বেড়াজাল পর্ব-১০+১১

0
611

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #১০

সিয়াম ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দেখছে চন্দ্রা কিছু নিয়ে উসখুশ করছে। যেনো কিছু বলতে চেয়েও পারছে না।
সিয়াম ঘড়ির দিকে তাকালো ঘড়িতে বাজে ৮:২৭ তার বেরোতে হবে ১০ টার আগে। তার আগে তাকে চন্দ্রার সাথে একবার কথা বলতেই হবে। হয়তো কোনো জড়তার জন্যই মেয়েটা তাকে কিছু বলতে পারছে না।
সিয়াম এবার নিজের রুম থেকেই উচ্চস্বরে চন্দ্রার নাম ধরে ডাকল। কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দ্রা দৌড়ে এলো সিয়ামের রুমে তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা কাজ করছিলো সে। শাড়ির আঁচলটা কোমরে গোঁজাই আছে এখনো। চন্দ্রা এবার সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলল ” হ্যাঁ বলুন ডাকছিলেন..? আর আপনি ব্রেকফাস্ট করবেন না..? আজ তো অফিস আছে চলুন চলুন আগে ব্রেকফাস্ট করে নেবেন নয়তো গত পরশুর মতো পরে তাড়াহুড়ো করতে হবে।”
সিয়াম বলল ” থামো থামো পাকা গিন্নি হয়ে গেছো দেখছি তুমি। আগে আমার কথাটা শুনে নাও। আর এদিকে এসে বসো তো একটু, আমার কিছু কথা আছে তোমার সাথে। ” চন্দ্রা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ” এখন..? ” সিয়াম চন্দ্রার ব্যস্ততা দেখে বললো ” বেশি সময় নেব না তোমার চন্দ্র, শুধু দশটা মিনিট দাও।” চন্দ্রা এবার কোমর থেকে আঁচলটা খুলে শান্ত হয়ে বসলো সোফায়।
সিয়াম চন্দ্রার সামনে গিয়ে বলা শুরু করলো ” তুমি কি কিছু বলতে চাও আমায় চন্দ্র..? বলতে চাইলে নির্দ্বিধায় বলো। সকাল থেকে কেমন উসখুশ করছো দেখছি। মনের মধ্যে যা আছে বন্ধু ভেবে বলে ফেল চন্দ্র, দেখবে মনটা হালকা হবে। ” চন্দ্রা আবারও উসখুশ করতে করতে বলল ” ওই আসলে, মানে কালকে ওই ”
সিয়াম বললো ” হ্যাঁ কাল কি..?কিছু হয়েছে কাল..?”
চন্দ্রা এবার ইতস্তত করে বললো ” না কিছু হয়নি তবে কাল পাপা ফোন করে বলল আপনাকে নিয়ে যেনো গিয়ে দুই দিন থেকে আসি। কিন্তু আপনার তো এখন রোজ অফিসে যেতে হয় তাই আর কি।” সিয়াম এবার হাফ ছাড়ল সে কিনা কি ভেবে বসেছিল তারপর চন্দ্রাকে বললো “এই কথা বলতে তুমি এতো ইতস্তত করছিলে চন্দ্র..? আমি তো নিজেই ভাবছিলাম তোমায় বলবো যাওয়ার কথা।”
চন্দ্রা এবার চমকিত স্বরে বলল “সত্যি..? কিন্তু আপনার যে রোজ অফিস থাকে..?”
সিয়াম উত্তর দিল “কাল শুক্রবার আমার অফিস নেই। তাই কালকের সারাদিন থাকতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।আজ আমার অফিস থেকে আসার পরই রওনা দেব কেমন। তুমি রেডি থেকো।”
চন্দ্রা এবার মহা খুশি হলো। এতক্ষণে তার খেয়াল এলো সিয়াম তাকে এতোক্ষণ তুমি সম্বোধন করেই পুরো কথাটা শেষ করেছে। চন্দ্রা মনে মনে ভাবলো যাক কাউকে একজনকে তো শুরু করতেই হতো প্রথম সেটা নাহয় সিয়ামই করলো। চন্দ্রা এবার সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো ” আসুন ব্রেকফাস্ট টা সেরে নেবেন।” সিয়ামও সম্মতি দিল চন্দ্রার কথায়।

আজ ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবার দেখা মিললো একসাথে।নইলে তো শুধু সুইটি বেগম আর অফিস থাকলে সিয়ামকে পায় টেবিলে চন্দ্রা। আর সিরাজের তো কোনো ঠিক-ঠিকানাই পায় না চন্দ্রা কখন বাড়ি আসে কখন যায় সে কিছুই টের পায় না। বাকি রইলো সিয়া তার অফিসের জন্য তাকে আগে খেয়েই বেরিয়ে যেতে হয়।
চন্দ্রা সবাইকে যার যার প্লেট এগিয়ে দিল। শুধু সিরাজের বেলাতেই চন্দ্রা রান্নার খালাকে বললো “খালা আমার হাত যাচ্ছে না অতদূর আপনি একটু দিয়ে আসবেন..?”
সিরাজ ভালোই বুঝল চন্দ্রা তাকে এড়িয়ে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। এসব দেখে তার মাথার রাগ আরো চড়ে উঠলো।
সিয়াম এবার সবার উদ্দেশ্য বললো “আজ কি তোরা ফ্রী আছিস..?” সিয়া সিরাজ দুইজনেই একসাথে প্রশ্ন করল ” কেন ভাইয়া কিছু দরকার ছিল…?” সুইটি বেগম সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বললেন “কোথাও যাবি বাবা..?”
সিয়াম সুইটি বেগমকে বলল “হ্যাঁ মনি, চন্দ্রর বাবা ফোন করেছিলেন আমাদের দুজনকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই আমি চাইছিলাম সিয়া ও সিরাজ আমাদের সাথে চলুক।” সিয়া ব্রেড মুখে দিতে দিতে বলল “আমার তো হবে না ভাইয়া এমনিতেই অফিস থেকে এই মাসে দুটো লিভ নিয়ে নিয়েছি দরকারি কারণে। আর লিভ নেওয়া যাবে না। তবে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ওখানে পৌঁছে যেতে পারি।” সিয়াম সিয়াকে বলল ” হ্যাঁ তাই করিস তবে। আর সিরাজ তুই যাবি তো..?তুই যে আজ ফ্রী আছিস তা কিন্তু আমি জানি।”
চন্দ্রার এবার অস্বস্তি হতে শুরু করল এই লোকটা যে কেনো সিরাজকে ধরে টানাটানি করছে চন্দ্রা তাই বুঝতে পারছে না। সিরাজ প্রথমে না বললেও অবশেষে মা আর ভাইয়ার জোরাজুরিতে হাপিয়ে বলে উঠল “ফাইন, যাবো কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না রাতের আগেই ব্যাক করবো আমি। “সিয়াম বললো “আচ্ছা তাই, তাও চল।”
সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট সেরে যে যার কাজে বেড়িয়ে পড়ল। সিয়াম চন্দ্রাকে সন্ধ্যে বেলায় রেডি হয়ে থাকতে বলে সেও বেরিও গেলো।
চন্দ্রা কিচেনে অল্প হাতে হাতে কাজ করে সিয়ামের দেওয়া গল্পের বই নিয়ে বসলো নিজের রুমে। সেইসময় চন্দ্রার ঘরে সুইটি বেগম প্রবেশ করলেন। চন্দ্রা সুইটি বেগমকে দেখে বই রেখে উঠে দাঁড়াল। সুইটি বেগম হেসে চন্দ্রাকে বললেন ” ইটস ওকে বেটা ওতো উত্তেজিত হতে হবে না। চন্দ্রা তাও সুইটি বেগমকে বললেন “আরে না মনি উত্তেজিত হবো কেনো..? আর তুমি দাড়িয়ে আছো কেন বসো বসো।” সুইটি বেগম হাতের ব্যাগটা নিয়ে সোফায় বসলেন। চন্দ্রাকেও বললো বসার জন্যে চন্দ্রা বসলো আরেকটি সোফায়। সুইটি বেগম চন্দ্রার উদ্দেশ্যে বললেন “আমার তো তোমার বিয়ের সময় তেমন কিছু দেওয়া হয়নি বেটা,তাই এই সোনার আংটি টুকু এনেছি।”
চন্দ্রা বলে উঠল “এসবের আবার কি দরকার ছিল মনি..? তোমার ভালবাসাই তো যথেষ্ট আমার জন্যে।”
সুইটি বেগম চন্দ্রার হাতে আংটি পড়ানোর জন্য টেনে নিয়ে বলতে লাগলেন “তা হয় নাকি আমি না তোমার শাশুড়ির মত সে থাকলে কি আর কোনো খামতি রাখতো বলো কোনো কিছুতে আমিও রাখতে চাইনা মা।” বলে আংটি টা পরিয়ে যেই চন্দ্রার হাতের দিকে ভালো করে নজর দিলেন ওমনি চমকে উঠে চন্দ্রার হাত কিছুটা তুলে বললেন “এই বালা তুমি কই পেলে চন্দ্রা..?এই বালা তো সিয়ামের মায়ের।”
সুইটি বেগম বেশ চেপেই হাতটা ধরায় চন্দ্রার হাতে কিছুটা ব্যাথা লাগলো। সে একপ্রকার নিজের হাত না সুইটি বেগমের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল “সিয়াম দিয়েছে মনি এই বালা আমায়।” সুইটি বেগম আগের মতোই চমকে জিজ্ঞেস করলেন ” কিন্তু সিয়াম যে বলেছিলো এই বালা জোড়া তার কাছে নেই..?” চন্দ্রা বললো “তা তো জানি না মনি উনি এলেই ভালো বলতে পারবেন।”
সুইটি বেগম এবার কিছুটা নরম হয়ে বললেন “খুব সুন্দর মানিয়েছে তোমায় বালাটা চন্দ্রা, কই দেখি আমি একবার ভালো করে..” বলে চন্দ্রার হাত থেকে বালাটা খুলতে গেলেই চন্দ্রা হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো “আসলে মনি উনি এই বালা জোড়া আমায় খুলতে বারণ করেছেন, কিছু মনে করবেন না।”
সুইটি বেগম হেসে বললেন ” আরে না না ঠিক আছে আসলে সিয়াম বলেছিলো তার কাছ থেকে এই বালা জোড়া চুড়ি হয়ে গেছে তাই আর কি দেখছিলাম ভালো করে ওইটা আসল কি নকল।” এই বলে সুইটি বেগম বেশ চিন্তিত মুখ নিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলেন। চন্দ্রার এবার বেশ সন্দেহ হচ্ছে এই সুইটি বেগমর উপর তিনি এই রোদ তো এই বৃষ্টি তাকে বোঝার উপায় নেই।

_________________________________

বিকেল ৪ টে

সিয়াম আজ একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছে অফিস থেকে। এই প্রথম সে শশুর বাড়ি যাচ্ছে সাথে কিছু ফল মিষ্টি নিতে হবে। তার জন্যই সিয়াম ভেবেছে তারা একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আগে সেগুলো কিনবে তারপর তার শশুরবাড়ি ঢুকবে। ঘরে ঢুকে সিয়াম আসেপাশে চন্দ্রকে দেখতে না পেয়ে বেশ মন ভার করলো। এই কয়দিনে অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে ওর। অফিস থেকে এসে চন্দ্রার মুখ না দেখলে তার সারাদিনের ক্লান্তি আরও যেনো বেড়ে যায়। কই সে অফিস থেকে এলে তার সামনে ঘুর ঘুর করবে তা না কই গিয়ে বসে আছে কে জানে…?
চন্দ্রাকে উচ্চস্বরে একবার ডাকতেই চন্দ্রা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো “আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন সিয়াম। আমি পুরো রেডি আপনার কফি নিয়ে যাচ্ছি খেয়ে তারপর বেরোবেন।” সিয়াম বেচারা আর কি করবে। বউয়ের আদেশ বলে কথা তাই অগত্যা সেও মুখ ভার করে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
সিয়াম ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই সামনে তাকিয়ে হুশ উড়ে গেলো তার। সে ভাবেনি এতো বড়ো চমক অপেক্ষা করছে তার জন্য। সামনে চন্দ্রা দাড়িয়ে কফি মগ হাতে নিয়ে, পরনে তার লাল জর্জেটের শাড়ি ম্যাচিং করে লাল ব্লাউজ আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। হাতে সিয়ামের দেওয়া দুই জোড়া বালা, কানে ছোটো ঝুমকা। চন্দ্রা দেখতে বেশ গোলগাল টাইপের কিন্তু একে মোটা বলা যায়না ঠিক আবার রোগাও বলা যায়না, তার সাস্থ্য ভালো। তারউপর ফর্সা মুখটা বেশ মিষ্টি ধরনের হওয়ার কারণে শাড়টা একটু বেশিই ফুটেছে তার শরীরে।
সিয়ামের হার্টবিট ভীষণ ফাস্ট চলতে শুরু করল, এক্ষুনি জানো তার হার্টটা লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে বাইরে। এর আগেও সে চন্দ্রকে দেখেছে বিয়ের সাজে কিন্তু সেইরকম ভাবে দেখার সুযোগ তার হয়নি। চন্দ্রা ঘরে সবসময় শাড়ি নয়তো লং কিছু পরে আর তেমন সাজেও না তারপর হঠাতই এই রূপ দেখে সিয়ামের মনে হচ্ছে কোনো অপ্সরী দাড়িয়ে আছে তার সামনে।
চন্দ্রা এবার সিয়ামের চাহনি দেখে শুধু খানিকটা না বেশ খানিকটা লজ্জা পেল। একটা মেয়ে হয়ে সে বোঝে এই চাহনির মানে তাই আর দাড়িয়ে না থেকে সিয়ামের কাছে এসে বললো “আমায় দেখা শেষ হলে এবার কফিটা নিন।”
চন্দ্রা সামনে থাকায় তার শরীর থেকে তেড়ে আসছে এক কড়া মিষ্টি পারফিউমের সুভাস। সিয়মের মাথা ঝিমঝিম করছে, নেশা লেগে যাচ্ছে সামনের মানুষটার। নাহ এভাবে একভাবে তাকিয়ে থাকলে আজ একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে সে। যা সিয়াম চায় না এখন একদমই না। তাই চোখের দৃষ্টি নামিয়ে কফির মগটা হাতে নিয়ে বললো “তা এতো সাজগোজের কারণ জানতে পারি..?” চন্দ্রা উত্তর দিলো “কারণ আবার কি..? কতদিন বাদ বাপের বাড়ি যাচ্ছি বলুন তো। আর এতো সাজগোজ কই হালকার উপর একটু মেকআপ করেছি ব্যাস।”
সিয়াম এবার কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো “কারণ কি শুধু এটাই..?” চন্দ্রা চোখটা একটা এপাশ-ওপাশ করে উত্তর দিলো “হ্যাঁ তা নয়তো কি..?” সিয়াম এবার কফির মগ পাশে রেখে বললো ” আচ্ছা বেশ তাই মানলাম। তুমি দাঁড়াও আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি।” বলে সিয়াম রেডি হতে চলে গেলো।
চন্দ্রা নিজের মনকে এবার জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা সত্যিই কি সে শুধু বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য এতো সেজেছে..?”
ভিতর থেকে উত্তর এলো নাহ আজ সিয়ামের সাথে প্রথম কোথাও বেরোনো তার। তারউপর মানুষটার একটু দৃষ্টি আকর্ষণ.? নাহ্ নাহ্ ছি..! কিসব ভাবছে চন্দ্রা সে মনকে কষিয়ে এক ধমক দিলো।
এরই মধ্যে সিয়ামও চলে এলো ড্রেস চেঞ্জ করে। এবার অবাক হওয়ার পালা যেনো চন্দ্রার সিয়ামকে দেখে আরেকবার ক্রাশ খেলো সে। ব্ল্যাক শার্ট সাথে জীন্স চুলগুলো হালকা বড়ো হওয়ার কারণে কিছুটা কপালে পরে চোখে হোয়াইট ফ্রেমের চশমা যদিও সে চশমটা খুব দরকারেই পড়ে কিন্তু চন্দ্রার তাও মনে হলো এইটার সাথে সিয়ামকে একটু বেশি মানাচ্ছে। সিয়াম চন্দ্রাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলল “তা আজ কি যাওয়ার প্ল্যান আছে ম্যাডাম..?”
চন্দ্রার হুশ ফিরল এবার সে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন।” সিয়াম বললো “তুমি গিয়ে বাইরে দাড়াও আমি সিরাজকে ডেকে আনছি।” চন্দ্রার খুশি এক নিমেষে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো সিয়ামের এইকথা শুনে। সে মুখ বেজার করে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।
কিছুক্ষন বাদ চন্দ্রা দুই ভাইকে আসতে দেখলো গাড়ির সামনে। সিরাজ শুধু চন্দ্রাকে একপলক ভালো করে দেখে নিল। চোখ ঝলসে যাচ্ছে তার বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা দায় হয়ে উঠলো তার জন্যে তাই চোখ নামিয়ে সিয়ামকে গাড়িতে তুলে দিলো। তারপর নিজে গিয়ে বসলো ড্রাইভারের পাশের সিটে। সামনের আয়না দিয়ে চন্দ্রাকে ভালোভাবে দেখা গেলেও সিরাজ গোটা রাস্তায় একবারও তাকালো না চন্দ্রার দিকে ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌঁছে গেলো চন্দ্রার বাড়ি। সবাই গাড়ি থেকে নেমে জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ির বেল বাজতে একজন দরজা খুলে দিল।
সামনের মানুষটিকে দেখে চন্দ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে সামনের মানুষটিকে সে মোটেও আসা করেনি এই সময়ে।

#চলবে..?

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #১১

সামনের মানুষটিকে দেখে চন্দ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে সামনের মানুষটিকে সে মোটেও আসা করেনি এই সময়ে।
চন্দ্রার সামনে দাঁড়িয়ে চন্দ্রার দিদি ইন্দ্রা। চন্দ্রা খাকিক্ষণ সময় নিলো তার অবাকের রেশ কাটাতে তারপরই ইন্দ্রার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা জড়িয়ে নিলো। ইন্দ্রাও এতদিন বাদ বোনকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

এরমধ্যেই চয়ন সাহেব বাইরে এসে দাঁড়ালেন। দুই মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে বললেন “কি শুরু করেছিস বলতো তোরা? দুজন জামাই এসে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আর তোরা এখন জড়াজড়ি করছিস।”
ইন্দ্রা এবার চন্দ্রা কে ছেড়ে চোখ মুছে বললো ” তাইতো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম সর দেখি জামাইকে ঢুকতে দে ঘরে।” বলে দুইবোন দরজা ছেড়ে দাড়ালো। সিয়াম সিরাজ ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো। চন্দ্রা গিয়ে তার পাপাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে থাকলো।
চন্দ্রার এইসময় ইন্দ্রার ব্যাপারে জানার তীব্র ইচ্ছে থাকলেও সে নিজেকে সামলে নিলো। পরে একান্তে নয় জিজ্ঞেসা করা যাবে সবার সামনে জিজ্ঞেস করলে যদি ইন্দ্রা অস্বস্তিতে পড়ে যায় এই ভেবে চন্দ্রা আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
চয়ন সাহেবকে সিয়াম আর সিরাজের সাথে কথা বলতে দেখে চন্দ্রা আস্তে করে উঠে তার দিদির কাছে কিচেনে চলে গেলো। ইন্দ্রা যে সিয়ামকে দেখে একটুও চমকায়নি এটা বেশ খটকা লেগেছে চন্দ্রার, কারণ মানুষের খারাপ দিকই আগে সবার চোখে পড়ে, যেমন তার পড়েছিল সিয়ামের ব্যাপারে।
চন্দ্রা রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো ইন্দ্রা অর্ধেক রান্না শেষ করে কড়াইতে সেমাই করছে। চন্দ্রা একটু দুষ্টুমি করে পা টিপে টিপে ইন্দ্রার পিছন দিয়ে কানের কাছে গিয়ে জোরে চেঁচালো “ধাপ্পাআআআআ” ইন্দ্রা চমকে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখলো চন্দ্রা হেসেই যাচ্ছে। ইন্দ্রা এবার চন্দ্রার কান ধরে বললো “ওরে বদমাশ এখনও পল্টাসনি তুই সেই আগের মত পাজিই রয়ে গেছিস..?” চন্দ্রা হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললো “কিন্তু তুই অনেক পাল্টে গেছিস দিভাই। কি হাল করেছিস নিজের দেখেছিস..? চোখ কোটরে ঢুকে গেছে, গায়ের আসল রঙ চাপা পরে গেছে। আর জিজুই বা কই..? আর আর বাবা কি করে..? মানে তোর উপর তো ভীষণ রেগে ছিলো হটাৎ কি এমন হলো..?”
ইন্দ্রা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল “সে অনেক ঘটনা রে। আপাতত এইটুকুই জেনে রাখ ওই সংসার ছেড়ে চলে এসেছি। বলতে গেলে বাবা গিয়েই নিয়ে এসেছে। সত্যি বলতে তো সিয়ামের জন্যই…” ইন্দ্রা পুরো কথা শেষ করতে পারলো না বাইরে থেকে চয়ন সাহেব হাঁক দিলেন নাস্তা নিয়ে যাওয়ার জন্য। চন্দ্রা চেঁচিয়ে বলল “আসছি পাপা দুই মিনিটে” বলে ইন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলো “হ্যাঁ সিয়ামের ব্যাপারে কি বলছিলি যেনো তুই..?
ইন্দ্রা হেসে বললো ” না না তেমন কিছু না। খালি বললাম উনি খুব ভালো।” চন্দ্রা ফট করে জিজ্ঞেস করলো “তুই কীকরে জানলি..?” ইন্দ্রা এবার বললো “বাবার কাছে শুনেছি উফফ তুইও না এতো প্রশ্ন করিস কেনো বলতো..? যা নাস্তা নিয়ে যা তাড়াতাড়ি” বলে চন্দ্রাকে হাতে নাস্তার ট্রে দিয়ে ড্রয়িং রুমে পাঠিয়ে দিল।

রাত ৮ টায় সিয়াও চলে এলো। রাতের খাওয়া সবাই একসাথে সম্পূর্ণ করলো। খাওয়ার শেষে চন্দ্রা, ইন্দ্রা আর সিয়া গিয়ে এক রুমে বসলো। সিয়ার ইন্দ্রাকে বেশ মনে ধরেছে, তার মধ্যে একটা মা মা ভাব আছে। সিয়া ইন্দ্রার গাল টেনে বললো “কি মিষ্টি গো তুমি একদম পুতুলের মতো। তোমায় আর চন্দ্রা ভাবীকে অনেকটা এক দেখতে মনেই হয়না তুমি চন্দ্রা ভাবীর থেকে বড়ো মনে হয় সমবয়সী তোমরা দুজন।” ইন্দ্রা হেসে বললো “তুমিও ভারী মিষ্টি সিয়ারানী”
চন্দ্রা এতক্ষণ ব্যাগে কি একটা খুঁজছিল ওদের কথা শুনে চন্দ্রা বললো “ওর কথা আর বলনা আপু ছোটো থেকে যে কত লাভ লেটার পেয়েছে তার ঠিক নেই।
ইন্দ্রা ধমক দিয়ে বললো “আবার বেশি বলছিস চুপচাপ নিজের কাজ কর।”
সিয়া এইসব শুনে বললো ” তাই আপু তা তোমার কাউকেই পছন্দ হয়নি..?আচ্ছা আপু তোমায় চন্দ্রা আপুর বিয়ের সময় কেনো দেখিনি..?”

ইন্দ্রা এবার চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে দেখল চন্দ্রা কাজ থামিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সিয়া দুজনকে দেখে বললো ” প্রবলেম থাকলে ইটস ওকে আপু। আমি তো এমনিই জানতে চাইছিলাম।”

ইন্দ্রা এবার বললো “না সিয়া তুমিও তো আমার বোনের মতই তোমাকে বলতে আমার প্রবলেম নেই। আর চন্দ্রা তুইও জানতে চাইছিলি না..? আয় এখানে এসে বস। আমি খুলে বলছি।” চন্দ্রা ব্যাগ ছেড়ে এসে বিছানার একধারে বসলো।

ইন্দ্রা এবার বলতে শুরু করলো। ইন্দ্রা বললো “আমি যখন সদ্য কলেজ পড়ুয়া। তখন আমি প্রেমে পড়ি আমার চেয়ে ৭ বছরের বড়ো এক ছেলের তার নাম ছিল পলাশ। সে আমার অনেক খেয়াল রাখতো। ছোটোবেলা থেকে তেমন মা-বাবা কারোর আদরিই পাইনি আমি। তাই একটু ভালোবাসা আর যত্ন পেতেই আমি মিইয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে। তাকে ছাড়া সব কেমন ফিকে ফিকে লাগতো। আমার রিলেশন ছিলো এক বছর তিন মাসের। তাও ও আমার কোনো ভুল হলে নিজের উপর নিয়ে নিত। একদিন হঠাৎই বললো ওর বাড়ি থেকে নাকি জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে আমায় ওকে তখনই বিয়ে করতে হবে নয়তো তাকে আমি চিরদিনের জন্য হারাবো।আমি ভিষন ভয় পেয়ে গেলাম। বাবাকে ওর কথা বলার সাহস আমার ছিলো না কারণ ও তখনও ছিলো বেকার, তারউপর আমি তখন সবে সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি। তার জোড়াজুড়িতে সেই রাতেই সাহস করে মায়ের কিছু গয়না আর মায়ের একটা বেনারসি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম ওর সাথে। সেই রাতেই আমরা বিয়ে করি, আর সাক্ষী থাকে ওর কিছু বন্ধুরা। তারপর পলাশের ঘরে উঠি। পলাশরা ছিলো এক ভাই এক বোন। বোন তখন ছোটো সবে ক্লাস এইটে পড়ে। আর ছিলো বলতে পলাশের মা-বাবা। সকালে সেই খবর আমার বাড়িতে জানানো হতেই বাবা আমায় ত্যাজ্য করলেন। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল চন্দ্রার জন্যে কারণ ওকে আমি ছোটো থেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছি।
এইরকম ভাবেই কেটে গেলো পাঁচ মাস। ভালোই চলছিল সব পলাশরা বেশ উচ্চবিত্ত পরিবারের ছিলো। সমস্যা শুরু হলো চার মাসের মাথায়। ইন্দ্রার কোনো কাজই জানো তার শশুর শাশুড়ীর পছন্দ হতো না। কোনো না কোনো কিছু নিয়ে তারা অশান্তি লাগিয়েই রাখতেন এভাবে ইন্দ্রার কলেজে যাওয়াও তারা বন্ধ করে দিলেন। প্রথম প্রথম পলাশ ইন্দ্রার সাইড নিয়ে কথা বললেও কিছুদিন পর থেকেই ইন্দ্রাকে প্রচন্ড মারধর শুরু করে। শশুর শাশুড়ী দেখে তো কিছু বললেন না উল্টে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া যাবতীয় গয়না নিয়ে নিলেন। তার কিছুদিন পর ধরা পরে পলাশের পরকীয়ার কথা। বিয়ের পরও তার বাইরে দুটো প্রেমিকা ছিলো।
আমি জানতে পারি অর্ধেক পলাশের ফোন দেখে আর অর্ধেক পলাশের এক মেয়ে বান্ধবীর কাছ থেকে যদিও নিজের পরিচয় দিইনি আমি কাউকে। সেদিন সেসব কথা আমার মুখ থেকে শোনার পর রাতে ড্রিংক করে এসে পলাশ আমায় বেল্ট দিয়ে মারে লাথিও মারে পেটে যার চোটে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পলাশের বাড়ির লোক ভয় পেয়ে আমায় হসপিটালে নিয়ে যায়। তারপর এই খবর বাবার কানে পৌঁছায় বাবার এক চেনা পরিচিতর সূত্র ধরে। বাবা সব রাগ অভিমান ভুলে আমায় দেখতে যায় হসপিটালে আর সেখান থেকেই নিয়ে আসে আমায় এখানে ওদের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যে আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ তারা করতে চাইলে বাবা পুলিশে দেবে। আর ডিভোর্স লেটার বাবা পাঠিয়ে দেবে ওদের বাড়ি। আমার সেদিন বাবার সামনে দাঁড়াবার মুখ ছিলো না, কিন্তু কিছু করারও ছিলো না আমায় বেরোতেই হতো ওই নরক থেকে কিছু করে। এই বলে ইন্দ্রা থেমে চোখের জল মুছলো। চন্দ্রা ইন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরলো। সিয়ারও মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।
চন্দ্রা এবার জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা দিভাই এখন কি খবর ওই জানোয়ারের জানিস..?” ইন্দ্রা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল “হ্যাঁ শুনলাম আমি আসার পরের দিনই এক বড়োলোকের মেয়েকে বিয়ে করেছে। সুখেই থাকে বুঝলি চন্দ্রা এরা দিনশেষে, শুধু ঠকে যাই আমাদের মত বোকা মানুষরা।”
সিয়া মন খারাপের সুরে বলল “এখন আপু…?পড়াশোনা টা শেষ করবে না..?” ইন্দ্রা উত্তর দিলো “হ্যাঁ ইচ্ছে তো আছে। নিজের পায়ে দাঁড়াবো।”
চন্দ্রা বললো ” দিভাই তুই বরং ইউ এস এ চলে যা। তোর এক বন্ধুও থাকে না ওখানে..? এখানে যত একা থাকবি তত ডিপ্রেশনে চলে যাবি। একেবারে পড়াশোনা শেষ করে ফিরিস।” ইন্দ্রা বললো “বাবাও একই কথা বলছিলেন দেখি যদি ভিসা পাই তো চলেই যাব।”
এর মধ্যেই নীচ থেকে ডাক পড়লো সবার। তিনজন নীচে গিয়ে দেখলো সিরাজ রেডি হয়ে দাড়িয়ে আছে সিয়াকে নিয়ে ব্যাক করবে বলে। চন্দ্রা ও ইন্দ্রা অনেক জোর করলো সিয়াকে আজ রাত টা থাকার জন্য। কিন্তু সিয়া জানালো সকালে তার কিছু জরুরী কাজ আছে। আজ তাকে ব্যাক করতেই হবে। তেমন হলে সে আবার কাল বেলার দিকে আসবে নয় এখানে। এই বলে দুজন রওনা দিলো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

এদিকে চন্দ্রা ইন্দ্রার কাছে জেদ ধরেছে সে আজ তার কাছে ঘুমোবে। তাও ইন্দ্রা অনেক বুঝিয়ে চন্দ্রাকে সিয়ামের রুমে পাঠালো রাত ১ টার সময়। চন্দ্রা ঘরে ঢুকে দেখলো সিয়াম তার একটা গল্পের বই নিয়ে বিছানায় বসে বসে পড়ছে। চন্দ্রা সিয়ামকে বললো “আপনি এখনো ঘুমাননি..?” সিয়াম বই থেকে মুখ তুলে চশমা টা খুলে বললো “ফাইনালি মহারানীর এই ঘরে আসার সময় হলো।আমি তো ভাবলাম আজ আসবেই না এই ঘরে। আজকের দিনটা বরং দিদির সাথেই থাকতে পারতে চন্দ্র।”
চন্দ্রা বিছানায় বসতে বসতে বললো ” আমিও তো দিভাইকে বললাম সে কথা কিন্তু দিভাই শুনলে তো। বললো রাতে যদি আপনার কোনো কষ্ট হয়..?” তাই ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিল।
সিয়াম বিড়বিড় করে বললো ” যাক কেই তো বুঝলো আমার কষ্ট।”
চন্দ্রা বললো কিছু বললেন..? সিয়াম বললো “কই নাতো তুমি শুয়ে পরো আমি টেবিল ল্যাম্প অফ করে দিচ্ছি।”

_______________________________

রাত ২ টো

সিয়াম বিছানা থেকে উঠে বসে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বেলে আসতে করে ডাকল “চন্দ্র”
চন্দ্রা পাশ ফিরে বললো “আপনি এখনও ঘুমাননি..?”
সিয়াম বললো “পাশে একটা মানুষ শুয়ে ছটপট করলে কি পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার ঘুম হয়…?”
চন্দ্রা এবার নিজের কর্মের জন্য দুঃখিত হলো। বললো “সরি আমি বুঝতে পারিনি আপনি ডিস্টার্ব হচ্ছেন। আমি আর নড়াচড়া করবো না আপনি ঘুমান।”
এই বলে পাশ ফিরতে গেলেই সিয়াম বললো “চন্দ্র কি হয়েছেবলোতো…? দিভাই এর জন্য মন খারাপ লাগছে..?”
চন্দ্রা এবার ছলছল চোখে সিয়ামের দিকে তাকালো। আসলেই তার এইসব শোনার পর থেকেই ভীষণ খারাপ লাগছে। দিদিকে ভীষণ ভালোবাসে সে, ছোটো থেকেই দিদিকে স্টাগেল করে বড়ো হতে দেখেছে সে। তাই সে চায়না দিভাইয়ের গায়ে কোনো আঁচ আসুক।আচ্ছা পৃথিবীতে এতো বেঈমান মানুষ থাকতে তার দিভাইয়ের সাথেই কেনো..?
সিয়াম বললো ” কষ্ট পেওনা চন্দ্র। তোমার দিভাই জীবনে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাকে ভুগতেই হতো আজ না হয় কাল। এই ভুল আজকাল প্রচুর ছেলে মেয়ে করে জানো। তারা বুঝতে পরে না প্রেম আর সংসার এক জিনিস নয়। প্রেমিকের সাথে ঘণ্টার পর ঘন্টা কথা বলতে ইচ্ছে করে, তার হাতের ননুপোড়া রান্নাও তখন অমৃত মনে হয়। কিন্তু একজন স্বামীর ক্ষেত্রে তা হয়না বিয়ের পর আসতে ধীরে সব বদলাতে থাকে। দুই তিন ঘন্টার কনভারসেশন নেমে আসে তুই তিন মিনিটে। তখন স্ত্রীর হাতের রান্না ভালো হলেও একঘেয়ে মনে হয়। সময়ের সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন আসে এইরকম। তখন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস ভরসা না থাকলে জন্ম নেয় সন্দেহের আর সেই থেকেই ধরে সম্পর্কে ফাটল।”

চন্দ্রা মন দিয়ে শুনলো প্রত্যেকটা কথা। আসলেই তো সে নিজের চোখেও দেখেছে এইরকম কতো সম্পর্ক ভাঙ্গতে।

সিয়াম আবার বলা শুরু করলো “টাকা না থাকলে ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালায় এই প্রবাদটা মানুষ এমনি এমনি বলে না জানো চন্দ্রা। এই যুগে দাড়িয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষই নিঃসঙ্গতায় তার কাছের মানুষের সাথে থাকে। তেমনি হাতের পাঁচটা আঙ্গুলও এক হয়না।
তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তার প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দাও। দেখবে সে এমনিই তোমার থেকে দূরে চলে যাবে। কারন আসল ভালোবাসার ভার অনেক বেশি চন্দ্রা, সেটাকে সারাজীবন বহন করার মতো ক্ষমতা সবার থাকে না।vতাই তো চারিদিকে এতো বিচ্ছেদ। তোমার দিভাইয়ের লাইফে আবার কেউ আসবে দেখো যে এই সবের উর্ধ্বে গিয়ে আবার তাকে ভালোবাসতে দেখাবে। আর না আসলেও প্রবলেম নেই অন্তত কিছুটা হলেও মানুষ চিনতে শিখবে সে”

চন্দ্রা অবাক চোখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে রইলো তাকে এতো সুন্দর করে আগে কেউ বোঝায়নি। এখন তার মনটা অনেক হালকা লাগছে। সিয়াম চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে সেই ঘোর মেশানো কণ্ঠে ডাকল ” চন্দ্রাবতী..? আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দি একটু..?দেখবে এক্ষুনি ঘুম এসে যাবে।”
চন্দ্রার বোঝে না কি আছে এই ডাকে তাকে বার বার দুর্বল করে তোলে এই ডাক। সে আর না করার সাহস পেলো না। সিয়াম নীরব সম্মতির লক্ষণ ভেবে নিয়ে আসতে আসতে করে চন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। চন্দ্রাও এতদিন পর কারোর যত্ন পেয়ে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ল।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে