বেড়াজাল পর্ব-০১

0
949

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #১

বাসর ঘরে নিজের স্বামীকে হুইলচেয়ারে আসতে দেখে হতভম্ব চন্দ্রা।তাকে যে বলা হয়েছিল ছেলের কোনো সমস্যা নেই উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলে তারউপর বেশ সুদর্শন। তার তখনই বুঝে নেওয়া উচিত ছিল তার মতো একটা মেয়েকে তোহ আর আর চার পাঁচটা স্বাভাবিক বাড়িতে বিয়ে দেবে না।
আচ্ছা স্বাভাবিক বাড়ি বলতে চন্দ্রা কি মনে করছে..? এই প্রশ্নের উত্তর সে মনের কাছে পেলো না।

সামনে থেকে এক পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো “আপনি বোধহয় ক্লান্ত খুব যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে ”

চন্দ্রার এখন মনের অবস্থা সে নিজেই কল্পনা করতে পারছে না শুধু মনে হচ্ছে তার পরিবার তাকে এরাম ভাবে বানের জলে ভাসিয়ে দিল..? ভিতর থেকে আবার একটি শব্দ উঠে এলো “পরিবার” হাহ তার জীবনে এর এই নামে কোনো জিনিস আছে নাকি..?

মাথা থেকে এসব ঝেড়ে চন্দ্রা ব্যাগ থেকে একটা শাড়ী বের করে চেঞ্জ করতে চলে গেলো।

এই ফাঁকে সিয়াম ও নিজের জামা বদলে ঘরের জামা পড়লো।এখন এসব তার নিজে থেকেই অভ্যাস হয়ে গেছে কাউকে আর দরকার লাগে না নিজের কাজের জন্য।
সিয়াম এবার ঘড়ির দিকে তাকালো একটা বেজে চার।সিয়াম এবার বাথরুম এর দরজার দিকে তাকালো প্রায় একঘন্টার উপর হয়ে গেছে চন্দ্রা এখনও বেরোয়নি।সিয়াম কিছুএকটা ভেবে বার্থরুম সামনে গিয়ে দু একবার ডাক দিল চন্দ্রার নাম ধরে.. নাহ কোনো সাড়াশব্দ নেই। সিয়াম এবার উপায় না পেয়ে যেই দরজা ধাক্কাতে গেলো ওমনি বাথরুমের দরজা খোট করে খুলে গেলো।

সিয়ামের এইসময় মনে হলো মেয়েটা একটু বেশিই সুন্দর। নাহ তার মোটেই উচিত হয়নি এত সুন্দর হওয়া এইজো সিয়াম এবার আটকে পড়লো একজনের মায়ায় এর দায়ভার কে নেবে..?
উত্তর যেনো ভিতর থেকেই এলো “তোরই তহ বউ”

সিয়াম মুচকি হেসে সামনে ছেড়ে দাড়ালো। চন্দ্রা চুপচাপ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আপাতত তার ঘুমের ভীষণ প্রয়োজন এক ঘণ্টা ধরে কেঁদে আর জলে ভিজে শরীর গরম করে ফেলেছে সে।

সিয়াম এর এবার একটু খারাপ লাগলো।মেয়েটার কি তাকে পছন্দ হয়নি..? সে কি জানতোনা তার এই পায়ের ব্যাপারে..? কিন্তু তার কাছে যেটুকু খবর আছে মেয়ের বাড়িতে এই সব খবর আগেই দেওয়া হয়েছিল তারা জেনেবুঝেই তাদের মেয়েকে এ ঘরে দিয়েছেন।

সিয়াম বেশি না ভেবে আস্তেধীরে গিয়ে বিছানায় একপাশে শুয়ে পড়লো।যদিও হুইচেয়ার থেকে উঠতে একটু কষ্ট হলো তাও মুখে টু শব্দ করলো না।মেয়েটা যদি জেগে যায় এই ভয়ে। সাধারণত ঘুমনোর সময়টা তার খালামণি তাকে সাহায্য করে বিছানায় যেতে তাই বেশি কষ্ট হয় না তার কিন্তু এখন থেকে তহ…..কথাটা মাথায় আসতেই বিছানায় পাশে শুয়ে থাকা চন্দ্রার দিকে চোখ পড়লো তার। মেয়েটা সম্ভবত ঘুমিয়ে গেছে মুখে মেকআপ নেই ফর্সা হওয়ার দরুন গালে নাক টকটকে লাল হয়ে গেছে।
সিয়াম বোধহয় এবার বুঝতে পড়লো চন্দ্রা বাথরুমে এতক্ষণ কি করছিলো। তার মন এক্কেবারে বিষিয়ে গেলো অপরাধ বোধে।মেয়েটা তাহলে আসলেই জানতো না তার পায়ের কথা নইলে নিজের বাসর রাতে কেউ এরাম আচরণ করে..?

সিয়াম এক পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।সে তহ চায়নি কোনরকম সম্পর্কে জড়াতে।তার খালামণি আর খালাতো ভাই বোন যাদের সিয়াম নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তাদের কথা শুনে জোরালো।তার আর আছেই বা কে এই তিন জন ছাড়া।মা – বাবা সেই যে দেশের বাইরে গেলো এর ফিরলোই না দেশে কি হয়েছে এখনও ঠিক মতো জানে না সিয়াম তার খালামণি বলে তাদের নাকি অনেক বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই কাউকে আর বাঁচানো যায়নি। তারপর থেকে এই তিন জনই সব তাদের সাথেই বেড়ে ওঠা খালামণিই এখন তার মা আর এই মানুষটার কথা অমান্য করার কথা সিয়াম ভাবতেও পারে না।

_______________________

সকাল ৭ টা

চন্দ্রা চোখ মেলে সামনে একটি সুদর্শন পুরুষকে দেখে ঘাবড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তার খেয়ালে এলো এটি তহ তার স্বামী কিন্তু কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই মাথায় আগুন চোরে গেলো।পাশে শুয়ে থাকা লোকটিকে তার সহ্য হচ্ছে না কোনো সে নিজেই জানে না। রাগে গজগজ করতে করতে একটা সুন্দর জামা নিয়ে চলে গেলো শাওয়ার নিতে।

চন্দ্রা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখলো সিয়াম বিছানায় বসে আছে।সে সিয়ামকে পাত্তা না দিয়ে আয়নার সামনে চুল মুছতে লাগলো।

সিয়াম মুগ্ধতার দৃষ্টি চন্দ্রার দিক থেকে সরিয়ে একটু ইতস্তত করে বললো “একটু সাহায্য করবেন প্লিজ আমার হুইচেয়ারটাতে বসতে”
চন্দ্রার এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল চিরুনি টা শব্দ করে রেখে পিছন ফিরে সিয়ামের দিকে আঙুল তুলে বললো “একদম ন্যাকামি করবেন না। আপনি যে এইরাম পঙ্গু আগে জানাননি কেন..? বিয়েটা ভেঙ্গে যেত বলে.? হাহ বলির পাঁঠা হিসেবে আপনার আমাকেই পারফেক্ট মনে হলো না..? যেই শিক্ষিতা সুন্দরী মেয়ে দেখেছেন ওমনি ল্যাজ নেড়ে নেড়ে বিয়ে করতে চলে গেলেন। আপনারাও বোধহয় ওই প্রবাদের বিশ্বাসই যে সোনার আংটি বেকা হলেও সেটা সোনা।তাই তোহ খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চলে গেলেন।”
রাগে দুঃখে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো চন্দ্রা রুমের দরজা দিয়ে। সিয়াম দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো এরাম কিছু একটা আসা করেছিল সে তাই বেশি কিছু মনে হয়নি তবে চন্দ্রার “পঙ্গু” কথাটা ভীষণ গায়ে লেগেছে। লাগবারীই কথা সে তহ পঙ্গু।
সে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে তিন বছর আগের কথা ভেবে যখন সব স্বাভাবিক ছিল তার নামের সাথে এই পঙ্গু ট্যাগ টা যোগ ছিলো না।
এখন তহ সারাজীবনের জন্য এই ট্যাগ টা তাকে সহ্য করতেই হবে এখন থেকেই নয় অভ্যাস শুরু হলো তার।

চন্দ্রা চোখ মুছে নিচে এলো । সিয়ামের খালামণি সব স্টাফদের ইনস্ট্রাকশন দিচ্ছে কেমন করে কি সাজাবে বারবার সবাইকে বলে দিচ্ছে ঘরে নতুন বউয়ের যেনো কোনো অসুবিধা না হয়।

চন্দ্রার সব কিছুই যেনো এখানকার তিক্ত লাগছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি দম আটকে এলো।
সিয়ামের খালামণি এবার এগিয়ে এলো চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রার মুখটি তুলে বললো এইরকমই একটা ফুটফুটে মেয়ে চেয়েছিলাম আমার ছেলের জন্য কিন্তু কি আর করার সবই কপাল।
চন্দ্রার লাস্ট কটা শব্দ জানো কেমন ঠেকলো কানে তাও ওসব পরোয়া না করে খালামণিকে বললো “আপনি কে হোন ওনার..?আর এ বাড়িতে কজন থাকে..?না মনে এতো বড়ো বাড়ি তাই আর কি…!!

সিয়ামের খালামণি উরফে সুইটি বেগম হেসে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি সিয়ামের ঘর থেকে এক বিকট শব্দ এলো।

চন্দ্রা সুইটি বেগম সহ নিজের সব স্টাফ চমকে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সুইটি বেগম আর অপেক্ষা না করে চন্দ্রা কে বলেলেন বউ চলো তহ দেখি।

দুজনই দৌড়ে এসে সিয়ামের ঘরে এসে পৌঁছাল। এসে যা দেখলো তাতে দুজনেই হতো হতভম্ব।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে