বৃষ্টি এসো সাঁঝের বেলা ৭ম পর্ব

0
1879

#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৭ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নিতুল আগলে নিলো নিজের বুকের উপর বিন্দুকে। তারপর শান্তনা দেবার গলায় বললো,’কী হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে বিন্দু?’
বিন্দু তার ভেজা গলায় বললো,’উহু!’
‘তাহলে?মাথাটা কেমন করছে না?’
‘না। মনটা কেমন করছে রে নিতুল। আমি না হঠাৎ করে মরে টরে যাবো দেখবি।’
‘চুপ। একদম চুপ।জীবনেও এসব বলবি না আর।’
নিতুল বিন্দুর মুখে হাত চেপে ধরলো। তারপর বললো,’আয়। তোকে শুইয়ে দিয়ে আসি।’
আমি শুধু তাকিয়ে দেখলাম।নিতুলের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটছে বিন্দু।আর নিতুল তার কাঁধের উপর হাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার সাথে।
হতে পারে ওরা পাতানো ভাইবোন। কিন্তু আমার কাছে এই দৃশ্যটা বড় ভয়ানক দেখালো। আমার ভেতরটা কেমন জমে উঠলো মুহুর্তে।ধোকপোক করে বাজতে লাগলো হৃৎপিণ্ড।
কেন জানি আমার মাথায় তখন বারবার একটা বিষয় এসে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমার কেবল বারবার মনে হচ্ছিলো সামনে আমার মস্ত বিপদ। এই বিপদ থেকে আমি কিছুতেই বাঁচতে পারবো না। কিছুতেই না।

নিতুল ফিরলো খানিক পর। তাকে কেমন চিন্তাশীল দেখাচ্ছিলো।সে আমার কাছে মৃদু হেসে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করছে।
আমি কোন কথা বললাম না। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে ও পাশ ফিরে শুয়ে থাকলাম।
নিতুল এসে আমার পাশে শুতে শুতে বলল,’ওর মাথার সমস‍্যাটা হঠাৎ বেড়ে গেছে। যা তা বকছে এখন। খুব কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছি।’
আমার কেন জানি জানতে ইচ্ছে করলো বিন্দুর বিষয়ে। কিন্তু আমি কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না।

নিতুল একটা সিগারেট ধরালো। সেই সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর মোহিত হয়ে গেল।কী বাজে এই সিগারেটের গন্ধ! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার খুব ইচ্ছে করছে ওকে বলি,নিতুল সিগারেটটা বাইরে গিয়ে ধরালে হতো না?
কিন্তু সাহস হলো না।
নিতুল বললো,’পৃথু,একটু ঘুমিয়ে নেই আমরা কেমন!’
বলে জ্বলন্ত সিগারেট হাতেই চোখ দুটো বুঁজে ফেললো নিতুল।আর তার সিগারেট ধরা হাতটা তাল হারিয়ে আমার গালের উপর পড়ে গিয়ে গালের খানিক অংশ পুড়ে গেল।
ব‍্যাথায় আমার কঁকিয়ে উঠার কথা ছিল। কিন্তু আমি এমন কিছুই করলাম না। চুপচাপ দু চোখের পাতা এক করলাম। তারপর দেখলাম ভয়ানক এক স্বপ্ন।
বিন্দুর সাথে শুয়ে আছে নিতুল। ওদের দুজনের গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই।বিন্দু নিতুলের চুলে তার আঙুল দিয়ে চিড়ুনি কেটে দিতে দিতে বলছে,’বলতো আমি বেশি সুন্দর না পৃথু?’
নিতুল বললো,’তুই।’
‘আচ্ছা তুই কাকে সত‍্যিকার ভালোবাসিস? আমায় না পৃথুকে?’
‘তোকে।’
আমায় যদি ভালো বাসিস তবে পৃথুকে বিয়ে করলি কেন?’
নিতুল খিলখিল করে হেসে উঠলো।
বিন্দু এবার বললো,’দাঁড়া তোর হাসি আমি ছুটাচ্ছি!’
বলে সে নিতুলের ঠোঁটে এমন কামড় বসালো!
নিতুল একেবারে কেঁদে উঠলো।
ঠিক ওই সময় আমার ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম ভাঙতেই শোনা গেল দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসা বুড়ো মোয়াজ্জিনের শীর্ণ গলার আহ্বান। তিনি বলছেন ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম। আমার তখন খুব ইচ্ছে হচ্ছে নিতুলকে নিয়ে পবিত্র হয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে।আর ওদিকে স্বপ্নের বিষয়টাও গেঁথে গেছে হৃদয়ে।
আমি মনে মনে বললাম,কিছু তো একটা আছে। কিন্তু সেই কিছুটা কী?
সে যাইহোক। আগে নামাজটা পড়ে নেই নিতুলকে নিয়ে।সুইচ টিপে লাইট জ্বালাতেই চমকে উঠলাম আমি। এই ছোট বেলা থেকেই তো ওদের বাড়িতে থাকি আমি। কিন্তু কোনদিন খেয়াল করে দেখা হয়নি তার বুকখানি।ফর্সা বুকের উপর ঘন কালো লোমগুলো এতো সুন্দর লাগে!
আমি ওর কাছে গেলাম আরো।ওর চোখ দুটো অত মায়াবী! এমন মায়াবী চোখের একটা মানুষের ভেতরে এতো রহস্য কেন? আচ্ছা নিতুল কী সত‍্যিই কোন ঠগ?সে কী আমায় ধোঁকা দিচ্ছে!
আমি নিতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,’নিতুল, এই নিতুল, আজান হয়েছে আসো আমরা পবিত্র হয়ে নামাজ পড়ি!’
নিতুল ঘুম জড়ানো গলায় বললো,’আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তুমি পড়ো।’
আরেকবার ডাকতে চেয়েও ডাকলাম না তাকে। শেষে সে যদি রেগে যায়!
কী আর করা। নামাজ নিয়ে তো আর জোর জবরদস্তি করা যাবে না। আমি একাই পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করে নিলাম। তারপর জায়নামাজের উপর বসে খোদার দরবারে দু হাত তুলে বললাম,’হে মাবুদ।মাবুদগো,বড় অপরাধী গো আমি মাবুদ।শত অপরাধের পরেও তুমি তো তোমার সৃষ্টিকে ক্ষমা করো।আমায় কী তবে ক্ষমা করা যায় না? সেই ছোট বেলা থেকেই তো জ্বলছি। মাবুদ, আমার ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।আমায় একটু ভালো ভাবে বাঁচতে দাও মাবুদ।আমি একটু ভালো করে বাঁচতে চাই!’
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়লো জল। সেই জল হাতের আঙুলের মাথায় তুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরে বিরবির করে আমি বললাম, ‘
চোখের জলের নাম রেখেছো কান্না
শোকটা শুধু একাই আমার,তার না। ‘

সকাল বেলা নিতুলকে ঘুমে রেখেই আমি বাগানের কাছে গিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।বাগানে কত রকমের যে ফুল ফুটে আছে! সেইসব ফুল দেখে মনটা আরো বিষাদ হয়ে গেল।
রাতে বাড়ি ভর্তি মানুষ ছিল। এখন বাড়িটা কেমন শূন্য খাঁ খাঁ।ওরা সবাই কী তবে চলে গেছে?
বিন্দু আছে। ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে নিতুল। আচ্ছা বিন্দুর সাথে নিতুলের অত কী?

বাগানে ভালো লাগছে না বলে ফের ঘরে ফিরে এলাম। ঘরে ফিরে দেখি নিতুল বিভোর হয়ে ঘুমোচ্ছে। ঘুমিয়ে থাকা নিতুলকে দেখলে এতো মায়া হয় কেন?কাল যে নিতুলের প্রতি এতো ক্ষোভ,রাগ ছিল সেই নিতুলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন‍্য একটা মেয়ে হাঁটলে আমার ভেতর পুড়তে থাকে কেন?
নাকি এর নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা কী না চাইলেও আপনা আপনি হয়ে যায়!
আমার খুব ইচ্ছে করছে নিতুলকে আমার জ্বলতে থাকা বুকটায় ধরে এক করে ফেলতে। ইচ্ছে করছে কান্নায় কাঁপতে থাকা ঠোঁট দুটোকে ওর থেমে থাকা ঠোঁট দুটোর ভেতর আবদ্ধ করে রাখতে।চোখ থেকে টপটপ করে ঝরতে থাকা জলে ওর বুকের রূমকূপ ভিজিয়ে চুপসে দিতে।
তারপর চিৎকার করে বলতে,’নিতুল, এখন তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নাই। তুমি আমায় ঠকিয়ো না নিতুল। তুমি আমায় ঠকালে মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমার।’
আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে বসলাম। তারপর ওর একটা হাত—-

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে