বেড়াজাল পর্ব-২৫+২৬

0
555

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৫

চন্দ্রা আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলো কিন্তু তার আগেই দরজায় টোকা পড়ার আওয়াজ পেলো দুজন।
চন্দ্রা সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম উঠে গিয়ে হুইচেয়ারে বসলো। চন্দ্রা উঠে গিয়ে দরজা খুলতে উদ্যত হলো।

দরজা খুলতেই চন্দ্রা অপূর্ব আর সিরাজকে দেখতে পেলো।
চন্দ্রা বেশ অবাক হলো দুজনকে এই সময় দেখে। একনজর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৯:১৫।
সিয়াম ভিতর থেকে বাইরে এসে প্রশ্ন করলো “আরে তোরা এতো রাতে..?কোনো দরকার..?”
অপূর্ব চন্দ্রাকে পাশ কাটিয়ে সিয়ামের কাছে গিয়ে বলল “আরে দেখনা এসেছিলাম সিয়ার সাথে দেখা করতে, তার মন ভালো নেই বলে সিরাজ এখন আমায় ছাড়ছেনা। বলছে নাকি এখন ছোট্ট করে পার্টির আয়োজন করবে বাগানে।”
সিয়াম প্রথমে বারণ করবে ভাবলো। এমনিও তার আর চন্দ্রার কারোরই এখন মন মেজাজ তেমন ভালো নেই। তারপর ভাবলো সিয়া চন্দ্রা সবারই একটু ফ্রেশ এয়ারের দরকার। তাই সেসব ভেবে সিয়াম বললো “আচ্ছা তাই বেশি কিছু না করে ছোটোখাটোর মধ্যে কিছু আয়োজন কর। আর অপূর্ব আজ রাতে আর বাড়ি ফিরবি বলে জেদ করিস না সিরাজের সাথে থেকে যা।”

অপূর্ব এবার বললো ” তা কি করে হয়। কাল সকালেই আমায় বেরোতে হবে আর্জেন্ট।”
চন্দ্রা এবার পাশ থেকে মিষ্টি হেসে বললো ” তাতে কি ভাইয়া আজ রাত থেকে কাল আমার হাতের ব্রেকফাস্ট করে নয় সবাই একসাথে কাজের জন্য বেরোবেন।”
অপূর্ব এবার গলা ঝরার নাটক করে বললো “আহেম আহেম ভাবীজানের আদেশ অমান্য করলে সিয়াম যদি আবার আমার গর্দান নেয়, না না বাবা আপনার আদেশ শিরোধার্য ভাবীজান।”
অপূর্বের কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই হেসে দিলো।
তারপর একমুহুর্ত দেরি না করে সিরাজ অপূর্বকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল “চ আর কতো দেরি করবি..? সব আয়োজন কিন্তু আমাদেরই করতে হবে।”
চন্দ্রা সেই দেখে হেসে সিয়ামের দিকে ফিরলো। সিয়াম আগে থেকেই চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় চোখাচোখি হোল চন্দ্রা ইতস্তত করে চোখ সরিয়ে নিয়ে সিয়ামকে বললো “আমার আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি আছে। যদি আপনি..”
সিয়াম কথা শেষ করার আগেই বললো “সব দেবো। তবে আমার তোমারও হেল্প লাগবে এই কাজে” চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “আমার..?”
আর করোর কিছু বলার আগেই সেখানে সিয়া আর ইন্দ্রা এসে উপস্থিত হলো। ওদের দেখে সিয়াম চন্দ্রা কেউই আর কথা বাড়ালো না।
সিয়াকে দেখেই বোঝা গেলো তার মন খারাপ। সে এসেই চন্দ্রার হাত ধরে বললো ” তুমি আগে জানাওনি কেনো ভাবী যে আতিফের বিয়ে সামনে..?”
চন্দ্রা আমতা আমতা করে সিয়ামের দিকে তাকালো। সিয়াম চন্দ্রাকে দেখে সিয়াকে নিজের কাছে ডাকলো। সিয়া চুপচাপ গিয়ে সিয়ামের কাছে বসলো।
সিয়াম সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ” তখন তুই সেটা শুনলে নিজের সাথে আরো খারাপ কিছু করে ফেলতি সিয়া। তোর ভাবী জেনে শুনেই তোকে বলেনি। আর তুই কথা থেকে জানলি..? এই জন্যেই কি আজ তোর মন খারাপ..?”
সিয়া হালকা হাসলো সেই হাসতে বিষণ্ণতা স্পষ্ট। সেখানে থাকা প্রত্যেকটা মানুষের তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না।
সিয়া ওভাবেই বললো “সব টুকু তো মেনেই নিয়েছিলাম ভাইয়া। তাও সে এমনটা কেনো করলো..? তার আর আমার কমন ফ্রেন্ডদের বলেছে আমি নাকি তাকে ছেড়ে দিয়েছি, বাজে ব্যবহার করেছি। তারা আমায় ফোন করে জানাচ্ছে এসব, কি এমন ক্ষতি করেছিলাম ভাইয়া ওর..?আমি শুধু ভালোবেসেছিলাম আর এটাই কি আমার অপরাধ..?”

” ভালোবাসা অপরাধ না তবে ভুল মানুষকে ভালবাসা জঘন্য অপরাধ ”
অপূর্ব রমরমা কণ্ঠে পিছন থেকে বলে উঠলো। সবাই ফিরে অপূর্বর দিকে তাকালো।

সিয়াম এবার বললো “সত্যি বেশিদিন চাপা থাকে না সিয়া। তুই শুধু পাপের হিসাব রাখ, তার বিচার উপরওয়ালা করবেন।”
সিয়া মাথা নাড়ালো বাকিরা তাড়া মারতে সবাই এসে পৌঁছালো সিয়মদের বাগানের একপাশে।
কমসময় হলেও অপূর্ব আর সিরাজ সুন্দর করে সাজিয়েছে চারিদিক বেশ লাইট নীচে সুন্দর করে কার্পেট বিছানো। আর সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে বাগানের মধ্যে ছোট্ট সাইজের পুল যাতে সচ্ছ নীল জল। যদিও সেখানে শুধুই মাছ থাকে। এমনি সময় ছোটো লাইট জ্বলে সেখানে, বড়ো কোনো অনুষ্ঠান হলে তবে পাশের বড়ো লাইট গুলো জ্বালানো হয়। আজ সেই লাইট জ্বালানোয় চারদিক ঝলমল করছে তারমধ্যে সিরাজ আবার একটা ব্লুটুথ স্পিকারে গান চালিয়ে দিয়েছে আসলেই একটা পার্টি পার্টি ফিলিংস আসছে সবার মধ্যে। একমাত্র সিয়াই প্রাণহীন জড়বস্তুর মতো বসে আছে।
চন্দ্রার সিরাজকে ভালো না লাগলেও আগের মত চক্ষুশূল লাগে না। সিরাজও যেমন ওকে এড়িয়ে চলে চন্দ্রাও তেমনটাই করে।
সিরাজ এবার কিছু বলতে যাবে তখনই ইন্দ্রা বললো “দাঁড়াও সবাই আমি হালকা কিছু খাওয়ার নিয়ে আসি সবার জন্য, নইলে কেমন খালি খালি লাগবে সব।” বলেই সে চলে গেল ভিতরে রান্নাঘরে।
সিরাজও এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো “আমিও তাইলে ফ্রিজ থেকে কিছু কোল্ডড্রিংকস নিয়ে আসি।”
সিয়াম মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো। অপূর্ব জোরেই হেসে দিলো বললো ” হ্যাঁ হ্যাঁ সেতো অবশ্যই দেখিস তুই আবার জমে যাস না গিয়ে।”
সিরাজ সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে একটা হাসি দিয়ে বললো “তোকে আমি পরে দেখছি মাথা খারাপের ডাক্তার।”
অপূর্ব এবার হাসিটা কমিয়ে সিয়ার দিকে নজর দিল। নাহ্ মেয়েটা আগের মতোই বসে আছে মানে সিরাজের কথা শোনেনি এই ভেবে একটা নিশ্বাস ফেললো।
চন্দ্রা পুরোটা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলো। তারমানে তার সন্ধেহই আসতে আসতে সত্যিতে রূপ নিচ্ছে।
.
.
সিরাজ রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো ইন্দ্রা মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিরাজ উঁকিঝুকি মেরে দেখলো প্লেটে কতকগুলো পোড়া পকোড়া শুধু।

সিরাজ এবার হেসে পিছন থেকে বললো “তোমার রূপের আগুনে এগুলোও ঝলসে গেছে দেখছি।”
ইন্দ্রা চমকে পিছনে তাকালো সিরাজকে দেখতে পেয়ে তার মেজাজ যেনো পারদের মতো চড়লো।
ইন্দ্রা পাশ থেকে একটা খুন্তি নিয়ে সিরাজের দিকে তাক করে বললো “আপনার জন্যই হয়েছে সব দায় আপনার ওইসময়ে যদি আপনি ওমন ষাঁড়ের মতো না চেঁচাতেন তাহলে এইরকম হতো না”
সিরাজ হালকা পিছনে ঝুঁকে বললো “এটা ঠিক না ইন্দ্রা রান্না পোড়ালে তুমি আর তার দায়ও কিনা আমার..?”
ইন্দ্রা চেঁচিয়ে বললো “হ্যাঁ যত খারাপ কাজ হয় সব দায় আপনার আপনিই দায়ী বুঝেছেন।”
সিরাজ এবার খুন্তিটা সরিয়ে ইন্দ্রার দিকে ঝুঁকতেই ইন্দ্রা পিছিয়ে সিংকে লেগে হালকা দেহের অগ্রভাগ পিছিয়ে গেলো।
সিরাজ যথাযথ দূরত্ব রেখে ইন্দ্রার চোখে চোখ রাখল। একহাত ইন্দ্রার পিছনে আরেক হাত ইন্দ্রার একপাশে রেখে বললো ” এতো খারাপ কাজের মাঝে মন চুরির করার দায়ও তো কখনো দিতে পারো। তার দায়ভার নয় আমিই নেবো।” এইটুকু বলে মুচকি হেসে ফ্রিজ থেকে কোল্ডড্রিংকসটা নিয়ে চলে গেল সিরাজ।

ইন্দ্রা তখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কি বলে গেলো লোকটা তাকে..? ইন্দ্রা এতটাই অবুঝনা যে একটা ছেলের চাহনি কথাবার্তা বুঝবে না। কিন্তু তার ভয় হয়। তাদের সম্পর্ক লোকসমাজে মেনে নেবে..? সিরাজের থেকে সে গুণে গুণে দুই বছরের বড়ো। সে জানে এসব এখনকার দিনে ম্যাটার করে না। কিন্তু সিরাজের মা..? তার বাবা আর বোন..? এরা কি মেনে নেবে..? শেষ পরিণতি কি এই সম্পর্কের..? সে নিজেও সিরাজের প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়েছে কটা দিনে। যা সে নিজের মনের কাছেও প্রকাশ করতে চায় না। এসব ভাবতে ভাবতে পিছনে ঘুরতেই দেখলো একটা রেডিমেট ফ্রইসের প্যাকেট। তারমানে সিরাজ তখন এইটার জন্য তার পিছনদিকে হাত বাড়িয়েছিল।
ইন্দ্রা এবার মুচকি হাসি দিয়ে সেগুলো ঝটপট ভেজে নিয়ে গার্ডেনের দিকে গেলো।
.
.
আড্ডা বেশ জমে উঠেছে সবার সবাই সবার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টায় আছে। এরই মধ্যে অপূর্ব বললো সিয়াম ভাই একটা গান ধর। কলেজে আমরা কতো প্রোগ্রাম করেছি একসময়।
সিয়াম হাসলো একসময় তারা কলেজে বিখ্যাত গানের গ্রুপ ছিলো। নিজের কলেজে ছেড়েও বিভিন্ন জায়গায় প্রগ্রাম করেছে সে। কিন্তু সময়ের স্রোতে সব কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো।
সিয়াম বারণ করলো না উল্টে সিরাজকে বললো ভিতরের রুম থেকে তার গিটারটা আনতে। সিরাজ বিনাবাক্যে গিয়ে সিয়ামের গিটার টা এনে দিল।
সিয়াম এবার কিচ্ছুক্ষণ নিজের মতো টুংটাং করে গিটার হতে সেট করে নিয়ে গান ধরলো………

Chand si mehbooba ho meri
Kab aaisa maine socha tha..(2×)
.
Haan tum bilkul waisi ho
Jaisa maine socha tha…

চন্দ্রা এতোক্ষণ ইন্দ্রার সাথে টুকটাক কথা বললেও গান শুরু হতেই সিয়ামের দিকে তাকালো। সিয়াম তার দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে গান গেয়ে চলেছে।
চন্দ্রার মনে পড়লো সেই দিন গুলোর কথা তার প্রবল ইচ্ছার সত্বেও তাকে বাবা গিটার শেখার পারমিশন দেয়নি। এইদিকে কিনা তার বরই এতো সুন্দর গিটার বজায়..? চন্দ্রা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে এসব ভাবতেই হটাৎ আবার কানে ঠেকলো সেই সুর…..

Aaisa hi roop khayalon mein tha
Jaisa maine socha tha..
.
Haan tum bilkul waisi ho
Jaisa maine socha tha…….

সিয়ানের তাকানো দেখে ইতিমধ্যে সব মিটিমিটি হাসা শুরু করে দিয়েছে এমনকি বাদ যায়নি সিয়াও। সেও এখন নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছে।
সিয়াম হেসে গান শেষ করলো চন্দ্রাও সবার দিকে তাকিয়ে লজ্জায় নিজের চিবুক নামলো। ইস লোকটা তাকে সবার সামনে লজ্জা দিতেও ছাড়ে না।

সিয়াম ভালোই বুঝলো তার লজ্জা দেওয়ার টেকনিকটা বেশ সফল হয়েছে। লজ্জায় চন্দ্রার গাল যখন লাল হয়ে যায় সিয়ামের ইচ্ছে করে টুক করে গিয়ে একটা কামড় বসাতে। এইযে এখন যেমন মন চাইছে। সিয়াম নিজের ভাবনায় নিজেই ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।

এরপর শুরু হলো নামের লড়াই.. সিরাজ শর্ত রাখলো নামের লড়াইয়ে মানুষের নাম ছাড়া সব নামই বলা যাবে। সবাই প্রথমে এরম উদ্ভট শর্ত নিয়ে মাথা ঘামালেও ব্যাপারটা যে শুধু সিয়ার মুখে হাসি ফোটানো সেই বুঝে সবাই রাজি হলো।
অপূর্ব বললো আমি আগে বলছি “পেঙ্গুইন ” সবাই হেসে দিল।
নাও এবার সিয়া বলো ” ন ” দিয়ে। সিয়া থতমত খেলো সে ভাবেনি অপূর্বের পরেই তাকে বলবে।
অপূর্ব সিরাজ তারা লাগলো কাউন্ট করা শুরু করলো সিয়া আর কিছু না পেয়ে বললো “হ্যাঁ নেংটি ইঁদুর ”
সবাই আবার হেসে গড়াগড়ি খেলো। তা দেখে সিয়াও হেসে দিল।
নাচ গানে খেলায় এই দুইঘন্টা সবার ভীষণ আনন্দে কাটলো। সারারাত এইরকম মজা করার ইচ্ছে থাকলেই নিজেদের ইচ্ছেতে মাটি চাপা দিয়ে সবাই ঠিক করলো আবার অন্যদিন। কারন পরেরদিনই সবার অফিস চন্দ্রার ক্যারাটে স্কুল সব আছে। সিয়াও জানালো কাল থেকে সে অফিসে জয়েন করবে নিজেকে আর ঘরবন্দী করে রাখবে না। সবাই বেশ খুশি হলো, যতই হোক আজ আয়োজনটা সবাই সিয়ার এই হাসি মুখটা দেখার জন্যই করেছে।

_________________________________

রাত ১২ টা।

সবাই ডিনার শেষ করে যে যার ঘরে চলে গেছে। সিয়াম ঘরে এসে দেখলো চন্দ্রাও বিছানা ঝেড়ে শোওয়ার প্রস্তুতি করছে। সিয়াম আগের মত দরজা ভালো করে লক করে পর্দা টেনে বিছানার একসাইডে বসলো। চন্দ্রাকে তাও তার দিকে মনোযোগ দিতে না দেখে গলা ঝাড়ল।
চন্দ্রা তখনও না তাকিয়ে পাশে রাখা জলের গ্লাস বাড়িয়ে দিল সিয়ামের দিকে।
সিয়াম এবার বেশ বিরক্ত হলো। চন্দ্রার হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে বললো “চন্দ্রা আমি জল চাইনি।”
চন্দ্রা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল ” তাহলে কি ওষুধ দেবো গলা ধরেছে আপনার..?”
সিয়াম এবার হতাশ হলো। কই থেকে কথা কই নিয়ে যায় এই মেয়ে।
সিয়াম এবার না পেরে চন্দ্রার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে এসে বললো ঘোর মেশানো কণ্ঠে বললো “এখনো ক্ষমা করনি চন্দ্রাবতী..?”
চন্দ্রার মনে আর দ্বিধা দ্বন্দ নেই তাও সিয়াম যখন নিজে থেকে বলছে তখন কিছু ফায়দা নেওয়াই যায় এইরকম সুযোগ ছাড়া ঠিক না।
চন্দ্রা সিয়ামের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো “ক্ষমা করতে পারি তবে এক শর্তে।”
সিয়াম শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো “তুমি যা বলবে তাই করতে রাজি চন্দ্র, শুধু ক্ষমা করে দাও আমায়। আমার প্রাণ চাইলেও..” চন্দ্রা মুখ চেপে ধরলো তার ডান হাত দিয়ে। এই প্রথম চোট লাগার পর তার ডান হাতকে সে কোনো কাজে লাগালো। তাও এই লোকটার উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বন্ধ করার জন্যে। ভেবেই চন্দ্রার রাগ লাগলো। এভাবে বলার কি আছে..?
চন্দ্রা কথা না বাড়িয়ে গিটারটা এনে বিছানায় রাখলো তারপর দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকের কাছে ভাঁজ করে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো “নিন শেখান তবেই ক্ষমা করব।”
সিয়াম অবাক হয়ে বললো “এতো রাতে..? কাল শিখিয়ে দেবো চন্দ্র এখন ঘুমোবে চলো।” চন্দ্রা জেদ ধরলো না তার এখনই শেখা লাগবে।
সিয়াম বেচারা আর কি করবে বউয়ের আবদার তাকে এখনই শেখাতে হবে।
সিয়ামকে রাজি হতে চন্দ্রা দেখে, গিটার নিয়ে সিয়ামের পাশে বসতে যেতেই সিয়াম একটানে চন্দ্রাকে নিজের কলার উপর বসিয়ে দিলো।
চন্দ্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “এটা কি হলো..? এভাবে কিভাবে শেখাবেন আপনি..?”
সিয়াম বাঁকা হেসে বললো “সে আমার দায়িত্ব আমার কাছে শিখতে চেয়েছো যখন আমার মতন করেই শিখতে হবে।”

চন্দ্রাও আর কথা না বাড়িয়ে শেখাতে মনোযোগ দিলো।

হাতে গোনা মিনিট পাঁচক সব ঠিকঠাক মত চললেও সিয়াম এবার মুখ ডোবালো চন্দ্রার চুলে। চন্দ্রাকে কাছে টানা মাত্রই তার চুল খুলে গিয়েছিলো। আর সেখান থেকেই ভেসে আসা মাতোয়ারা গন্ধ কখন থেকে সিয়ামকে টানছিল শেষ মেশ সে থাকতে না পেরে কাজটা করেই ফেললো।
চন্দ্রা অনুভব করলো তারও গিটারে হাত থেমে গিয়েছে। হালকা মাথাটা সরিয়ে বললো “এই আপনার গিটার শেখাবার ধরণ হ্যাঁ…”
সিয়াম এবার চুল ছেড়ে চন্দ্রার কাঁধের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে নেশালো গলায় বললো “বাকিটা আবার কাল শেখাবো চন্দ্রাবতী। চলো আজ তোমায় অন্যকিছু শেখাই।”

চন্দ্রাও আর কিছু বলতে পারলো না। ইতিমধ্যে ঘন ঘন শ্বাস ফেলা শুরু করেছে সেও। সিয়াম আসতে করে গিটার টা বেডের পাশে হেলান দিয়ে রেখে ডুব দিল চন্দ্রার মাঝে। শাড়ির আঁচল নামানোর আগেই চন্দ্রা হাত আটকে দিলো সিয়ামের। সিয়াম জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালে। চন্দ্রা শুধু চোখ এদিক ওদিক করলো।

সিয়াম হালকা হেসে সরে গিয়ে পাশে টেনে চন্দ্রকে নিজের বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো “তোমার অনুমতি ব্যতীত কিছুনা, কক্ষনও না।
বাই দা ওয়ে হ্ট ব্যাগ লাগবে..? এনে দেবো..?”
চন্দ্রা সিয়ামের বুকে মুখ লুকিয়ে মাথা নাড়ালো। সিয়াম চন্দ্রার চিবুক তুলে ঠোঁটে একটা গাঢ় চুম্বন এঁকে বললো “আমার থেকে কিছু লুকবেনা চন্দ্রাবতী। এমনকি ছোটো থেকে ছোটো বিষয়ও না। আর লুকলেও আমি তোমার চোখ পড়তে জানি এমনিও বুঝতে পারবো।”
চন্দ্রা হাসলো আসলেই এই মানুষটাকে ভালো না বেশে থাকা যায়না, যেমনটা সে পারেনি।

____________________________________

সকালে উঠে সবাই হাসি মজা করেই ব্রেকফাস্ট সরলো। তারপর যে যার কাজে বেরিয়ে গেলো। পরে থাকলো শুধু সিয়া আর চন্দ্রা। ইন্দ্রাও দরকারি কাজে বের হয়েছে
সকাল সকাল।
চন্দ্রাও সিয়াকে শুভকামনা জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো। সিয়া চেয়ার থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরোতে যাবে সেইসময় সুইটি বেগম নামলেন নীচে। সিয়া উপেক্ষা করে বেরোতে গেলে তিনি গম্ভীর গলায় ডাকলেন “সিয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। এখানে বসো একটু।”

সিয়ার মুখে লাগতে ইচ্ছে হয়না এই মহিলার। তাই চুপচাপ গিয়ে সুইটি বেগমের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলো।
সুইটি বেগম কতগুলো ছবি হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে বললেন “দেখো দেখে বলো কাকে পছন্দ আমি কিছুদিনের মধ্যেই তার সাথে বিয়ে ঠিক করবো। মুখে তো চুনকালি মাকিয়েই দিয়েছো আরো মাখানোর আগে বিদেয় হও।”

সিয়া বেশ আহত হলো শুনে। কিছুক্ষন ফোটো গুলো দেখে বললো “আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাইছি না। আর এই ছেলেগুলোকেও পছন্দ হয়নি আমার। আমায় একটু সময় দাও।”
সুইটি বেগম গর্জে উঠলেন “সময় দিতে পারবনা। বিয়ে তোমার কিছুদিনের মধ্যেই হবে। নিজের পছন্দের কেউ থাকলে জানিও যদি ঠিকঠাক লাগে আমার তবে কথা এগোবো আর নয়তো আমার পছন্দের ছেলের সাথেই হবে।” বলেই গটগট করে তিনি উপরে চলে গেলেন।

সিয়া থম মেরে বসে রইলো। তার সাথেই কেনো হয় সবসময় এসব..? একটা ঝড় পারতে না পেরোতেই আরেকটা ঝড়। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। সেসব দিকে সে পাত্তা দিলো না এসব এখন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। পাশ থেকে ফোন তুলে কাঁপাকাঁপা হাতে একটা নাম্বার ডায়েল করলো।
ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই সিয়া কেঁদে বললো “এক্ষুনি একবার দেখা করতে পারবে..? প্লিজ প্লিজ।”

#চলবে..?

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২৬

একটা নিরিবিলি কফিশপে সিয়া মাথা নীচু করে বসে আছে। সামনের মানুষটি একবার হাত ঘড়ি দেখলো তারপর আবার সিয়ার দিকে তাকালো সিয়া তাকে ডেকে আনার পর কুড়ি মিনিট অতিক্রম হতে চললো তাও সিয়া একইরকম ভাবে বসে আছে। সামনের মানুষটি সব বাদ দিয়ে মৃদু স্বরে ডাকল ” সিয়া ”

সিয়া মাথাটা তুললো তার চোখ দুটো টকটকে লাল। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললো ” আমায় বিয়ে করবে অপূর্ব..?”

অপূর্ব আকাশ থেকে পড়লো। সে কি দিনেও এসব স্বপ্ন দেখছে..?
যাহ নাহ্ নিজের মনকে কষিয়ে ধমক দিল। দিয়ে বললো ” কি বলছো সিয়া ভেবে বলছো…? হটাৎ বিয়ে..?”

সিয়া এবার কাঠ গলায় উত্তর দিলো “এতকিছু বলতে পারবো না শুধু উত্তর দাও পারবে কি না..? নইলে আমি মায়ের পছন্দের ছেলে দেখে বিয়ে করে নেবো।”

অপূর্ব চমকালো। সিয়ার প্রস্তাবটা ঠিক তার কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো, তাই তার বিশ্বাস করতে অসুবিধা হচ্ছিলো একটু। নিজেকে সামলে বললো ” কিন্তু তুমি আমার কিংবা আমার ফ্যামিলির ব্যাপারে কিছু জানো না সিয়া। আর আমাকে একটু সময় দাও। হুট করে আমি বলে দিতে পারি না।” আসলেই তার সিয়ামের সাথে কথা বলা জরুরী এই বিষয়ে। নইলে সে পারলে এক্ষুনি সিয়াকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে পারে। তার ঘরের কেউ কোনো আপত্তি জানাবে না এই বিষয়ে। কিন্তু সে হুটপাট সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। সসম্মনানে ঘরে তুলতে চায় তার মনের রাণীকে।

সিয়া পুনরায় বললো “আমার জানার দরকার নেই কিচ্ছু। এক সপ্তহ সময় দিলাম ভেবে বলো এর মধ্যে বিয়ে করতে পারলে ভালো নয়তো আমি মায়ের কথা মতোই বিয়ে করে নেবো অন্যকোথাও। ভেবে বলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।” বলেই দেরি না করে কাঁধে ব্যাগ উঠিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

অপূর্ব বসে রইলো। খুশি হওয়ার কথা হলেও খুশি হতে পারলনা তেমন সে। সিয়া তাকে বিয়ে করবে বলছে ঠিকই তবে তাতে একফোঁটাও ভালবাসা নেই। শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে এইভাবে কি সংসার হবে তাদের..?

সিয়া বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার বাস ধরার জন্য দাঁড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো হালকা মেঘ করেছে। দৃষ্টি ফেরালো সিয়া সে আর অচেনা কোনো পুরুষকে জীবনে জড়াতে চায় না তাই এই সিদ্ধান্ত। যদিও অপূর্বকে সে পুরোপুরি চেনে না তবে সিয়ামের বন্ধু মানে অনায়াসে ভরসা করাই যায়। তারপর এখন তারা ভীষন ভালো বন্ধু..সিয়ার মনে হলো সংসার করতে হলে এখানেই সে চেষ্টা করতে পারবে। অপূর্বকে এতদিনে এইটুকু সে চিনিছে। আদেও চিনেছে..? একটা মানুষটাকে এতো বছর ধরেও চিনতে পারলো না আর আরেকজনকে এই কয়েকটা দিনেই চিনে ফেললো। ব্যাপারটা সিয়ার কাছেও বেশ হাস্যকর।

_______________________________

সিয়াম জরুরী কল করে চন্দ্রাকে ডাকিয়ে আনলো তার অফিসে। চন্দ্রা আসতেই একজন বললো সে তার রেস্ট রুমে আছে। চন্দ্রা গিয়ে সেখানে একবার নক করতে ভিতর থেকে ভরাট গলায় উত্তর এলো ” কাম ইন ” চন্দ্রা বেশ অবাক হলো সিয়াম এই গলায় কক্ষনও বাড়িতে কথা বলে না কারোর সাথে।
দরজা টা খুলতেই দেখলো সিয়াম আগের দিনের মতো সামনের দিকে ডেস্কে হেলান দিয়ে বসে কিছু ফাইল দেখছে।
চেনা পরিচিত কড়া পারফিউমের মিষ্টি গন্ধটা বাতাসে ভেসে নাকে আসতেই মাথা তুলে তাকালো সিয়াম। সামনে চন্দ্রাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। কিছুক্ষন দেখে চন্দ্রকে পরখ করে ফাইল পাশে রেখে দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে বললো “কাছে এসো”
চন্দ্রা দরজা ভেজিয়ে চমকিত নজরে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বললো “কিহ্হহ”
সিয়াম ঠোঁট এঁটো করে হাসলো বললো ” ওতো দূর থেকেই কি কথা বলবে নাকি..?”
চন্দ্রা হাঁপ ছেড়ে বললো “তো এরম করে বলুন না।” বলেই নিজের ব্যাগটা ডেস্কে সিয়ামের পাশে রাখতেই সিয়াম হ্যাঁচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। চন্দ্রা টাল সামলাতে না পেরে সিয়ামের বুকে পড়লো এক হাত সিয়ামের পিঠে। চন্দ্রা চোটজলদি মাথা উঠিয়েই বললো “এই আপনার জরুরী কাজ..? এই জন্য আপনি আমায় ওতো দূর থেকে ডাক করলেন..?”
সিয়াম হেসে বললো “না জরুরী আরো কাজ আছে কিন্তু এটাও তার মধ্যে একটা জরুরী কাজ।”
চন্দ্রা হালকা হেসে গলা জড়িয়ে বললো ” আজকাল বড্ডো লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছেন মশাই।”
সিয়াম মুখটা আরেকটু কাছে নিয়ে গিয়ে বললো ” এতো আদুরে বউ সামনাসামনি ঘুরলে দোষ নেই, আর বর একটু আদর করলেই দোষ..?”
আমি কোথায় ঘুরলাম আপনিই তো ডাকলেন। কথাটা চন্দ্রার মুখ দিয়ে বেরোরো না ঢোঁক গেলার সাথে গিলে ফেললো।

