বৃষ্টি এসো সাঁঝের বেলা ৫ম পর্ব

0
1840

#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৫ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক



‘আমি বড় অবাক হয়ে বললাম,’এতো সুন্দর করে সাজানো ঘর!’
নিতুলের পাতানো বোন তখন মৃদু হেসে বললো,’এই ঘরটার চেয়েও আমার ভাইয়ের মন আরো বেশি সুন্দর।’
আমি তখন মনে মনে বললাম,’সে তো বেশ জানাই আছে আমার তার মন যে কত সুন্দর!জোর করে যে ছেলে বিয়ের আগে একটা মেয়ের শরীর ছুঁতে পারে,তার সম্মানে হানা দিতে পারে সে আর কত ভালো হবে?’
কিন্তু বাস্তব হলো এই যে আমি নিতুলকে আগে থেকেই একটু একটু পছন্দ করতাম। যেমন করে রাজমহলের একজন চাকরানীও যুবরাজকে তার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য মনে মনে কামনা করে। কিন্তু এটা সে খুব ভালো করেই জানে যে যুবরাজকে সে কোনদিন পাবে না।নিতুলকে নিয়ে আমার ভাবনাগুলোও তখন ঠিক তেমনই ছিল। কিন্তু অযাচিত যে সে এমন কিছু করে ফেলবে তা আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি।অন্তত সে আমায় একবার সহজ করে বলতে পারতো,পৃথু,আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তারপর দেখতো আমি তাকে সাড়া দেই কি না।
এবার ভাবলাম যা হবার তা হয়ে গেছে। কপালের লিখা গুলো মুছে ফেলা মানুষের পক্ষে দুঃস্বহ। আমি তাকে আমার বর হিসেবেই মেনে নিবো।সারা জীবন একসাথে দুজন কাটিয়ে দিবো।আজ থেকে আমরা একটা নতুন জীবন শুরু করবো।যে জীবনের কোন অতীত নেই।

নিতুলের পাতানো বোন আমায় বাসর ঘরে রেখে চলে গেল।সে বললো বসে বসে ওয়েট করো। তোমার বরকে পাঠাচ্ছি।আর শুনো, ঘুমিয়ে টুমিয়ে যেও না কিন্তু আবার।নিতুলের আসতে একটু দেরিও হতে পারে।’
আমি বললাম,’আচ্ছা।’
তারপর আমি বসে বসে নিতুলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।নিতুলের আসতে সত‍্যিই দেরি হচ্ছে। আমার মোটেও ভালো লাগছে না এভাবে একা বসে বসে অপেক্ষা করতে।

নিতুল এলো শেষ রাতের দিকে। তখন আমি বসে বসে মিন মিন করে কাঁদছিলাম আর নিজের কপালকে দোষছিলাম।সে এলো হাতে করে একটা সাদা গোলাপ নিয়ে। সেই গোলাপ আমার হাতে দিয়ে বললো,’এই যে তুমি ফুলের স্তুপের উপর বসলে এই অতগুলো ফুল কিংবা তোমার হাতে যে সাদা গোলাপটা আমি দিলাম সেটির কথায় বলো এইসবগুলো ফুলের থেকেও তুমি বেশি সুন্দর আর বেশি পবিত্র!’
ওর এমন উচ্চ প্রশংসা শোনার পর আমার কান্না মৃদু হাসিতে পরিণত হবে তা সে আগে থেকেই জানতো।তাই সে এমন করেই বললো।
নিতুল এবার আমার হাত ধরে পাশে বসলো আর তার হাতের স্পর্শে মুছে দিলো আমার চোখের জল।
তারপর বললো,’ভালোবাসি।’
আমি বললাম,’ছাই বাসো। ভালো বাসলে এভাবে সারা রাত ভর আমায় একা একা বসিয়ে রাখতে না। তোমার সাথে আমার কোন ভালোবাসা বাসি নাই।’
নিতুল তখন আমায় জাপটে ধরে আমার দু চোখের পাতায় চুমু খেলো। তারপর আমার পিঠে আলতো স্পর্শ করে বললো,’আল্লাহ জানেন আমি কতটা ভালোবাসি তোমায়। এই তোমার জন্য আমি আমার পরিবার ফেলে রেখে এসেছি।’
‘আমি কী বলেছিলাম এসব করতে? তুমি জোর করেই তো সবকিছু করেছো।’
‘ভালোবাসার জন্য করেছি। কারণ আমি জানতাম কোনদিন আমার বাবা মা সহজ ভাবে তোমায় মেনে নিতো না।তাই এই কঠিন পথে আমায় হাঁটতে হলো।’
‘কঠিন পথে হেঁটেই বা কী লাভ হলো?বাবা মা তো আর কোনদিন আমাদের মেনে নিবেন না!’
‘নিবে।একশো বার নিবে।’
‘নিতুল, আমার ভয় করে। যদি কোনদিন তুমি আমায় একা ছেড়ে চলে যাও! যদি কোনদিন অস্বীকার করো আমায়!’
নিতুল আমার মাথার উপর তার হাতটা রেখে বললো,’ভালোবাসার কসম। আমি কোনদিন তোমায় ভুলে যাবো না। এমনকি মৃত‍্যু এলেও না। আমরা দুজন শত বিপদের দিনেও একসাথে থাকবো।’
‘যদি বাবা মা বলে আমায় ছেড়ে দিতে?’
‘ধুর বোকা মেয়ে এসব কেউ বলবে নাকি?
আচ্ছা এখন বাদ দেও তো এসব কথা। ফুলশয্যার রাতটা এভাবে কেটে যেতে দেয়া যায় না। এই রাতে ফুলের উপর শু’তে হয়। একটু ফুলের উপর শুইতে দাও তো এখন।’
আমি ঠোঁট টিপে হেসে বললাম,’শু’তে না করেছে কে! শুয়ে পড়লেই তো হয়।’
নিতুল এবার খিলখিল করে হেসে উঠে বললো,’আগে ফুলটার তো শু’তে হবে নাকি!’
তারপর ঘরের সবগুলো রঙিন বাতি নিভে গেল একসাথে দপ করে।ঘরময় ছুটে এলো গাঢ় এবং গভীর আঁধার। বাইরে একসাথে ডেকে উঠলো একজোড়া ডাহুক।
নিতুল তখন আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট স্পর্শ করে বললো,’আমাদের বন্ধন চিরদিন টিকে থাকুক এভাবেই দু জোড়া ঠোঁটের মতন।’
মনে মনে আমি বিড়বিড় করে বললাম,’আমাদের দুজনের নিঃশ্বাস এভাবেই কাছাকাছি হোক সব সময়।’
এই সময় হঠাৎ করে বাইরে থেকে দরজায় ঠক ঠক করে আওয়াজ হলো।কেউ একজন জোরে জোরে নক করছে দরজায়।নিতুলের মেজাজ তখন তিড়িক্ষি হয়ে উঠলো।সে বিছানা থেকে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,’শুয়োরের বাচ্চাটা কে রে?’

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে