#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৯ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আচ্ছা আমি কোথায় যেতে পারি?মার কাছে?
তার কাছে গিয়ে পায়ে পড়ে যদি বলি,মা,মাগো,
নিতুল আমায় জোর জবরদস্তি করে বিয়ে করেছে কিন্তু এখন সে অন্য একটা মেয়ের সাথেও কী সব করে বেড়াচ্ছে তখন কী হবে?মা কী আমার দুঃখ বুঝবেন?নাকি পরিচয়হীন একটা অনাথ মেয়ে তার পুত্রবধূর স্হান দখল করতে এসেছে এই কথা ভেবে তিনি আমায় ঘাড় ধরে ঘর থেকে বের করে দিবেন?
আমি জানি না তিনি কী করবেন কিন্তু আমায় ওখানে যে করেই হোক যেতেই হবে। এমনিতেও তো আমার চতুর্দিক শূন্য।
এখান থেকে যেতে হলে আমাকে পালিয়েই যেতে হবে।নিতুল দেখে ফেললে সমস্যা হবে।সে কিছুতেই আমায় এখান থেকে যেতে দিবে না।সে আমায় যেতে দিবে তখন যখন তার উপভোগ শেষ হবে। নয়তো কখনোই যেতে দিবে না।মেরে টেরে ফেলবে। মৃত্যুর কথা শুনে আমার শরীর কেমন ঘাম দিতে লাগলো। মৃত্যুকে মানুষ এতো ভয় পায় কেন?
‘
দিনে আর পালানো সম্ভব হলো না। অনেকবার চেষ্টা করেছি। বাগানের চেয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার সাহস হলো না। একবার বাগান ছেড়ে বাড়ির গেট পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেখে ফেললো নিতুল। সে বারান্দা থেকে দৌড়ে এলো আমার কাছে। এসে আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেল উঠোনের দিকে।
আমি ভয়ে মরে যাচ্ছিলাম না জানি নিতুল আমায় কী শাস্তি দেয় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য।
কিন্তু না নিতুল দেখি কিছুই বুঝতে পারেনি।সে শুধু বললো,’গেটের কাছে কখনো যাবে না।’
‘কেন?কী হবে গেলে?’
‘গেটের বাইরে বস্তির খারাপ ছেলেরা থাকে। ওদের কাজই হলো সুন্দরী মেয়ে খোঁজা।সুন্দরী মেয়ে খুঁজে ফেলে ওরা টিজ করে।’
আমার বলতে ইচ্ছে করছিলো , তুমিও তো সুন্দরী মেয়ে পেলে জোর করে তার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়ো। মেয়েদের বোন বানিয়ে তাদের পেটে বাচ্চা পয়দা করো।
কিন্তু সাহসের অভাবে কিছুই বলতে পারলাম না আমি।মনে মনে ঠিক করলাম শুধু রাতে পালাবো।নিতুল ঘুমিয়ে গেলেই আমি পালিয়ে যাবো।
‘
সন্ধ্যা বেলায় হড়হড় করে বমি করতে শুরু করলো বিন্দু।নিতুল তখন আমার পাশে বসে গুণগুণ করে গান গাইছিলো।বমির আওয়াজ শুনে সে বসা থেকে উঠে দ্রুত যখন বের হতে যাবে আমি তখন নিতুলের হাতটায় ধরে ফেললাম।
নিতুল সঙ্গে সঙ্গে হেঁচকা টানে আমার হাত ছাড়িয়ে চলে গেল বিন্দুর কাছে। আমি তার পেছন পেছন গেলাম।সে আমাকে আসতে দেখে বললো,’পৃথু, তুমি বিন্দুর নাভীটায় চেপে ধরো। আমি লেবু পাতা নিয়ে আসছি।’
ওর কথাটা শুনে আমার মাথায় আগুন ধরে গেল।মেয়ের সাথে ফস্টি নষ্টি করেছে সে আর আমি গিয়ে তার নাভীতে ধরে বমি ফেরাবো। কিছুতেই না।
আমি পেছন থেকে বললাম,’নিতুল, তুমি কী ভেবেছো আমায় যা বলবে তাই আমি গাধার মতন শুনবো!’
নিতুল লেবু গাছটার দিকে যেতে যেতে বললো,’এখন এসব বলার সময় না পৃথু। বিন্দুর খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ তুমি ওর কাছে যাও!’
আমি হি হি করে হেসে উঠলাম তখন।
‘কষ্ট।অন্যকে কষ্ট দিলে নিজেকেও কষ্ট পেতে হবে। নোংরা মেয়ে।’
বলে থুউক করে একদলা থুথু ফেললাম মাটিতে আমি।
বিন্দু তখনও হড়হড় করে বমি করেই যাচ্ছে।ওর চোখ মুখ কেমন লাল লাল হয়ে উঠেছে।ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি দূরেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
নিতুল নিজেই লেবু পাতা নিয়ে দৌড়ে এলো বিন্দুর কাছে।সে এসে একহাতে বিন্দুর নাকের কাছে লেবু পাতা গুলো কঁচলে ধরলো।আর অন্য হাতে চেপে ধরলো বিন্দুর নাভীটায়।দৃশ্যটা দেখে আমার মেজাজ আরো চড়ে গেল। আমি ওখান থেকে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে বললাম,’বেশ রোমান্টিক দৃশ্য।আহা! এমন দৃশ্য সিনামায়ও দেখা যায় না।’
বিন্দুর খেয়াল আমার কথার দিকে নয়।সে কেমন ছটফট করছে তার বমির যন্ত্রণা নিয়ে।আর নিতুল তাকে কিভাবে সুস্থ করে তুলবে সেই খেয়ালে আছে।
আমার এইসব দৃশ্য দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না।তাই ঘরে চলে গেলাম।ঘরে গিয়ে বসে বসে চিন্তা করলাম,এখান থেকে পালানোর আগে বিন্দুকে দু চারটে কড়া কথা বলে যাবো। উচিৎ শিক্ষা দিয়ে যাবো ওকে।
‘
বিন্দুর বমিটা খানিক কমে এলে নিতুল গেল শহরের দিকে। কোন একটা ফার্মেসি থেকে ওর জন্য অষুধ আনবে। এই সুযোগে আমি বিন্দুর ঘরে গিয়ে দেখলাম ও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে জল। সেই জলে ভিজে উঠছে বালিশ।
আমি তখন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই বললাম,’ভাইয়ের জন্য কাঁদছো নাকি? আদরের ভাইকে একটু না দেখেও থাকতে পারো না!আরে বাবা,ভাই তার বউয়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাচ্ছে তখনও তোমার তাকে দেখা চায়। ভাইয়ের জন্য অত দরদ কেন গো তোমার?’
বিন্দু শুধু একবার মুখ তুলে তাকালো। তারপর আবার যেভাবে ছিল ঠিক সেভাবেই বালিশে মুখ ঢেকে নিলো।
এবার আমি বললাম,’খুব লজ্জা হচ্ছে না?তো ভাইয়ের সাথে যখন শুওয়া শুওয়ি করে পেট বড় করেছিলে তখন লজ্জা করেনি! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
বিন্দু এবার অতি কষ্টে তার মুখ তুললো উপরে। তারপর বললো,’পৃথু তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
আমি ওর মুখের উপর বললাম,’কিন্তু তোমার কথা শোনার আমার কোন ইচ্ছা নাই। নোংরা মেয়ে। আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছো তুমি।’
বিন্দু বললো,’প্লিজ শুনো। আমাকে তুমি ভুল বুঝছো!’
‘ভুল। পেটে বাচ্চা এসে গেছে ভুল।’
‘পৃথু,শুনো বোন আমার কথাটা।’
আমার এতো বেশি রাগ পেয়েছিল যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম।একটা নষ্ট মেয়ে যে কি না আমার পথের কাঁটা তার কী কথা আমি শুনবো?
আমি ঘর থেকে বরিয়েই যাচ্ছিলাম ঠিক তখন পেছন থেকে বিন্দু বলে উঠলো,’আমায় যে হিসেবে তুমি নষ্টা বলছো সে হিসেবে তুমিও নষ্টা।’
কথাটা শুনে আমার মেজাজ এতোটাই তিড়িক্ষি হলো যে নিজেকে সামলাতে না পেরে বিন্দুর কাছে দ্রুত গিয়ে ওর গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। তারপর ওর চুল টেনে ধরে খাট থেকে নিচে টেনে ফেলে দিতে দিতে বললাম,’আমায় তুই নষ্টা বলেছিস,তোর সাথে আমায় মিলিয়েছিস না?’
ঠিক তখন ঘরে এসে পৌঁছালো নিতুল।এতো দ্রুত সে ফিরে আসবে আমি ভাবিনি।নিতুল এসেই আমায় একটানে ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে ওর শক্ত হাতে একটা চড় বসিয়ে দিলো। তারপর বললো,’ড্রেন থেকে সোনার চেইন কুঁড়িয়ে নিলেও ওই চেইনে দুর্গন্ধ থাকে। পৃথু,আমি মস্ত ভুল করে ফেলেছি তোমায় বিয়ে করে।মা বাবাকে ভুলে গিয়ে শুধু তোমার মোহে অন্ধ হয়ে আমি ঘর ছেড়ে ভুল করেছি। আমার সব হারিয়েছি পৃথু। আমি আমার সব হারিয়েছি।’
আমি তখন রাগে কাঁপছি। কাঁপতে কাঁপতে নিতুলকে বললাম,’ওর জন্য আমায় অপমান করেছো তুমি? আমার চেয়ে তোমার কাছে ও বেশি না? তবে আমি চললাম।’
বলে আমি হাঁটতে লাগলাম গেটের দিকে।
কিন্তু মনে মনে ভেবেছিলাম গেটের বাইরে আমি কখনোই যেতে পারবো না।নিতুল আমায় এখান থেকে কিছুতেই যেতে দিবে না।
কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো নিতুল আমায় সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে পেছন থেকে আমায় একটা ডাক পর্যন্ত দিলো না।
‘
#চলবে