গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৮
শুক্রবারের সকাল। শুক্রবারটা এমনিই সবার মেজাজ বেশ ফুরফুরে থাকে। সিয়াম সিরাজ সিয়া কেউই কাজে বেরোয় না। সবাই ঘরে থাকায় দুপুরে নয় ভালোমন্দ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয় আর নয়তো মাঝে মাঝে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাই মিলে খেয়ে আসা হয়।
কিন্তু আজকের শুক্রবারটা বিশেষ দিন সবার কাছে। কারন আজ বাড়ির ছোটো মেয়ে সিয়ার বিয়ে। সকাল থেকেই চন্দ্রা কাজে লেগে পড়েছে। সিয়াম সিরাজ ও ভোররাত থেকে উঠে সব দেখাশোনা আয়োজন করতে ব্যস্ত। আজ ইন্দ্রা নেই এই বাড়িতে।
কাল যখন সবাই শপিংগে যায় সিয়ার জন্য জামাকাপড় কিনতে তখন ইন্দ্রার ফোনে ফোন আসে নয়ন সাহেবের শরীরটা খারাপ করেছে আবার। ইন্দ্রা তাই সেখান থেকেই তার বাড়ি চলে গিয়েছে। চন্দ্রাও যেতে চেয়েছিল কিন্তু ইন্দ্রা যেতে দেয়নি। বাড়িতে এখন সে ছাড়া কেউ নেই সব দেখভাল করার মতো সেও যদি চলে যায় বিয়ে টা যা তা ভাবে একটা দিতে হবে। যদিও ইন্দ্রা ঘরে গিয়ে জানিয়েছে বাবার তেমন কিছু হয়নি প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো শুধু।
সে এও বলেছে নয়ন সাহেব আজ সুস্থ থাকলে সে সিয়ার বিয়ের আগেই চলে আসবে। কিন্তু থাকতে পারবে না। চন্দ্রা তাতেই সম্মতি জানিয়েছে। সে নিজেও ক্যারাটে স্কুল থেকে প্রায় দিন গিয়ে বাবাকে দেখে আসে।
সিয়াম সকাল সকাল পিয়াসকেও ডেকে নিয়েছে। পিয়াসও এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে সব আয়োজন করছে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও সিয়ার কিছু ফ্রেন্ডস সিয়াম সিরাজ সবার ক্লোজ কিছু ফ্রেন্ড আর আসে পাশের কয়েকটা মেহমানকে বলা হয়েছে।
সিয়াম চায় বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও একটু পরিপাটি সুন্দর বিয়েবাড়ির মতো সাজানো গোছানো থাক। এই দিনটা সবার জীবনে একবারই আসে, পরেও বিবাহবার্ষিকী বা বড়ো করে অনুষ্ঠান পালন করা হলেও আজকের দিনের মতো ভয়,জড়তা, ভালোলাগা মেশানো দিনটাআর ফিরে পাওয়া যায় না। আর সিয়ার দুই বড়ো ভাই থাকতে তারা কোনোমতেই তাদের বোনের বিয়ের এই দিনটা এইরকম সাদামাটা হতে দেবে না।
বিয়ে বেলার দিকে। তার আগেই চন্দ্রাদের সব কাজ শেষ করতে হবে। আজ তো ইন্দ্রাও নেই তাই আরো হিমশিম খাচ্ছে সে। অলরেডি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে সে ছুঁড়িতে। তারপর নিজেই চুপচাপ রুমে গিয়ে ফার্স্টএইড বক্স খুলে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেড লাগিয়ে আবার কাজ করা শুরু করেছে। সিয়াম এখন জানতে পড়লেই তাকে কড়া কটা কথা শোনাবে তার এই অসাবধানতার জন্য। তাই সে যতটা পারছে সিয়ামের থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। লোকটার সব দিকে নজর চন্দ্রা একবার সামনে পড়লেই সিয়াম ধরে ফেলবে তাকে।
চন্দ্রা সব ঠিকঠাক করে নিজে গেলো রেডি হতে। কারন এরপর সিয়াকে রেডি করতে হবে, বাকি মেহমানরা চলে সে আর সময় পাবে না।
চন্দ্রার রুমে ঢোকার আগেই ইন্দ্রার ফোন এলো। চন্দ্রা সেখানে দাঁড়িয়েই ফোন রিসিভ করে বললো “কোথায় তুই..? কখন আসবি..? আর বাবার শরীর কেমন আছে এখন..? আর গাড়ির আওয়াজ আসছে যে তুই কি বাইরে আছিস..?”
ইন্দ্রা ওপাশ থেকে বললো “হ্যাঁ বাইরে আছি। সকালে হসপিটালে এসেছিলাম ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে তোর বাড়ি যাবো। কিন্তু এখানেই কতো বেজে গেলো দেখ। আর বাবা এখন ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না।”
চন্দ্রা বললো “তাহলে আর বাড়ি যাস না দিভাই মালতি বুয়াকে ফোন করে দে। আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি একেবারে এখানে চলে আয়। এখন বাড়ি গিয়ে এখানে আসতে গেলে অনেকটা সময় যাবে। তুই এখানে এসে রেডি হয়ে নিস।”
এরপর ইন্দ্রা কি বললো গাড়ির আওয়াজে চন্দ্রা ঠিক তা শুনতে পেলো না। ফোন রেখে আসে পাশে দেখতে লাগলো কাউকে পাঠানোর জন্য। ড্রাইভার নেই আজ সে গেছে আরেক জায়গায় মেহমানদের নিয়ে আসতে।
তাই চন্দ্রা কাউকে না পেয়ে সিয়ামকে দেখতে পেয়ে বললো “শুনছেন দিভাই এ.আই হসপিটালের কাছে আছে আপনি কাউকে বলুননা যেনো গাড়িটা নিয়ে গিয়ে দিভাইকে নিয়ে আসে।”
সিয়াম বললো “আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি। কিন্তু তুমি এখনও রেডি হওনি কেনো..? যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
চন্দ্রা যেতে যেতে বলল ” হ্যাঁ আমি যাচ্ছি। আর আপনার জামাকাপড়ও বের করে রাখছি আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।” বলেই চন্দ্রা রেডি হতে চলে গেল।
সিয়াম পিয়াসকে ডেকে বললো একটু গিয়ে ইন্দ্রাকে নিয়ে আসতে। পিয়াস মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
পিয়াস গেটের কাছে আসতেই ফোনে একটা কল এলো। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশের কথা শুনে মুখটা শক্ত হয়ে এলো তার শুধু বললো “কোনের স্টোর রুমে নিয়ে যা আমি না যাওয়া অবধি মুখও বেঁধে রাখে।” বলেই ফোন রেখে দিল। সে আগে থেকেই এই বাড়ির আনাচ-কানাচ চেনে।
কিন্তু এখন সমস্যা হলো সে কোন দিকে যাবে..?
লোকটাকে ওখানে বেশিক্ষণ রাখাও যাবে না। আজ বাড়িতে মেহমান আসবে ভুল করেও যদি কেউ টের পায় তো সর্বনাশ। তাই এখন সেখানে যাওয়াটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। কিন্তু সিয়াম যখন বলেছে এই কাজটাও ইম্পর্ট্যান্ট। সে এবার কি করবে..? আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো সিরাজ কিছু লাইট নিয়ে একটা লোকের সাথে কথা বলতে বলতে গেটের দিকে আসছে।
পিয়াস আর উপয় না পেয়ে সিরাজকে ডাকল।
সিরাজ লোকটাকে কি একটা বলেই পিয়াসের কাছে যেতেই পিয়াস বললো ” সিরাজ একটা আর্জেন্ট কাজ পরে গেছে এখন আমার। একজনকে আনতে যেতে বললো সিয়াম এখন আমি যেতে পারবোনা তুই কি গিয়ে একটু নিয়ে আসতে পারবি..?”
সিরাজ ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে কপালের একপাশে বুড়ো আঙুল ঘষে বললো ” এখন..? এখন কীকরে হবে..?অন্যকেউ নেই..? আমি অন্যকাউকে বলে দেখছি দাঁড়াও।”
পিয়াস অস্থির হয়ে বললো ” আরে না না থাক। আসলে চন্দ্রার বড়ো আপুকে আনতে হতো তাই জন্যেই আমায় বলেছে সিয়াম। থাক অন্যকাউকে বলতে হবে না আমি দেখছি যদি ম্যানেজ করা যায়।”
ইন্দ্রার কথা শুনতেই সিরাজের কুঁচকানো ভ্রূ এবার সোজা হলো। পিয়াসকে আটকে আমতা আমতা করে বললো “আমায় দাও পিয়াস ভাই আমিই যাচ্ছি। এদিকটা অন্যকাউকে বলছি দেখতে।”
পিয়াস অবাক হলেও কিছু বললো না। এখন কিছু বললে যদি এবার যেতে না চায়। তাই কিছু না বলেই সিরাজকে ঠিকানা আর হাতে চাবি দিয়ে পিয়াস নিজের কাজে চলে যায়।
.
.
চন্দ্রা স্নান সেরে সিয়াকে দেখতে গিয়েছিলো। তাকে সাজাতে এসেছে পার্লার থেকে।
সিয়া জোর করে ধরে চন্দ্রাকেও মেকাপ করিয়েছে তাদের কাছে ইন্দ্রা এলে তাকেও সাজাবে বলে ঠিক করে রেখেছে। তার দাবী সে একা এতো সাজবে এটা তার ভালো লাগছে না। চন্দ্রাও আর নাকচ করেনি বেশি, এমনিতেই তার হাতটা কাটা তারউপর মেয়েটা আজকেই চলে যাবে, তারপরে আর কেউ এই ছোটো ছোটো আবদার গুলো করবে না তার কাছে। হুট হাট করে এসে ভাবী বলে জড়িয়েও ধরবে না কেউ। ভাবতেই চন্দ্রার মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো।
সে এই বাড়িতে আসার পর সিয়া তাকে খুব একটা পছন্দ করত না এটা সে জানে, কিন্তু আসতে আসতে সিয়াই হয়ে উঠেছিল তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। দুজনে অনেক সময় বেড়িয়ে পড়ত একসাথে এদিক ওদিক ঘুরতে। আজ মেয়েটা চলে যাবে ভাবতেই চন্দ্রার আর ভালো লাগলো না সিয়ার ঘরটাকে থাকতে।
সিয়াকে রেডি হতে বলে সে চলে এলো নিজের রুমে। তার এখনও শাড়ি পরা বাকি। ঘরে এসে দেখলো সিয়াম এখনও আসেনি তাই দেরি না করে ঝটপট চন্দ্রা শাড়িটা পড়ে নিতে লাগলো। সব ঠিকঠাক মতো আসতে আসতে করলেও মুশকিল হলো শাড়ির কুঁচি করার সময়। সে হাতে এবার একটুও জোর দিতে পারছে না। হাতে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ তিনটে লাগানো এক এক করে সে সযত্নে নিজের দায়িত্বে ভুলভাল কাজ করতে গিয়ে কেটেছে এগুলো। সর্বক্ষণ হাত শাড়ি দিয়ে ঢেকে সিয়ামের কাছ দিয়ে লুকিয়ে রেখেছে।
অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরও চন্দ্রার পক্ষে যখন সম্ভব হলো না তখন বিরক্ত হয়ে চন্দ্রা ছেড়ে দিল শাড়ির কুঁচি।
ওমনি একটা হাত এসে ধরে নিলো সেটা সযত্নে। ধীরে ধীরে সাজাতে থাকলো একটার পর একটা কুঁচি।
চন্দ্রা অবাক হয়ে সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম বললো ” হাতে কি আর জায়গা আছে কাটার মতো তাহলে বলো আমি সেখানটা কাটতে সাহায্য করছি।”
চন্দ্রার মুখটা চুপসে গেল। শেষমেশ সে ব্যার্থ হলো তার হাতটা লুকোতে, তার ভেবেই তো রাগ লাগছে নিজের উপর।
চন্দ্রার চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে সিয়াম শাড়িটা ঠিক করে চন্দ্রাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে নিজে পিছনে দাঁড়ালো।
চন্দ্রার মুখটা হালকা করে তুলে বললো মুখটা কানের কাছে নিয়ে বললো “আজ বোধহয় আমার চন্দ্রাবতীকে দেখে চাঁদও লজ্জায় মুখ লুকোবে মেঘের আড়ালে।”
চন্দ্রার সব রাগ এবার বাষ্পের মতো উড়ে গেলো। লজ্জায় মুখটা নামিয়ে নিলো এবার সে।
সিয়াম তা দেখে আরেকটু জড়িয়ে বললো ” উফ চন্দ্র এভাবে লজ্জা পেয়ে আমার আর হৃদস্পন্দন বাড়িও না। এমনিই মন চাইছে এক্ষুণি আদর করে সব সাজ নষ্ট করে দিই। এরপর কন্ট্রোললেস হয়ে পড়লে আমায় দোষ দিতে পারবেনা কিন্তু আমি আগের থেকেই বলে রাখলাম।” বলেই নাক ঘষলো চন্দ্রার কানের কিছুটা নীচে।
চন্দ্রার এবার লজ্জায় গাল কান সব লাল হয়ে উঠলো। না আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না এখানে এই লোকটা যখন যা খুশি করতে পারে। তখন আর চন্দ্রা সত্যিই আটকাতে পারবে না।
চন্দ্রা এবার নিজেকে ছাড়াতে চাইলেই সিয়াম আরেকটু টেনে বললো “আরেকটু থাকো প্লিজ..?”
চন্দ্রা কোথায় কান না দিয়ে নিজেকে ছাড়তে ছাড়াতে বললো ” এখন না জনাব। মেহমান এলো বলে আপনি যান তাড়াতাড়ি রেডি হন।” বলেই মুচকি হেসে দৌড় লাগালো দরজার দিকে।
সিয়াম চোখ ছোটো ছোটো করে বললো “এর শোধ আমি রাতে তুলবো। দেখবো আজ কীকরে বাঁধা দাও।”
চন্দ্রা আর দাঁড়ালো না এই লোকটার কথায় এবার সে মাটি ফাঁক করে নীচে ঢুকে যাবে লজ্জায় গাল কান গুলো এমনিই গরম হয়ে গেছে সেটা সে টের পাচ্ছে অলরেডি।
চন্দ্রা রুম থেকে বেরোতেই সিয়াম হালকা হাসলো। এই দিনগুলোর একসময় সে স্বপ্ন দেখতো। কখনো পূরণ হবে তা সে কল্পনাও করেনি। সে ধরেই নিয়েছিল তার জীবন থেকে বাবা মায়ের মতো সে তার চন্দ্রাবতীকেও বুঝি হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু ভাগ্য তাকে এইবার খালি হাতে ফেরায়নি। এর জন্য সে উপরওয়ালার কাছে সর্বদা চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
এসব ভাবনার তার ফোন বেজে উঠলো। সিয়াম ফোন হাতে নিয়ে দেখলো পিয়াসের ফোন। তুলে বল বলতেই, পিয়াস কিছু একটা বললো। যাতে সিয়ামের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। শুধু বললো ” রাখ আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।”
#চলবে..?
গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #বোনাস পর্ব
সিরাজ হসপিটালের সামনে এসে চারিদিক দেখলো। পিয়াস তো তাকে এই জায়গাটাই বললো তাহলে ইন্দ্রা কই গেলো..? তার দেরি হচ্ছে দেখে নিজেই চলে গেলো না তো..? সিরাজ একবার ইন্দ্রার ফোনে ফোন করলো। নাহ্ ফোন তো সুইচ অফ বলছে। সিরাজের এবার টেনশন হতে লাগলো গাড়ি ঘোরাবার আগে কি মনে করে একবার গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো।
দেখতে দেখতে কিছুটা আগে এগোতেই সিরাজের পা থেমে গেলো। পিছন থেকে দেখে মানুষটাকে ইন্দ্রার মতো লাগছে কিন্তু সে এইরকম রাস্তার ধারে বসে আছে কেন..? শুধু কি গাড়ি আসার অপেক্ষায়..?
সিরাজ দৌড়ে গেলো ইন্দ্রার কাছে। পিছন থেকেই ডাকলো ” ইন্দ্রা..?”
ইন্দ্রা পিছন ঘুরে সিরাজকে দেখে কেমন ইতস্তত করলো। সিরাজ ভালো ভাবে লক্ষ করলো ইন্দ্রা পায়ের আঙুলটা চেপে ধরে আছে। সিরাজ চিন্তিত মুখ নিয়ে বললো “পায়ে কি হয়েছে ইন্দ্রা..? এভাবে এখানে বসে আছো কেনো..?”
ইন্দ্রা মুখটা কাচুমাচু করলো, যেনো বলতে বলতে চাইলো না কারণটা। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে আসতে করে বললো “পায়ে পা জড়িয়ে পড়ে গেছি। পায়ের আঙুলে তাই লেগেছে একটু।”
সিরাজ চেঁচিয়ে বললো “হোয়াট..?এই শুকনো ফাঁকা রাস্তায় তুমি কিনা এমনি এমনি পায়ে পা জড়িয়ে পড়ে গেলে..? লাইক সিরিয়াসলি..? বলেই সিরাজ হাসতে শুরু করলো।
হাসি বাড়তেই থাকলো, হাসতে হাসতে সেও ইন্দ্রার পাশে বসে পড়লো রাস্তায়। তাও তার হাসি থামছে না।
ইন্দ্রা গাল ফুলিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে সিরাজের দিকে তাকালো।
ইন্দ্রার এইরকম গাল ফোলানো দেখে সিরাজ হাসতে হাসতেই ইন্দ্রার গাল দুটো ধরে টিপে দিলো। দিয়েই সিরাজের হুশ পড়লো সে কি করেছে। ইন্দ্রারও ততক্ষণে বিস্ময়ে একহাত গালে পৌঁছেছে, চোখ সিরাজের দিকে স্থির।
সিরাজ এবার হাসি থামিয়ে আমতা আমতা করে বলল “চলো চলো এখন তাড়াতাড়ি না পৌঁছালে বিয়ে আর দেখতে পারবো না। এই বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বেরোনো মহা ঝামেলা শুধু এদিক ওদিক পড়ে যায়।” বলেই এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে হাত ঝাড়তে লাগলো।
ইন্দ্রা ফুঁসে ওঠে বললো ” আমি বাচ্চা..? গুণে গুণে দুই বছরের বড়ো আমি আপনার থেকে। ওকে..?”
সিরাজ গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বললো “বয়সে বড়ো হলেই যে বুদ্ধি বেশি হবে এমন তো কথা নেই। এই তোমাকেই দেখো না। আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি অনেক বড়ো কিন্তু তোমার থেকে তো সাত বছরের বাচ্চাও সাবধানে চলাফেরা করে।” বলেই সিরাজ আবার হাসতে লাগলো।
ইন্দ্রা আর নিতে পারলো না। সে মানছে সে একটু বেখেয়ালি তাই বলে এভাবে বলবে তাকে..? আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো হাতের কাছে কয়েকটা ছোটো ছোটো নুড়ি পেলো তাই তুলে মারলো সিরাজের দিকে।
সিরাজের গায়ে দুটো নুড়ি পাথর লাগতেই সিরাজ হাসি থামিয়ে বললো ” আরে আরে করছো টা কি..? বাচ্চাদের মতো নুড়ি পাথর ছুঁড়ছো কেনো..?”
ইন্দ্রা আরো দুটো নুড়ি ছুঁড়ে বললো “আগে আমায় বাচ্চা বলা বন্ধ করুণ তবে আমিও নুড়ি ছোঁড়া বন্ধ করবো।”
সিরাজ দুই হাত তুলে বললো ” আচ্ছা আচ্ছা আর বলবনা। কিন্তু এবার তো ওঠো এখানেই বসে থাকবে নাকি..?”
ইন্দ্রা উঠতে যেতেই পায়ে টান পড়লো মুচকে গাছে বোধহয়। সিরাজ এবার ধরলো না আর। ইন্দ্রা এবার রেগে তাকিয়ে বললো ” দেখতে পারছেন না আমি এখানে স্ট্রাগেল করছি..? মানবতার খাতিরেও তো মানুষ সাহায্যের হাত টা বাড়ায় নাকি..? শুধু খালি পিছনে লাগতে পারে…” এসব বিড়বিড় করে বলতে বলতে নিজে উঠে দাঁড়িয়ে এক পা এগোতে আবার পায়ে টান পড়লো ফলে পা টা হালকা বেঁকে গেলো। সিরাজ এবার হুট করেই ইন্দ্রার একটা হাত আর পিছন থেকে তাকে ধরলো। দিয়ে আসতে আসতে তাকে হাঁটিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল।
গাড়ি ঘুরিয়ে সিরাজ সিট বেল্ট লাগতে লাগাতে বললো “এখান থেকে ফার্মেসিতে গিয়ে আগে পায়ে ব্যান্ডেজ করবে , তারপর ঘরে যাবো। বাচ্চাদের মতো না না করবে না পায়ের অবস্থা বেশ খারাপ।”
ইন্দ্রা না বলবে ভেবেছিল কিন্তু সিরাজের কথা শুনে কথা পাল্টে বললো ” আপনি আবার আমায় বাচ্চা বললেন..? আমি যাবোনা আপনার গাড়িতে আমি নেমে যাচ্ছি।”
সিরাজ এবার ভড়কে গেলো সে ভাবেনি ইন্দ্রা এইরকম জেদ করবে। সে ইন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললো ” আচ্ছা আচ্ছা সরি বাবা আর বলবনা।”
ইন্দ্রা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সিরাজ আবার বললো “বলবনা বলছি তো তিন সত্যি। এবার তো বিশ্বাস করো।”
ইন্দ্রা এবার কিছু না বলে চুপচাপ জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকলো।
সিরাজ হাঁপ ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো ” পাগলকে পাগল বললেই খেঁপে যায়।”
__________________________________
বরযাত্রী আসতে বেশ অনেকটাই বেলা হয়েছে। তাদের বাড়ি থেকেও বেশ কিছু মেহমান এসেছে। চন্দ্রা ইন্দ্রাকে সিয়ার কাছে রেখে নিজে নীচে এসে সব মেহমানদের দেখশোনা করছিলো। সুইটি বেগম ঘরের দরজা আটকে বসে আছেন প্রতিদিনের মতো। চন্দ্রা একবার ডাকতে গিয়েছিলো তাকে। তিনি বলেছেন শুধু বিয়ে পড়ানোর সময় তাকে যেনো ডাকা হয় । চন্দ্রা তাই আর তাকে ডাকেনি সব নিজের হাতেই করছে।
____________________________________
অন্ধকার কুটুরির মতো ঘরটায় দরজা খোলার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হলো। আসতে আসতে দৃশ্যমান হলো একটি মানব গায়ে গাঢ় নীল শেরওয়ানি জড়ানো। চোখ মুখ ভীষণ কঠিন তাতে হিংস্রতা প্রকাশ পারছে। তাতেও যেনো কোথাও সৌন্দর্যতা ফুটে উঠছে।
একটা পকেটে হাত ঢুকিয়ে অন্য হাতে চাকুটা ঘোরাতে ঘোরাতে সামনে চেয়ারে বেঁধে রাখা লোকটির দিকে এগুলো চেয়ারের একপাশে হাত রেখে লোকটির দিকে একটু ঝুঁকে বললো “যা যা জিজ্ঞেস করবো সত্যি করে বলবি। নয়তো আজই শেষ রাত তোর জীবনে।” বলেই লোকটির মুখ থেকে খুলে দিলো কাপড়টা।
লোকটি হাঁপাতে লাগলো তাও থামলনা বললো ” আমি কিছু জানি না বিশ্বাস করুন। আমি সত্যিই কিছু জানি না। ওটা জাস্ট একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিলো ব্যাস। আআআআহহহহহ” বলতে বলতেই লোকটি হাতের দিকে তাকালো ঝড় ঝড় করে রক্তের বন্যা বইছে সেখান থেকে।
ভারী কন্ঠে আবার আওয়াজ এলো ” আগেই বলেছিলাম মিথ্যে বলবি না আমার সামনে। এর পরের কোপটা গলায় পড়বে।”
লোকটা ভয় পেলেও সেই একই কথা বলতে থাকলো সে কিছু জানে না। ছুঁড়িটার ধার গলায় একটু টের পেতেই কেউ চেঁচিয়ে উঠলো ” সিয়াম দাঁড়া।”
সিয়াম পিছন ফিরে দেখলো পিয়াস দাঁড়িয়ে। সিয়াম বিরক্ত হয়ে বলল ” কি..?”
পিয়াস বললো তাড়াতাড়ি চল বরযাত্রী এসে গেছে তোকে ভাবী এক্ষুনি ডাকলো।
সিয়াম চাকুটা লোকটার গলা থেকে নামিয়ে বললো “তোকে আমি এসে দেখছি। তোর ওই হাত আগে বাদ দেবো আমি। ওই হাত বড্ডো লম্বা তোর নইলে কি আর সিয়ামের চন্দ্রাবতীর দিকে হাত বাড়াস..?” বলেই আরেক হতে চাকু দিয়ে কোপ দিলো। লোকটা আবার চিৎকার করতেই সিয়াম পিয়াসকে ইশারা করলো। পিয়াস এসে লোকটার মুখে কাপড় বেঁধে দিলো।
সিয়াম এবার বললো “একে দিয়ে দিয়ে কিছু হবে না এর মেয়েকে তুলে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা কর পিয়াস।”
পিয়াস ঘাড় নাড়ালো। সিয়ামের এইরূপকে সে বেশ ভয় পায়। একরূপে সে যেমন নরম, মিষ্টিভাষী, ওপর রূপে তেমনি হিংস্র, কঠিন। পিয়াস জানে এই পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে বাইরের মানুষ তাকে। বাবা মা মারা যাওয়ায় পর যখন সে পারিবারিক ব্যাবসায় জয়েন করলো তখন থেকেই তার উপর মাঝে মাঝেই হামলা হতো। অনেক কোট কাছারি করেও যখন কোনো লাভ হলো না। সিয়াম তখন ঘুরে প্রহার করা শিখল। শক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ালো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এখন তাকে আর কোর্টে যেতে হয় না। সে নিজেই নিজের দোষীদের সাজা দেয়। তবে বড়োকোনো অপরাধ না করলে সিয়াম কখনই কারোর প্রাণ নেয়না। আর না তাদের পরিবারের মানুষদের জোরায় তাদের কোনো বিষয়ে।
এবারে লোকটির গলায় চাকু আর তার মেয়েকে তুলে আনার কথা শুনে বেশ অবাকই হলো পিয়াস। সিয়াম তো এইরকম কোনোদিন করে না তাহলে আজ কেনো..?
পিয়াস দরজা বন্ধ করে ছুটে গেলো সিয়ামের পিছনে। সিয়াম গিয়ে হুইচেয়ারে বসতেই পিয়াস সেটা পিছন থেকে ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো “তুই হটাৎ লোকটাকে প্রাণে মেরে ফেলতে গেলি..?আর আর তার মেয়ে কে নিয়ে আসতে বলছিস যে..? সত্যি লোক পাঠাবো..?”
সিয়াম মুখ কঠিন করেই বললো ” না। লোকটাকে আমি শুনিয়ে বললাম শুধু কথাটা। এরপর সে কিছু লুকোতে চাইলেও পারবে না। আর মেরে আমি কখনোই ফেলতাম না তাকে ওটা শুধু জাস্ট ভয় দেখালাম।”
পিয়াস উত্তর দিলো না তবে মনে মনে খুশি হলো এটা ভেবে সে একটু হলেও এইরূপের সিয়ামকে চেনে। সে জানতো সিয়াম বড়ো কোনো ক্ষতি করবেনা লোকটার।
______________________________
অপূর্ব আর সিয়ার বিয়েটা সুসম্পন্ন হয়েছে ভালো ভাবে। বিয়ের সময় সবাই উপস্থিত ছিলো। এখন খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলছে। অপূর্বকে সিয়ার পাশে বসানো হয়েছে।
অপূর্ব বার বার দেখছে সিয়াকে। কি সুন্দর লাগছে আজ মেয়েটাকে তার চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়ছে। কিন্তু এত সৌন্দর্যতা সে উপভোগ করতে পারছে না। পাকা দেখার পর থেকেই মেয়েটা তার সাথে কথা বলছেনা। অপূর্ব বুঝতে পারছে না হটাৎ করে সিয়ার কি হলো। সে সুযোগও পাচ্ছে না যে জিজ্ঞেস করবে। এতো কিছুর মাঝেই তার সবথেকে বেশি খুশি লাগছে এটা ভেবে এবার যতোই মনোমালিন্য হোক সিয়া অন্তত তার কাছে বাঁধা থাকবে।
হুট করেই সে হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলো এই বিশেষ দিনে, এই চাঁদের কখনও কোনরকম হেলেফেলা সে হতে দেবেনা।
দেখতে দেখতে বিদায়ের পর্ব চলে এলো। সুইটি বেগম নতুন জীবনের শুভ কামনা করে নিজের রুমে চলে গেলেন। সিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো, এর বেশি সে আশাও করে না।
এরপর সিয়ামের কাছে যেতেই সিয়া হাঁটু ভাঁজ করে বসে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। এই মানুষটাকে সে একটু বেশিই ভালবাসে। ছোটো থেকেই বাবা – মা দুজনেরই ভালবাসা তাকে দিয়েছে এই মানুষটা। তার সব আবদার ইচ্ছে গিয়ে শেষ হতো এই মানুষটার কাছে। হতো বলছে কি এখনও হয়।
সিয়াম সিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বললো “নতুন জীবনে সব কিছু নিজের মনের মত সাজিয়ে নিস। সবার অতীত থাকে জীবনে কিন্তু সেই অতীতকে টেনে এনে নিজের বর্তমান ভবিষ্যত নষ্ট করিস না। আর কক্ষনও এই বাড়িতে আসার সময় নিজেকে অতিথি ভাববি না। তুই এই বাড়ির মেয়ে ছিলি আছিস আর থাকবি। এই বাড়ির দরজা তোর জন্য সর্বদা খোলা কেউ কোনো কৈফিয়ত চাইবে না এখানে তুই কেনো কি কারণে আসলি। তোর রুম তোরই থাকবে সেটায় শুধু তোর অধিকারি থাকবে। আর অপূর্ব বিষণ ভালো ছেলেরে একটা সুযোগ দিয়ে দেখিস ওকে। এই ভাইয়ার কথা শোন তুই কোনোদিন নিরাশ হবি না।”
সিয়া ঘাড় নাড়লো। কান্নার জোরে সে কিছু বলতে পারছে না। উঠে সিরাজের কাছে গেলো। সিরাজ হালকা হেসে বললো ” গাড়ি রেডি রাখছি আমি। গেলেই তো তোকে তোর শশুরবাড়ীর লোক কালকের মধ্যে বাড়ি পাঠিয়ে দেবে । তাই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”
সিয়া ঠোঁট চেপে কান্না আটকে সিরাজের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সিরাজ কান্না আটকালো তার দুর্বল হলে চলবেনা মেয়েটা আরো কাঁদবে। তার বুক টা যে ফেটে যাচ্ছে। মেয়েটা তার থেকে কতো দূরে চলে যাচ্ছে। চাইলেও আর যখন তখন তার পিছনে লাগতে পারবে না। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া মারপিট করতে পারবে না। হুট হাট কারোর চকলেট চুড়ি করে খেতে পারবে না। কেউ তাকে এদিক ওদিক ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার আবদারও আর করবেনা।
সিয়া সিরাজকে ছেড়ে চন্দ্রার গালে হাত দিয়ে বললো ” এই সংসারটা দেখে রেখো ভাবী। আর আমার ভাইয়াকেও এভাবেই আগলে রেখো। পরের বাড়ি যাচ্ছি ভেবে পর করে দিও না। তুমি আমার সই সই-ই থাকবে।” চন্দ্রা এবার কেঁদে সিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
সিয়া ইন্দ্রা আর পিয়াসের থেকেও বিদায় নিলো। তারাও সিয়ার ভীষণ আপন।
সিয়া গাড়িতে ওঠার সময় পিছন ফিরে বাড়িটাকে একবার প্রাণভরে দেখলো। এই বাড়ির আনাচে কানাচে তার কতশত স্মৃতি। তার প্রিয় রুম ছোট্ট ব্যালকনি সব ছেড়ে আজ নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন জিনিস আপন করে নেবে সে। আচ্ছা তাদের কি কষ্ট হবে না..? আজ থেকে তারা আর সিয়াকে প্রতিদিন দেখতে পাবে না তার স্পর্শ পাবে না। তাদের কি মন কাঁদবে না সিয়ার মতো..?
.
.
.
সিয়াকে বিদায় দিয়ে সবাই ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো। সবারই মন ভীষন ভার হয়ে আছে। আজ কিছু মেহমানরা থাকবে এখানে। চন্দ্রা আর ইন্দ্রা মিলে সবার খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করলো। সবাইকে দেখতে পেলেও চন্দ্রা সিরাজকে দেখতে পেলো না। সবাই খেতে বসায় চন্দ্রার উপর ভর পড়লো সিরাজকে ডাকার। চন্দ্রা কথা না বাড়িয়ে সিরাজকে ডাকার উদ্দেশ্যে তার রুমের দিকে পা বাড়ালো।
সিরাজের রুমের একটু কাছে যেতেই চন্দ্রা দেখলো সিরাজ অচেনা একটা মেয়েকে টেনে তার রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
চন্দ্রার এবার রাগে গা ঘিন ঘিন করে উঠলো। তার মানে সিরাজ এখনও পাল্টায়নি..? সবই কি তার নাটক শুধু তার দিভাইকে পটানোর জন্য..? চন্দ্রা আর ভাবতে পারলো না নীচে নেমে গেলো সিড়ি দিয়ে।
#চলবে..?