#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__৪
বৃষ্টি কিছুক্ষন রাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে দাড়িয়ে আছে। আজ কেনো জানি বড্ড মায়া লাগছে মানুষটার জন্য তার। একটা দির্ঘশ্বাস পেলে হাটা ধরে বৃষ্টি। দরজা খুলতেই আরশি দাত কেলিয়ে বলে উঠে,
– কি হলো ভাবি? তোমার আশিক তো দেখি বেঘোরে ঘুমাচ্ছা তাহলে দরজা খুলতে এতো দেরি হলো কেনো তোমার?
আরশির কথায় কিছুটা লজ্জার ছাপ ভেষে উঠে বৃষ্টির মুখে।
বৃষ্টিকে নিয়ে নিচে চলে যায় আরশি। দেখে অনেক মেহমান বসে আছে ওখানে। বৃষ্টিকে দেখে সবাি কেমন ভ্র কুচকে তাকায় বৃষ্টির দিকে। যেনো বৃষ্টি একটা আসামি আর বাকিরা তার বিচার করতে বসেছে। পাশ থেকে এক মহিলা রাতের মাকে বলে উঠে,
– এটাই তাহলে বৌ? দেখতে শুনতে তো ভালোই আছে দেখছি।
পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠে,
– আরে ওই বোনটার শরির স্বাস্থ আরো ভালো ছিলো। কি মায়াবি মেয়ে ছিলো সে। কিন্তু কে জানতো এতো ভালো মেয়েটা এমন কাজ করে বসবে?
আগের মহিলাটা আবার বলে উঠে,
– আজকালকার মেয়েদের বুঝা বড় দায়। কখন মনে কি ফন্দি আটে তা বুঝাই মুশকিল। বড় বোনটা তো বিয়ের দিনই বেটা মানুষ নিয়ে ভাগছে। যার বড় বোনের চরিত্র এমন সেখানে ছোট বোনটাও আর কেমনই হবে? এখন এটা টিকলেই হলো।
ওদের কথা শুনে চোখের কোনে পানি জমে গেলো বৃষ্টির। তবুও মুখ বুজে সব সহ্য করছে মাথা নিচু করে।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– আচ্চা চাচি, আপনারা এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো, আপনার ছেলের গলায় ধরে আমরা কাওকে ঝুলিয়ে দিয়েছি? তাছারা ভাইয়ার সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে। সে জদি ভালো তাকে তাহলে আপনাদের এতো জ্বলে কেনো? নাকি আপনার মেয়েকে বিয়ে করেনি দেখে তাই এমন জ্বলছে?
মহিলাটা চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে,
– দেখলেন আজকাল মেয়েরা কেমন চট চট কথার উত্তর দিয়ে দেয়। মুরুব্বিরা কথা বলার সময় কথা মাটিতে পরতে পারেনা তার আগেই তুলে নেয় মুখে।
পাশের মহিলাটা একটু নরে চরে বসে,
– আচ্ছা মা তোমার নাম কি?
বৃষ্টি কাপা গলায় ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
– বৃষ্টি।
– বাহ্, দুই বোনের নামে তো বেস ভালোই মিল আছে। তো তোমার বোনটা এভাবে বিয়ের দিন ভেগে গেলো কেনো? ছেলেটার সাথে কি আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো তার?
সবার এমন আহম্বকি প্রশ্নের উত্তর খুজে পাচ্ছেনা বৃষ্টি। তাই চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে সে। তাদের কোনো কথাই স্বস্থিকর নয়। প্রতিটি কথায় যেনো অসস্থি তৈরি করছে মনে। যেখানে একটা মেয়ের বিয়ের পর কতো মানুষ আসবে তাকে দেখার জন্য, সকলে হাসিখুশি ভাবে সময় কাটাবে তার সাথে, নতুন বৌ নিয়ে থাকবে সকলের মনে খুশির উত্তেজনা, আর সেখানে তাকে আজ দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার এবং বোনের চরিত্রের ইন্টারবিউ দিতে হচ্ছে। বিয়েটা এভাবে হওয়া, বাসর রাতে স্বামির কাছে অপমানিত হয়ে চর খাওয়ার দৃশ্য। সত্যিই তার ভাগ্যটা অতুলনিয় ভাগ্য হিসেবে চিহ্নিত।
নিয়ম অনুসারে আজ মেয়ে পক্ষরা এই বাড়িতে আসার কথা। কিন্তু সেটাও কেন্সেল করে দিয়েছে রাত। ওই বাড়িথেকে কেও আসেনি আজ রুমের এক কোনে বসে আছে বৃষ্টি। শুধু চোখের কোনে গড়িয়ে পড়া পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে সে। রাত সেই সকালে বেড়িয়েছে এখনো বাড়ি ফিরেনি।
আরশি রুমে আসতেই তরিঘরি করে চোখের পানি মুছে গাল টেনে একটা হাসি দিলো বৃষ্টি। তবুও কান্নার ভাবটা আরশির চোখ এড়ালোনা।
বৃষ্টির চোখের জল মুছে দিয়ে বলে উঠে,
– কেদোনা ভাবি। এক সময় দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া আসলে এমন ছিলোনা। বাবা মায়ের মুখের উপর সে কোনোদিনও কথা বলেনি। এই একটা কষ্টই পালটে দিয়েছে তার জীবনটা। এতো বছরের ভালোবাসা ভুলতে তো একটু সময় লাগবে এটাই তো সাভাবিক। কিছু মেয়েদের জীবনটাই এমন। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাও একটা বড় সংগ্রাম। কেদোনা ভাবি, এই সুন্দর মুখে কান্নাটা একধম বেমানান। একটু হাসো আয়নায় গিয়ে দেখো নিজেকে কতো সুন্দর লাগবে ওই হাসিতে।
হটাৎই আরশিকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেদে দিলো বৃষ্টি।
এভাবে কেটে গেলো আরো দুদিন। রাতে সবাই মিলে খাচ্ছে টেবিলে। আরশি বৃষ্টিকে বসিয়ে দিলো রাতের পাশে। চুপচাপ বসে প্লেট টেনে নিলো রাত।
রাতের মা ইশারা করে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে বললো বৃষ্টিকে। মায়ের কথা মত কাপা হাতে রাতের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে বৃষ্টি। হাতটা কাপছে তার।
হটাৎই রাত উঠে দাড়ায় খাবার ছেরে।
– কিরে আবার কি হলো? উঠে গেলি কেনো?
– ইচ্ছে হলো তাই।
হন হন করে হেটে রুমে চলে গেলো রাত। মুখটা গোমরা করে মাথা নিচু করে রইলো বৃষ্টি।
সকলে খেয়ে নেয় বসে। বৃষ্টিকে দিয়ে রাতের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দেয় তার বাবা। ভয়ে ভয়ে খাবার গুলো রাতের পাশে রেখে বলে উঠে,
– দয়া করে আমি দোষ করলে খাবারের উপর রাগ দেখাবেন না। শরির খারাপ করবে। খাবারটা খেয়ে নিন।
রাত সুয়ে থাকা অবস্তায় বলে উঠে,
– নিয়ে যাও এগুলো।
বৃষ্টি কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা সে।
রাত হুট করে উঠে খাবার সহ প্লেট টা ছুড়ে মারলো প্লোড়ে। এক পাশে দড়িয়ে একটু কেপে উঠে বৃষ্টি। তার শরির দিয়ে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেলো।
– খিদে নেই বললাম, কথা কানে যায় না? আর একধম আমার সামনে ভালো সাজতে আসবিনা। যতটুকু আছিস ততোটুকুতেই পরে থাক। এর চাইতে বেশি আগানোর চেষ্টা করবিনা।
বলেই হন হন করে ছাদে গিয়ে সিগারেট ধরালো রাত। সেখানে দাড়িয়ে থেকে একটা বড় নিশ্বাস নিলো বৃষ্টি।
রাত তখন গভির, হটাৎ ঘুম ভেঙে গেলো বৃষ্টির। কানে এলো নিঃশব্দে কিছু কান্নার আওয়াজ। সোফা থেকে নেমে ধিরে পায়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো বৃষ্টি। দেখে চাঁদের আলোয় বেলকনিতে বসে বর্ষার ছবি হাতে নিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে রাত। চখের জল গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।
নিরবে রাতের পাশে গিয়ে বসলো বৃষ্টি। একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো রাত। আজ আর বৃষ্টিকে কিছু বলছেনা রাত। ইচ্ছে করছে সব কষ্ট আজ বৃষ্টির সাথে ভাগাভাগি করে নিতে। বৃষ্টিও চুপচাপ বসে তার কাধে একটি হাত রাখলো। সে কখনো ছেলেদের এভাবে কাদতে দেখেনি। দেকেছে মায়ের মার খেয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা কান্না করছে। কিন্তু বড় হওয়ার পর এভাবে কোনো ছেলেকে কাদতে দেখেনি সে। বর্ষা কি আঘাতটাই না দিয়েছে তাকে।
,
,
কেটে গেলো আরো দু,দিন। আজ বৃষ্টিকে নিতে এসেছে তার বাবা। বিয়ের পর স্বামী সহ বাপের বাড়ি দু,একদিন থেকে আসার প্রথাটা আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিন্তু রাত ওই বাড়িতে যেতে নারাজ। যেতে হলে বৃষ্টি একাই যাবে। অনেক জোরাজুরি করেও রাতকে নিতে পারেনি কেও। রাতের বাবা বৃষ্টির বাবাকে বুঝিয়ে বললো ব্যপারটা। দরকার হলে রাত ওই বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে যাবে বৃষ্টিকে।
অবশেষে রাজি হয়ে যায় বৃষ্টির বাবাও। বৃষ্টিকে নিয়ে চলে যায় সে।
,
,
রাত ৮ টা একটা পাতলা কাঁতা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে আরশি। শরির টা ভালো নেই আজ। সকালে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর উঠেছে। সন্ধায় ডাক্তার এসে ঔষধ লিকে দিয়ে গেছে।
ঘুমাচ্ছে সে, হটাৎ খেয়াল করলো তার দিকে কেও একজন ঝুকে মাথায় পট্টি দিচ্ছে। চোখ খুলতেই দেখে রিদ ভাইয়া। মা বাবা কেওই পাশে নেই। রিদকে দেখে এক লাপে বিছানা থেকে উঠে বসে সে। রিদ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
– আরে আরে কি করছিস? তোর তো জ্বর, শুয়ে থাক আমি মাথায় জ্বল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে।
– আপনার সাহস তো দেখছি কম না। আমার বেড রুমে চলে এলেন? তাও আবার রাতে?
আরশি কথাটা যেনো ফু দিয়ে ফেলে দিলো রাত। শান্ত গলায় বলে উঠে,
– কিছু খাবি?
– নাহ্।
– তুই যে ঘুমের মাঝেও বকিস তা তো আগে জানা ছিলোনা। এই কার সাথে এমন বকিস রে তুই?
চলবে