বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-২৩

0
1860

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23

কলেজে থেকে এসে গোসল করে, খাবার খেয়ে টিভির সামনে বসে আছি।অনেকদিন ধরে টিভি দেখা হয় না।
টিভি দেখছি আর ওই আরাফাতের কথা ভাবছি কি অসভ্য ছেলে দুইদিন ভালো করে কথা বলেই প্রপোজ করে বসলো। আগেই এই ছেলের মতিগতি আমার ভালো ঢেকছিল না আজ বুঝেই গেলাম।
টিভি না দেখে এইসব ভাবছিলাম ওমনি আম্মুর শক্ত কন্ঠ কানে এলো।
আমি ভাবনার থেকে ফিরে ভ্রু কুটি করে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“কি হয়েছে আম্মু?”
আম্মু বললো,,
“এইসব কি দেখছিস? ছিঃ ছিঃ বাবা মার সামনে এসব দেখতে লজ্জা করে না।”
আমি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আমি আবারা কি দেখছি যে লজ্জা করবে।
ভাবতে ভাবতে টিভির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে গেলাম টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আম্মুর দিকে তাকাতেই আতকে উঠলাম আম্মু রেগে তাকিয়ে আছে আমি তাড়াতাড়ি রিমোট খুঁজতে লাগলাম।
টিভিতে যে কিস দেখাচ্ছে যেটা আম্মু দেখেই আমাকে ধমকালো।
কি মুসকিল রিমোট গেল কোথায় ধুর দরকারের সময় কিছু পাই না।

আম্মু আমার দিকে কটমট চাহনি দিতে দিতে চলে গেল। আমি শেষে সোফার নিচে রিমোট পেলাম আর থপ করে বন্ধ করে রুমে চলে এলাম।
কি করবো কি করবো ভাবছি তারপর ইলমাকে কল করলাম আর আজকে ওই আরাফাতের কথা গুলো সব ওকে বললাম।
ও শুনে অবাক সাথে হাসতে হাসতে শেষ কারন সুমাইয়া তাকে পছন্দ করে। আর সে কিনা আমাকে প্রপোজ করে বসলো। দুজনে এসব বলে হাসতে হাসতে শেষ।
পরদিন কলেজে গিয়ে সবাই মিলে এসব বলছি আর হাসছি এক কোণে গোমড়া মুখে বসে আছে সুমাইয়া। ওকে দেখে আরো বেশি করে হাসছি সবাই। হুট করে নেহা বলে উঠলো,,
“দোলা তুই প্রস্তাব এ রাজি হয়ে যা!”
ওর কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকালাম।
“কি রে সব কটা এইভাবে তাকাচ্ছিস কেন? যেন দিয়ে গিলে খাবি।”
আমি বললাম,,
“কি বললি তুই আমি প্রপোজ এ রাজি হবো।”
শক্ত মুখ করে বললাম।
ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,, “হ্যা আমি তো তাই বলছি।”
আমি রেগে বল্লাম,,”আবার স্বীকার করছিস? তুই জানিস না আমি আদনান ভাইকে ভালোবাসি আর ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করে না। এসব জেনেও তুমি এই কথা বলছিস?”
“হুম বলছি আর বলার কারন ও আছে।”
“কি কারন শুনি তুই জেনে শুনে আমাকে ওই ছেলের প্রপোজ এ রাজি কি করে হতে বলছিস?”
কটমট করে তাকিয়ে বললাম।
“আরে আরো রাগিস না রাগিনী।শুন আমার কথা আমি তোর ভালোর জন্যই রাজি হতে বলছি তুই রাজি হয়ে দেখ কি ভাবে তোর ভাই…
,”চুপ আমি রাজি কিছু তেই হবো না‌”
“আরে শুনো এটা জাসট ফান হিসেবে রাজি হ।”

ওরা আমাকে বুঝালো নাটক করতে যে আমি যদি এটা করা তাহলে নাকি ভাইয়া ভালোবাসা স্বীকার করবে। বাট আমি রাজি হলাম না কারন কারো ইমোশনাল নিয়ে আমি খেলতে চাইনা।
ওরা বুঝালো আমি মানলাম না। কিন্তু কাজটা পছন্দ হয়েছে।তাই আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
বিকেলে ছাদে এসে দাঁড়ালাম ভাইয়া ফেবারিট কালার নীল কালো আমি নীল ছেলোয়ার কামিজ পরলাম। কপালে ছোট টিপ ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক হাতে চুরি খোলা চুল নিয়ে ছাদে এলাম।
তারপর ফোন বের করে কাউকে কল না দিয়ে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড এর মতো কথা বলতে লাগলাম। এদিকে ভাইয়া দুপুর বেলা বাসায় এসেছিল আর যাই নাই। তাই বিকেলে ছাদে এসেছে এসেই আমাকে এমন সেজে গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কর্নারে এসে দাঁড়াল। আমি ভাইয়ার ফেবারিট কালার পরেছি ভাইয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেদিকে লক্ষ্য করছি না ফোনে কথা বলছি।
ভাইয়া দাঁড়িয়ে আমার কান্ড কারখানা দেখছি সব সময় আমি ভাইয়াকে দেখেই পাগল করে ফেলি বা ফোন থাকলে হাতে লুকাই আজ তা করছি না দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি হেসে হেসে কথা বলছি ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তারপর বিরক্ত হয়ে বলল,,
“দোলা কার সাথে এতো কথা বলছিস?”
আমি ভাইয়ার কথা শুনে ভয় পাওয়ার মত করে ফোন কানে থেকে নামিয়ে বললাম।
“ভাইয়া তুমি কখন এলে?”
“কেন আমি এসে ডিসটাব করলাম নাকি?”
আমি বললাম,, “ক‌ই না তো।”
ভাইয়া বলল,, “এতো সেজে গুজে আছিস কেন? আর এতো হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছিলি।”
আমি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললাম,,
“কেউ না।”
ভাইয়া আমাকে লজ্জা পেতে দেখে সন্দেহ চোখে তাকালো।
“লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”

