বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৯

0
1869

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_9

আমি চোখ গোল গোল করে একটু পর পর ওই মেয়েটা আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ মেয়েটা আধিক্ষেতা করে আদনান ভাইকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য হাত তুলল। সেটা দেখে আমার চোখ ইয়া বড় বড় হয়ে গেল।
মেয়েটার হাবভাব বলে দিচ্ছে মেয়ে আদনান ভাইকে পছন্দ করে। আচ্ছা ভাইয়া ও কি করে।
আচ্ছা ওদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে।
ভাবনার মাঝে খাচ্ছিলাম। আর বিপত্তি ঘটল খাবার গলায় আটকে গেল। আমি খুক খুক করে কেশে উঠলাম।
আমার কাশি দেখে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো।
এই ভাবে কাশতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে দাঁড়িয়ে পানি দিলো।
পানি খেয়ে কাশি থামলো কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।‌ আমি পানি মুছলাম একহাতে ভাইয়া কর্কশ গলায় বললো,,,
” কোন ধ্যানে থাকিস খাবার গলায় আটকায় কিভাবে?”
আমি মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তাঁরপর আবার মাথা নিচু করে পিলেটের দিকে তাকায়।
ভাইয়া রেগে বলল,,” কি হলো উওর দিচ্ছিস না কেন?”
আমি বললাম,,” আমি কিছু ভাবছিলাম না। আমি তো তোমাদের দেখছি….
এইটুকু বলেই জ্বিভে কামড় দিলাম। কি বলে ফেললাম….
ভাইয়া ও তিথি মেয়েটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তিথী মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে খাবারে হাত দিলাম ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না তাকাবো না ভাবছি‌।
ভাইয়া অবাক করা কন্ঠে বলল,,” কি বললি?”
আমি খাবার মুখে দিয়ে দিলাম তারপর তাকালাম মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলার ট্রাই করলাম। কিন্তু আমি জানি এখন ভাইয়া আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলবে,, ” ইডিয়েট খাবার মুখে দিয়ে অমন করছিস কেন? এখন কথা বলে আর ঝামেলা বাড়াতে হবে না।”
ভাইয়া গিয়ে বসে পরলো। আমি খেতে লাগলাম।

আদনান নিজের সিটে বসতেই তিথি বলল,,,
” বেশি ন্যাকা তোর বোন। এতো বড় মেয়ে তার আবার খাবার গলায় আটকায়।”
তিথির কথা শুনে আদনান রেগে ওর দিকে তাকালো,,
“কিরে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
“দোলাকে নিয়ে বাজে কথা যেন তোর মুখে না শুনি।”
গম্ভীর হয়ে বলল আদনান। তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,” দোলাটা আবার কে?”
একটু জোরেই বলেছে কথাটা তিথি তাই আমি খাওয়ার সময় শুনতে পাই আর মুখে বিরিয়ানি নিয়ে তার দিকে তাকায়।
আমার নাম নিলো কেন মেয়েটা আমাকে নিয়ে কি কথা বলছ?
মেয়েটা আদনান এর দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে।
আমি খাবার শেষ করে বললাম,,, ” আমার না দোলা কেন কি হয়েছে?”
আমার কথা শুনে তিথি ও সাথে আদনান ভাই আমার দিকে তাকালো।
তিথি কিছু বলবে আদনান বলল,,,” কিছু না। তুই চুপচাপ খা। কথা না বলে।”
আমি তাকিয়ে র‌ইলাম তাও আমাকে নিয়ে কি বলছে জানতে কিন্তু আর কিছু বলছে না‌। তাই খাওয়ায় মন দিলাম।

তিথি আদনান কে বলল,, ওই মেয়েটার নাম দোলা।
কেমন করে যেন দোলার দিকে তাকিয়ে বলল। আদনান কিছু বলছেনা।
তিথি এই সব কথা বাদ দিয়ে বলল,,” তুই আমার হাতে খেলি না কেন আদনান।”
আদনান শক্ত মুখ করে বলল,,” তুই ভালো করেই জানিস আমার এসব পছন্দ না। দেখা হতেই পুরো রেস্টুরেন্টে এর সবার সামনে জরিয়ে ধরলি। আবার এখন খাবার দিচ্ছিস হোয়াই এইসব আমি লাইক করি না। তাই এসব করা থেকে বিরত থাকবি। তুই আমার ফ্রেন্ড বলে কিছু বললাম না নেক্সট টাইম ফ্রেন্ড বলে ছেরে দেব না‌।”
তিথি অভিমান করে বলল,,” তুই আমাকে বকছিস আদনান। আমি তো তোকে এতদিন পর দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে এসব করছি‌। আর তুই তো জানিস আমি তোর প্রতি দূর্বল।”
আদনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
” তুই ভাড়া বাসায় ই থাক।”
কথাটা শুনে তিথির পিল চমকে উঠলো,,
” না না প্লিজ। আমি তোর বাসায় থাকবো!”
“না তোকে সুবিধার লাগছে না। আবার যদি ঝামেলা করিস।”
তিথি মুখটা একটু খানি করে বলল,,
” এই ভাবে বলতে পারলি। আমি এমন করবো আমাকে ফ্রেন্ড ও ভাবিস না।”
ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে লাগল।

আদনান আর না করতে পারলো না।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে আসলাম ওই তিথি টা আদনান ভাইয়ের সাথে বসে পরলো হাসি মুখ করে দাঁত কেলিয়ে।
আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে পেছনে বসে পরলাম।
সারা রাস্তা তাদের কৃতি দেখতে দেখতে। মেয়েটা কি যে গায়ে পড়া ভাবতে পারবে না কেউ নির্লজ্জ ও লাগছে এমন বেহায়া মেয়ে কিনা ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
আমি নিজের বাসায় চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে সোজা।
বাসায় এসে আর কিছু খেলাম না খাবার তো খেয়েই আসছি। রুমে এসে গোসল করেই দিলাম এক ঘুম।
ঘুম থেকে উঠলাম পাঁচটায়।
উঠে আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে মাঠে গেলাম।
ভাইয়ার না সত্তেও। আসলে আজ খেলবো না ভেবেছি ঘুরবো।
আমি মাঠে যেতেই সব বাচ্চারা লাফিয়ে উঠলো আর দৌড়ে আমার কাছে আসলো। খুশিতে নাচছে সব কটা আমাকে দেখে খুশি হয়েছে। নাফিস, এসেই বলল,,
“আপু তুমি এসেছো তোমাকে এই কদিন কতো মিস করেছি জানো।”
আমি ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম,,,”তাই নাকি। আগে তো বলতি আমি না আসলেই ভালো এখন এতো মিস করেছিস কেন?”
নাফিস মুখটা ছোট করে বলল,,” সরি আপু আসলে তোমার সাথে পারতাম না এজন্য বলতাম কিন্তু মন থেকে তোমাকে আমরা সবাই অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে সবাই অনেক মিস করেছি তুমি চলে এসেছো আমরা খুব খুশি হয়েছি। খেলবে না আমাদের সাথে।”
আমি বললাম,,” না রে খেলা বারণ আছে ।”
“কেন আপু কে বারন করেছে।”
*আছে।”
“তাহলে কি আর খেলবে না আমাদের সাথে।
আমি তৈ খেলতে তাই কিন্তু সে জানলে যে আমাকে বকবে।”

“কে তোমাকে বকবে বলো। ”
তোরা যেনে কি করবি?
আমরা তাকে সবাই মিলে বকবো।
তাই, এসব করতে হবে না। আমরা ইচ্ছা হলেই চলে আসবো খেলতে। নো প্রবলেম! আমি কারো কথা শুনার মেয়ে নাকি আজ আমার‌ই খেলতে ইচ্ছে করছে না তোরা খেল আমি দেখি‌।”
ওরা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি কিছু ক্ষন থেকে চলে এলাম বাসায় না গিয়ে কি মনে করে যেন আদনান ভাইয়ের বাসায় গেলাম।
ওই তিথি মেয়েটা করছে কি দেখতে।

কলিং বেল চাপতে মামনি না এসে রুশা আসলো।
রুশা এই বাসায় কাজ করে আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো তারপর বলল,,
” আপা আমনে আইছেন। আমনের লগে আমার কতা আছে।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,” আমার সাথে তোর কি কথা?”
(রুশা আমার থেকে তিন বছর এর বড়।ওর মা এই বাসায় কাজ করে। সেই সূত্রে ও ও করে মাঝে মাঝে)
রুশা মুখটা বিকৃত করে মাথা আমার দিকে এনে ফিসফিস করে বলল,,,” হুনেন তায়লে আইজকা না একতা মাইয়া নিয়া আইছে ছোট স্যার। মাইয়াডা কি যে অসভ্য। কি বিচ্ছিরি জামা কাপড় পরছে পাওডা পুরা খালি। আর আইয়াই খালি ছোট স্যারের পেছনে ঘুরঘুর করছে।স্যার বিরক্ত হলেও হুনে না। বড় মা তো মাইয়া দেইখাই আদনান ভাইজান রে ডাইকা বকছে। ইমন খারাপ মাইয়া বাড়ি আনছে দেইখা‌।”
আমি ওর কথা শুনে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর রুশা কে চুপ করিয়া ভেতরে গেলাম ও শুরু করলে আর শেষ করে না‌।

মামনি নাকি ঘুম তাই আর তার কাছে গেলাম না। সোজা ওই তিথির রুমে গেলাম। কারন রুশার থেকে জানতে পেরেছি আদনান ভাই নাকি নিজের রুমে থেকে ওই মেয়েকে বের করে ঘুমিয়েছে। তিথির রুমে ফাঁকা ভ্রু কুঁচকে আদনান ভাইয়েরুমে এলাম। আদনান ভাইয়ের রুমে গিয়ে আমার চোখ চরক গাছ।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে