#বৃষ্টি থামার শেষে
পর্ব-১০ ও শেষ পর্ব
ইশা তূর্যকে দেখে হেসে বলল, তোর এই অবস্থা কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে রাস্তায় গড়াগড়ি করেছিস। অনেক দিন পর দেশে ফিরে নিশ্চয়ই ধুলো মাখতে ইচ্ছে হয়েছে!
তূর্য কথা বলতে পারছে না। গলার কাছে কান্নার দলাটা এখনও আটকে আছে। খুক খুক করে দুবার কেশে নিলো। ইশা হাতের কাছে রাখা পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে বলল, কত্তো বদলে গেছিস! কই আগে তো এমন ছিলি না। তূর্য গ্লাস থেকে এক চুমুক পানি খেয়ে গ্লাস টা ফিরিয়ে দিলো। সবকিছু বিস্বাদ ঠেকছে ওর কাছে। পৃথিবীটাকে এখন এতো অসহ্য ঠেকছে।
সাতাশ বছরের একটা ছেলে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। একটু পর পর হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছছে।
ইশা প্রথম বলল, জানিস আমি ভাবতাম আমাদের তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধি বেশী অনির। তারপর আমার। আর তুই হলি গিয়ে এক নম্বরের হাদারাম। কিন্তু যখন বুঝলাম অনির বুদ্ধি একদম ই নেই। সবচেয়ে বেশী বুদ্ধি তো তোর। কিভাবে দেশে ফিরে একদিনের মধ্যে সব টা বের করে ফেললি!
তূর্য সামলে নিয়ে বলল, তুই জানতি না?
“না। স্বপ্নেও কল্পনা করিনি যে এরকম কিছু ঘটতে পারে। তবে এরকম কিছুই যে ঘটেছে সেটা আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে যে কোনো সময় বুঝে যেতো। কিন্তু আমি বুঝেছি দেড় বছর পর।”
“ঠিক কী হয়েছে বলবি আমায়?”
“বিশ্বাস কর আমি সত্যিই জানিনা কী হয়েছে। ” না কোনো ঝগড়া, না কোনো মান অভিমান! কিচ্ছু না। হঠাৎই বলল, আমাকে আর খুঁজবি না।
“ওর ফ্যামিলি কোথায় আছে বলতে পারিস?”
“হ্যাঁ “। জয়দেবপুরের একটা বাসায় থাকে। ওরা কিছু বলবে না। ওরা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে যে অনিক বিদেশে চলে গেছে। কারও সাথে কথা বলতে চায় না। ”
“তুই কিভাবে জানলি”?
ইশা গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে বলে, হঠাৎ ই মনে হলো অনিক বেঁচে আছে তো? এই কথাটা তোর ক্ষেত্রে মনে হয় নাই। তারপর অনির পাঠানো খাতাটা হাতে নিয়ে বুঝেছি খাতাটা কিনেছিল অনেক কিছু লিখবে বলে। কিছু পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলা হয়েছে। তখন ই বুঝে নিয়েছি।
তূর্য হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। ইশা বলল, আমার মন বলছে আমাকে যেমন একটা খাতা পাঠিয়েছে, তোর জন্যও তেমন একটা খাতা রাখা আছে। সেই খাতাটা ওদের বাড়িতে আছে। সেটা খুঁজে বের করতে পারলেই সব জানা যাবে।
তূর্য এখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। ইশা এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও এবার কেঁদে ফেলল। বলল,
“জীবন কতো বিচিত্র না! আমি টের পেলাম অনিক নেই, আমার ওপারে যাওয়ার সময় এসে গেছে। কাকতালীয় ভাবে একই সময়ে তোর মনে পড়লো যে এখন ফেরা দরকার!
কী অদ্ভুত!
————- ————- ————— ——-
তূর্যকে অনিকের লেখা খাতাটা পেতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয় নি। কোনো উচ্চ্যবাচ্য না করেই রুপা খাতাটা হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, আর কোনোদিন আসিস না প্লিজ। তোরা আসলে বুকের ভিতর টায় যে কতো কষ্ট হয় সেটা কোনো দিন বুঝবি না।
তূর্য খাতাটা খুলল। খাতার প্রথম পাতায় বড় অক্ষরে তূর্য লিখে দুটো লাভ আঁকা।
প্রথম পাতায় হিজিবিজি আঁকা বুকি ছাড়া তেমন কিছু নেই। দ্বিতীয় পাতা থেকে লেখা শুরু।
তূর্য,
এই খাতা তুই যখন পাবি তখন হয়তো আমি থাকব না। আবার এমন ও হতে পারে যে এই খাতা টা তুই পেলি ই না কোনোদিন। কিন্তু মন বলছে তুই পাবি। আমার ২৬ বছরের জীবনে পুন্য করে যা পেয়েছি সেটা হলো তুই। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকিস তুই তোর প্রমিস ভুলবি না সেটা আমি জানি। আজ তোকে কিছু গল্প বলব। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প, একজন মূর্খ মানবের গল্প। এই গল্পগুলো ইশাকে বলতে ভালো লাগবে না। তাই শুধু তোকেই লিখছি।
আমার বাবা এক্সিডেন্টে স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তবু জীবন থেমে থাকে না। ডাল ভাত, মরিচ ভাত যা পাই খেয়ে আমরা দিনাতিপাত শুরু করি। কিন্তু একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই এই জীবনে। হ্যাঁ বড্ড ক্লান্ত। আমার উচ্চভিলাষী মা তখন সংসারের চিন্তায় পাগল হয়ে যায়। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা মেয়েকে সে চাকরিতে পাঠায়। আমি তখন স্কুলে পড়ি। এতোকিছু বুঝি না। শুধু বুঝি একবার ভাত খাওয়ার পর পেটে খিদে থাকলেও দ্বিতীয়বার চাওয়া যাবে না। এ যে অভাবের সংসার। বাবা বিছানায় শুয়ে শুয়ে আরও রোগ ব্যধি বাড়ান। চিকিৎসার জন্য দরকার হয় অনেক অনেক টাকা। সেসব টাকা কোথা থেকে আসবে সে চিন্তায় বিভোর থাকে আমার আপা। মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। দিনরাত ওভার টাইম করে সংসারের জন্য। এভাবেই চলছিল জীবন। হঠাৎ আমি খেয়াল করি আমার হাশিখুশি ভালো মানুষ আপা টা বদলে গেছে। অল্প সময়ের জন্য ঘরে এলেও রুক্ষ মেজাজের থাকে। মা সবসময় ভয়ে তটস্থ থাকে। আমি ভাবি হয়তো এই বয়সে আপার এতো খাটতে হয় বলেই আপা রেগে থাকে। কিন্তু আমি যা জানি তার কোনোকিছুই সত্যি না। আপা গার্মেন্টস এর চাকরি ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে। সোজা ভাবে বলতে গেলে সে একজন প্রস্টিটিউট। বিভিন্ন টাইপের লোকজনের মনোরঞ্জন করে টাকা আনে। আর সে টাকায় আমরা পঞ্চব্যাঞ্জন খাই। তার মধ্য একজন লোক আপার প্রেমে পড়েছে। প্রায় ই বাড়িতে আসে। কিন্তু আপা তখন বাধা পড়ে যায় অন্ধকার জগতে। সেখান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনার কোনো উপায় থাকে না। কিন্তু লোক টা নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই আপাকে ছাড়বে না। বাধ্য হয়ে আমরা কলোনি ছেড়ে দেই।
নতুন বাসায় যাওয়ার পর সব টা কেমন জলের মতন পরিস্কার হয়ে যায়। এতোকাল কলোনীতে থেকেছি তাই লোকজনের কটু কথার সম্মুখীন হই নি। নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ নিজেদের সংগ্রামে ব্যস্ত থাকে বলেই এরা মানুষের পিছে লাগে না। কিন্তু নতুন পরিবেশে এসে আপা ধরা পড়ে গেল দ্রুত। আমাদের জীবন টা তখন দূর্বিষহ হয়ে গেল। আমার সমস্ত পৃথিবী যেন ঝাপসা হতে লাগলো। তার মানে এতোদিন যা খেয়েছি, পরেছি সব টা’ই পাপের টাকা। আমি দিশেহারা, ধৈর্য্যহারা হয়ে যাই। সবচেয়ে বেশী দুঃখ পাই তখন যখন শুনি এই ব্যাপার গুলো ঘরের সবাই ই জানে, শুধু জানিনা আমি। অভির বেপরোয়া স্বভাব এসেছে শুধুমাত্র এই ভয়ংকর সত্যর জন্য। অথচ আমার কাছে সবাই কী সুন্দর অভিনয় করে যায় দিনের পর দিন।
এই ঘটনার আগে একদিন আমি বাড়িতে ইশার কথা জানাই। ইশাকে বিয়ে করার খুব তাড়াহুড়ো থাকে। থাকবে না কেন! আমি যে মনে মনে ভয় পাই যে ইশা বুঝি তোর হয়ে গেল। তুই কী জানিস তুই চলে যাবার পর ইশা পাগলের মতো হয়ে যায়। এতো বছরের পরিচিত ইশা কে আমি চিনতে পারি না। সব কেমন অচেনা লাগে। একসময় মুখ ফসকে ইশা বলে ফেলে, তোর জীবনে এতো ক্রাইসিস না থাকলে হয়তো তোকে আমি ভালো ই বাসতাম না। আমি কথাটায় কষ্ট পেলেও হাসিমুখে বলি, ওহ তাহলে ক্রাইসিস ছিলো বলেই তুই লুকিয়ে, না জানিয়ে টাকা দিতি। ইশা অবাক গলায় বলে, কই আমি তো তোকে কোনোদিন ও লুকিয়ে টাকা দেয় নি।
আমার তখন বুকের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ ভয়ে যায়। তারমানে তুই ছিলি মাসশেষে বিপদ আপদের বন্ধু। অথচ আমি ভেবেছি সবকিছু ইশা করছে আমাকে ভালোবেসে। লুকিয়ে লুকিয়ে সব করছে কারন যেন তুই জানতে না পারিস।
এবার বলি ইশা কেন আমার প্রেমে পড়লো। আমি আদ্যোপান্ত একজন দুঃখী মানুষ। ইশাও তেমন। আমার ফ্যামিলি আছে কিন্তু ইশার নেই। পার্থক্য শুধু এটুকুই। ইশা নিজের কষ্ট গুলো কে আমার সাথে রিলেট করতে পেরেছিল বলেই হয়তো প্রেমে পড়েছে। প্রেম ব্যাপার টা বড় বিচিত্র ব্যাপার। ঠিক কোন কারনে মানুষ প্রেমে পড়ে সেটা আমি জানিনা। তবে ওই একটা কথায় মনে হলো যতটুকু ভালোবাসা তোরা দেখিয়েছিস সেটা শুধু আমার অসহায়ত্বের জন্য।
তূর্য পৃষ্ঠা উল্টালো।
পরের পৃষ্ঠার শুরুতে লেখা, আমার এই মুহুর্তে খুব করে আমার পুরোনো বন্ধুদের দরকার। ইশা টা কেমন পর পর হয়ে গেছে। আগের মতো লাগে না। আর তুই ও অনেক দূরে। আমার বিশ্বাস ই হয়নি যে তুই এতো টা অভিমান করতে পারিস। অবশ্য তোর অভিমান করার কারণ ছিলো। কলেজে পড়ার সময় তুই বলছিলি যে তুই ইশাকে ভালোবেসে ফেলেছিস। কিন্তু বন্ধুত্বের শর্ত ভেঙে যাবে বলে কখনো বলিস নি। তুই কী জানিস তুই কতো ভালো! আর আমি তোকে মনে মনে খুব হিংসে করতাম। হিংসে না ঠিক ব্যপার টা ছিলো ঈর্ষা। তুই যখন বললি তুই ইশাকে ভালোবাসিস তখন আমার মনে হলো ইশ আমি যদি তূর্যর মতো হতাম তাহলে হয়তো চাইলেই পেয়ে যেতাম ইশাকে। এরপর যখন ইশা এসে নিজে ধরা দিলো তখন ভাবলাম, এই বুঝি তূর্য কেড়ে নিয়ে গেল!
তূর্য খাতাটা বন্ধ করে দিলো। এতো টা পড়ার মতো ধৈর্য আর নেই ওর। পড়তেও চাইছে না। সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করছে। কী দরকার ছিলো ইশাকে সেদিন ওর ভালোবাসার কথা বলার। তারচেয়ে ব
নিভৃতে দূরে সরে গেলে ওদের দুজনের কেউ ই হয়তো টের পেত না। অন্তত ওদের সংস্পর্শে তো থাকা যেত। কয়েকটা দিন তূর্য প্রায় পাগলের মতো ছিলো। ঠিকঠাক খায় নি, ঘুমোয় নি। ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড়বেলার সমস্ত স্মৃতি যেন চলচ্চিত্রের মতো চোখে ভাসছিলো। তূর্য ইশার সাথেও দেখা করতে যায় নি কয়েকটা দিন। একটু স্বাভাবিক হতে ছুটে গেল রুপার কাছে। আক্ষেপের সুরে বলল, তোমাকে আমি কোনোদিন ও ক্ষমা করতে পারব না আপা।
রুপা হেসে বলল, তুই যার জন্য আমাকে ক্ষমা করতে পারবি না বলছিস। সে আমার ভাই ছিলো। তোর চেয়ে কোনো অংশে কম না।
তূর্য বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। দু’হাতে মুখ ঢেকে মেঝেতে বসে শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, যা ঘটেছে তার জন্য আমি দায়ী।
রুপা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, আর কাঁদিস না। অনেক দিন ধরে সবার কান্না দেখতে দেখতে চোখ পঁচে গেছে। আর সহ্য হয় না।
ইশার কাছে একটা চিঠি লিখে পাঠালো রুপা। চিঠি নিয়ে গেল তূর্য। চিঠি হাতে দেবার সময় তূর্য বলল, তুই চিঠি পড়ে মনভার করবি না। আর নিজেকেও দোষ দিবি না। ইশা এক বাক্যে সব মেনে নিলো।
ইশা,
প্রত্যেকবার যখন তুই অনিকে খুঁজতে আসতিস তখন আমি নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নিতাম। মাঝে মাঝে মনে হতো তুই তো ফাইটার, তুই হয়তো আমার দুঃখ বুঝবি। কিন্তু তারপর আবার মনে হতো কী দরকার পুরোনো কষ্টকে ঘাটাঘাটি করার। অনিক মরে গিয়ে এক ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। তার আগে বাড়িতে এক ভয়াবহ ঝড় বয়ে গেছিলো। বাইরের ঝড়ের কাছে সে ঝড় যেন কিছুই না। আমার মা একজন অসাধারণ মহিলা। বাবা তারচেয়ে ও বেশী অসাধারণ। গার্মেন্টসে চাকরি করার সময় প্রায় ই একটা ছেলে পিছু নিতো, একদিন মন দেয়া নেয়াও হয়ে গেছিলো। আমার অসাধারণ বাবা, মা সেটা জানতে পেরে তা নিয়ে তুলকালাম করেছিল। বাবা একদিন ডেকে নিয়ে মাথা ছুইয়ে কসম দিলেন যে অনি চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত যেন বিয়ে না করি। আমি তখন অবাক হয়ে যাই। কারন জানতে চাইলে তারা বলে আমি বিয়ে করে ফেললে তাদের ছেলে দুটো আর মানুষ হবে না। অথচ এই দুজন কে মানুষ করতে গেলে আমার যে বিয়ের বয়স থাকবে না সেটা এরা কেউ বুঝলো না।
এরপর যা হবার তাই হলো। পরিবারের মানুষগুলো যেমন আমার অচেনা হয়ে উঠলো তেমন আমিও তাদের কাছে হয়ে উঠলাম রহস্যময়ী। ছোট ভাই যেদিন জানতে পারলো আমার কাজ সম্পর্কে সেদিন থেকে সে ঘৃনা করতে শুরু করলো। অনি যদি সেটা করতো তবুও তো বেঁচে থাকতো। অনির কাছে সবকিছু অসহ্য লেগেছে। মা, বাবা, ভাই কে স্বার্থপর আর আপাকে দুশ্চরিত্রা ভাবতে পারেনি বলেই হয়তো নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।
ইশা তোদের বন্ধুত্বটাই ভালো ছিলো রে। প্রেম আর বন্ধুত্ব দুটো আলাদা জিনিস। বন্ধু প্রেমিক হয়ে গেলে বন্ধুত্বটা মনে হয় আগের মতো থাকে না। সেজন্যই হয়তো অনির কাছে তুই দূর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিলি। সাদা খাতায় তোকে লেখার মতো কোনো শব্দ ই খুঁজে পেল না। তোর কষ্ট আর না ই বাড়ালাম। তবে একটা কথা বলি, মনে আফসোস রাখিস না। অনিকে তুই হয়তো ভালোবেসেছিস কিন্তু ওর মন পড়ার মতো ক্ষমতা তোর ছিলো না।
রাগ রাখিস না। এই মুখ তোকে আর দেখাতে ইচ্ছে করলো না। দোয়া করি যে ক’টা দিন আছিস আনন্দে কাটিয়ে যা। একটুও মন খারাপ করবি না। জীবন তো আর মানুষের নিয়মে চলে না। উপরে যে আছে সে ই তো সব কলকাঠি নাড়ে।
ভালোবাসা নিস।
রুপা
পরিশিষ্টঃ বিচিত্র পৃথিবীতে অনেক মিরাকল ঘটে। আমরা কতটুকুই বা জানি প্রকৃতির রহস্য সম্পর্কে। ক্যান্সারের সাথে কঠিন লড়াই করে ইশা ফিরে এসেছিল। তূর্য প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহুর্তে পাশে ছিলো। হসপিটালের মেঝেতে শুয়ে রাত কাটিয়েছে, কখনো বা কয়েকদিন না ঘুমিয়ে জেগে থেকেছে। চেতন ফেরার পর নিঃসঙ্গ ইশা হাত বাড়িয়ে প্রিয় বন্ধুর ভরসার হাত টা পেয়েছে। ফিসফিস গলায় এক কন্ঠস্বর কানে কানে বলে গেছে আমি আছি তো! ভয় কিসের!
এরপর?
এরপর অনেক অনেক দিন পেরিয়ে যায়। সেন্ট মার্টিনের এক রিসোর্টের বারান্দায় বসে সমুদ্রের গর্জন শুনতে ব্যস্ত এক কপোত-কপোতী। মাথার উপর কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ। একই সময়ে দুজন চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে, অনি তুই কী শুনছিস! আমরা কিন্তু তোকে ভুলে যাই নি!
সমাপ্ত