গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৪
চন্দ্রা আর দাঁড়াতে পারলো না স্থির হয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
রুম থেকে বেরোতেই একজনের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেল সে সামনের মানুষটিকে দেখে সে আরো চমকে গেলো। তার সামনে দাড়িয়ে সিরাজ। সিরাজকে দেখে মনে হলো না সে খুব একটা চমকেছে….
চন্দ্রা চমকের পর চমক পেয়ে স্তব্দ হয়ে চেয়ে রইলো সিরাজের দিকে।
সিরাজ পকেটে হাত ঢুকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল “কি সুইটহার্ট কেমন আছো..?আমি কে বলো তোহ তোমার..?দাড়াও আমিই বলে দিচ্ছি আমি হলাম তোমার ওয়ান অ্যান্ড ওনলি সুইট দেবর।”
চন্দ্রা চমকের পর চমক পেয়ে স্তব্দ হয়ে চেয়ে রইলো সিরাজের দিকে।
সিরাজ চন্দ্রার মাথা থেকে পা অবধি ভালো করে দেখে বলল “আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়েছ দেখছি।রূপ তোহ ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে অঙ্গ দিয়ে।”
চন্দ্রার রাগে ঘৃণায় শরীর রিরি করে উঠল।ইতিমধ্যে রাগে চোখ লাল হয়ে উঠেছে তার।যেই মানুষটাকে সে দুচক্ষে সহ্য করতে পারে না। তারই কিনা বড়ো ভাইয়ের বউ সে..?নিজের ভাগ্যের উপর ভীষন রকম রাগ হলো তার। চুপচাপ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রইল সিরাজের দিকে।
সিরাজ তা দেখে চন্দ্রকে বলল “ইস এতদিন বাদ আমায় দেখে লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে দেখছি তোমার।”
চন্দ্রার একটু কাছে এসে মুখটা হালকা কানের কাছে নিয়ে বলল ” তা এতো রূপকি শুধু ভাইয়ার জন্য..?না মনে আমি কিন্তু ভাইয়ার থেকে বেশি তোমার…..”
কথাটা পূরণ হতে দিলো না চন্দ্রা নিজের গায়ের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে গালে একটা কষিয়ে থাপ্পড় মারলো সিরাজের।
সিরাজ গালে হাত দিয়ে মুখ শক্ত করে যখনই চন্দ্রাকে কিছু বলতে যাবে ওমনি পিছন থেকে আওয়াজ এলো…
“আরে দুই ভাবী দেবর মিলে কি গল্প হচ্ছে এখানে..?”
সিরাজ চন্দ্রা দুজনেই চমকে পিছনে তাকালো সিয়ামের হাসি মুখ দেখে তোহ মনে হচ্ছে না সে কিছু শুনেছে বলে। সিরাজ সস্তির নিশ্বাস ছাড়ল নাহ তাকে সচেতন থাকতে হবে আরও নইলে এতো বছরের পরিকল্পনা মাটিতে মিশতে বেশি সময় লাগবে না।কিন্তু সেই বা কি করবে এতদিন বাদ চন্দ্রাকে সামনে থেকে দেখে সে হুশ হারিয়ে ফেলেছিল।কাল থেকে সুযোগে ছিলো চন্দ্রাকে একটু একা পাওয়ার।
সিরাজ খানিক হেসে সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলল “ও কিছু না ব্রো..ভাবী দেবর মিলে একটু খুনসুটি করছিলাম। আফটার অল একমাত্র ভাবী আমার। তাই না ভাবীইইই।”
এই বলে চন্দ্রার দিকে তাকাতেই চন্দ্রা একপলক সিয়ামের দিকে তাকিয়েই এক ছুটে নীচে চলে গেলো।
সিয়াম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল চন্দ্রার যাওয়ার পানে তার কোনো জানি মনে হচ্ছে কিছু তোহ একটা ঘটেছে তার অজান্তে”
সুরাজ সেই দেখে সিয়ামকে বললো “ভাবী মনে হয় আমার কথায় লজ্জা পেয়েছে, দেখ কেমন দৌড়ে চলে গেলো”
সিয়াম সিরাজের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় উত্তর দিলো “হম হয়তো”।
________________________________
বিকেল ৫ টা
চন্দ্রা হাতে দু কাপ কফি নিয়ে দোতলায় সিয়ামের ঘরে ঢুকলো।এই ঘরটা চন্দ্রার ভীষন পছন্দ হয়েছে কি সুন্দর চারিদিক খোলামেলা। ব্যালকনিটাও অনেকটা বড়ো আর বেশ নতুনত্ব ধরনের আসবাবপত্র চারিদিকে। চন্দ্রা ঘরটা ঘুরে দেখতে দেখতে মনে পড়লো যার জন্য সে এসেছে ঘরের চারিদিকে চোখ বুলিয়ে চন্দ্রা ভাবলো আরেহ লোকটা কই গেলো..? এই ঘরে তার কোনো জামাকাপড়ও দেখছি না।
চন্দ্রা রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে একজন সেরভেন্টকে ডেকে ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা এই ঘরের লোকটা কই আপনি জানেন..? মানে আসেপাশে কোথাও দেখেছেন..?”
সার্ভেন্টটা চন্দ্রার দিকে একটা কেমন ভাবে তাকালো তাকানোরই কথা বিয়ের পর কোনো বউ কি তার বরকে এইভাবে খোঁজে..?
সার্ভেন্টটা একটু গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো “ওই যে নিচের ডানপাশের ঘরটা দেখছেন। ওইটাই বড়োসাহেবের ঘর।”
চন্দ্রা অবাক হলো তাহলে এই এতো সুন্দর করে গোছানো ঘরটা কার…? সার্ভেন্টকে কিছু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে বলতে গিয়েই দেখলো সেখানে কেউ নেই। চন্দ্রার এই ঘরের সবকিছুই কেমন অদ্ভুত ঠেকছে কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না।আর সুইটি বেগমই বা কই..?চন্দ্রা মাথায় জোর দেওয়ার চেষ্টা করলো নাহ সেই যে তাকে ডেকে লাঞ্চ দিলো তারপর তোহ তাকে কোথাও দেখাই যাচ্ছে না।
চন্দ্রা এসব ভাবতে ভাবতেই নীচে সিয়ামের ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল।কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে দরজায় হালকা টোকা দিলো।
ভিতর থেকে সিয়ামের আওয়াজ এলো “দরজা খোলা আছে”
চন্দ্রা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলো সিয়াম হুইচেয়ারে বসে একটা বই পড়ছে। চন্দ্রকে দেখে হালকা হেসে বলল “অরেহ আপনি সারাদুপুর কোথায় ছিলেন..?”
চন্দ্রা আমতা আমতা করে বলল “আসলে মনটা একটু খারাপ ছিল তাই ছাদে গিয়ে বসেছিলাম।”
সিয়াম বলল “বেশ করেছেন।মাঝে মধ্যে নিজেকে সময় দেওয়া ভালো।তবে আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।”
চন্দ্রা বেশ অবাক হলো তার সাথে আবার কি জরুরী কথা..?
সিয়াম এবার চন্দ্রার হাতে দুটি কফি মগ দেখে বলল “উম এটা কি আমার..?”
চন্দ্রা তাড়াহুড়ো করে বলল “ওই মানে আমি এই সময়ে কফি খাই তাই মনে হলো আপনারা জন্যেও নিয়ে আসি।”
সিয়াম হালকা হেসে কফি মগ টা নিয়ে চন্দ্রাকে বলল “বসুন আপনারই তোহ রুম”।
চন্দ্রা এবার কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে ফেললো “আচ্ছা ওই উপরের রুমটা কার যেই রুমে কাল রাতে ছিলাম..?”
সিয়াম কফি মগ টা পাশে রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করলো “ওই রুমটা আমারই।কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে আমি আর ওই উপর রুমে থাকি না।কারণ টা নিশ্চই বিস্তারিত বলে দিতে হবে না আপনাকে।”
চন্দ্রা এবার হালকা লজ্জিত হল আসলেই তোহ তার মাথাতেই আসেনি এই পা নিয়ে সিয়ামের উপর নীচ করা অসম্ভব।
চন্দ্রা কথা ঘোরাতে বলল “তা আপনি কিছু জরুরী কথা বলবেন বলছিলেন..?”
সিয়াম এবার সিরিয়াস ভাবে বলল “দেখুন আমি আপনাকে দেখে যা বুঝলাম আপনি হয়তো জানতেন না বিয়ের আগে আমার ব্যাপারে।সেই কোথায় পরে আসি।তবে আপনাকে দেখে আমি যা উপলব্ধি করলাম আপনি যেমন জীবনসঙ্গী চেয়েছেন আমি সেইরকম নই মানে আর চারপাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো। তাই অনেক ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে আর এই সম্পর্কে আটকে রাখবো না। আমি যত দ্রুত সম্ভব আমাদের ডিভোর্সের ব্যাবস্থা করছি।তবে এই কাজ গুলো হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে তাই সেই কটা মাস আপনাকে আমায় সহ্য করতেই হবে ম্যাডাম”
চন্দ্রা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো সিয়ামের দিকে হ্যাঁ এটাই তো সে চায় তবে এখন সে খুশি হতে পারছেনা কেনো..?সে তোহ কাল রাতেই ভেবেনিয়েছিল সিয়ামকে সে নিজেই ডিভোর্সের কথা বলবে।তাহলে এই কয়েক ঘন্টায় এমন কি হলো তার মন এমন আনচান করছে।
চন্দ্রার গভীর ভাবনা দেখে সিয়াম আস্তে করে উচ্চারণ করলো “চন্দ্রাবতী”
চন্দ্রা সেই গভীর ভাবনা অবস্থাতেই উত্তর দিল “হুম”
চোখের পলকেই চন্দ্রার ধ্যান ফিরলো বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলো “এক্ষুনি আপনি আমায় কি নামে ডাকলেন…?”
সিয়াম সেই সকালের মতো মনভোলানো হাসি দিয়ে বলল “চন্দ্রাবতী”
চন্দ্রার আবার সকালের মত অনুভূতি হলো সে চোখ শক্ত করে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল “আর এইনমে আপনি আমায় ডাকবেন না ” বলেই উঠে চলে যেতে নিলে
সিয়াম উচ্চস্বরে বলে উঠলো “আচ্ছা তা নাহয় ডাকলাম না। কিন্তু স্বামী – স্ত্রী না হই বন্ধু হয়ে তোহ থাকতেই পারি এইকয়টা মাস তাই না..?”
চন্দ্রা সিয়ামের কথা শুনে দরজার গোড়ায় দাড়িয়ে পড়লো কিছুক্ষণ সময় নিয়ে পিছনে ঘুরে শক্ত গলায় বলল….
#চলবে..?