সবে ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ হবে ওমনি দরজায় শশব্দে করাঘাত। সিয়াম চোখ বুজে দম নিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। চোখ মুখ দেখেই তার বোঝা যাচ্ছে আজ দরজার বাইরের লোকটাকে সে খুন করবে। চন্দ্রা হাসলো তার বেশ মজা লাগছে উচিৎ শিক্ষা হয়েছে তার বরের। যদিও তার স্পর্শ চন্দ্রার বিশেষ ভালো লাগে তাই বলে সে সময় কাল না বুঝেই এসব করবে তার তো কোনো মানে হয় না।

সিয়াম এবার হালকা গলার স্বর উঁচিয়ে বললো “ভিতরে আয়।”
পিয়াস ভিতরে ঢুকলো। চন্দ্রাকে দেখে সালাম দিলো। চন্দ্রাও সালামের উত্তর দিলো। সিয়াম বললো “মিট হিম! হি ইস মাই অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম ফ্রেন্ড পিয়াস।”
চন্দ্রা মিষ্টি হাসলো। সিয়াম এবার দুজনকে বললো ” বসো তোমাদের সাথে পার্সোনাল কিছু কথা আছে।”
দুজনেই ঘরের সাথে লাগোয়া সোফায় বসলো। হাতে একটা রিমোট নিয়ে সিয়াম ও এসে বসলো চন্দ্রার পাশে।

সিয়াম চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বললো “এখন যা দেখবো মন শক্ত করে দেখবে। আর পিয়াসের সাথে জড়তা রাখবে না ওকে নিজের বড়ো ভাইয়ের চোখে দেখো ও আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু।”
চন্দ্রা ঘাড় নাড়ালো। সিয়াম রিমোট টিপে মনিটর অন করতেই সামনে এলো একটি ষাটের ঊর্ধ্বে ভদ্রলোকের ছবি।
চন্দ্রা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সিয়ামের দিকে তাকাতেই সিয়াম বললো “ইনি হলেন আফজাল হোসেন। সুইটি সরি আমাদের প্রিয় মনির স্বামী।”
চন্দ্রা ভ্রূ কুচকে বললো “মানে যাকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন..?”
সিয়াম বাঁকা হেসে বললো ” না যার সাথে তিনি স্বামী থাকার সত্বেও পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিলেন। এমনকি সিরাজও এই আফজাল সাহেবের সন্তান।”
সিয়া ভীষন রকম চমকালো। তার কথা বলার মত ভাষা বেরোলো না মুখ দিয়ে।
হটাৎ কিছু মাথায় আসতেই জিজ্ঞেস করল ” কিন্তু সিয়া যে একবার বলেছিল সিয়া ও সিরাজ যমজ।”
সিয়াম বললো ” হ্যাঁ পরিচয় সব জায়গায় তাই দেওয়া হয়। কিন্তু সিয়া একমাত্র আগের পক্ষের মেয়ে সিরাজ নয়।”
চন্দ্রা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ” আগের পক্ষের মানে..?”
সিয়াম পুনরায় বললো “মনি ডিভোর্সের এক মাসের মাথায় আবার বিয়ে করে। তার পরেই সিরাজের জন্ম। সিয়া আর সিরাজ যমজ নয়। সিয়া সিরাজের দুই বছরের বড়।”

চন্দ্রা অবিশ্বাস চোখে চেয়ে থাকে পর্দায়। সিয়াম আবার রিমোট ঘোরায়। এবার আসে এক মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল ছবি চন্দ্রা সেই মেয়েটার সাথে সুইটি বেগমের বেশ মুখের মিল পেলো।
এবার পিয়াস বললো ” এটি হলো সুইটি বেগমের পরের পক্ষের মেয়ে সিনথিয়া। সিরাজের দুই বছরের ছোট।”
সিয়া এবার নির্বিশেষে চেয়ে প্রশ্ন করে “মনি এইকারণেই সিয়াকে নিজের মেয়ে বলে মানেন না..?” সিয়াম ঘাড় নাড়ায়।
চন্দ্রার এবার ভীষণ খারাপ লাগে সিয়ার জন্য।
চন্দ্রার এসব ভাবনার মধ্যেও তারা মাথায় আসে প্রশ্ন জাগে সে সিয়ামকে বলে “আচ্ছা তাহলে মনি সিয়া সিরাজকেই শুধু কেনো নিয়ে এলো এই বাড়িতে..? আর তার স্বামীই বা এখন কোথায়..?”
সিয়াম সোফায় বসে বললো “কারণ তাদের দুজনের প্ল্যান ছিলো আমাদের বাড়ির সম্পত্তি কি করে নেওয়া যায়। তখন ওনার স্বামী তার ওই ছোট্ট মেয়ে নিয়ে অন্য বাড়ি থাকতেন। কিছু বছর পর সব প্ল্যান মতো চললেও আফজাল সাহেব বিপত্তি ঘটালেন এসব সম্পত্তি ছেড়ে তিনি আরেক কোটিপতি মহিলার হাত ধরে পারি জমালেন বিদেশ। এইদিকে মনি পড়লো অসুবিধায় তখন সিয়া সিরাজ সিনথিয়া সবারই বোঝার ক্ষমতা হয়েছে। তিনি চাইতেন না সিনথিয়াকে এসবের মধ্যে জড়াতে। কারন বাবার চলে যাওয়ায় সে এমনিই মেন্টাল শকে ছিলো ভীষণ।”

চন্দ্রা থম মেরে কিছুক্ষন বসে থাকলো। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। এতো কিছু..? আমাদের চোখের আড়ালে কতো কি ঘটে যার সাথে ঘটে সে ছাড়া হাতে গনা কজনই টের পায়। আর তারপর এইরকম কাহিনী হলে তো হলোই বিশ্বাস করেই অবিশ্বাস্য লাগে এইসব সত্য।

চন্দ্রা নিজেকে সামলে বললো ” লাস্ট দুটো প্রশ্ন ”
চন্দ্রার বাচ্চাদের মতো হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে দুটো বলায় তা দেখে আলতো হাসলো সিয়াম, কাছে এসে চন্দ্রার গাল টিপে বললো ” দুটো কেনো আরো একশটা প্রশ্ন করো। এই বান্দা সবসময় হাজির তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে।”
চন্দ্রা হালকা ইতস্তত করে পিয়াসের দিকে তাকালো। দেখলো সে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছে।
চন্দ্রা আর কথা না বাড়িয়ে বললো “এই জন্যেই কি মনি বাড়িতে থাকে না বেশি তার মেয়ের কাছে গিয়ে থাকে বলে..?”
সিয়াম এবার একটু সিরিয়াস মুখ করে বললো “হুম সিয়া আর সিরাজ জানে মনি তার বান্ধবীর সাথে ছোট্ট একটা ব্যাবসা করে তাই সেখানেই বেশি থাকে।”

সিয়াম এবার চন্দ্রার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো “তোমার হেল্প লাগবে চন্দ্র।”
চন্দ্রা নির্দ্বিধায় বলে “কি হেল্প লাগবে বলুন আমি সবরকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছি।”
সিয়াম এবার বললো “আমার যে সম্পত্তির উইলটা মনির
কাছে সেটা ওই বাড়িতে আছে মানে যেখানে সিনথিয়া থাকে। আর সেখানে কড়া পাহারা থাকে সবসময় মনি আর কিছু চেনা পরিচিত মহিলা ছাড়া সেই বাড়িতে কেউ প্রবেশ করতে পরে না।”

চন্দ্রা ভ্রু কুঁচকে বললো “এখানে আমি কি সাহায্য করতে পারি..?”
সিয়াম বললো ” প্রথমে সিনথিয়াকে তোমায় বন্ধু বানাতে হবে তারপর ওর সাথে ওর রুমে গিয়ে আমায় ওই ফাইলটা এনে দিতে হবে। বলো পারবে..?”
চন্দ্রা মুচকি হেসে বললো ” কতটা পারবো জানি না তবে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

সিয়াম খুশি হলো সে জানতো চন্দ্রা তাকে না করবে না, আর চন্দ্রা ছাড়া এই কাজ কেউ করতে পারবে না পারলেও সিয়াম ভরসা করতে পারবেনা তার উপর। সিয়াম চন্দ্রাকে গেট অবধি ছেড়ে আসার জন্য বাইরে পা বাড়ালো। পিয়াস কে বললো মনিটর ত যাতে অফ করে দেয়।

পিয়াস মনিটরের কাছে গিয়ে সিনথিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা একসময় তার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলো। তখন জানতো না পিয়াস মেয়েটার আসল পরিচয়। পিয়াসের বাড়ির কাছাকাছি থাকে মেয়েটি। পিয়াস প্রায়সই দেখে। কথাটা সিয়ামও জানে। কিন্তু সবসময় তাকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলে তার থেকে সুইটি বেগমের জন্য, তিনি জানতে পারলে দুবার হাত কাঁপবেনা পিয়াসকে মারতে। মেয়েকে ভীষণ রকমের ভালোবাসেন তিনি। পিয়াসও সিয়ামকে নিজের বড়ো ভাইয়ের চোখে দেখে তাই সিয়ামের কথা সে অমন্য করে না।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে