বেড়াজাল পর্ব-০২

0
688

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #২

দুজনই দৌড়ে এসে সিয়ামের ঘরে এসে পৌঁছাল। এসে যা দেখলো তাতে দুজনেই হতভম্ব।

সিয়াম নীচে মেঝেতে পরে আছে।তার হাত লেগে পাশে রাখা ফ্লাওয়ার বাস টা টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে মেঝেতে আর তার জলেই ভেসে যাচ্ছে গোটা ঘরময়। সিয়ামের হাত ও কিছুটা কেটে রক্ত বেরিয়েছে তার দরুণ অর্ধেক জল লাল হয়ে আছে।

এই বিকট আওয়াজ শুনে দৌড়ে এসেছে পাশের ঘর থেকে সুইটি বেগমের দুই ছেলে মেয়ে সিয়া ও সিরাজ।
সিয়া ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে আতকে উঠল দৌড়ে গিয়ে ভাইকে তোলার চেষ্টা করলো।
সুইটি বেগম এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার এগিয়ে গিয়ে সিয়ার হাত টেনে বললো “পাগল হয়ে গিয়েছিস,কত কাঁচ পড়ে দেখছিস..? আয় সরে আয় তাড়াতাড়ি।”
সিয়া মায়ের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো “মা ভাইয়ার অবস্থা দেখছো তহ এখনও সরে থাকতে বলবে..?”
সুইটি বেগম আশপাশ চোখ ঘুরিয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন “আহ্হা আমি কি এমনি এমনি বারণ করছি নাকি তোকে..? ওর কেটেছে এবার তোরও কাটবে ওই জন্যই তহ বলা।দ্বারা সার্ভেন্ট কে ডেকে পরিষ্কার করিয়ে দি তাহলেই তহ মেটে।”
এবার সিয়াম হালকা উঠে বসে বললো “হ্যাঁ সিয়া মনি ঠিকই বলেছে এর মধ্যে এলে তোরও কেটে যেতে পারে তুই বরং নীচে গিয়ে কাউকে পাঠাবার ব্যাবস্থা কর”

সিয়া করুন চোখে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে নীচে চলে গেলো।এই ভাই টাকে সে একটু বেশিই ভালোবাসে যদিও সে আর সিরাজ সিয়ামের থেকে পাঁচ বছরের ছোট।তাও তার নিজের ভাইয়ের থেকে এই ভাইয়ের প্রতি টান বেশি।আর থাকবে নাই বা কেন..?ছোট থেকেই তার মাকে দেখে এসেছে তার থেকে তার ভাই সিরাজকে সবসময় বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া হয়। এমনকি খেতে বসলেও। যদিও তার এখন এসব গা সয়া। কিন্তু এত কষ্টের মধ্যেও তার একটুকরো ভালোবাসার জায়গা ছিলো এই সিয়াম ভাইয়া।ছোট থেকেই তার সব আবদার এই ভাইয়ের কাছে। ভাইয়াও কম নাকি একটিমাত্র বোন বলে তাকে সবসময় রাণীর মতো রাখার চেষ্টা করে। সে জানে তার খালামনির খুব একটা পছন্দের নয় তার এই মেয়ে তাই সিয়ামই সেই ছোট্ট থেকে ওকে আগলে আগলে রাখে।

চন্দ্রার এবার অপরাধবোধ হলো ভীষণ।তার জন্যেই আজ লোকটার এই অবস্থা।কি হতো একটু হেল্প করে দিলে। মানুষটা তহ তারই স্বামী।মন এবার শব্দটা উচ্চারণ করলো “স্বামী”।কত স্বপ্ন ছিলো তার জীবন সঙ্গীকে নিয়ে সব কিনা এক মুহুর্তে ওই ফ্লাওয়ার বাসের মত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো এক ধাক্কায়।চন্দ্রার ধ্যান ভাঙলো সিয়ার কর্কশ গলায় শব্দে
“কেমন বউ হ্যাঁ তুমি..?নিজের স্বামীর এইটুকু খেয়াল রাখতে পারো না..?তোমার দ্বারা না হলে আমাদের কাউকে ডেকে দিতে তাহলে তো আজ এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না।”

অন্যসময় হলে চন্দ্রা রেগে দুটো কথা শুনিয়ে দিত কিন্তু এখন পারলো না মনের ভিতর থেকে কেউ যেনো বলছে অপরাধ তোর চন্দ্রা তোর জন্যই এইসব হয়েছে।চন্দ্রা তাই চুপচাপ সব কথা শুনে নিল।
তখনই সার্ভেন্ট সিয়ামকে ওঠাতে গিয়ে বলে উঠল “আপনারা একটু ধরলে ভালো হয়।”
সিয়া এগোতেই সুইটি বেগম তার হাত টেনে ধরে বললেন “তোর যাওয়া লাগবে কেন ওর বউ আছে এখন ও যাক তুই গেলে খারাপ দেখাবে।”
কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে সুইটি বেগমের কথাটাই সবার কানে তিক্ত ঠেকলো।
সিয়াম এবার বলে উঠলো “না না করার দরকার লাগবে না।উঠতে পারবো আমি একাই।”
বলে সিয়াম যেই উঠতে গেলো সার্ভেন্টএর হাত ধরে ওমনি এক হাত পিছল খেলো।সিয়াম সামলাতে না পেরে পড়ে ফির যেতে নিলেই একটি হাত ওকে চেপে ধরলো। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নেওয়া সিয়াম চোখ খুলে দেখলো এ আর কেউ নয় গতকালই তার বিয়ে করে আনা সদ্য বউ।

চন্দ্রা এবার সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলল “আসুন আমি সাহায্য করছি আপনাকে। ধীরে ধীরে উঠুন।”
সকালের ব্যাবহারের পর এই ব্যাবহার একদমই অপ্রত্যাশিত ছিলো সিয়ামের কাছে।

সিয়ামকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সার্ভেন্ট জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলো।
সুইটি বেগম দৌড়ে এলেন বিছানায় সিয়ামের হাত মুখ ধরে বললেন “আহহারে আমার ছেলেটা অনেক লেগেছে না।তুই কাউকে ডাকলি না কেন..?আর বউ তহ তহ ওকেই বললে পারতি”

সিয়াম হালকা হেসে সুইটি বেগমের হাত টা নিজের হতে নিয়ে বললো “আহঃ মনি শুধু শুধু চিন্তা করছো কিছু হয়নি আমার ”
সুইটি বেগমে দুঃখের সাথে বললেন “না হলেই ভালো বাবা।আমি নীচে গিয়ে তোর জন্য জল খাবার পাঠাচ্ছি।খেয়ে নিস কেমন।”
সিয়াম মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।
চন্দ্রার জানি না কেনো এটা শুধুই দেখানো আদিক্ষেতা মনে হলো।তাও গায়ে না মেখে ঘর থেকে সবাই চলে যাওয়ার পর সেও বেরিয়ে গেলো।

সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো নাহহ মেয়েটা শুধুই তার মনুষ্যতববোধ দেখিয়েছে এর বেশি কিছুই না।

চন্দ্রা ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলো সিয়াম বিছানায় আধশোয়া হয়ে বেলকনির খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
চন্দ্রা আসতে করে এসে খাবারের প্লেট টা টেবিলে রেখে সিয়ামের উদ্দেশ্যে বললো “আপনি ফ্রেশ হবেন.? আমি সাহায্য করে দেবো.?

সিয়াম একভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো “নাহ তার দরকার নেই সিয়া একটু আগে এসে করে দিয়ে গেছে।”
চন্দ্রা মাথা নেড়ে বললো “আচ্ছা তবে খেয়ে নিন।মনি আপনার জন্য খাবার পাঠিয়েছেন।”

সিয়ামের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।সে আগের মতই বসে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হতে ভীষণ জ্বালা অনুভব করলো।এবার বোধহয় তার অবাক হওয়ার পর্যায় শুরু হলো মনে মনে বললো “অবাক নোং ২”|

সে দেখলো……..

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে