গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৫
চন্দ্রা সিয়ামের কথা শুনে দরজার গোড়ায় দাড়িয়ে পড়লো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পিছনে ঘুরে শক্ত গলায় বলল “ভেবে দেখবো” বলে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো।
রাত 12 টা
সিয়াম একবার ঘড়ির দিকে তাকালো আর একবার রুমের দরজার দিকে। নাহ মেয়েটা সেই যে গেলো আর তোহ এলো না। এখানের কিছুই সে তেমন চেনে না। কোনটা কার ঘর কোন ঘর খোলা হয়না মেয়েটা তোহ কিছুই জানে না। সিয়াম এবার হুইচেয়ারে করে আস্তে আস্তে রুমের বাইরে এলো নীচের তোলার চারদিকে খোঁজার পরও যখন চন্দ্রাকে পেলো না সিয়ামের মনটা ছটপট করতে লাগল।
এতো রাতে উচ্চস্বরে চন্দ্রার নাম নিয়েও সে ডাকতে পারছে না। চিন্তিত ভঙ্গিতে যেই বাগানের দিকের দরজায় যেতে যাবে ওমনি চন্দ্রাকে সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলো।
চন্দ্রা সিয়ামকে দেখে বলল “আপনি এখানে এতো রাতে..? কিছু দরকার ছিল..?”
সিয়াম একদৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বলল “আপনাকে”।
চন্দ্রা খানিকটা অবুঝের মতন বলল “সরি..? বুঝলাম না আমাকে দরকার মানে..?”
সিয়াম এবার গলাঝেরে বলল “না আপনি এত রাতেও রুমে আসছেন না দেখে একটু চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম এখানের তেমন কিছুই তোহ আপনি চেনেন না।তাই আর কি”
চন্দ্রা বলল “আপনার আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে। নতুন জায়গা চিনি না তোহ কি হয়েছে ঠিক চিনে নেবো।আপনি আমার দিকে একটু কম নজর লাগলেই খুশি হবো।”
এইবলে চন্দ্রা সিয়ামের পাশ কাটিয়ে সিয়ামের রুমে চলে গেলো।
সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল “নারী তুমি পরও বটে এই রোদ তোহ এই বৃষ্টি”
চন্দ্রা সিয়ামের ঘরটার এদিক সেদিক দেখছে। এই ঘর টাও আগের ঘরের মতো কিছুটা কিন্তু আগেরটার থেকে কিছুটা ছোট আর ওতো বড়ো খোলা বারান্দা নেই এই ঘরে।
খুট করে দরজা খোলার শব্দে চন্দ্রা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সিয়াম এক প্লেট খাবার নিয়ে রুমে ঢুকছে। খাবার দেখেই চন্দ্রার পেট টা চু চু করে ডেকে উঠলো।সেই যে বিকেলে এক কাপ কফি খেয়েছে তারপর কিছু খাওয়া হয়নি তার।কিন্তু সেটা এখন মুখ ফুটে বললে খারাপ দেখাবে তাই চন্দ্রা নিজের মতো ব্যাস্ত থাকার চেষ্টা করলো।
সিয়াম খাবারের প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে ডাকল”চন্দ্র..! খাবার টা খেয়ে নিন”
“চন্দ্রা, চন্দ্রা আমার নাম ” এক নিশ্বাসে বলল চন্দ্রা।
সিয়াম হালকা হেসে বললো “চন্দ্রাবতী বলতে বারণ করেছেন মেনে নিয়েছি কিন্তু চন্দ্র টা আমি শুনবো না আমি আপনাকে এই নামেই ডাকবো”।
চন্দ্রা প্রতিউত্তরে কিছু বলতে চেয়েও বললো না।সিয়াম এবার তারা লাগলো খেয়ে নেওয়ার জন্য।চন্দ্রা এবার অবাক হয়ে বললো “আপনি কি করে জানলেন আমি খাইনি..?”
সিয়াম বিছানায় রাখা বই গুলো ওঠাতে ওঠাতে বললো “মুখ দেখে।আপনার ওই শুকনো মুখই বলে দিচ্ছে আপনি অনেকক্ষণ যাবত না খেয়ে আছেন আর আপনার ক্ষীদেও পেয়েছে।”
চন্দ্রা আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে মনে পড়লো এতক্ষণ যাবত সে নিজেএকা একাই গাপুস-গুপুস করে খেয়ে নিয়েছে ক্ষীদের জ্বালায়। সামনের মানুষটি খেয়েছে কিনা একবারও জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
চন্দ্রা আস্তে করে মাথা তুলে সিয়ামের দিকে তাকাতেই দেখলো সিয়াম তার দিকে তাকিয়েই মিটিমিটি হাসছে। যেনো সে ধরতে পেরেছে চন্দ্রার মনে কি চলছে।
চন্দ্রা একটু আমতা আমতা করে বলল “সরি একা একাই খেয়ে নিলাম আপনাকে একবারও জিজ্ঞেস করা হয়নি। আপনি খেয়েছেন..?”
সিয়াম অমন ভাবেই জবাব দিলো “ইটস ওকে..! ক্ষিদে পেলে চেপে রাখবেন না। এটা ভালো জিনিস নয়।অসুবিধে হলে আমায় বলবেন।”
চন্দ্রা এবার বলল “আমার শেষ প্রশ্নের উত্তর দিন।”
সিয়াম চন্দ্রার হাবভাব দেখে হেসে বলল “আজ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”
চন্দ্রা প্লেট হতে দাড়িয়ে বলল “এই আপনিই না এক্ষুনি খাওয়া সম্পর্কে জ্ঞান দিচ্ছিলেন। এখন নিজেই পাল্টি মারছেন..?আমি এক্ষুনি আপনার জন্য খাবার আনছি অল্প হলেও খেয়ে শোবেন।”
এই বলে সিয়ামকে কিছু না বলেই চন্দ্রা প্লেট নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।
কয়েক মিনিট বাদ চন্দ্রা হতে খাবার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে বলল “নিন কম করেই এনেছি।অন্য সময় হলে জোর করতাম না কিন্তু জানেন আমার দাদী বলতো রাতে খালি পেটে শুতে নেই কিছু অন্তত খেতে হয়।”
সিয়ামের কাছে হালকা হেসে হুইচেয়ার ঠেলে টেবিলের কাছে গেল। চন্দ্রার এই ছোটো ছোটো কেয়ার গুলো তার কাছে জানো বিশাল প্রাপ্তি।
খাওয়ার প্লেট সামনে নিয়ে সিয়াম ভাবছে এবার সে খাবে টা কি করে..?সকালে ডান হাতে বেশ ভালই চোট পেয়েছে।সকালে ব্রেকফাস্ট সিয়া আর দুপুরে লাঞ্চে তার মনি তাকে খাইয়ে দিয়েছিল।এখন কি করবে সে..?
আকাশ – পাতাল ভেবে বাঁ হাতেই চামচ তুলে নিল সিয়াম।
চন্দ্রা কিছু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে সিয়ামকে ডাকতে গিয়ে দেখলো সিয়াম বাঁ চামচ দিয়ে যতবার খাবার তুলছে ততবারই খাবার টা আবার প্লেটে পরে আছে।
চন্দ্রা চুপচাপ কিছুক্ষণ এই দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
সিয়াম খাওয়ার ছেড়ে অপলক তাকিয়ে রইলো চন্দ্রার দিকে। এই বাড়ি আসার পর এই প্রথম মেয়েটাকে সে হাসতে দেখলো। খুব করে চন্দ্রার কাছে গিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো “এই মেয়ে এরামি সবসময় হাসি খুশি থাকতে পারো না..? সারাক্ষণ ঐরম গোমড়া মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াও কেনো..?” কিন্তু মুখ দিয়ে শুধু বেরোলো “আপনি হাসছেন..? এদিকে আমি খাওয়ারের সাথে যুদ্ধ করে হাপিয়ে উঠছি।
চন্দ্রা কিছুকরে হাসি থামিয়ে বলল “এই জন্যেই আপনি রাতে খেতে চাইছিলেন না তাই নাহ..?”
সিয়াম শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে এবার সেই একই কাজে মন দিলো।
চন্দ্রার এবার খারাপ লাগলো তার কিছু ভুলের জন্যই মানুষটার আজ এই অবস্থা।চন্দ্রা একবার সিয়ামকে জিজ্ঞেস করবে ভাবল যে সে কি খাইয়ে দেবে..? তারপর নিজের মনকেই বকা দিলো এসব কি ভাবছে সে এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তারপর কয়েক সেকেন্ড পর ভাবল কারোর হেল্প করা বাড়াবাড়ি হলে হোক বাড়াবাড়ি।
এইভাবে চন্দ্রা টেবিলের সামনে গিয়ে সিয়ামে কে ইতস্তত করে বলল “আপনার খেতে প্রবলেম হলে আমি খাইয়ে দি…?”
সিয়ামের কানে কথাটা প্রবেশ করতেই সিয়াম ভাবলো সে নিশ্চই ভুল শুনেছে তাই আরেকবার চন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করলো “হ্যাঁ..?কিছু বললেন..?”
চন্দ্রা এবার মুখটা নীচু করে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল ” আমি খাইয়ে দি..?”
সিয়ামের খুশি দেখে কে..?হতে যেনো চাঁদ নিজে এসে ধরা দিয়েছে। এরাম অফার রোজ রোজ এলে তোহ সে নিজ ইচ্ছায় প্রতিদিন হাত কাটতে রাজি। তবু মুখে তার কোনো রিয়াকশন না দিয়ে বলল “আপনার প্রবলেম না থাকলে আমারও কোনও প্রবলেম নেই”।
চন্দ্রা নিজের হাত ধুয়ে এসে প্লেট টা হাতে তুলে ভাত মেখে সিয়ামের মুখের সামনে ধরলো।
সিয়াম একবার চন্দ্রার দিকে দৃষ্টি দিয়ে হাতের খাবার টুকু মুখে নিলো। এইরকম করে পুরো প্লেটের ভাত দশ মিনিটের মধ্যে শেষ করে ফেললো সিয়াম।
চন্দ্রা প্লেট টা রান্নাঘরে রেখে হাত ধুয়ে এসে দেখল সিয়াম হুইচেয়ার থেকে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করছে নিজে নিজে তাকে দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।
চন্দ্রার এবার একটু খারাপ লাগলো তাহলে কাল রাতেও লোকটা এইভাবেই শুয়েছে,আর সে কিনা টেরই পায়নি।
চন্দ্রা সিয়ামের দিকে এগিয়ে গিয়ে সিয়ামকে উঠতে সাহায্য করলো।সিয়াম হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো চন্দ্রার দিকে এই কি সকালের তাকে সেই তিক্ত কথা শোনানো মেয়েটি..? তাহলে সকালের চন্দ্রার চরিত্রের সাথে এখনকার চরিত্রের মিল পাচ্ছে না কেনো সিয়াম..?
চন্দ্রা সিয়ামকে বিছানায় শুয়ে চাদর টেনে দিল।
চন্দ্রা সিয়ামের এতো কাছে আসায় চন্দ্রার শরীরের মিষ্টি এক সুবাস সিয়ামের নাকে ঠেকলো।সিয়ামের এবার যেনো নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল লাগছে। সে বুঝতে পারছে সে ডুবে যাচ্ছে একজনের নেশায়।সেই অবস্থাতেই সিয়াম ঘোর লাগানো কণ্ঠে ডাকল “চন্দ্র” চন্দ্রা মুখ তুলে বলল “হুম বলেন” সিয়াম একইভাবে বলল “আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমি এখনও পাইনি।আমরা কি বন্ধু হতে পারি..?”
চন্দ্রা কিছুটা সময় নিলো তারপর বিছানার আরেকপাশে বসতে বসতে শুধু বলল “হুম হতেই পারি”।
#চলবে..?