গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #১৫
মাঝে কেটে গেছে অনেককটা মাস। মাস পেরোনোর সাথে সাথে বদলেছে সব সম্পর্কের সমীকরণ গুলোও। চন্দ্রা আর সিয়ামের সম্পর্কের ছয় মাস পূর্ণ হতেও আর হাতে মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। যদিও এই নিয়ে দুজনের কারোরই কোনো মাথা ব্যাথা দেখা যায়নি। চন্দ্রার ধারনা সিয়ামের ডিভোর্সের কথাটা মনে নেই আর তাই সেও নিজেও ব্যাপারটা চেপে গেছে। কি দরকার যেমন চলছে চলুক না।
এখন সিয়ামের সান্নিধ্য চন্দ্রার সবচেয়ে প্রিয়। তাদের সম্পর্কটা “জাস্ট ফ্রেন্ড” থেকে “বেস্ট ফ্রেন্ড” এ এসে নেমেছে। চন্দ্রার ছোটো থেকেই খুব একটা বন্ধু বান্ধব ছিল না সে খুব একটা সবার সাথে মিশতে পারতো না বলে। স্কুল লাইফের বন্ধু গুলো কলেজে উঠে হারিয়ে গেছে আর যে কটা কলেজের হাতে গোনা কটা বন্ধু ছিল তারও কলেজের পর হারিয়ে গেছে। চন্দ্রার বেস্ট ফ্রেন্ড বলতে ছিলো শুধু তার দিভাই ইন্দ্রা। কিন্তু ইন্দ্রারও বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে চন্দ্রা ভীষণ একা হয়ে পড়েছিল। না তার সাথে কথা বলার তেমন কেউ ছিলো আর না কথা শোনার। সিয়ামের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর চন্দ্রার প্রথমে ইতস্তত লাগলেও পরে সে সহজ হতে শুরু করলো। এই ভাবে চলতে চলতে আজ তারা বেস্ট ফ্রেন্ড। এখন চন্দ্রার সারাদিনের পর সবচেয়ে পছন্দের কাজ রাতে দুই মগ কফি নিয়ে সিয়ামের সাথে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসা। সারাদিন কেমন কাটলো কোথায় কি হলো এমনকি অদরকারি অনেক কথাই সব এক নিশ্বাসে চন্দ্রা বলে চলে সিয়ামকে। সিয়ামও একমনে সব কথা শোনে তার। তার কাছে এই মুহূর্তটা একটু বেশিই স্পেশাল এই সময়টাই তাকে উপলব্ধি করায় সে চন্দ্রাকে একটু একটু করে নিজের ভালোবাসার বেড়াজালে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হচ্ছে।
এই সময় যতোই সিয়ামের ইম্পর্ট্যান্ট কাজ থাকুক না কেনো সে সব কাজ সাইডে রেখে দেয়। চন্দ্রা ঘুমিয়ে গেলে সে আবার নিজের কাজ নিয়ে বসে।
সারাদিন তাদের দুজনেরই সময় হয়না বলতে গেলে। সিয়াম থাকে অফিসে আর চন্দ্রা তার ক্যারাটে ক্লাসে। দুজনের দেখা হয় সেই রাতে। চন্দ্রার যেনো এখন ভালো লাগে না। সবসময় যেনো সিয়ামের আসেপাশে থাকতে ইচ্ছে করে। সিয়ামেরও একই পরিস্থিতি হয়, সে চেয়েও পরে না চন্দ্রাকে খুব একটা সময় দিতে তাও ছুটির দিন গুলো চেষ্টা করে চন্দ্রার সাথে কাটানোর কিন্তু সেখানেও প্রবলে, ছুটির দিন গুলোয় সিয়ার ক্যারাটে স্কুল থেকে এদিক সেদিক কম্পিটিশনে নিয়ে যাওয়া হয় বিধায় চন্দ্রা বেশিরভাগটাই বাড়িতে থাকতে পারে না। তাতেও দুজনের মনের দুরত্ব কমতে গিয়ে বেড়েছে যেনো। দুজনের মুখোমুখি দেখা না হলেও সারাক্ষণ একে ওপরকে মেসেজ, কল, ভিডিও কল এইসব চলতেই থাকে। তাদের মাঝে মাঝেই মনে হয় যেনো তারা কোনো লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপে আছে।
সন্ধ্যে ৬ টা
চন্দ্রা আজ কিছুটা তাড়াতাড়িই ফিরেছে বিশেষ কারণে নইলে তার ফিরতে ফিরতে ৮ টা বেজে যায়। তার বিশেষ কারণটা হচ্ছে সে আজ প্রথম নিজের হাতে সিয়ামের জন্য কিছু রান্না করবে ঠিক করেছে। এই কয়েকদিনে সে ইন্দ্রার থেকে টুকটাক অনেক রান্নাই শিখেছে যেমন কফি, ভাজাভুজি, নানা রকমের ভর্তা ইত্যাদি। কিন্তু আজ সে বানাতে চলেছে বিরিয়ানি। এইকয়দিনে সে ভালোই বুঝেছে সিয়ামেরও ওর মতো বিরিয়ানি ভীষণ পছন্দের। তাই সাত তাড়াতাড়ি বাজার করে ফিরে কোমর বেঁধে সে আজ রান্নায় নেমেছে।
অপরিপক্ব হাতে রান্না করায় বেশ ভোগান্তি হলো চন্দ্রার। ডান হাতে বেশ কিছুটা গরম তেলও পড়লো। চন্দ্রা একটু বরফ লাগিয়ে আবার কাজে মন দিল। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর রান্না কমপ্লিট করে ফ্রেশ হয়ে আবার রান্না ঘরে আসলো সব সাজাতে। সব ঠিকঠাক করে ঘড়ি দেখতে লাগলো। আধা ঘন্টার মতো পেরিয়ে যাওযার পরও যখন সিয়াম এলো না তখন চন্দ্রার চিন্তা হতে লাগলো। সিয়াম তো ৮:৩০ বাজার পর পরই চলে আসে। আজ ৯ টা বেজে গেলো। এসব ভাবনাতেই ডোর বেল বেজে উঠলো। চন্দ্রা খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দিতেই চন্দ্রার হাসি মুখটা মিলন হয়ে গেলো। কারণ সামনে সিয়ামের যায়গায় সিরাজ দাড়িয়ে। সিরাজ একপলক চন্দ্রাকে দেখে উপরে চলে গেলো। চন্দ্রা সিরাজের যাওযার দিকে তাকালো। কেনো জানো তার মনে হয় সিরাজের মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। সেই চন্দ্রার বাড়ি থেকে ফেরার পরই সে আর চন্দ্রাকে উত্যক্ত করে না, এখন তো বেশি রাত অবধি বাড়ির বাইরেও থাকে না, সিয়ামের বলতে কোম্পানির বেশ কিছু কাজও করে সে, বেশির ভাগ তাকে ফুরফুরে মেজাজেই দেখা যায়।
এইতো সেদিন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলো। চন্দ্রা রাতের ডিনার সাজাচ্ছিল সবার জন্য। তখন টেবিলে শুধু সিয়া ছিলো। সিরাজ উপর থেকে তাড়াতাড়ি নেমে টেবিলে বসে চন্দ্রাকে বললো “ভাবী তাড়াতাড়ি খেতে দাও। কাল সকালে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে অফিসে।” বলে ফোন টিপতে লাগলো। এইশুনে চন্দ্রা কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল সিরাজের দিকে। ওই প্রথম বোধহয় সিরাজ চন্দ্রাকে ভাবী বলে ডেকেছিল।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার ডোর বেলের আওয়াজ পেলো চন্দ্রা। চন্দ্রা এবার খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। এবার সেই আকাঙ্খিত মানুষটির মুখ দেখতে পেলো চন্দ্রা। দারোয়ান চাচা দরজার কাছে দিয়ে চলে গেলো বাইরে। চন্দ্রার এইরকম হাসি মুখ দেখে সিয়াম হেসে জিজ্ঞেস করলো “ব্যাপার কি…? মহারানী আজ এত খুশি যে..?” চন্দ্রা সিয়ামের হুইচেয়ার ধরে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলল “সারপ্রাইজ আছে। আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন তারপর দেবো।” সিয়াম বললো “তাই..? সারপ্রাইজ তাও আমার জন্য..?আমার তো এক্ষুনি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।”
চন্দ্রা হেসে বললো “না মশাই এখন না, আগে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর দেখবো।”
সিয়াম ফ্রেশ হতে গেলো। চন্দ্রা রান্না ঘরে গিয়ে একটা প্লেটে সুন্দর করে সব সাজিয়ে ঢাকা দিয়ে সিয়ামের ঘরে নিয়ে এল। সিয়াম ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো বিরিয়ানির গন্ধে সারাঘর মো মো করছে। সিয়াম একটা লম্বা শ্বাস টানল তারপর বললো “ওহহো এই হচ্ছে তাহলে তোমার সেই সারপ্রাইজ।”
চন্দ্রা প্লেট টা খুলে সিয়ামের সামনে রাখতে রাখতে বললো “হম এই সেই সারপ্রাইজ কিন্তু এটার মধ্যে স্পেশাল কি বলুন তো..?” সিয়াম কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল ” বিরিয়ানি তো এমনিতেই স্পেশাল, এর উপরও কিছু স্পেশাল আছে নাকি..?” চন্দ্রা এবার মুখ ফুলিয়ে বললো “পারলেন না তো, এই বিরিয়ানিটা আমি নিজের হাতে করেছি।” সিয়ামের যেনো এবার অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলো। তার বউ রান্না করেছে তার জন্যে..? যে মেয়ে কিনা কদিন আগেও চা বানাতে পারতো না সে তার জন্য বিরিয়ানি বানিয়েছে..?
চন্দ্রা তাড়া দিয়ে বললো “কি হলো..? টেস্ট করে দেখুন না। আমি কিন্তু এখনও খেয়ে দেখিনি। আর সিনেমার হিরোদের মতো নুন ঝাল বেশি হলে মুখ বুজে খেয়ে নেবেন না, ভালো হোক খারাপ হোক মূখের উপরই বলবেন আমায় বুঝলেন।” সিয়াম হেসে ঘাড় নাড়িয়ে বললো “আচ্ছা বাবা তাই। তবে এরম ভাবে খেলে বোধহয় টেস্ট পাবো না তেমন। না মানে যে বানিয়েছে সে যদি খাইয়ে দিতো তাহলে টেস্টটা বোধহয় আরো দ্বিগুণ হতো।”
সহজ সরল এক আবদার। চন্দ্রা চেয়েও চেয়েও পারলো না সিয়ামকে। লাজুক হেসে এক চামচ বিরিয়ানি তুলে সিয়ামের মুখের সামনে ধরতেই সিয়াম তা মুখে নিল।
চন্দ্রা অধীর আগ্রহে চেয়ে রইলো সিয়ামের মুখপানে তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
বিরিয়ানি মুখে নেওয়ার পরই সিয়ামের মুখ গম্ভীর হলো। মুখের পুরোটা শেষ করে কিছুটা জল খেয়ে সিয়াম বললো “চন্দ্র তুমি সত্যি কথা যখন বলতে বলেছ তখন আমি মিথ্যে বলবো না তোমায়।” চন্দ্রার মুখটা এবার ভয়ে মিলন হয়ে গেল।
সিয়াম গম্ভীর মুখ করেই বললো “তোমার প্রথম রান্না বুঝলাম তবে তোমার নিজেও টেস্ট করে দেখো উচিত ছিল তাহলে বুঝতে বিরিয়ানিতে ঝাল বেশি, নুন কম হয়েছে আলুও ঠিকঠাক সিদ্ধ হয়নি মসলাও ঠিকঠাক মেশেনি।
চন্দ্রার হৃদয় এবার আহত হলো। সে আগে ওইসব কথা বললেও কোথাও না কোথাও তার মন শুধু সিয়ামের প্রশংসাটাই শুনতে চাইতো। চোখ ছলছল করে উঠলো চন্দ্রার। সে মুখটা নামিয়ে চামচটা প্লেটে রেখে বললো “সরি আসলে প্রথম বার তো তাই বুঝতে পারিনি। পরের বার খেয়াল রাখবো। আপনি দাড়ান আপনার জন্য আমি অন্যকিছু আনছি এটা আর খেতে হবে না আপনাকে।” বলেই চন্দ্রা খাবারের প্লেটটা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরতে সিয়াম ডাকল ” চন্দ্র ”
চন্দ্রা দাঁড়িয়ে পড়লো। সিয়াম বললো “এদিকে এসে বসো একবার।” চন্দ্রা কথা বাড়ালো না কারণ কথা বদলে তার গলার কাছে চাপা কান্না সে আটকাতে পারবে না। চুপ করে আবার একই যায়গায় বসলো সে সিয়ামের সামনে কিন্তু এবার মুখ নীচু করে রাখলো।
সিয়াম এবার এক চামচ বিরিয়ানি তুলে চন্দ্রার মুখের সামনে ধরে বললো ” শুধু আমাকে খাইয়ে রিভিউ নিলেই হবে..? নিজে রান্না করেছি যখন নিজে খেয়ে রিভিউ দাও দেখি।” বলে চন্দ্রার মুখে পুরে দিলো খাবারটা। চন্দ্রা না চাইতেও খেলো।
সিয়াম এবার প্রশ্ন করলো “এবার বলো দেখি কোথায় কি কম হয়েছে..?” চন্দ্রা এবার চোখ এদিক সেদিক করে বললো ” কই সব তো ঠিকই আছে নুন, ঝাল সবই এমনকি মসলাটাও ঠিকঠাকমতো মিশেছে।”
সিয়াম এবার সেই মনভোলানো হাসি টা দিলো। চন্দ্রা অবাক হয়ে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বললো “তাহলে আপনি মিথ্যে বললেন কেনো..?”
সিয়াম গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বললো ” ওইটা তো আমি এমনি মজা করছিলাম।”
চন্দ্রার এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। সিয়াম এতক্ষণ গা ছাড়া ভাব দেখলেও এবার তার ভীষণ খারাপ লাগলো।
সিয়াম চন্দ্রার চিবুকটা হালকা তুলে বললো “হেই বউ! আমি শুধুই মজা করছিলাম বিশ্বাস করো তোমাকে হার্ট করার মতো কোনো ইনটেনশন আমার ছিলো না।”
চন্দ্রা এক ঝটকায় সিয়ামের হাত সরিয়ে বললো “স্পর্শ করবেন না আমাকে একদম। বাজে লোক একটা, আপনি জানেন আমার মনের মধ্যে কি ঝড় চলছিলো..?” এই বলে কাঁদতে কাঁদতে চন্দ্রা সোফার বালিশে মুখ গুঁজলো।
সিয়াম চন্দ্রার নাম ধরে ডাকল কয়েকবার। কিন্তু চন্দ্রা কোনো সাড়া দিলো না সে নিজের মতো কেঁদেই যাচ্ছে। সিয়াম আর না পেরে চন্দ্রার কিছুটা কাছে গেলো।
সেই ঘোর মেশানো কণ্ঠে ডাকলো ” চন্দ্রাবতী… ”
চন্দ্রার মুখ বালিশে গোঁজা বিধায় শুধু পিছন দিকটাই দৃশ্যমান তার। চন্দ্রাকে না কাঁপতে দেখে সিয়াম বুঝলো চন্দ্রা কান্না থামিয়েছে কিন্তু চোখ দিয়ে এখনও অশ্রু পড়ছে।
সিয়াম আবার একইভাবে বললো “চন্দ্রাবতী, এদিকে ফেরও দেখি।” বলে নিজেই চন্দ্রাকে ধরে নিজের দিকে ঘোরালো। চন্দ্রা ফর্সা হওয়ায় একটু কাঁদতেই তার মুখ চোখ টমেটোর মতো লাল হয়ে ফুলে গেছে।
সিয়াম এবার তার দুই হাত গলার পাশ দিয়ে নিয়ে গিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে চন্দ্রার চোখের জল মুছে দিলো।
তারপর চন্দ্রার মাথাটা নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললো “চন্দ্রাবতী কিছু কথা বলি মন দিয়ে শোনো, তুমি যখন বললে আমি যেনো সিনেমার হিরোদের মত খেয়ে মিথ্যে না বলি যা হবে সত্যি সত্যি তোমায় মুখের উপর বলে দি যাতে তুমি পরে আরো ভালো করতে পারো। কিন্তু আসলে কি তাই..? যখন আমাদের জন্য ভালোবেসে কেউ কিছু বানায় তখন সেই খাবারের টেস্টের থেকেও আমাদের কাছে ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে ওঠে সেই মানুষটির মুখের হাসি। আমরা যতই বলি খারাপ হলে জানো সে বলে কিন্তু আদতেই কি তারা খারাপ বললে বা কোনো খুঁত ধরলে আমাদের ভালো লাগে..? বরং মন খারাপ হয় পরের বার আর সেই জিনিসটা সেই মানুষটার জন্য বানাতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় সেই তো খেয়ে খুঁত ধরবে তার জন্যে করে কি লাভ। এর পিছনের শ্রমটা আর ভালোবাসাটা অনেক কম মানুষই বোঝেন। তাইতো আমরা প্রিয় মানুষটার হাতের খাবার নুনপোড়া হোক কিংবা ঝাল বেশি হোক সেটা আমরা তৃপ্তি করে খেতে পারি। হ্যাঁ রোজকার ব্যাপারটা আলাদা।
অনেক সংসারেও এমন হয় জানতো অনেক বছর সংসার করার পরও একদিন খাবারে নুন কিংবা ঝাল বেশি হলে তারা চিৎকার চেঁচামেচি করতে দুইবার ভাবে না। তারা একবারও ভাবে না ওপর পাশের মানুষটিও কতটা পরিশ্রম করে সেইটুকু বানিয়েছে, বা সেও যে নানান টেনশনে থাকতে পারে। এইসব কথা কাউকে মুখ ফুটে বলাও যায়না। সব সহ্য করে নিতে হয়। তাই আমি চাই তুমি পরের বার থেকে যেনো এইরকম কথা আর না বলো।
আর আজ তোমার খাবার যদি ঝাল বেশি নুনপোড়াও হতো তাও আমি বিনা কষ্টে পুরো খাবারটাই খেতাম কেনো জানো কারণ সেটা তুমি শুধু মশলা মিশিয়েই বানাওনি তাতে নিজের ভালোবাসা, শ্রম, অনুভুতি সব মিশিয়ে বানিয়েছো। বুঝলেএএএ পাখি” বলে চন্দ্রার নাকটা হালকা করে টেনে দিল।
চন্দ্রা এবার নিজের ভুল বুঝতে পেরে সিয়ামের বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে বললো “সরি আর এমনটা হবে না”
সিয়াম চন্দ্রাকে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে বললো “ইটস ওকে চন্দ্রাবতী আমি আছি না। যতদিন আমি আছি তোমার সব ভুলত্রুটি ধরিয়ে ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব আমি নিলাম। আমি যখন থাকবো না তখন অন্যবিষয়।”
চন্দ্রার প্রথম কথাটা শুনে মনটা শীতল হলেও শেষের কথাটা শুনে বুকটা কেঁপে উঠলো সে ফট করে সিয়ামের মুখ চেপে ধরে বললো “বালাই ষাট এরম কথা মুখেও আনবেন না আর। কোথায় যাবেন আপনি..?”
সিয়াম মুখ থেকে চন্দ্রার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে হাতের উল্টপিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো “বলা তো যায়না কখন কি হয়ে যায়।”
চন্দ্রা এবার কোনো কথা বললো না। তার মনে এক ভীষণ রকম ভয় জন্মেছে এই মুহূর্তে। সেই ভয়টি হলো সিয়ামকে হারিয়ে ফেলার। সে প্রকাশও করতে পড়ছে না এই অনুভূতিটা। সিয়াম চন্দ্রার এরম বিরস মুখ দেখে চন্দ্রার চিবুক তুলে বললো “আমি যেখানেই থাকি আমার চন্দ্রাবতী একবার মনে মনে স্মরণ করলেই আমি সেখানে উপস্থিত হবো।” চন্দ্রার এবার হালকা হাসি ফুটে উঠলো মুখে।
সিয়াম এবার চন্দ্রকে নিজের কাছে আরেকটু টেনে এনে নিজের অধর ছোঁয়ালো চন্দ্রার চোখের পাতায় তার পর গালে চন্দ্রা কেঁপে উঠলো হালকা। অবশেষে চন্দ্রার অধরে অধর মেলাতেই চন্দ্রার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো সে সিয়ামের কলারটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরলো, আজ যেনো কোন অদৃশ্য শক্তির জন্যে সিয়ামকে বাঁধা দিতে পারলো না সে। সিয়াম কিছুক্ষন পর সরে আসতেই চন্দ্রা লজ্জায় সিয়ামকে ছেড়ে বেরিয়ে গেলো রুমের বাইরে।
সিয়াম তর্জনী আঙুলের পিঠটা ঠেকলো ঠোঁটে। তারপর আনমনেই হেসে উঠলো সে। বহুবছরের প্রতীক্ষার আজ অবসান হয়েছে তার। আজ তার থেকে খুশি মানুষ বোধহয় এই পৃথিবীতে নেই।
_______________________________________
চন্দ্রা লজ্জায় রান্না ঘরের সামনে এসে চেয়ার ধরে হাঁপাতে লাগলো। ইস কি করে ফেললো সে আজ..? এবার সে সিয়ামের সামনে যাবে কি করে..? এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখলো সামনে দিয়ে সিয়া আসছে। চন্দ্রা ঠিকঠাক হয়ে সিয়াকে ডাক দিয়ে বললো “এই সিয়া, আজ আমি নিজের হাতে বিরিয়ানি বানিয়েছি তুমি টেস্ট করবে না..?”
সিয়া মিলন হেসে বললো “না ভাবী আজ আর ভালো লাগছে না তুমি ফ্রিজে রেখে দাও আমি কাল খাবো।” বলে উপরে চলে গেল সে।
চন্দ্রার এবার কেমন যেনো ঠেকলো সিয়াকে তাকে দেখে মনে হলো অনেকে রাত ঘুমোয় না কেঁদে কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছে যেনো। চন্দ্রা ভাবলো কিচ্ছুক্ষণ পর একবার গিয়ে জিজ্ঞেস করবে তাকে আতিফের সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি।
#চলবে..?
গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #১৬
রাত ১০ টা।
চন্দ্রা মোটামুটি সব রান্নাঘরে গোছগাছ করে ঠিক করলো একবার সিয়ার কাছে যাবে। মেয়েটাকে একদমই ঠিক লাগলো না দেখে। চন্দ্রা ধীরে ধীরে উপরে সিয়ার রুমের কাছে গিয়ে দেখলো রুমের দরজা ভেজানো। চন্দ্রা হালকা করে খুলে উঁকি মেরে দেখলো সিয়া একটা ডিম লাইট জেলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। সামনেই পরে ফোন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে কারোর ভয়েস রেকর্ড চলছে।
চন্দ্রা এবার দরজায় নক করতেই সিয়া হাঁটু থেকে মাথা তুলে তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে ফোন রেকর্ডার টা অফ্ করে বললো “আরে ভাবী এসো না ভিতরে।” বলেই বেডের পাশে লাইটের সুইচ দিয়ে দিলো। ঘোরের চারিদিকে আলো পড়তেই চন্দ্রা ভালো করে একবার চোখ বোলালো পুরো ঘরে। সিয়ার অর্ধেকের বেশি জিনিস ছড়ানো ছিটানো। অথচ সিয়া বেশ পরিস্কার পরিচছন্ন জায়গার জিনিস জায়গায় না রাখলেই সে রেগে যায়। তাহলে কি এমন হলো যে…?
চন্দ্রা এবার গিয়ে বসলো সিয়ার পাশে। সিয়া বললো “কিছু বলবে ভাবী..?”
চন্দ্রা কিছুক্ষন সময় নিয়ে সিয়াকে বললো “সিয়া তুমি আমায় আর ইন্দ্রা দিভাইকে নিজের বড়ো আপুর মতই ভাবো তো নাকি পর ভাবো..?” সিয়া একটু অবাক হয়ে উত্তর দিল “এমা ভাবী এইরকম বলছো কেনো তোমরা তো আমার ফ্যামিলি তোমাদের ছাড়া কাদের আপন ভাববো। ” এই বলেই সিয়া মাথা নিচু করে নিল। চন্দ্রা বুঝতে পারলো সিয়ার চোখের জল আটকাতেই এই প্রয়াস তার।
চন্দ্রা একটু এগিয়ে এসে সিয়ার হাত নিজের হাতের নিয়ে বললো “সিয়া যদি আপন ভেবেই থাকো আমাদের তাহলে কি হয়েছে তোমার খুলে বলো আমাকে। একা একা কষ্ট পাওয়ার চেয়ে এটা ভালো। অন্তত মনটা কিছুটা হালকা তো হবে।” সিয়া এবার মুখটা তুললো দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কান্নার দরুন চোখ মুখ ফুলে আছে চোখের নীচে কালি জমেছে। সিয়া এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে আচমকা চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরলো। চন্দ্রা টাল সামলাতে না পেরে হালকা পিছিয়ে গেলো তবুও ধরে নিলো সিয়কে। সিয়া চন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে কাঁদতে বললো “আমার অনেক বড়ো সর্বনাশ হয়ে গেছে গো ভাবী।” চন্দ্রা খুব একটা অবাক হয়নি সে ধারণা করেছিলো যে প্রেমঘটিত কিছু হবে তাই সে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো “কি হয়েছে সিয়া খুলে বলো আমায়। নইলে বুঝবো কি করে বলো।” সিয়া এবার আস্তে ধীরে তার আর আতিফের রিলেশনের কথাটা বললো। চন্দ্রা সব শুনে বললো “হম এতো ভালো কথা সে চাকরি পেয়েছে তোমার দাদাকে বলবো তাহলে তাদের বাড়ি কথা বলতে যেতে..?”
সিয়া চোখ মুছে বললো ” এখানেই শেষ না ভাবী আসল কাহিনী তো এর পর থেকে শুরু হয়েছে। আতিফ চাকরি পাওয়ার পর একমাস খুব ভালোই গিয়েছিলো আমাদের সে তার প্রথম স্যালারি দিয়ে আমায় এই সোনার চেনটা গিফট করেছে।” বলেই গলা থেকে চেনটা বের করে চন্দ্রাকে দেখলো। চন্দ্রা বললো “তারপর..?” সিয়া বললো “তারপর হঠাৎ করেই আতিফের ইগনোর করা শুরু হলো, দেখা করার কথা বললে নানা অজুহাত দেওয়া শুরু করলো। আমি ভাবলাম কাজের চাপ আছে তাই হয়তো সময় দিতে পারছে না। কিন্তু নতুন ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট খুলে দেখলাম সে দিব্যি তার নতুন বন্ধু বান্ধবদের সাথে রোজ আড্ডা দিচ্ছে হাঙ্গআউট করছে। এইদিকে আমায় বলে অফিসের কাজে নাকি তার নাওয়া-খাওয়ার সময় হচ্ছে না। আজ তো দুপুরে দেখা করে বলেই দিলো তার মায়ের পক্ষে নাকি আমাকে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমি নাকি কম মাইনের একটা চাকরি করি আর তার মা যাকে বেছেছেন সে নাকি অনেক বড়ো যায়গায় চাকরি কর। ” শেষের কথাটা বেশ তাচ্ছিল্যের শুরে বললো সিয়া।
চন্দ্রা এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। সিয়াকে আশ্বস্ত করে বললো সে নিজে গিয়ে পরের দিন আতিফের সাথে কথা বলবে। যদি কিছু করা যায়। সিয়া তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল “কিছুই হবে না ভাবী। গিয়ে দেখবে তোমার হাতে বিয়ে কার্ড ধরিয়ে দিয়েছে হয়তো তার।”
চন্দ্রা কথা বাড়ালো না সে জানে এখন সে যত ভালোই কথা বলুক না কেন সিয়ার কাছে সব তিক্ত লাগবে। চন্দ্রা শুধু আশ্বস্ত করলো সিয়াকে এই বলে যে সে কাল নিজে গিয়ে কথা বলবে আতিফের সাথে। এই বলে সিয়াকে একটু কিছু খাইয়ে শুইয়ে দিয়ে চলে এলো নিজের রুমে।
চন্দ্রা বেশ অন্যমনস্ক হয়েই রুমে ঢুকলো। সিয়াম চন্দ্রাকে লক্ষ্য করে বললো “চন্দ্র..? কিছু নিয়ে টেনশনে আছো কি..?এইরকম অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে।” চন্দ্রার এবার হুশ ফিরলো হাপ ছেড়ে মনে মনে ভাবলো এই মানুষটার থেকে সে কিছু লুকোতে পারে না। তার চোখ পড়তে জানে যেনো মানুষটা। চন্দ্রা ইতস্তত করলো তারপর ভাবলো না থাক কল কি হয় একেবারে জেনেই সিয়ামকে সে জানাবে। তাই সিয়ামের উদ্দেশ্যে বললো “না তেমন কিছু না এমনিই।”
সিয়াম বিশ্বাস করলো কি বোঝা গেলো না। মুখভঙ্গি আগের মত করেই বললো “বেডে এসে বসো চন্দ্র, কিছু দেওয়ার আছে তোমায়।” চন্দ্রা এবার বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় গিয়ে বসলো।
সিয়াম আলমারি থেকে একটা ছোট্ট প্যাকেট বের করে বিছানায় রাখল। চন্দ্রা কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো “কি আছে এতে..?” সিয়াম মুচকি হেসে প্যাকেটটা খুলে একটু বক্স থেকে একটা সোনার ব্রেসলেট বার করলো। চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “বাহ্ ভারী সুন্দর দেখতে তো। কিন্তু এটা কার জন্য…?” সিয়াম চন্দ্রার ব্রেসলেটটা চন্দ্রার হাতে দিয়ে বলল “ব্রেসলেটে যার নাম লেখা তার জন্যেই। এবার বলো দেখি কার নাম লেখা..?” চন্দ্রা ব্রেসলেটটা উল্টে পাল্টে দেখলো কয়েকবার তাও কিছু চোখে পড়লো না তার। অবশেষে ব্রেসলেটির পিছনের দিকে ছোট্ট করে “চন্দ্রাবতী” লেখাটা চোখে পড়লো চন্দ্রার।
চন্দ্রা এবার বুঝলো ব্রেসলেটটা তার জন্যই আনা। চন্দ্রা এবার একটু ঘুরিয়ে বললো “তা এই ব্রেসলেটটা আমাকে কেনো দেওয়া হচ্ছে জানতে পারি..?” সিয়ামও চন্দ্রার মতো মুখ করে বললো “হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই জানতে পারো।”
চন্দ্রা তার মতো করে সিয়ামকে বলতে দেখে সিয়ামের দিকে গরম চোখে তাকালো। তা দেখে সিয়াম হেসে দিয়ে বললো ” সরি সরি আসলে তুমি এই প্রথম কিছু নিজের হাতে রান্না করেছ তাই এইটা আমার তরফ থেকে উপহার।”
চন্দ্রা এবার ব্রসলেটটা নেড়েচেড়ে বললো “আপনি শুধু আমায় উপহার দেওয়ার বায়না খোঁজেন না..?” সিয়াম এবার একটু জোরেই হাসলো, তারপর বললো “না চন্দ্রাবতী আজ যদি আমার বাবা মা বেঁচে থাকতেন তাহলে কি তারা তোমায় খালি হতে আশীর্বাদ করতেন বলো..?তারা যাতে বলতে না পারে যে আমার ছেলেটা অকর্মার ঢেঁকি হয়েছে কিচ্ছু শেখাতে পারিনি তাকে। বাড়ির বউ যে প্রথম রান্না করলে তাকে আশীর্বাদ স্বরূপ কিছু দিতে হয় তাও জানে না ছেলেটা ।” চন্দ্রা এবার হালকা হেসে ব্রেসলেটটা সিয়ামের হাতে দিয়ে বললো “পরিয়ে দিন” এইটা আগের সিয়াম হলে ভীষণ অবাক হতো বৈকি কিন্তু এখন একটুও অবাক হলো না এরম আবদার মাঝে মাঝেই চন্দ্রা করে বসে তার কাছে তাই তারও অভ্যাস হয়ে গেছে।
সিয়াম চন্দ্রার ডান হাতটা টান দিতেই চন্দ্রা জ্বালায় “আহহহহহ” করে উঠলো। সিয়াম সঙ্গে সঙ্গে হাতটা নিয়ে বললো “কি হলো চন্দ্রা..? এতোখানি ফোসকা পড়লো কিভাবে..? নিশ্চই বিরিয়ানি বানাতে গিয়ে..?” চন্দ্রা এবার খানিকটা ভরকে গেল কারণ সে নিজেও ভুলে গিয়েছিল। হালকা জ্বালাপোড়া করলেও খেয়াল করেনি সেই দিকে।
সিয়াম এবার তাড়াতাড়ি একটা অয়েন্টমেন্ট এনে চন্দ্রার হাতে লাগিয়ে দিতে দিতে চন্দ্রাকে বকতে লাগলো।
” যে কেনো সে একা একা বানাতে গেলো..? হাতে ফোসকা পড়েছে সে সিয়ামকে আগে বলেনি কোনো হেনতেন।” কিন্তু চন্দ্রার তো সেই দিকে ধ্যান নেই তার ধ্যান সিয়ামের দিকে। এই প্রথম সে সিয়ামকে এতটা উদ্বিগ্ন হতে দেখলো তার জন্য। তার মনে এখন খুশির বাতাস বইছে।
সিয়াম চন্দ্রাকে একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চন্দ্রার গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো। চন্দ্রা হতভম্ভ হয়ে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বললো “এটা কি হলো..?” সিয়াম গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বললো “তুমি যা ভাবে তাকিয়ে ছিলে আমি ভাবলাম চুমু টুমু চাও হয়তো তাই আর কি।” চন্দ্রা বাঁ হাত দিয়ে সিয়ামের কাঁধে হালকা মেরে বললো “দিন দিন চরম অসভ্য হচ্ছেন আপনি।” সিয়াম হেসে কাঁধে হাত বোলাতে বোলাতে বললো “এটা কিন্তু ঠিক না বউ আমি তোমায় চুমু দিলাম আর তুমি আমায় কিনা মারছো ধরে..? আমায় চুমুটা রিটার্ন দিয়ে উপহার টা শোধও তো করতে পারো..?” চন্দ্রা এবার মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বললো “ধ্যাত কথাই নেই আপনার সাথে। খালি পিছনে লাগেন আপনি আমার।”
চন্দ্রার রাগী মুখ দেখে সিয়াম হাসতে লাগলো। সেও বুঝতে পারলো না কিছু মাসের ব্যাবধানে তার হাসিটাও একটা মানুষের কাছে মুগ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
____________________________
সিরাজ মলে গিয়েছিলো তার দরকারি কিছু জিনিসপত্র নিতে। সেখানেই ইন্দ্রাকে দেখে সিরাজ হাসি মুখ নিয়ে এগিয়ে গেল তার দিকে। ইন্দ্রা তখন কিছু দেখছিল। সিরাজ পিছন থেকে বললো “তা ম্যাডাম আজকাল তো ডুমুরের ফুল হয়ে গেছেন দেখাই মেলে না আপনার।”
ইন্দ্রা চমকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে সিরাজকে দেখে হালকা হাসি দিয়ে বললো “আরে আপনি এখানে..?” সিরাজ আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো অনেক মানুষ যাতায়াতের সময় তাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। তাই সিরাজ ইন্দ্রাকে বললো “চলুন গিয়ে ফুড কর্নারে বসে কথা বলি এখানে অনেক মানুষ।” ইন্দ্রা ইতস্তত করলেও সিরাজ জোর করে নিয়ে গেলো তাকে। ইন্দ্রার সান্নিধ্য তার ভালো লাগে। বেশীরভাগ তার আসে পাশে থাকার চেষ্টা করে, কিন্তু মেয়েটা তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখেই চলে।
ইন্দ্রা একটা মেয়ে হয়ে বোঝে সিরাজের ওই চাহনি কেয়ারের মানে। তার মনেও কোথাও সফট কর্নার তৈরি হয়েছে সিরাজের জন্য। কিন্তু সে আর কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায় না বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তার মানুষকে। কিন্তু সিরাজকে সে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না।
___________________________________
চন্দ্রা কফিশপে অপেক্ষা করছে আতিফের। আতিফকে ফোন করায় সে বলেছে কিছুক্ষনের মধ্যেই সে এসে পৌঁছাচ্ছে। চন্দ্রা তাই কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বাইরের কাঁচের দরজা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখে সিরাজ ও ইন্দ্রাকে একসাথে হেসে কথা বলতে বলতে মল থেকে বেরোতে। চন্দ্রার বেশ খটকা লাগে কিছুদিন ধরেই তার এই জিনিসটা ভালো ঠেকছে না চোখে। না তার দেরি করলে চলবে না তাকে তার দিদির সাথে কথা বলতে হবে।
#চলবে…?