বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৭

0
1987

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_7

আজকে কলেজে এসে জানতে পারলাম ফাহাদ আমার সাথে দেখা করবে বলেছে। মেঘলার থেকে জানতে পারলাম ( ওইদিন দোলার ফ্রেন্ডদের নাম বলেছিলাম কিন্তু সেখানে মেঘলার নাম বলতে মনে ছিলো না সরি।আর দোলাকে নিয়ে পাঁচ জন ফ্রেন্ড বলেছিলাম। সেখানে হবে দোলাকে ছাড়াই ৫ জন ফ্রেন্ড মোট ছয় জন।)
মেঘলা আমাকে বলল,, আজকে কলেজে ক্লাস শেষ করে ফাহাদের সাথে দেখা করতে সামনের একটা পার্কে যেতে।
আমি রাজি ‌হয়ে গেলাম।
“আচ্ছা কিন্তু বাসায় যাইতে তো লেট হয়ে যাবে।”
মন খারাপ করে বললাম কারন বাসায় যেতে লেট হলে তো সবাই চিন্তা করবে!
নেহা বলল,, হ্যাঁ তাও ঠিক।
আমি আবার বললাম,,”আর তখন বলতে হইব কেন লেট করলাম? তখন কি বলব? আমার তো কখন গেট হয়না বাসায় যেতে। সব সময়‌ তো ক্লাস শেষ হলেই বাসায় চলে যায়।”
মেঘলা বলল,,, তাহলে কি তুই যাবি না?
আমি বললাম,, আমি তো যেতে চাই কিন্তু?
মেঘলা তখন বলল,, আচ্ছা একটা কাজ করা যায়।
সবাই বললাম কি? ও বলল,
“আমরা তাহলে এক ক্লাস না করে চলে যায়। তারপর ক্লাস টাইম শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় রওনা দেব। তাহলে আর এক্সট্রা টাইম লাগবে না সবাই ভাববে আমরা ক্লাস করে আসছি বাড়িতে।”
মেঘলা কথাটা আমাদের সবার পছন্দ হলো।বাড়িতে আর কিছু মিথ্যা বলতে হবে না সময়মতো পৌঁছাতে পারবো।
ক্লাস শেষ করে আমরা পায়ে হেঁটেই পার্কে চলে এলাম। কারন পার্ক খুব একটা দূরে না।
অবশেষে আমার বয় ফ্রেন্ড হবে। ফাহাদ আজকে আমাকে প্রপোজ করবে সেটা আমি মেঘনা থেকে জানতে পেয়েছি।
তবুও ভয় করছে বায় ইনি চান্জ যদি আমার চেনা জানা কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো আমার খবর আছে।
ভয়ে ভয়ে ওদের সাথে পার্কে ভেতরে ঢুকলাম।

এদিকে
আদনান একটা মিটিং করার জন্য ক্লায়েন্টের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছে। রেস্টুরেন্টটা আবার দোলার কলেজের পাশে ও ভেবেছে দোলার ক্লাশ শেষ হলে ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং শেষ করে দোলার কলেজের সামনে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠে। কিন্তু আর আধাঘণ্টার টাইম আছে।এত সময় আগে গিয়ে কি করবো ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
তাইও পাশে পার্কে আসে।
কিন্তু কি মনে করে যেন পার্কে না গিয়ে পাশে লেকের পাড়ে যায় আদনান।
লেকের পাড়ে এসে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। রোদের মাঝে হুড়মুড় করে বাতাস বইছে শরীরে। চোখে থেকে সানগ্লাস খুলে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
হঠাৎ তার মন চাইছে এমন নিস্তব্ধ একটা জায়গায় ওর পাশে আর দোলা রানীকে চাই। যার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। যার হাতে হাত রেখে কিনার ঘেঁষে হাঁটবে। দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। চোখে থাকবে না বলা অনেক ভালোবাসার কথা।
এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদনান।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মে দোলাকে ও নিজের করে পাবেনা আর না মনের কথা বলতে পারবে। কারণ তোমার বাবা-মা কি যে কথা দিয়েছে?দোলা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এইসব বিষয়ে জানানো যাবে। এখন ও দোলা অনেক ছেলে মানুষি, অবুজ, বাচ্চা। কিন্তু আমার মন তো এসব মানে না মন প্রাণ দিয়ে তো শুধু একজনকে ভালোবাসি যে আমার চোখের সামনে সব সময় থাকে তাকে দেখে যা আমার তৃষ্ণার্ত মনকে বাধা দিতে খুব কষ্ট হয়।
আদনান লেগে দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল ওর চোখের সামনে দোলার হাসিমুখটা ভেসে উঠলো ডলার হাসিমুখ দেখে আদনানের ও ঠোট আলাদা হয়ে গেল। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠলো।

আদনান নানা কথা ভাবছিল তার সব কিছু ছিল দোলাকে ঘিরে ঠিক তখনই ওর চোখ যায় কিছুটা দুরে।
কলেজ ড্রেস পরা কয়েকটা মেয়ে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। একবার তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা দোলার কলেজ ড্রেসের কালার তার মানে তো দোলার কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু দোলাদের ক্লাসে এখনো শেষ হয় নাই এরা তো আগেই বের হয়েছে কেন?
মাথা না ঘামিয়ে আদনান ফোন বের করে কাউকে ফোন দেওয়ার জন্য। ফোন করে আর এক ফ্রেন্ডকে?কথা বলতে বলতে একটু নড়াচড়া করতে লাগে তখনই ওর চোখে পরে দোলাকে আবসা একটু দেখেই থমকে যায়।
কলের ওপাশ থেকে অর বন্ধ বলে যাচ্ছে,,,
“কিরে আদনান আসবি আমার বিয়েতে?”
আদান কথা বলছে না ও থমকে দাঁড়িয়ে আছে দোলাকে দেখলে মনে হয় তাড়াতাড়ি ঘুরে তাকায় সাইট থেকে দোলার মতোই লাগছে মেয়েটাকে।
আদনান উৎসুক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বাম সাইড দেখতে পাচ্ছেন আদনান এতে স্পষ্ট দোলায় লাগছে।মেয়েটার সামনে একটা ছেলে গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আর পাশে চার পাঁচটা মেয়ে কি যেন বলে হাসাহাসি করছে?
কানের ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছে কথা,,,
“আদনান ভাই তুই লাইনে আছিস তো কথা বলছিস না কেন আসবি না নাকি?'”
আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি।আর কিছু বলল না আদনান ফোন কানে থেকে নামিয়ে ফোন পকেটে রেখে সামনে এগুতে লাগলো।যতই এগিয়ে যাচ্ছে তত স্পষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটার কেউ না দোলা ছাড়া।
রাগে ওর শরীর কাঁপছে।চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে চোখমুখ শক্ত গম্ভীর করে এগিয়ে যাচ্ছে।দোলা সেখানেই চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারলে ওর শান্তি লাগতো। কলেজ বাদ দিয়ে এখানে প্রেমলীলা চলছে। গটগট পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আদনান।

দোলা ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ফাহাদ ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। দোলা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে যাচ্ছে।আর ফাহাদ লজ্জিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।দোলা এবার মুখে হাত দিয়ে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে হাসির চোটে। হাসবে না কেন পাশে ওর বান্ধবীরা ও হাসতেছে একমাত্র মেঘলা বাদে যত‌ই হোক মেঘলার ভাই বলে কথা,,
আর আপনারা তো হাসির কারণটা জানেন না হাসির কারণ হচ্ছে ফাহাদ এর প্যান্টা অতিরিক্ত টাইট এর জন্য বসার সময় খুব কষ্টে বসেছে। চিপায় বসে ছেলেটা বড় কষ্টে আছে এই বসা নিয়ে কতই না কষ্ট করেছে।
বসতে চেয়েছিল না কিন্তু আমাদের দোলা রানী তো আবার বসে নাই নায়কি স্টাইলে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবে না।
তাই বেচারা পড়েছে বে কায়দায়।

অনেক কষ্টে দোলা নিজের হাসি থামাল তা ও নিজের ইচ্ছায় না মেঘলার ধমক এ।
“কি হচ্ছে কি দোলা? তোরা সবাই ভাবে হাসলে আমার ভাইটার কি হবে বুঝতে পারছিস না। ওতো লজ্জায় মরে যাচ্ছে। আহারে বেচারা কেমন নিষ্পাপ হয়ে তাকিয়ে আছে তোদের একটু মায়া লাগছেনা। এমন করলে ও কি প্রপোজ করতে পারবে। তার চেয়ে বড় আমি ওকে বলি চলে যেতে তুই প্রেমট্রেম কিছু করবিনা। তাও ভাই এমন হাসিস না।”
দোলার এখন এইটাই চাইছি।ও এই ছেলেটাকে একটু বয়ফ্রেন্ড বানাবে না।ডিসাইড করে নিয়েছে। বাবারে বাবা ছেলের কি স্টাইলবাবা এত টাইট কেন পড়বে যেটা পড়ে কারও সামনে ইজি ফিল করবে না।
দোলা তাই হাসি থামালো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এখন। মেঘলা ভেবেছে হয়তো এখন আর হাসবে না। প্রপোজ এখন হবে।
কিন্তু দোলা করল কি?
“এই যে ফাহাদ না টাহাদ দাড়ান দেখি?”
ফাহাদ দোলায় এইভাবে কথা বলায় ভরকে গেল। ছোট ছোট করে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো মশাই এভাবে বসে আছেন কেন আপনি তো খুবই কষ্টে আছেন কখন না যেন আবার ছিড়ে যাবে।
তখন তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে তারচেয়ে বরং দাঁড়ান। ওইসব কেলেঙ্কারি হলে কিন্তু বাসায় পৌঁছাতে পারবেন না।”
ফাহাদ হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে গেল।
তারপর আমতা আমতা করে বলল,,”আপনি তো ওইভাবে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবেন না এখন…
দোলা ফাহাদকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,”থাক ভাই তোমাকে আর আমাকে এভাবে প্রপোজ করতে হবেনা আমার প্রেম করার সাধ মিটে গেছে। তুমি এবার ফটো।”
মেঘলা তাড়াতাড়ি ওর কানে কানে বলে কি সব বলছিস?
দোলা বললো,,,” ঠিকই বলছি আমি এই হাদারামের সাথে প্রেম করব না। আমার এমন হবে না আমার তো হ্যান্ডসাম কিউটি বয় লাগবে। আর তুই কিনা আমার জন্য একটা হাঁদারাম জুটালি।”
মেঘলা রেগে বলে তুই আমার ভাইকে একদম হাদারাম বলবি না।
“অফ তোর কি নিজের ভাই এত ভাই করছিস কেন? তোর নিজের ভাই হলে ভেবে দেখতাম হাঁদারাম হলেও হতো। কিন্তু এটাকে নিতে পারবো জানু। নিজের ভাইয়া কিসের চাচতো ভাই নিয়ে এসেছিস বলদ একটা ওর সাথে কিনা আমি প্রেম করবো? ইম্পসিবল দোস্ত!”

মেঘলা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে দোলা এগিয়ে ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,”এইযে আপনার হাতের ফর্সা দিয়ে জান আমার না খুব পছন্দ! প্রপোজ করলে তো আমি পেতাম আমার জন্যএনেছিলেন প্রপোজ করতে না পারলেও বোন হিসেবে দিয়ে যান।
ছেলেটা সত্যি দোলার দিকে ফুলটা বাড়িয়ে দিতে যাবে তখনি,,,
আদনান দ্রুতগতিতে এসে দোলার হাত শক্ত করে ধরে ফাহাদের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়। আচমকা কেউ শক্ত করে হাত ধরায় দোলা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আদনানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনানকে দেখে ওর চোখে এত বড় হয়েছে যেন চোখ বের হয়ে আসবে। হতভম্ব হয়ে গেছে,, আদনান ভাই এখানে কোথা থেকে আসলো?
আমার সমস্ত চিন্তা ধারণা শূন্য হয়ে গেল। ভাইয়াকে দেখে আমি বুদ্ধি শূন্য হয়ে গেছি একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাচ্ছি ভাইয়া কঠিন চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলছি। আজ আমার কপালে কিছু নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ জানে্ ভাইয়া এখানে কি করে চলে এলো?

আমার মুখে ভয়ের রেস বেড়ে গেছে। ভয়ে আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌। ভাইয়া হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার ব্যাথা লাগছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না। ভাইয়ার কঠিন চোখ মুখ দেখে আমার ভেতর টা ভয়ে শেষ। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে আমি শুকনো ঢোক গিলে নিলাম। জ্বিবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
“ভাইইইয়া তুওওওমি এখানে কি করছছছছো?”
ভাইয়া আমার কথায় প্রেক্ষিতে কিছু বললো না চোখ সরিয়ে ফাহাদ ও আমার বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল,,
” তুই এখানে কি করছিস দোলা? তোর তো এখন ও ক্লাস হচ্ছে।”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না ভয় পাচ্ছি খুব।
“কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? এখানে কি করছিস?”
আমি আমতা আমতা করছি।
এবার ভাইয়া চিৎকার করে উঠল,,,
” কথা বল কি করছিস এখানে? আনসার মি।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে