বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-২৯ | বাংলা ধারাবাহিক গল্প

0
3381

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_29

হসপিটালে কডিটরে মাথা নিচু করে পাথর হয়ে বসে আছে আদনান। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। প্রচন্ড শক্ত গম্ভীর মানুষ আদনান এতো সহজে ভেঙে পরে না কিন্তু আজকে ভেঙে পরেছে। নিজেকে শূন্য লাগছে ওর। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু অদ্ভুত পারছে না আর পারবে কি করে? ও তো মেয়ে না ও ছেলে মেয়েদের মতো নিজের কষ্ট সবার মাঝে বিলিন করতে পারেনা। মেয়েদের মতো সহজেই কাঁদতেও পারেনা।পারলে বোধহয় ভালো হতো যন্ত্রনা টা কমতো।এতো কষ্ট হচ্ছে যে ওর বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। চোখ মুখ টকটকে লাল রং ধারণ করেছে
ভেঙে পরেছে আদনান। নিজের ভালোবাসার ওই অবস্থা ও কিছু তেই সহ্য করতে পারছেনা।কিভাবে এসব হলো আদনান এর মাথায় আসছে না।
দোলাকে সেই মুহূর্তে ওই অবস্থায় দেখে আদনান সেই মুহূর্তে দোলার মাথাটা টেনে নিজের বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। পাগলের মত করে দোলাতে ডাকতে থাকে। আদনান এর ওই চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে দাড়োয়ান। তিনিও স্তব্ধ হয়ে যায় দোলার অবস্থা দেখে। সাথে আদনান পাগলের মত দোলার গালে হাত দিয়ে ডাকছে। রক্ত দেখে আরো পাগলামো বাড়িয়ে ফেলে। সেসব দেখে দারোয়ান ছুটে ভিতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। সবাই বাইরে এসে থমকে যায়। দোলার মা তো দোলা বলে চিৎকার দিয়ে ওইখানেই জ্ঞান হারায়। তাকে কোনমতেই সামলায় আদনান এর মা। তার চোখেও জল ভরে আসে। দোলার বাবা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার একমাত্র কলিজার টুকরা মেয়ে দিকে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দোলার ছেড়ে আর নিচে আদনান দোলা কে ধরে পাগলামো করছে। দোলা রানী জান কলিজা বলে ডেকেই চলেছে দোলা সাড়াশব্দ দিচ্ছে না।

আদনানের বাবা দোলার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে বন্ধু তাড়াতাড়ি চল দোলাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে ‌হবৈ। ভেঙে পরিস না বন্ধু আমাদের দোলার কিছু হবে না।

আদনান দোলাকে ছাড়বে না ওভাবে ধরে ডেকে চলেছে দোলা কে। তাই সবাই আদনান কে টেনে সরিয়ে দোলাকে গাড়িতে উঠায়।
আদনান দোলার জন্য কতোটা পাগল পরিবারের সবাই জানে তাই আদনান কে বুঝিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে।
দোলার মাথার শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়েছে।
দোলার অবস্থা ক্রিটিক্যাল অনেক কারণ আঘাতটা গুরুতর ভাবেই লেগেছে।
একঘন্টা পর অটি থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এলো আর জানালো,
ডাক্তার আমার মেয়ের কি অবস্থা? ও ঠিক হয়ে যাবে তো।
দোলার বাবা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
ডাক্তার বলে,
সরি মিস্টার বারো ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আমাদের পক্ষ্যে কিছু করা সম্ভব না।
দোলার বাবা এটা শুনে পরে যেতে নেয় আদনান এর বাবা তাকে আগলে নেয়।
আদনান বসেই ছিলো ডাক্তার এর কথা শুনেই এক ঝটকায় ছুটে আসে আর ডাক্তার এর শার্টের কলার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ক্রোধ নিয়ে বলে।
“কি বললেন আপনি কিছু করা সম্ভব না?”
ডাক্তার আদনান এর এমন কান্ডে বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,
কি করছেন ছাড়ুন?
আপনি আমার দোলাকে বাঁচাতে পারবেনা না কেন? দোলার কিছু হলে খুন করে ফেলবো।
এবার ডাক্তার রেগে যান আর আদনান কে অনেক কষ্টে এক নিজের থেকে সরিয়ে বলে,,,
এসব কি‌ গুন্ডামু হচ্ছে আপনি আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন কেন? আর শুনেন কোন ডাক্তার চায় না তার পেশেন মারা যাক তাই এমন করবেন না আমাদের সাথে আমরা চাই তারা আমাদের কাছে আসে তাদের যেন ঠিক করতে পারি কিন্তু আমাদের হাতে তো সব নেয়। কারন উপরে একজন আছে যিনি সব কিছু নির্ধারণ করে রাখেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাই আমাকে এভাবে না ধমকের আল্লাহর কাছে দোয়া করুন চাইলে তিনিই পারবেন আপনাদের কাছে মানুষ কে ফিরিয়ে দিতে।
রাগে উনার চোখ লাল হয়ে এসেছে আদনান এর বাবা আদনান কে সরিয়ে বলল,,
ডাক্তার আই এম সরি ওর হয়ে বলছি আসলে দোলাকে খুব ভালোবাসে তো তাই এমন করে ফেলেছে।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

ডাক্তার বলল, উনার কষ্ট হচ্ছে বুঝেছি বাট এসব কি তবুও ক্ষমা করলাম ভালোবাসার মানুষটির কিছু হলে কেমন লাগে সেটা আমি জানি। বাট নেক্সট এমন করলে আর না।
বলেই ডাক্তার চলে গেল।
ছেলের দিকে রেগে তাকালো উনি আদনান আর দাঁড়ালো না জানালার কাছে এসে আবসা ভাবেই দোলার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইল।
তারপর কি যেন ভেবেই হসপিটালে থেকে বেরিয়ে এলো।
আদনান কে বেরিয়ে যেতে দেখে আদনান এর বাবা চিন্তা করছে কডিটরে বসে ছেলে এই রাতে কোথায় গেল এদিকে বন্ধু কে একা রেখে যেতেও পারছেনা। ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা। দোলার এই অবস্থা ও যদি নিজের কোন ক্ষতি করে বসে ভয় পাচ্ছে উনি।
আদনান সোজা মসজিদে চলে আসে। ডাক্তার এর কথা শুনার পর ওর এটাই মনে হচ্ছিল।
দুহাত তুলে দোলার জীবন চাচ্ছে দোলাকে ছাড়া ও বাঁচবে না। এতো দিন পর এতো প্রতিক্ষার পর আমি আমার ভালোবাসা মানুষকে পেয়েছি আল্লাহ তাকে এইভাবে আমার থেকে কেড়ে নিও না।
ওর জীবন তুমি ভিক্ষা দাও আমাকে আমার ভালোবাসা অপূর্ণ রেখে না আল্লাহ।

এদিকে তিথি নিজে আদনান এর মার কাছে বসে আছে। আর দোলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।
দোলার মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে সে এখন ঘুমিয়ে আছে। পাগলামা করছিল অনেক তাই এই অবস্থা।
তিথি আদনান এর মাকে বশ‌ করতে চাইছে। কারন একদিন এই বাড়ির বউ হবার কথা তার শাশুড়ি কে পটিয়ে রাখবে।
এই তুমি যাও তো।
তিথি কথা অফ করে বলল,
কেন আন্টি কি হয়েছে?
তোমার কথা আমার ভালো লাগছে না। আমার দোলার চিন্তায় আমার মরছি আর তুমি আজেবাজে বলছো।
তিথি রেগে চলে এলো। অসভ্য মহিলা এটাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে একবার ব‌উ হয়ে আসি তারপর দেখাবো।

ভোরের দিকে আদনান হসপিটালে আসে। মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়েই আছে।এসেই দোলার কাছে যাওয়ার জন্য জরাজরি করতে লাগে।দোলাকে একবার নিজের কাছ থেকে না দেখতে পারলে একটু স্পর্শ না করতে পারলে একদম বন্ধ হয়ে আসছে। এদিকে ডাক্তার যেতে নিষেধ করেছে কিন্তু আদনান এর জরাজরির সাথে না পেরে পাঁচ মিনিট এর জন্য এলাও করে।
আদনান ধীরপায়ে এগিয়ে যায় দোলা কাছে মাথা ব্যান্ডেজ করা ও এগিয়ে গিয়ে নিঃস পলক ফেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দোলার কপালে আস্তে করে চুমু খায়।তারপর হাতটা আস্তে করে ধরে নিজের বুকের চেপে ধরে। ছলছল চোখে দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু কন্ঠে বলে,
দোলা রানী তোর কিছু হবে না দেখিস। আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোকে নেবে না আমার ভালোবাসাকে অপূর্ণ রেখে।আর তোর এই অবস্থা যে করেছে তাকে আমি এর থেকেও কঠিন শাস্তি দেব। তুই খালি তাড়াতাড়ি আমার বুকে ফিরে আয়। আমার বুকটা মে ফাঁকা হয়ে গেছে শূন্য হয়ে গেছে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা এইভাবে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। এই যন্ত্রনা একমাত্র তোর সুস্থ তা ঠিক করতে পারবে।
বলে কপালে আরেকটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

বারো ঘন্টা হতে আর আধা ঘন্টা কিন্তু দোলার নো রেসপন্স সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে আদনান ছটফট করছে কিন্তু ওর বিশ্বাস দোলা ঠিক হবেই।
দোলার মা আদনান এর মা সকালেই চলে এসেছে।সাথে খাবার নিয়ে এসেছে।সবার জন্য কিছু বলতে পারছে না আসলে দোলা জ্ঞান না ফিরলে বলতেও পারবে না দোলার মা এসব জানে না ঘন্টার খবর সে জানে দোলা ঠিক আছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে