বৃষ্টি এসো সাঁঝের বেলা ৬ষ্ঠ পর্ব

0
1932

#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#অনন্য_শফিক



নিতুল দরজা খুলে সামনে দেখে তার পাতানো বোন মিটি মিটি করে হাসছে।নিতুল রাগে চোখ মুখ লাল লাল করে বললো,’বিন্দু কী হলো তোর? দরজায় নক করলি কেন?কী সমস্যা?’
বিন্দু বললো,’কোন সমস্যা নাই। আমার মন চাইলো তাই নক করলাম। তোকে কী আমি বলেছি দরজা খুলার জন্য? তুই খুললি কেন দরজা?’
‘ফাজলামু করছিস বিন্দু। এর ফল ভালো হবে না বলছি।’
বিন্দু হি হি করে হেসে উঠে বললো,ফাজলামু করার ফল কতটুকু খারাপ হবে?’
নিতুল কোন কথা বললো না।সে বিন্দুর মুখের উপর ঠাস করে দরজা আটকে দিলো।ও পাশ থেকে বিন্দু কী একটা যেন বললো তা আমি শুনতে পাইনি। কিন্তু ওর এমন আচরণ আমার মোটেও পছন্দ হয়নি।বাসর রাতে ভাইকে তার পাতানো বোন এসে ডিস্টার্ব করবে , কেমন কাঁটা কাঁটা কথা বলবে আর তা দেখে এবং শুনে আমি স্বাভাবিক ভাববো তা তো হতে পারে না। এখানে তো কিছু একটা আছেই। নয়তো তার অত অত বন্ধু- বান্ধবী থাকতে এই একটা মেয়ে যে কি না নিতুলের পাতানো বোন সে এসে এমন উদ্ভট আচরণ করবে কেন!
আমি মন খারাপ করে বিছানা থেকে উঠে বসে আছি।নিতুল এসে টেবিল থেকে জগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢাললো। তারপর সেই পানি খেয়ে আমার কাছে এসে বললো,’মুডটাই নষ্ট করে দিলো।যাঃ শালা!’
আমি বললাম,’ও আসছিলো কেন?’
‘বিন্দুর মাথায় প্রবলেম আছে। মাঝেমধ্যে সে এমন অদ্ভুত আচরণ করে।’
‘তাই বলে একজনের বাসর রাতে তাদের স্বামী স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তে এসে এমন করবে!’
‘আচ্ছা বাদ দেও তো এসব। পাগল ছাগল নিয়ে আলোচনা করতে ভালো লাগছে না আমার। এমনিতেই রাত শেষ!’
তারপর আবার ঘরটা অন্ধকার হলো।নিতুল আমায় কাছে টেনে নিতে নিতে বললো,’আই লাভ ইউ পৃথু । তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল।’
আমি ওর প্রশংসা কিংবা শারীরিক আহ্বানে তেমন একটা সাড়া দিতে পারলাম না ‌। নিজেকে কেন জানি হঠাৎ খেলনা মনে হচ্ছে আমার। কেন জানি মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে কেউ খেলছে। নিষ্ঠুর ভাবে খেলছে।
নিতুল আমার শরীর থেকে তার সুখ কুড়িয়ে নিচ্ছে তিল তিল করে। কিন্তু আমি মোটেও ওসবের দিকে মনোযোগ দিতে পারছি না। আমার কেবল মনে পড়ছে এই পৃথিবীতে আমি শুধুই একা একজন। আমি একজন অনাথ। আমি একজন মেয়ে। আমার কোন শক্তি নেই। আমি হাত পা বাঁধা অবস্থায় আছি। আমার ইচ্ছের কোন মূল্য নেই। এখন এই মুহূর্তে আমি যদি বলি,’নিতুল, আমার মন ভীষণ খারাপ। আমার এসব ভালো লাগছে না। প্লিজ একটু একা থাকতে দাও না আমায়!’
তবে কী আমায় নিতুল আমায় ছেড়ে দিবে? কিছুতেই না।সে তার শারীরিক সুখ অর্জন করেই আমায় মুক্তি দিবে।এর আগে নয়। আচ্ছা এর নামই কী তবে ভালোবাসা? ভালোবাসা কী শরীরের ভেতর বেড়ে উঠা গোপন কিছু স্হানের নাম শুধু?
আমার চোখ ফেটে কোল কোল করে জল নামছে।নিতুল সেই জল দেখছে না।সে আছে তার খেয়াল নিয়ে।তার সুখের নেশায়!
ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না আমি। কিছুতেই কাঁদতে পারছি না।
আচ্ছা আমার এমন হচ্ছে কেন? আজ সন্ধ্যা বেলায়ও তো নিতুলের সব অপরাধ ক্ষমা করে তাকে আমি বর হিসেবেই গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এখন?
নাকি এখানে কিছু একটা আছে? কিছু একটা না থাকলে আমার এমন লাগবে কেন?
নিতুলের ঠোঁটের স্পর্শ এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন কোন গোখরার ধ্বংসন।ওর নখের আঁচড় মনে হচ্ছে কোন কাঁটার আঘাত। ওর শরীরের ভার আমার কাছে অসহ‍্য লাগছে। মনে হচ্ছে আমার শরীরের হাড়গুলো এই এখন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে!
আমি ওর কাছ থেকে মুক্তি পেতে কেমন বেকুল হয়ে উঠেছি।
ঠিক তখন আবার দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।
ঠক ঠক ঠক।এটা নিশ্চয় বিন্দু। বিন্দু এসেছে আবার। কেন?কী চায় ও নিতুলের কাছে?
নিতুল কিন্তু এবার দরজার কড়া নাড়া শুনে উঠে গেল না সঙ্গে সঙ্গে।সে গেল খানিক পরে। যখন তার শরীর ঝিমিয়ে এলো। যখন আজকের মতো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল তার কাছে তখন।
তারপর আমার সাথে আর একটি কথাও না বলে সে ছুটে গেল দরজার পাশে। তারপর দরজার খিল খুলে দিয়ে বললো,’আবার এসেছিস।’
বিন্দু হি হি করে হেসে উঠলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম ওর হাসিটা ভীষণ ভয়ংকর।
তারপর বিন্দু তার আচল দিয়ে নিতুলের মুখটা মুছে দিতে দিতে বললো,’ইশ! কীভাবে ঘেমেছে।বৌটা আদর করতেও জানে না।’
নিতুল বললো,’এসব করছিস কেন তুই? মাথায় আবার ভূত চেপেছে?’
বিন্দু হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ। কাঁদতে কাঁদতে সে এলিয়ে পড়লো নিতুলের উপর।
নিতুল—-

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে