বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৮

0
1935

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_8

ভাইয়া চিৎকারে তো আমার দফারফা। আমি চোখ বন্ধ করে কাপাকাপি করছি ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। আচমকা ভাইয়া থেমে গেল। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে শান্তভাবে ফাহাদের দিকে তাকালাম তারপর আমার হাত ছেড়ে দিলো।
আমি ভেবেছিলাম ভাইয়ের সবার সামনে অনেক সিনক্রিয়েট করবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না খুব ভদ্রভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,
“এই ছেলেটাকে?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ের কথায়। আমতা আমতা করছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কি বলব ভাবছি?
“কি হল ভয় পাচ্ছিস কেন বল তোরা ক্লাস মিস দিয়েছিস কেন? ছেলেটা কি তাদের সাথে পরে।দেখে তো সেম ইয়ার মনে হচ্ছেনা। বড় লাগছে। সমস্যা নাই অনেকে ফেল করে এক ক্লাসের অনেকদিন পরে থাকে। তাই হতেই পারে।”
আমি ভাইয়ার কথা শুনে ভয়ের মাঝেও হুহু করে হেসে উঠলাম।ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার চোখ-মুখ বিরক্ত স্পষ্ট। চোখ লাল হয়েছে তার মানে এখনো রেগে আছে। কিন্তু ভাইয়া রাগ দেখাচ্ছে না। ‌আমি ভাইয়ার রাগী মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।
আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,,
“উনি তো আমাদের সাথে পড়েনা ভাইয়া। উনি আমাদের বড়।”
তাহলে উনি এখানে কি করছে? আর তোরাই বা কি করছিস?
আমি কিছু বলার আগে মেঘলা বলে উঠলো,,,
“ভাইয়া দোলা কে কিছু বলবেন না প্লিজ। এটা আমার ভাই আমি ওদের জোর করে নিয়ে এসেছে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।”
মাথা নিচু করে বসে পড়ে মেঘলা কথাটা বললো।
“তোমার ভাই?”
“জি ভাইয়া।”
“তা তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বাড়িতে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন?”
মেঘলা পরলো বিপাকে এখন কি বলবে?
“আসলে ভাইয়া আমাদের আজকে ট্রিট দিবে এজন্য ভাইয়া তো। মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে সেজন্য।”
“ট্রিট দিবে? না খেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
“আমরা তো যাবো কিন্তু তার আগে ভাবছিলাম এই খানে একটু ঘুরে যায়। কি গরম পড়েছে আজকে?”
গরম গরম ভাব করে বললাম মেঘলা।
“এবার আদনান ফুলটা দেখালো এই ফুলটা কিসের জন্য।”
এতক্ষণ যা ও মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে ম্যানেজ করতে গিয়েছিল ওরা। এখন সব-গুলাই চোখ বড় বড় করে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে আমিও।

আমি বাম হাতে আঙুল কামড়াচ্ছে আর ভাবছি! কি বলবো? কি বলবো? এখন ফাহাদ যদি ভাইয়াকে বলে দেয়! আমাকে প্রপোজ করতে এসেছে। তাহলে তো ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে।
“আহসান মি। ফুল কিসের জন্য? আর ফুলটা দোলাকেই কেন দেওয়া হচ্ছিল। প্রপোজ এর মত করে।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল। তখনই আমি বলে বসলাম,,,
“আসলে ভাইয়া এই যে ফাহাদ ভাই কে দেখছো না। উনি আমাদের নেহাকে পছন্দ করে তাই নিহাকে প্রপোজ করতে আসছে। আমাদের ট্রিট দিবে প্লাস নেহা কে প্রপোজ করবে।আর তুমি তো জানো আমার ফুল কত প্রিয় ওনার হাতে একটা ফুল ছিল সেটা দেখে আমি ওইটা নেওয়ার জন্য পাগল করে ফেলি তাই ভাইয়া বাধ্য হয়ে ফুল আমাকে দিচ্ছিলো।”
এক দুমে বানাই বানাই এক্ষুনি মিথ্যা কথা বলে ফেললাম ভাইয়াকে।
ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে প্লাস ফাহাদ আমার শাঁকচুন্নি ফ্রেন্ড গুলো।
আমি কথাগুলো বলে নেহার দিকে একবার তাকালাম ও খেপা বাঘিনীর মত করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে গিলে খাবে।
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়া মনের কথাটি বিশ্বাস করেছে তার চোখের রাগ লাগছে না কিন্তু বিরক্ত।
বিরক্ত হয়ে বলল,,,
“এখানেও পাগলামো করা শুরু করে দিয়েছিস।আর উনি যে নেহাকে প্রপোজ করবে লাইক করে এটা তো আমাকে মেঘলা বলল না।”
আমি মেঘলার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
“ও তো ভয় পেয়েছে এইসব জানলে তুমি যদি বকো।”

মেঘলা দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ভাইয়া । মেঘলা তো আমার দিকে শুধু কঠিন মুখ করে তাকাচ্ছে
তাই আমি সামাল দেওয়ার জন্যই কথাটা বললাম।
অবশেষে সব ঝামেলা মিটলো। ভাই আমার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে। নেহা তো লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আর আমি কাচুমাচু মুখ করে সবার দিকে তাকাচ্ছি ফাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ রাঙিয়ে দিলাম ফাহাদ কে যাতে ভুল করেও ভাইয়াকে সত্যিটা না বলে আর এই গাধাকে তো আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবে না অযথা ঝামেলা করে কি লাভ?
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নেহা ও যে আমাকে কি করবে? থাক সেসব পরে ভাবা যাবে।
ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“চল বাসায় চল এখন?”
আমি বললাম আচ্ছা চলো।
এখন আর ঝামেলা করে লাভ নাই বাসায় যেতে পারলেই বাঁচি এখানে থাকলে কখন কি ঘটে যায়।
ভাইয়া আমার হাতে ফাহাদের সামনে গিয়ে বলল,,
“সরি ব্রো আমার মিষ্টেক হয়ে গেছে। তোমার হাত থেকে দোলার হাতে ফুল দেওয়া টা দেখে আমি অন্যটা ভেবে ফেলেছিলাম। দোলাকে বাদে অন্য যাকে খুশি তাকে ফুল দাও আই ডোন্ট কেয়ার।”
আমি একটু দুরে আর ফাহাদ আমার থেকে একটু দূরে ছিল। তাই ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কি যেন বলতে লাগল আমি কিছুই শুনছি না।দূরে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে সেদিকে তাকিয়ে আছে আর ভয় ভয় পাচ্ছি যদি কিছু বলে দেয় ভাইয়াকে।
ওই হাঁদারাম ফাহাদ টা।
কিছু শুনছে না তাই অধৈর্য হয়ে সে দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আমাকে নেহা টেনে ধরল। আমি আর যেতে পারলাম না নেহা খেপা বাঘিনীর মত আমার হাত ধরে আমাকে ফিসফিস করে বকতে লাগল।
চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন। কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নাই আমিতো খালি ফাদার আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
“তুই এটা কি বললি দোলা। এভাবে তুই আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি।”
“ওফ সার তো ঐদিকে কি কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না আর তুই এসে ঝামেলা করছিস।”
“করব একশ বার করব তুই কেন এই মিথ্যে কথাটা বললি। আদনান ভাইয়ের সামনে আমার মান-সম্মান এভাবে ডুবালি।”

নেহা সর-লোই না আর ওদিকের কথা শেষ হবে আদনান ভাই আমাদের দিকে তাকাতেই আমি নেহার হাতে চিমটি কাটলাম।
নেহা কিছু বলবে আমি ফিসফিস করে বললাম,,, চুপ করবি শয়তানি বান্দরনি ভাই আসতেছে।”
আদনান ভাইয়ের কথা শুনে নেহা চুপ করে গেল নেহা।

নেহা আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আদনান ভাই এসে সবার দিকে তাকাতে সবাই কাচুমাচু করতে লাগলো। ভাইয়া সবাইকে বাই বলে আমাকে নিয়ে ছুটতে লাগলো।
গাড়িতে বসে আছি।
ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,”তুই আমাকে মিথ্যে বলিস নি তো আবার।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল।
আমি হেঁচকি দিচ্ছি দেখে ভাইয়া তাড়াতাড়ি গাড়ির পেছন থেকে ওয়াটার এনে আমার হাতে দিলো।
আমি কি চোখ গোল গোল করে বললাম।
মিথ্যা কেন বলব ভাইয়া?
ভাই আবার বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে ক্লাস আর কখনো মিস দিবি না। ওকে।
আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানালাম।
ভাই আমাকে নিয়ে বাসায় না এসে রেস্টুরেন্ট আসলো।
এখানে কেন?
কথা না বলে চুপচাপ চল।
বাসা নাকি এখানে কেন আসলে ভাইয়া?
অন্যের কাছে টিট কেন চাস। যত ইচ্ছে আমার কাছে বলবি আমি খাওয়াবো।

আর ওই তো আমি চাইছি না কেউ এটা তো মেঘলা চাইছিল।
ভাইয়া কিছু বললো না ভেতরে আমরা রেস্টুরেন্টে একটা কেবিনে বসলাম।ভাইয়া বিরিয়ানি অর্ডার দিল ভাইয়া জানে আমার বিরিয়ানি ফেভারিট।
আসে তো একটু সময় লাগবে বোরিং হয়ে গেল হাত দিয়ে বসে আছি আর চিন্তা করছি ওইখানে কী হচ্ছে কে জানে?
আচমকা ভাইয়া বলে উঠলো,,,
এত কি চিন্তা করছিস? তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস।
ভাইয়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। গালে থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসলাম। জোর করে কি আর হাসা যায় তো দাঁত বের করে রাখলাম।
ভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে ফোন টিপতে লাগল।

15 মিনিট পর খাবার এলো আবার দেখি আবার খিদা বেড়ে গেল সমস্ত চিন্তা এক পাশে ফেলে খাওয়ার মনোযোগ দিলাম।
এক লোকমা হাসি হাসি হাসি মুখ করে মুখে দিতেই। চোখ গোল গোল করা অবস্থা হল আমার। আমার চোখে ইয়া বড় হয়ে গেল আমি খাবার মুখে না দিয়ে থ মেরে আছি।
আমার এত অবাক হওয়ার কাহিনী কথা শুনবেন নাকি।
আমার সামনে একটা মেয়ে আসলো আর ফট করে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।
মেয়েটাকে আমি চিনি না মেয়েটা আসতে ভাইয়া চরম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরল আর মেয়েটা কিছু না বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।আমি হাঁ করে একবার ভাইয়া দিকে তাকাবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটাকে জীবনে দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না। ফর্সা করে একটা মেয়ে চুলগুলো জুটি করে রেখেছে। পরনে একটা হাঁটু অব্দি প্লাজো আর একটা সাদা নীল ফতোয়া তার হাতা নেই।মেয়েটা এমন ড্রেস পরে আছে দেখে আমি হতভম্ব।
ড্রেসটা খুবই বাজে আমিও ছোট ড্রেস পড়ি তাই বলে এমন শরীরের দিক বের করে রাখি না। আর মেয়েটার বয়স ভালোই লাগছে কিন্তু খুবই সুন্দরী।ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি একটু বিরক্তি মাখা মুখ করে আছে। মেয়েটা এবার ভাই আগে ছাড়লো।
“অফ আদনান তোকে ফোন করতে-করতে আমি পাগল হয়ে গেছি সকাল থেকে।”
এবার ভাইয়া বলল,,,”তিথি তুই কোথা থেকে এলি?”
মেয়েটা,,, “কোথা থেকে আর আসবো সিলেট থেকে এসেছি আজ কে? ভাবছি কিছুদিন এখানে বেরিয়ে যায়!ঢাকায় এসে পৌঁছেছি একঘন্টা আসার পর থেকে তোকে কল করছি তুই তো ফোন রিসিভ করছিস না এজন্য হতাশ হয়ে এখানে আসলাম প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।”
“তা আসার আগে জানিয়ে আসবি না কোথায় উঠেছিস?”
“আর কোথায় উঠা উঠি ভাবছি একটা হোটেলে উঠবো কিছুই তো চিনি না। তাই তোকে কল করলাম।”
“ও আচ্ছা আয় এখানে বস খা। আর হোটেলের তোর থাকতে হবে না। তুই আমাদের বাসায় থাকতে পারিস।”
“রিয়েলি আদনান!”
উজ্জ্বল মুখ করে বলল মেয়েটা।
হ্যাঁ।
এবার তাদের নজর আমার দিকে ঘুরল মেয়েটার জিজ্ঞেস করলো আমি কে?
আদনান বলল কাজিন।
মেয়েটা কেমন কেমন করে যেন আমার দিকে তাকাল পা থেকে মাথা অব্দি দেখে তারপর আদনান ভাইয়ের পাশের সিটে বসে পড়ল।
আমি বসে খায় মনোযোগ দিলাম আর তারা দুটোই বলতে হায়রে হাসাহাসি কথা।আদনান ভাই যে এতো হাসাহাসি করতে পারে জীবনে জানতাম না। আদনান ভাই আর ওই মেয়েটা হাসাহাসি করতে লাগল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে