জীবনের বেঁচে থাকার শক্তি পায়। মনে হয় তারও কেউ আছে তার অতিআপন সুখ দুঃখের সঙ্গী।

চন্দ্রা উত্তর দিলো না কোনো, জড়িয়ে ধরলো সিয়ামকে। সিয়াম মুচকি হাসলো। সে তার সম্মতি পেয়ে গেছে। মিলিত হলো দুটি অধর। সিয়াম আরেকটু কাছে টেনে আরো নিবিড় ভাবে মিশিয়ে নিলো চন্দ্রাকে তার সাথে। হাতের বিচরণ হলো অবাধ্য। শ্বাসের গতি বেড়ে চললো দুজনেরই। সিয়াম ধীরে বেড সাইডের লাইট অফ করে দিলো। দুজনেই আজ প্রবেশ করলো নতুন সুখের রাজ্যে।

_______________________________________

সিরাজ যতক্ষণে গাড়ি নিয়ে বেরোলো ততক্ষণে ইন্দ্রা রাস্তায় নেমে পড়েছে কাঁদতে কাঁদতে। সিরাজ গাড়ি নিয়ে তার পাশে গিয়ে বললো ” ইন্দ্রা গাড়িতে উঠে এসো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি বাড়ি।”

ইন্দ্রা এক হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বললো “দরকার নেই আপনাদের কোনো কিছুর আমার। আপনি সারাক্ষণ কেনো আমার পিছনে পরে থাকেন বলুন তো.??

সিরাজ আসতে করে ইন্দ্রার চোখের দিকে শীতল দৃষ্টি দিয়ে বললো “সত্যি বোঝো না কেনো পরে থাকি..?

ইন্দ্রা উত্তর দিলো না। তার মন হয়তো কোথাও জানে এর উত্তর। তাই চুপ করে থাকলো।

পাশ দিয়ে ছেলেদের একটা বাইক ক্রস করলো। সিরাজ সে দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ইন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো “রাস্তাটা ভালো নয় ইন্দ্রা জেদ কোরো না উঠে এসো গাড়িতে।”

ইন্দ্রা ছাড়লো না সে তার কথায় অটল বললো “সামনেই বাস স্ট্যান্ড আমি ওখান থেকে বাস ধরে নেব। আপনি ফিরে যান।”

সিরাজের এবার রাগ উঠলো। গলার স্বর কঠিন করে বললো “তুমি নিজে উঠবে নাকি কলে করে তুলতে হবে..? আমি মরে গেলেও এই ফাঁকা রাস্তায় তোমায় একা ছাড়বো না। তাই জোর করতে বাধ্য করো না আমায়।”

ইন্দ্রা উপায় না পেয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। দাম করে গাড়ির দরজা লাগলো। তার একপ্রকার রাগের বহিঃপ্রকাশ। সিরাজ দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
ইন্দ্রার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির পিছনে রাখলো।

কিছুক্ষন নিরবতায় কাটার পর ইন্দ্রা মুখ খুললো “কেনো করছেন এইরকম..?আমাদের সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত নেই।”
সিরাজ স্বাভাবিক গলায় বললো “তুমি চাইলেই এই সম্পর্কের একটা সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করতে পারি আমরা। অতীত আমাদের হাতে না থাকলেও ভবিষ্যত আমাদের হাতে থাকে।”

ইন্দ্রা আবার বললো “কিন্তু সমাজ..? আপনার বাড়ির লোক..? তারা কি বলবে..?”

সিরাজ গাড়ির ব্রেক কষলো আসতে করে। ইন্দ্রা শিটবেল্ট পড়ে নেই এটা তার খেয়ালে আছে।
সে ইন্দ্রার চোখে চোখ রেখে বললো “আমি সমাজের পরোয়া করি না ইন্দ্রা। তাই তারা কি বললো না বললো সে নিয়ে আমার কোনোকালেই কোনো মাথব্যথা ছিলো না। আর আমার বাড়ির লোককে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। শুধু তুমি রাজি হলেই আমি সব সামলে নেবো। বলো তুমি রাজি আমায় নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে..?”

ইন্দ্রা ভেবে পেলো না কি বলবে। তার পক্ষে দ্বিতীয় বার অন্য কারোর সাথে সংসার সাজানো বেশ কঠিন। মানুষকে ভরসা করাটা তার কাছে আরোও কঠিন।
সে শুধু বললো “বাবার কাছে প্রস্তাব রাখুন। সে চাইলে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

সিরাজের মনে হাজার রঙ বেরঙের প্রজাপতি ডানা মেললেও তা মুখে প্রকাশ করলো না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো তার হবু শ্বশুরবাড়ির রাস্তায়।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে