#বৃষ্টি_এসো_সাঁঝের_বেলা
#১০ম_পর্ব
#অনন্য_শফিক
‘
‘
‘
গেট পেরিয়ে সরু গলি দিয়ে কয়েকমিনিট হাঁটতেই হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল।কী ভয়ংকর ব্যাপার! সারা শহর তলিয়ে গেল অথৈ অন্ধকারে। আমার হাতে কোন টর্চ নেই। অন্ধকারে হাঁটতে গিয়ে ভয় হচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার পেছন পেছন হাঁটছে।
আমি ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। কিন্তু অন্ধকারের জন্য কিছুই ঠাওর করা গেলো না।
এভাবে অন্ধকারে খানিক হাঁটার পর আমার পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু অন্ধকারের জন্য পেছন ফিরে কিছুই দেখা গেল না। এবার ভয়টা আমার আরো বাড়লো। হঠাৎ করে মনে হলো নিতুলের কথা।সে একবার বলেছিল,গেটের বাইরে বস্তির খারাপ ছেলেরা থাকে। যখন ভাবলাম তখনই ঘটনাটা ঘটলো।কেউ আমায় পেছন থেকে জাপটে ধরেছে।ওর হাতগুলো এতো শক্ত যে কিছুতেই ছাড়িতে নেয়া যাচ্ছে না। আমি গলা ছেড়ে চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু চিৎকার করতে পারলাম না।ওর একটা হাত চেপে ধরলো আমার মুখ।ওই হাতটায় কি বিশ্রী গন্ধ! আমার কেমন বমি পেয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ। তারপর অনুভব করলাম লোকটা আমায় কোথাও টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুতেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। হঠাৎ আমার মাথা কেমন চক্কর দিয়ে উঠলো। তারপর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লোকটার কাঁধের উপর ঢলে পড়লাম। আমার যখন জ্ঞান ফিরে এলো তখন দেখলাম একটা পরিত্যাক্ত ভবনের উপর আমি।আর আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে খিলখিল করে লাল লাল দাঁত বের করে হাসছে সদ্য তারুণ্যে পা দেয়া কয়েকটি ছেলে।
ওরা আমার দিকে এমন ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে কেন?
আমি নিচ দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার পাজামাটা হাঁটুর উপর খানিকটা ছিঁড়ে গেছে। সেই ছেঁড়া দিয়ে সাদা উড়ু দেখা যাচ্ছে। ওরা এদিকেই তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। পাজামার ছেঁড়া জায়গাটা আমার হাতের তালু দিয়ে ঢেকে আমি অতি কষ্টে ওদের কাছে মিনতি করে বললাম,’তোমরা আমার ছোট ভাইয়ের মতো। প্লিজ আমার সাথে খারাপ কিছু করো না।’
আমার কথা শুনে যেন তারা বেশ মজা পেলো।তাই ওরা আবার হাসিতে মেতে উঠলো। তারপর ওদের মধ্য থেকে সর্দার টাইপের যে ছেলেটা সে তার সদ্য জন্ম নেয়া গোঁফের উপর আঙুল বুলিয়ে বললো,’আপামণি,সবাই যদি বোন হইয়া যায় তাইলে বউ হইবো কেডা বলেন তো?’
ওই ছেলেগুলো আবার অসভ্য হাসিতে ফেটে পড়লো।আর সর্দার টাইপ ছেলেটা ওদের সকলের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,’সবাই শুইনা রাখো আমার কথাখানা, মালে কিন্তু আমার আগে কেউ হাত দিবা না।দিলে কিন্তু হাত কাইটা ফেলবো কুচ কইরা।’
ওরা সবাই একসাথে বলে উঠল,’তাই হইবো উস্তাদ। আপনের পরে আমরার হিসাব নিকাশ।’
তারপর আবার হাসি।কী ভয়ংকর হাসি। আমার প্রচন্ড কান্না পেয়ে গেল। আমি মনে মনে নিজেকেই এখন দোষারোপ করছি।আর ভাবছি,নিতুল তো সত্যিই বলেছিলো গেটের বাইরে গেলে বিপদ হবে।ওর কথা শুনিনি। এখন কেমন হলো!
ওদের মধ্য থেকে একটি ছেলে হঠাৎ বলে উঠল,’উস্তাদ,রাইত তো কাবার হইয়া যাইতাছে।নিশিরাইতের আগেই মামলা খালাস কইরা ফেলানো উচিৎ।’
সর্দার বললো,’করমু। সমস্যা নাই। আগে নেশা পানি খাইয়া লয়।’
বলে ওরা শপিং ব্যাগ থেকে নেশা জাতীয় কিছু আছে এর ভেতর এমন বোতল বের করলো। তারপর সবাই গোল হয়ে বসে বোতলের ছিপি খুলে মুখে ঢালতে লাগলো সেই তরল নেশা দ্রব্য।
এইসময় সর্দার আমায় দেখিয়ে বললো,’আপামণিরেও এক ঢোক মাল খাওয়াইয়া মাতাল কইরা দে।তহন মাতালের লগে মাতালের ঢলাঢলি হইবো।হা হা হা।’
সর্দার ছেলেটা বিশ্রী করে হাসছে।আর তার আদেশ পেয়ে একটা রোগামতো ছেলে বোতল হাতে এগিয়ে এলো আমার দিকে। তারপর আমার কাছে এসে যেই বোতলের মুখটা আমার মুখে ধরবে ঠিক তখন ওর তলপেটে জায়গামতো এক ঘুষি মেরে দিলাম।ঘুষি খেয়ে ছেলেটা বাবাগো বলে চিৎকার করে বসে গেল মেঝেতে।আর এই দৃশ্য দেখে সর্দার ছেলেটা হাত তালি দিয়ে বসা থেকে উঠে আমার চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বললো,’ফাইন।তোরে আমার পছন্দ হয়ছে আপামণি। আমার জেদি মাইয়া খুব পছন্দ।জেদি মাইয়াগোর লগে ওইসব করলে বিরাট মজা!’
বলে হাসতে লাগলো ছেলেটা। আমার ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকেও এক ঘুষি মেরে জীবনের হাসিটা একেবারে বন্ধ করে দেই। কিন্তু সমস্যা হলো ছেলেটা কাছে ঘেঁষছে না।
ওদের মধ্য থেকে হঠাৎ একটা ছেলে বললো,’উস্তাদ,হাত পাও বাইন্ধা দিলে কেমন হয়?’
সর্দার ছেলেটা ওই ছেলেটাকে বললো,’আয়,কাছে আয়।’
ছেলেটা কাছে আসলো। সর্দার ছেলেটা ওর গালে মস্ত এক থাপ্পর মেরে বললো,’উস্তাদি করবি না আগেই কইছিলাম।বান্ধন না বান্ধন এইটা আমার এখতিয়ার। এই ফাউল মুন্না কাউর পরামর্শ মোতাবেক কাম করে না।’
ওই ছেলেটা তখন এমন ভয় পেলো!সে সর্দার ছেলেটার পায়ে পড়ে বললো,’মাফ দেন উস্তাদ আমারে মাফ দেন!’
কিন্তু সর্দার ছেলেটি তার এই অনুনয় শুনলো না।সে অন্য দুজন ছেলেকে বললো,’ওরে ধইরা ন্যাংটা কর। তারপর উল্টা কইরা লম্বা খুঁটির আগায় বাইন্ধা রাখ।’
সঙ্গে সঙ্গে ওরা ছেলেটাকে ধরে তার শরীর থেকে জামা কাপড় খুলে নিলো। তারপর উল্টো করে বেঁধে দিলো লম্বা খুঁটির সাথে।
আমি অন্য দিকে চোখ নিলাম। ভয়ে এবং ঘেন্নায় আমার গা গুলিয়ে আসছে। এই সময় সর্দার ছেলেটা আবার দুজনকে আদেশ করলো,’ যেইখান থাইকা পাড়স লাল পিঁপড়া নিয়া আয়। পিঁপড়া আইনা এর গায়ে ছাইড়া দিবি।’
তারপর ভয়ংকর এক হাসিতে মেতে উঠলো মুন্না।
‘
আমি ভয় পাচ্ছি। ভীষণ ভীষণ ভয়। আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে এরচেয়ে নিতুলের অবহেলাই ভালো ছিল। কিন্তু এখন আমার কী হবে?
সর্দার ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।তার ঠোঁটে সিগারেট।সে সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে বললো,’উড়না খোল।’
আমি খুললাম না।
সে আবার বললো,’খোল শালী।’
আমি ঘৃণা ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,’জীবনেও খুলবো না।’
আমার এমন জবাব শুনে ছেলেটার মাথা ধরে গেল।সে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে এলো আমার কাছে।
তারপর—–
‘
#চলবে