ভাইয়ার কথায় আরো লজ্জাঢ় মিলিয়ে গেলাম ভাইয়া রেগে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আমার ভাব ভঙ্গি দেখছে।
তারপর বলল,,
“কি হলো কথা বলছিস না কেন? কার সাথে কথা বলছিলি বল।”
আমি লজ্জা মাখা কন্ঠে বললাম,,”আমার বুঝি লজ্জা করে না তোমাকে বলতে। যত‌ই হোক তুমি তো আমার ভাই হ‌ও।”
ভাইয়া কিছু টা আন্দাজ করতে পেরেছে মনে হয়।
বললাম,,”ঢং বাদ দিয়ে সত্যি কথা বল!”
আমি বললাম,,” বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলাম।”
কথাটা বলেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আগুন চোখ দিয়ে আমাকে দেখছছ চোখ দিয়ে ভষ্স করে দেবে।
আমি ভয় পেলাম তার চাহনি দেখে কিন্তু কিছুই বুঝতে দিলাম না। ভাইয়া সাথে সাথে গম্ভীর গলায় বলল,,
“এসব কবে থেকে চলছে কাল ও না আমাকে জ্বালালি।”
আমি বললাম,,”আজ থেকে। আর তোমাকে জ্বালাবো না ভাইয়া তুমি আমার ভাইয়ায় থাক বয়ফ্রেন্ড আমি পেয়ে গেছি।কতো ভালোবাসে আমাকে আহা এমন একজন কেই তো চেয়েছিলাম। শুধু শুধু তোমাকে ছ
জ্বালিয়ে মেরেছি। আচ্ছা ভাইয়া তুমি যাও আমার উনি কল করছে আবার রাগ করবো।”
বলেই ফোন কানে নিলাম আর হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি উলটো ঘুরেই ফোন কানে নিয়ে হাসছি বুঝ ঠেলা।
ভাইয়া রেগে গমগম করতে করতে চলে গেল।

আর আমার ছাদে এলো।আমি ভাইয়াকে দেখে বললাম,
“একি ভাইয়া তুমি এখানে কেন দেখছো না কথা বলছি‌।”
ভাইয়া আমার হাত থেকে টান মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো আমি আঁতকে উঠলাম। কারন করে কেউ নাই।
ভাইয়া ফোন নিয়ে চেক করতে গেল আর ফোনের দিকে তাকিয়ে রেগে তাকালো আমার দিকে।
তারপর শক্ত করে হাতের বাহু ধরে বললো,,
“তুই আমাকে মিথ্যা বলছিলি।”
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
“কি হলো আনসার মি।”
আমি কিছু বলছি না এইভাবে ধরা খাব ভাবিনি।
“কি হলো বলছিস না কেন ?এসব করে কি বুঝাতে চাইছি লি?”
আমি বললাম,,”আমি ভাবছিলাম তুমি এসব দেখে স্বীকার করবে আমাকে ভালোবাস কিন্তু ধরা খেয়ে গেলাম।”
ভাইয়া শান্ত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
“ইডিয়েট একটা এসব কে ঢোকায় তোর মাথায়।”
“কেউ না।”
গাল ফুলিয়ে।
“ভাইয়া শেষ বারের মতো বলছি ভালোবাসি স্বীকার করো নয়তো।”
ভাইয়া বলল,,”নয়তো কি?”
আমি বললাম,,”নয়তো আমি ওই আরাফাত ছেলেটাকে হ্যাঁ বলে দেব।”
ভাইয়া ভ্রুকুটি করে বলল,,”এটা ও বানানো কেউ।”
আমি বললাম,,” না। এটা বানানো না সত্যি কাল আমাকে প্রপোজ করেছে তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তো তার সাথেই প্রেম করবো সেও দেখতে সুন্দর স্মার্ট।”
ভাইয়া আচমকা আমার গাল চেপে ধরল।আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম ভাইয়া আমাকে টেনে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ধরলো।
তারপর মৃদু চিৎকার করে বললো,,
“এই মুখে অন্য কারো প্রশংসা শুনলে খুন করে ফেলবো।”
আমি গালে ব্যাথা পাচ্ছি। ভাইয়াকে এতোটা হিংস্র হতে কখনো দেখি নি। আমার চোখে পানি টলটল করছে ভাইয়া রেগে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। আচমকা গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,,
“লেখা পড়া ছাড়া অন্য দিকে মন দিলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

বলেই চলে গেল আমি হতদম্ব হয়ে ভাইয়া যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে