#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#Writer_Nondini_Nila
#Part_1
মাঠে বাচ্চাদের সাথে খেলছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে আদনান ভাই আসলো আর আমার বাহু শক্ত করে ধরে রাগী চোখে তাকিয়ে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না কিন্তু ভীতু হয়ে চুপচাপ ভাইয়ার সাথে আসলাম। আসলে আমি আদনান ভাইয়া কে প্রচন্ড ভয় পাই আর আদনান ভাই আমাকে বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করে খেলা করতে মানা করেছে। কিন্তু আমিতো শুনার পাত্রী না বাচ্চাদের সাথে খেলতে তো আমি খুবই ভালোবাসি।আদনান ভাইয়ের ভয় কি সেইটা আমি মিস করবো নাকি।কিন্তু ভাইয়ার মুখের উপরে কথাটা বলার সাহস আমার নাই যদিও কয়বার সাহস করে বলেছি কিন্তু আমার বাসার সবাই যে আদনান ভাইয়ের পক্ষে।তাই দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আমাকে নিরবে সহ্য করতে হয় কিন্তু মনে মনে তাকে আমি একদমই পছন্দ করি না এই জোর-জবরদস্তির জন্য আরো বেশি হেট করি।এজন্যই তো আজকের লুকিয়ে-চুরিয়ে এখানে এসেছিলাম আজকে ভাইয়া ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে চলে এলো সেটাই বুঝতে পারলাম না।
ভাইয়া আমাকে একদম আমাদের বাসার ড্রয়িং রুমে এনে ছাড়লো হাত ব্যথা হয়ে গেছে। গন্ডার একটা রাক্ষস শরীরে যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে আমার হাতটা ধরে ছিল। আমি নাক মুখ কুঁচকে আছি আর একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আমার দিকে একবার তাকালো না চিৎকার করে আমার মাকে ডাকল মামনি বলে। আদনান ভাইয়ের চিৎকারে আমি লাফিয়ে উঠলাম।দুই হাত নিয়ে কান চেপে ধরলাম বাবারে এতো জোরে কেউ ডাকে আমার কান ফেটে গেল মনে হয়।
একটু পরেই মা এক প্রকার ছুটে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো রান্নাঘরে ছিল হয়তো। হাতে যে খুন্তি আছে তা দেখেই বুঝতে পেরেছি। মা এসে ভাইয়াকে দেখে সে কি খুশি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে গেল।বাকবাকুম তো হবেই মাঝে ভাইয়াকে খুবই ভালোবাসি আমি যে তাদের মেয়ে আপন মেয়ে আমার মনে হয় না আমার মনে হয় আমি তাদের সৎ মেয়ে আর ভাইয়া তাদের নিজের ছেলে। এজন্য আমার দুঃখের সীমা নাই কিন্তু এই দুঃখের মাঝেও সুখ আছে। আর সেটা হলো আমার মামনি পাপ্পা। বলছি তারা কে তারা হল এই খাটাশ আদনানের মা-বাবা। খুবই ভালোবাসে আমাকে আমি ও তাদের এত ভালোবাসি।
আম্মু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
“আদনান কখন আসলি বাবা। এত রেগে আছিস কেন কি হয়েছে?”
প্রচন্ড চিন্তিত ভঙ্গিতে মা কথাটা জিজ্ঞেস করেই আদনান ভাই এর গালে হাত দিল।
আমি মায়ের এত আদিখ্যেতা দেখে ভেংচি কাটলাম। অসহ্য লাগে এই ভালোবাসা দেখলে।
আদনান ভাইয়া আমার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে আম্মুকে বলল,,
“ও বাইরে কিভাবে গেল মামনি ওকে আমি বাচ্চাদের সাথে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে মানা করেছিলাম।”
আদনান ভাইয়ের কথা শুনে মা খ্যাপা বাঘিনীর মত আমার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে আমি কোন ভয়ঙ্কর অন্যায় করে ফেলেছি আমি।
আমি আম্মুর তাকানো দেখে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মুখে ভয়ের আভাস কিন্তু মনে মনে আদনান ভাইয়ের চোদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছি। একবার সুযোগ পায় ভাইয়ের উচিত শিক্ষা দিব আমি।
“আমিতো জানিনা রে ওতো আমাকে বলল ও নাকি ওর বান্ধবীর বাড়ি যাবে কোন নোট আনতে।”
“কিসের নোট কোন নোট না। ও গিয়েছিলো তোমাকে মিথ্যা কথা বলে মাঠে ওই বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করতে। আশেপাশে কত লোকজন ছিল তুমি জানো সবার সামনে এরকম পোশাক পরে ও লাফাচ্ছিল কতোটা বেয়াদপ হয়ে গেছে। আমি ওকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি মামনি। আর কখনো যদি ও মাঠে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে তো আমার হাত থেকে কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না সেইদিন এমনি কি তোমরা ও না।”
চিৎকার করে কথাগুলো বলে আমার দিকে আদনান ভাই রাগী চোখে তাকিয়ে কটমট করে তারপর গট গট পাঁয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনে থেকে আম্মু ভাইয়া কে ডাকল ভাইয়া একবার তাকিয়ে খালি বলল পরে আসবো মামনি।
তারপর চলে গেল।আম্মু আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম।জানি এখন ওখানে থাকলে আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে।তাই না থাকাটাই বেটার।
রুমে এসে বারান্দায় গেলাম বারান্দায় থেকে আদদান ভাইদের বাসার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার রুমের সোজাসুজি আদনান ভাই এর রুম। ভাইয়াকে দেখলাম রুমে আছে শার্টের বোতাম খুলতেছে তখনই ফোন বেজে উঠল ফোনে নিয়ে ওই ভাবেই বারান্দায় আসতে লাগল তার বারান্দার আমার বারান্দা সাথে সাথে তাই সে বারান্দায় এসে আমাকে দেখবে তাই দৌড়ে রুমে চলে এলাম কোথাও থাকতে পারবো না খাটাশটার জন্য।
রাগে ফুসফুস করতে করতে রুমে চলে এলাম তারপর বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। ঐ ভাবি ঘুমিয়ে পরেছি রাতে জাগানো পেলাম।আব্বু এসেছে আব্বুর আওয়াজ পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে বেরিয়ে পড়লাম।এখন আর মা বকতে পারবেনা আব্বুর সামনে বকতে পারেন আব্বু আম্মু ধমক দিয়ে দিবে।
সত্যি মা বকতে পারল না মা আমার দিকে শুধু কটমট করে তাকিয়ে ছিল আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আব্বুর সাথে খেতে বসলাম।খেয়ে রুমে এসে আবার দরজা লাগে ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুক চালাতে চালাতে কখন রাত এগারোটা বেজে গেছে আমি খেয়ালই করিনি। খেয়াল করলাম একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ আশাতে। সে আমাকে এক প্রকার হুমকি দিয়েছে মেসেজ দিয়েছে,,
“তাড়াতাড়ি অফলাইন হয়ে ঘুমাও না হলে তোমার কপালে শনি আছে।”
মেসেজ দেখেই আমি শোয়া থেকে বসে পড়লাম কথার ধরনে একদম আদনান ভাইয়ের মতো।আমি তো আপনার ভাইয়ের সবগুলো আইডি আমার আইডি থেকে ব্লক করে রেখেছি। তাহলে ভাই আমার আইডি কোথায় পেল আর এইটা কি ভাইয়ের আইডি?
আঙ্গুল মুখে নিয়ে কামরাতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম তারপর।
ঐ আইডিতে ঢুকলাম আইডির নাম,
‘অদ্ভুত আমি’
একটা কার্টুন পিক দেওয়া প্রোফাইলে আর জীবনে মনে হয় না কিছু পোস্ট করছে। প্রোফাইল ফাঁকা ইনফরমেশনে কিচ্ছু নাই এটা এক নাম্বার ফ্যাক আইডি দেখেই বোঝা যায়।প্রোফাইল পিকটা দেওয়া হয়েছে 3 ঘণ্টা আগে।আচ্ছা এইটা কি আদনান ভাই আমি তার সব আইডি ব্লক করছি দেখেই এই আইডি দিয়ে আমারে উপর নজর রাখে। কথাটা ভাবতে আমার হাতে ফোন পরে গেল এটা নিশ্চিত আদনান ভাই।
আদনান ভাই এর কাছে ধরা পড়লে তো আমার খবর আছে। আমি তাড়াতাড়ি ডাটা অফ করে শুয়ে পড়লাম চিন্তায় এদিকেওদিক করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই সকালবেলা।
পরদিন শুক্রবার এর জন্য কলেজ অফ।বাসায় কাটাতে হবে আদনান ভাইয়ের ভয়ে আমি আর রুম থেকে বের হলাম না দুই তিনবার তার কণ্ঠ শুনলাম সকালে একবার খাবার রুমে খেলাম দুপুরে চুপিচুপি খেলাম।সারাদিন রুমে থেকে এতো বোর হয়ে গেছি এবার আমার একবার মাঠে যেতে হবে একটু খেলতে হবে নয় মনটা ফ্রেশ হবে না জিম মেরে রুমে বসে আছি।গালে হাত দিয়ে কি ভাবে বের হব মাকে আজকে কোন অজুহাত দিতে পারব না জানি এ জন্য লুকিয়ে বের হতে হবে। আজ শুক্রবার ভাইয়া কে নিয়ে ভয় ছিল কিন্তু আজকে ভাইয়াকে নিয়ে ভয় নেই।কারণ হলো সে নাকি দুপুরের পর কোন এক ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাবে। সেই সুযোগে আমার এখন মাঠে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়েছে।মা এখন রুমে আছে কারণ আব্বু বাড়িতে আব্বু সাথে মা বিকাল টাইমে বসে চা খাওয়া আর গল্প করে।
আমি সুযোগ বুঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে মাঠে আসলাম আজকে আমি ক্রিকেট খেলব। বাচ্চারা সব তো আমাকে দেখি লাফিযচ্ছে সেই খুশিতে। আর কালকের জন্য সবার কতো চিন্তা আমাকে আদনান ভাই মেরেছে কিনে আন তেন।অবশেষে খেলা শুরু হলো খেলছি প্রথমে বল মারলাম তারপর আমার দ্যান আসলো আমি ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছি প্রথমবারই বল মারলাম খুব বিশ্রী ভাবে। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে লজ্জায় মাথা কাটা।বাচ্চাদের সাথে কিনা নাম পারছি না এবার আমি প্রবল সাহসিনী শক্তি সঞ্চয় করে দাঁড়িয়ে আছি ভালভাবে মারবি একদম ছক্কা।
আমি পাকা খেলোয়ার এর ব্যাট ধরে আছি।ওই পাস থেকে বল চলবে এমন সময় একজনকে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম যাকে দেখে আমার হৃদপিণ্ড চলাচল বন্ধ হয়ে গেল আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাট উচু করে ধরলাম আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে এতটাই ভয় পেয়েছি যে আমার হাত থেকে ব্যাটটা ঠাস করে পড়ে গেল।শুধু পড়ে খান্ত হল না শয়তান ব্যাট গিয়ে পড়ল আমার পায়ে।আমি মাগো বলে চিৎকার করে পাঁ ধরে নিচে বসে পড়লাম। একে তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সিংহ যাকে আমি প্রচন্ড ভয় পাই।যার জন্য এমনিতে আমি আধমরা সে আমার আজকে কি অবস্থা করবে সেটা কেউ জানে না। তারপর এই ব্যাটা আমার পা ভেঙে দিল।
#চলবে