#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_12
ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে আদনান এর দিকে তিথি।
আদনান আবার বলল,,” যা রুমে যা। আজ এখানেই থাক। কাল তোকে বাসা ঠিক করে দিয়ে আসবো।”
তিথি হকচকিয়ে বলল,,” মানে।”
আদনান বলল,,”মানে সিম্পুল তোকে বাসায় রাখা যাবে না। আজকে আনাটাও ভুল হয়েছে আমার।”
তিথি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদনান এর দিকে। বরাবরের মতো আজকেও তিথীকে আদনান ফিরিয়ে দিলো।
“যা রুমে যা।”
আদনান এর কথায় আর কিছু বলল না তিথী একবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো দোলার দিকে তারপর গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
তিথি রুমে এসে রাগে দুঃখে কাঁদতে লাগলো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে কী নেয় আমার।ওই দোলার থেকে সব দিক দিয়ে আমি ফাস্ট।
কতো ছেলে আমার পেছনে পাগলের মত। আমি তাদের পাত্রা দেয় নাই। শুধু একজন কে ভালোবাসেছি আদনান। বিনিময়ে এ শুধু ইগনোর পেলাম যত বার বলেছি ততবার আমাকে অপমান করেছে রিজেক্ট করেছে আদনান।
এবার ও তাই করলো শুধু মাত্র ওই দোলার জন্য।
আয়নার কাছেই ফ্লোরে বসে দুহাতে চুল টেনে ধরলো তিথী।
( তিথী ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে। যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে তিথী কখনো ওর চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি তায়েফ আহমাদ। তিথির এক ভাই আছে নাম আরাফাত বোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে।)
তিথি ফ্লোরে বসে কাঁদছিল তখন ওর ফোন বেজে উঠলো,, কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। ওই ভাবেই তাকালো ফোনের স্ক্রিনে ভাইয়ের নাম্বার দেখে রিসিভ করলো।
হ্যালো,
বোনের গলা পেয়েই বুঝে গেছে আরাফাত বোনের কিছু হয়েছে।
“তিথি বোন আমার কি হয়েছে তোর?”
উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
ভাইয়ের আওয়াজে তিথি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
“কি রে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল আমাকে?”
তিথি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।
তবুও বললো,,,”ভাইয়া কালকেই তুই ঢাকা আয়?”
তিথির আচমকা এমন কথায় আরাফাত হতবাক হয়। আর বলে?
“কেন বোন কি হয়েছে বলবি তো?”
“তুই আসবি কিনা বল?”
তিথি খুব জেদি সেটা আরাফাত খুব ভাল করেই জানেই। এখন কিছু বলবে না তাই আর কিছু জিজ্ঞেস না করে রাজি হলো।
আদনানের রুমে থেকে তিথি যেতেই আদনান বারান্দায় যায়।আর গলার আওয়াজ বারিয়ে দোলাকে ডাকে।
আমি আরামছে বসে চা খাচ্ছিলাম আর রাস্তায় তাকিয়ে ছিলাম তখন কোথা থেকে ভাইয়া বারান্দায় এসে আমাকে ডাকতে লাগলো।
ভাইয়ার বাক শুনে চমকে উঠলাম,,
আমি দাঁড়িয়ে ভাইয়ার বারান্দায় তাকিয়ে দেখী ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
“ওই তোর কানে কি আমার ডাক যায় না।”
গম্ভীর হয়ে বলল।
আমি মনে মনে হাজার টা গালি দিলাম তারপর ভেংচি কেটে আবার বসে পরলাম।
“আমাকে ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তোকে তো..
“চুপ যাও তো জালিয় না। আবার জ্বালাতে এসেছো কেন?”
ভাইয়া আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। “আমি তোকে জ্বালায়?”
রেগে বলল।
আমি বললাম,,,”তোমার গার্লফ্রেন্ড আর তুমি আমাকে জ্বালিয়ে খেলে।”
বলেই ভাইয়াকে পাস করে রুমে চলে এলাম।
আদনান হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দোলার রেগে বলেছে কথাটা রাগলেও কি সুন্দর লাগে কপাল কুঁচকে বিরক্ত হয়ে বলে। দোলা থাকা কালীন মুখ গম্ভীর করে রাখলেও দোলা রেগে চলে যেতেই আদনান মুখে বাঁকা হাঁসি ফুটিয়ে তোলা।
পরদিন তিথীকে একটা বাসা ঠিক করে দিতে যায় কিন্তু তিথি রেগে বলে লাগবে না।
আমি আমার ব্যবস্থা করতে পারবো।
আদনান তাও ছাড়ে নি তিথি কে তিথি ওর কোন ফ্রেন্ড এর বাসায় যাবে বলে ছারিয়েছে আদনান কে।
তিথি সোজা ওর ভাইকে কল করে ওর ঠিকানায় চলে আসতে বলেছে ও এখন একটা হোটেলে উঠবে।
ওর ভাই আসার পর তাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে সব বলেছে।ওর ভাই সাথে বাসার সবাই ই জানতো তিথী আদনান কে ভালোবাসে। আরাফাত সব শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।
ওর বোনের চোখে বারবার জল এসেছে ওই স্কাওন্ডার জন্য ওকে আমি ছারবো।
“আমি ওকে খুন করে ফেলবো।”
রেগে বলল আরাফাত।
তিথী বলল,,”নানানা ভাইয়া কি সব বলছো আদনান এর কিছু করবে না তুমি ওকে আমি মন থেকে ভালোবাসি। ওর কিছু হলে আমি মরে যাব।”
আরাফাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকায় বোনের দিকে।
“ওই দোলা মেয়েটাকে ওর জীবন থেকে সরাতে হবে ভাইয়া ওর জন্য আদনান বারবার আমাকে ইগনোর করেছে।”
“মানে।”
“ওই দোলাকে আদনান এর চোখে খারাপ করতে হবে ওকে ভালোবাসে আদনান ভুল করেছে এটা ওকৈ বুঝাতে হবে।”
কিন্তু কিভাবে?
সেটা আমি জানি না তোমার বোনের খুশির জন্য তোমাকে কিছু করতেই হবে ভাইয়া।
আরাফাত এমনিতে ভালো কিন্তু রগচটা তাই খারাপ ভাল বিবেচনা না করে বোনের চোখের জল দেখে তিথি তা বলে রাজি হয়ে যায়।এটা জীবনের চরম ভুল করে ও।
দোলা কলেজের মাঠে বসে আছে। সবাই ওকে জালিয়ে খাচ্ছে একটা কারনে সামনে ১৬ ডিসেম্বর তাই নিয়ে কলেজে অনুষ্ঠান হবে আর তাতে ওকে গান গাওয়ার জন্য পাগল করেছে ফ্রেন্ডরা।
আরে যুদ্ধের গান পারিনা ভাই তার আমাকে ইলমাকে বল।
সবাই ব্যর্থ হয়ে থামলো।
“আচ্ছা শাড়ি পড়ে আসবি তো নাকি এটাও না।”
“আমি আর শাড়ি ইম্পসিবল দোস্ত তোরা তো জানিস আমি শাড়ি সামলাতে পারিনা।”
সবাই গজে উঠলো,,”সব কিছু তেই তোর না কিছু করতে হবে না তোর।
মন খারাপ করে বললো সবাই আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।
আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা কর।
কি আর করার রাজি হলাম সবার জন্য আল্লাহ জানে কি হবে।
বাসায় এসে শাড়ির ব্যবস্থা করলাম আম্মুর শাড়ি লাল সবুজ মিক্স করা। ব্লাউজ লাল।
আমি শাড়ি পরবো শুনেই আম্মু আমাকে মার্কেট এ নিয়ে এলো আর সিমপুল গহনা কিনে দিল সাথে শাড়ি নিউ কিনে দিতে চেয়েছিল আমি মানা করেছি। বাসার ওইটাই পরবো।
বিজয় দিবস এর দিন মামনি আর আম্মু মিলে আমাকে সাজিয়ে দিল কুচি করে উপরে চীকন করে উঠিয়ে শাড়ি পরলাম কোমরে বিছা, গলায় লাল পাথরের হার, কানে জোমকা, চুল খোঁপা করে গাজরা দিয়ে দিল মামনি। হাতে লাল সবুজের মিক্সড করা চুড়ি হাত ভর্তি।ভালো করে পিন আপ করে দিল যাতে না খুলে আয়নার নিজেকে দেখছি কি সুন্দর লাগছে নিজেকে দেখে নিজেই চোখ ফেরাতে পারছি না। আম্মু আর মামনি তো প্রশংসা করতে করতেই শেষ। ঠোঁট লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল দিয়েছি মোটা করে এসব মামির পছন্দের।
হাঁটতে গিয়ে পরলাম জ্বালায় বাপরে এটাই তো টেনশন।
ঢোক গিলে হাঁটছি পরলাম পরলাম ভাব এজন্য শাড়ি আমি পরতে চাইনা।
তবুও সবাই আমাকে এটা পরার জন্য ব্লাকমেইল করে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে কুঁচি ধরে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে মামনি ও আসলো আমার সাথে আম্মু ও।
বাইরে এসেই মুখোমুখি হলাম আদনান ভাইয়ের সাথে।ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। আমার দিকে একবার তাকালো ফোন থেকে মাথা উঁচু করে ভাইয়া । তাকিয়ে হা হয়ে গেলে।
আদনান দোলার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
দোলা আদনান এর তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল। তার পর ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ভাইয়া এখানে কেন?”
“তোর সাথে যাবে।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,,”কি আমার সাথে কেন যাবে?”
ভাইয়া বলল,,”তারাতাড়ি উঠ। রেডি হতে এতো সময় লাগে।”
বিরক্ত হয়ে বলল।
আমি একবার রেগে তাকিয়ে আম্মুকে বললাম।
“না আমি যাব না আমি একা যাব।”
#চলবে