বেড়াজাল পর্ব-০৩

0
645

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩

সিয়ামের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।সে আগের মতই বসে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে ভীষণ জ্বালা অনুভব করলো।এবার বোধহয় তার অবাক হওয়ার পর্যায় শুরু হলো সে মনে মনে বললো “অবাক নোং ২”|

সে দেখলো চন্দ্রা একটা ফাস্ট এইড বক্স থেকে তুলো নিয়ে ওষুধ লাগাচ্ছে তার ক্ষতস্থানে। তার কারনই তার হাতের এই জ্বালাপোড়া।সিয়াম এবার সব ব্যাথা ভুলে হ্যাঁ করে তাকিয়ে রইল চন্দ্রার দিকে।একটু বেশি ব্যাথা পেতেই খেয়ালের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এলো সিয়াম। তার নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো “আহঃ”
চন্দ্রা এবার ঘাবড়ে গেলো,উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো “সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি।আপনার কি খুব বেশি লাগছে..?”
সিয়ামের হাতে ব্যাথায় চেয়ে বেশি এখন কোনো জানি সুখ সুখ বেশি লাগছে…সে মুচকি হেসে বললো “যেচে কাঁচের সাথে ধাক্কা খেয়েছি ক্ষত তোহ হওয়ারই ছিল।”
চন্দ্রা প্রতিউত্তরে কিছু বলতে পারলো না আস্তে আস্তে ফু দিয়ে ক্ষত জায়গায় ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। সে বুঝতেই পারলো না কারোর মুগ্ধতার দৃষ্টি তার উপর পড়ছে। মানুষটা একটু একটু করে তার বেড়াজালে আটকে ফেলছে চন্দ্রকে।

চন্দ্রা খাবার টা সিয়ামকে দিয়ে চলে গেলো নীচে। সে নতুন বউ সারাক্ষণ রুমের ভিতর থাকলে বাড়ির মেহমানরা বিভিন্ন রকম কথা বলবে।

নীচে যেতেই চন্দ্রা দেখতে পেলো সুইটি বেগম অনেকগুলি মহিলার মাঝে বসে হাসিঠাট্টা করছেন। চন্দ্রাকে দেখতে পেয়েই হাত ধরে নীচে নিয়ে এসে সবার মাঝের সোফায় বসিয়ে দিলেন।

এক এক করে সুইটি বেগম সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন চন্দ্রার।পাশের সোফা থেকে এক ভাবী সুইটি বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন “হ্যাঁরে সুইটি মেয়ের বাড়ি থেকে কি কি দিলো রে…?”
চন্দ্রা এতক্ষণ মুখ নীচু করে বসে থাকলেও এবার মুখ তুলে সুইটি বেগমের দিকে চাইলো ভরসার দৃষ্টিতে। সুইটি বেগমে কি বুঝলেন তিনি সেই ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বললেন “না ভাবী আমরা কিছুই নিইনি।ওইটুকু জিনিস নিয়ে আমরা আর কি করবো বলো যেখানে আমাদের কাছে সমুদ্র সমান আছে।”

অন্যসব মেহমানরা এসব নিয়ে হাসিমসকরা শুরু করে দিলেন। কথাটা তাই আর বেশি দূর এগোলো না।
কিন্তু চন্দ্রার ঠিকই গায়ে লাগল কথাটা আচ্ছা সুইটি বেগম তার হয়ে কথা বললেন নাকি তার পরিবারকে অপমান করে..?

এসব ভাবনা বাদ দিয়ে চন্দ্রা সুইটি বেগমকে হালকা কাছে ডেকে কানে কানে বলল “মনি আমি কি এখন এখান থেকে উঠতে পারি..?মাথাটা ভীষণ ধরেছে।”

সুইটি বেগম বললেন “হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চই তুমি যাও জল খাবার খেয়ে নাও।এখন আরও কত মাথা ব্যাথা হবে।”
চন্দ্রা শেষের কথার অর্থ বের করতে পারলো না তাই বললো “আরও কত মাথা ব্যাথা মানে কি মনি..??”
সুইটি বেগম হেসে চন্দ্রার মাথায় হাত দিয়ে বললেন “কিছু না মা যাও তুমি খেয়ে বাইরের বাগান থেকে একটু ঘুরে এসো মন ভালো হয়ে যাবে।
চন্দ্রা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে বাগানের দিকে চলে গেলো।

চন্দ্রার এই সুইটি বেগমকে এই বাড়িতে আসা থেকেই কেমন জানো ঠেকছে।তার চরিত্র টা ঠিক কেমন সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। চন্দ্রা আর বেশি মাথার উপর জোর না দিয়ে বাগানের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলো। চারপাশ দেখে তার মন ভালো হয়ে গেলো । খুব সুন্দর পরিপাটি ভাবে সাজানো বাগানটা তারপর হরেক রকমের বিদেশি ফুল সযত্নে রাখা।চন্দ্রার ফুলের বিষয়ে অল্পসল্প চর্চার কারণে তার চিনতে অসুবিধে হলো না তবে সে সবকটা চিনতেও পারলো না।

হঠাৎই চন্দ্রার মনে হলো কারোর দৃষ্টি চন্দ্রার উপর পড়ছে।সে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো নাহ একজন মালি ছাড়া আর তহ কেউ নেই বাগানে। সেই মালিও নিজের মনে মাটি ঠিক করছে নতুন চারা লাগবে বোধহয়। চন্দ্রার কেমন যেনো ঠেকলো মনে সে আর বেশিক্ষণ সেখানে না দাড়িয়ে ফিরত এলো বাড়ির ভেতর। এখন তার এক কাপ কড়া কফির খুব দরকার।কিন্তু কাকে বলবে সে এখন বানিয়ে দিতে সে নিজে তহ পারে না বানাতে।এই রান্না জিনিসটা তার কাছে ভীষণ অপছন্দের একটা কাজ।
আশেপাশে সার্ভেন্টকে খুঁজতে লাগলো চন্দ্রা। তখনই এক সার্ভেন্ট এসে বলল “ম্যাম আপনি আমাকে খুঁজছিলেন..?”
চন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “হ্যাঁ কিন্তু আপনি কি করে জানলেন..?” সার্জেন্ট আমতা আমতা করে বললো “আমার মনে হলো আপনি নতুন বউ দরকার তহ থাকতেই পারে তাই না..?”
চন্দ্রা ঠোঁট গোল করে বললো “ওও, হ্যাঁ দরকার তহ আছে এক কাপ কড়া কফি আমার রুমে পাঠিয়ে দিন প্লিজ”
সার্ভেন্ট মাথা নেড়ে কিচেনের দিকে চলে গেলো।

চন্দ্রার এই সময় পুরো বাড়িটা ঘুরতে মন চাইলেও তার মনে হলো অসুস্থ মানুষটিকে দেখে আসা উচিৎ তার একবার যদি কিছু দরকার পরে।নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক চন্দ্রা কোথাকার কে কাল রাত অবধি তহ সে মানুষটাকে চিনতও না আর এখনই মানুষটার জন্য খারাপ বোধ হচ্ছে তার। তবে একই কি বলে স্বামী – স্ত্রীর টান..??

মনের সাথে একপ্রকার লড়াই করেই চন্দ্রা সিয়ামের ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকলো। ঢুকেই দেখলো সিয়াম বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছে।তার সামনের কিছুটা চুল কপালে পরে আছে চোখে একটা হোয়াইট ফ্রেমের চশমা।

চন্দ্রার বুকটা যেনো এবার ধড়াস করে উঠলো।আগেও তহ সে কতো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেছে কই এরকম তহ লাগেনি তার। চন্দ্রার এবার মনে হলো নাহ এই পুরুষের মত নিখুঁত গড়ন সে খুব কমই মানুষের দেখেছে।চন্দ্রার মনের নেগেটিভ সাইড এবার বলে উঠলো কিন্তু কি হলো এতো সুন্দর হয়ে সেই তহ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।নিজের কাজ বেসিক কাজ গুলো করতেও অন্যের সাহায্য লাগে।সে কিকরে চন্দ্রার ভার নেবে..?শেষে কিনা তার পরিবার এরাম একটা ছেলের সাথে তার…

এরই মধ্যে একটা পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো “আরে আপনি ওখানে দাড়িয়ে কেনো ভিতরে আসুন।”

চন্দ্রা কিছুটা এগিয়ে বিছানার থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো “এখন ঠিক আছেন তহ..?কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তোহ..?”

সিয়াম চন্দ্রার কোথায় হালকা হাসলো।চন্দ্রা এবার লক্ষ করলো সিয়াম যে শুধু সুদর্শন তাই নয়, সে হাসলে বাঁ গালে একটা ছোট্ট সুন্দর টোল পড়ে। চন্দ্রা সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো নাহ তার কোনো মায়ায় আটকানো যাবে না।তাকে বেরোতেই হবে এখন থেকে। তার পরিকল্পনা যে অনেক দূরের। চন্দ্রা নিজের মনকে বোঝালো এই লোকটার জন্য সে যাই করছে সবটাই মনুষত্বের খাতিরে সে হৃদয়হীনা নয় তাই।
তারও মনের কোণে যে এক শতাংশ হলেও সুপ্ত অনুভূতি জেগেছে সেই কথা সে মানতে নারাজ।

চন্দ্রার ধ্যান ভাঙলো একটি ডাকে কেউ যেনো পৃথিবীর সবটুকু মাধুর্য্য মিশিয়ে উচ্চারণ করলো “চন্দ্রাবতী”
চন্দ্রার শিরায় শিরায় কাঁপন ধরলো কতো বছর হয়ে হলো এইনামে তাকে ডাকে না কেউ।

চন্দ্রা আর দাঁড়াতে পারলো না স্থির হয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

রুম থেকে বেরোতেই একজনের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেল সে সামনের মানুষটিকে দেখে সে আরো চমকে গেলো। তার সামনে দাড়িয়ে……

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে