#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#৪র্থ_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
আমি স্বপ্নেও ভাবিনি নিতুল আমার জন্য এতো কিছু করে রেখেছে।যে ঘরটা পেছন থেকে মনে হয়েছিল একেবারে সাদামাটা সেই ঘর কিন্তু আসলে সাদামাটা নয়। সেই ঘর হলো ছবির চেয়েও সুন্দর।ঘরের সামনে উঠোনের এক পাশে লিচু বাগান।মাঝে সরু রাস্তা। সেই রাস্তায় ঘন দূর্বা ঘাস।আর অন্য পাশে ফুলের বাগান। উঠোনে পা রেখে আমি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য আর মুগ্ধ হলাম কারণ নিতুল আমার জন্য এতো কিছু করতে পারে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।একদল ছোট ছোট ছেলে মেয়ে হঠাৎ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তাদের প্রত্যেকের হাতে বরণ ঢালা । সেই ঢালা নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে গেছে রাস্তার দু পাশে।আর আমরা যখন হেঁটে রাস্তা অতিক্রম করছিলাম তখন তারা আমাদের উপর ফুল ছিটিয়ে দিতে লাগলো আর হৈ হুল্লোড় করতে লাগলো। আমি এরচেয়ে বেশি আশ্চর্য হলাম যখন ঘরের বারান্দায় গেলাম। কারণ ওখানে হঠাৎ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো একদল যুবক যুবতী। তাদের প্রত্যেকজন ছেলের গায়ে নীল রঙা পাঞ্জাবি পরা আর মেয়েদের গায়ে কলাপাতা রঙা শাড়ি।ছেলেরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো নিতুলকে।আর মেয়েরা আমাকে। তারপর আমাদের দুজনকে ওরা দুটো আলাদা ঘরে নিয়ে গেলো। আমি এইসব ঘটমান দৃশ্যকে স্বপ্নই ভাবছিলাম । কারণ আমার জন্য বাস্তবতা এতো সুন্দর আর সহজ হবে তা কখনো আগে ভাবিনি।
আমাকে যে ঘরটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই ঘরও সাজানো গোছানো। ওখানে নিয়ে গিয়ে ওরা আমায় মস্ত বড় খাটের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর সবাই চতুর্দিক থেকে আমায় ঘিরে বসলো।আর আস্তে আস্তে এক একজন করে তাদের সবার পরিচয় দিতে লাগলো। ওদের কাছ থেকে পরিচয় পেয়ে আমি বুঝতে পারলাম ওরা আর কেউ নয় সবাই নিতুলের বন্ধু।
ওরা আমায় নিয়ে বেশ মজা করছে।
একজন আমার গালে আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বললো,’এ মা,এ কী চেহারা গো? এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারলো নিতুল অথচ আমি তার পাত্তাই পাইনি!’
আরেকজন সঙ্গে সঙ্গে ওকে ধাক্কা দিয়ে বললো,’আরে তুই কী পাত্তা পাবি রে যেখানে আমিই পাইনি!’
তারপর সবাই হাসিতে মেতে উঠলো। আমার ভীষণ খারাপ লাগছিলো ওদের এসব হৈ হুল্লোড় দেখে।আর সারাদিন কোন কিছু খাইনি বলে খিদেয় পেটও চো চো করছিলো। চোখ দুটো কেমন ঘুমের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল।
তখন একজন আমার কাছে এসে আমার একটা হাত ধরে বললো,’নিতুল আমার ভাইয়ের মতো। আমরা একসাথে পড়াশুনা করেছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ছিল ভাই বোনেরই। তোমার দেখছি এখানে খুব আন ইজি লাগছে।আন ইজি লাগার কারণ হলো তুমি ওদের কাউকে চিনো না অথচ এরা সবাই তোমার সাথে মজা করছে। আসলে ওরা সবাই নিতুলের বন্ধু। তুমি নিজেও ওদের বন্ধু ভাবতে পারো। তখন আর তোমার খারাপ লাগবে না।’
আমি লজ্জা কাটিয়ে বললাম,’আপু, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাতে চাই!’
কথাটা শুনে ফেললো পাশের একটি মেয়ে। সেই মেয়ে অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠে বললো,’ভাবী তো দেখি পুরাই শিশুরে। বিয়ের দিনও বুঝি সন্ধ্যা বেলায় কনে ঘুমাতে চায়!’
সবাই আবার হাসিতে ফেটে পড়লো।
খানিক আগে এই বাড়িটি দেখে আমার যতটুকু ভালো লেগেছিলো এখন আমার ঠিক ততটুকুই খারাপ লাগতে লাগলো ।নিতুল কী ধরনের ছেলে আমি বুঝতেই পারছিলাম না। পালিয়ে বিয়ে করেছে এই বিয়ের জন্য আবার অত আয়োজনের কী প্রয়োজন?
আমার পাশে বসে হাত ধরে রাখা নিতুলের পাতানো বোন বললো,’শুনো।একটি রাতই তো।একটু কষ্ট করো প্লিজ।আমরা অনেক কষ্ট করে অতসব আয়োজন করেছি।রাতে অনেক ফানশান আছে।একটু পর তোমায় আর নিতুলকে গায়ে হলুদ মাখিয়ে গোসল করানো হবে। তারপর দুজনকেই বর -কনে সাজানো হবে। হুজুর ডেকে দোয়া পড়ানো হবে। তারপর দুজনকে বাসর ঘরে দেয়া হবে।’
অতকিছু শুনে আমার রাগ চড়ে বসেছিল মাথায়।কী অদ্ভুত কান্ড! এমন বিয়ের কথা কখনো শুনিনি আমি।নিতুল যেমন পাগল ওর বন্ধুগুলোও ঠিক তাই!
‘
রাত দশটা। আমাদের দুজনকেই উঠোনের আলাদা আলাদা জায়গায় নিয়ে গোসল দেয়া হলো । তারপর ঘরে এনে আমায় শাড়ি পরিয়ে দিলো ওরা।কী সুন্দর বাহারি শাড়ি। তারপর কানে দোল,হাতে বালা আর পায়ে নূপুর। চোখে কাজল মাখিয়ে দিলো একজন। একজন দিলো দু’ পায়ে আলতা মাখিয়ে। তারপর একজন আমার মুখের সামনে এনে ধরলো আয়না।আয়নার কাঁচে তাকিয়ে আমি বড় অবাক হয়ে গিয়েছি। কারণ নিজেকেই আমি চিনতে পারছি না এখন। চোখে কাজল আর বাহারি রঙা শাড়িতে আমায় এতো ভালো লাগবে তা আমি কোনদিন ভাবিওনি। খানিক আগে যে ঘুমাবার জন্য আমার অস্হিরতা ছিল তা ক্রমেই কেটে গেছে এখন। পেটে খিদে ছিল।নিতুলের পাতানো বোন প্লেট ভর্তি ফল এনে খেতে দিয়েছে আমায়। আমার ইচ্ছে করছিলো খিদেয় প্লেট শুদ্ধ খেয়ে ফেলতে। কিন্তু ওদের সামনে তো আর এমন কিছু করা যায় না।তাই আমি দু’ টুকরো আপেল মুখে দিয়ে এক গ্লাস জল খেলাম। তারপর হুজুর এলেন। তিনি দোয়া করে চলে গেলে ওরা আমায় নিয়ে গেল অন্য একটা ঘরে। সেই ঘর দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।এতো আলো ঝলমলে ঘর কোনদিন আমি দেখিনি। ঘরের ভেতরে গিয়ে আরো অবাক হলাম কারণ ওখানে কোন খাট পাতা নেই। উঁচু করে ফুলের স্তুপ দিয়ে বানানো বিছানা।
নিতুলের পাতানো বোন আমায় সেই স্তুপের উপর বসিয়ে দিয়ে বললো,’এটা তোমাদের বাসর ঘর।’
আমি বড়—–
#চলবে