#বৃষ্টির পড়ে
#নুসাইবা_ইসলাম_লেখিকা
#পর্বঃ২
দরজা নক না করে রুমে যাওয়ায় কিছু অনাকাংখিত ঘটনার সম্মুখিন হবো ভাবি নাই। আমাকে দেখে জেনিফার রেগে গেলো, কিন্তু আয়াত ভাইয়ের চোখের নির্লিপ্ত চাহনি আমি বুঝতে পারি নাই।
কারো রুমে ঢুকার আগে নক করতে হয় মেহুল এই মেনারস কি তোমার নাই? ( জেনিফার)
অস্পষ্ট বাংলা উচ্চারণ জেনিফারের তবুও মনে হচ্ছে আমাকে অপমান করার বিন্দুমাত্র সুযোগ সে হাত ছাড়া করতে চায় না।
আমি আমার ম্যানারস জানি আপু,কিন্ত এটা জানতাম না যে আপনি ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে দাড়াই থাকবেন। এই রকম কাজ তো আমাদের বাসায় কেউ করে না। (মেহুল)
সাট আপ ইউ ইডিয়েট, হাও ডেয়ার ইউ। (জেনিফার)
আমার সাহস আছে না কি নাই আমি আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপু আপনি এই বাড়ির মেহমান আর ভাইয়ার ফ্রেন্ড মাত্র, আর আমি এই বাড়ির নাতনি। তাই আমাকে অপমান করার অধিকার আপনার নাই। (মেহুল)
আমার কথায় জেনিফার এর রাগ আকাশ্চুম্বি ধবধবে সাদা রঙের মুখোশ্রি ক্রমশই রাগে লাল হচ্ছে।
আয়াত তুই এভাবে অপমান করাতে এখানে আমাকে এনেছিস, কিছু বলবি না? (জেনিফার)
মেহু কফি কি ঠান্ডা করে দিবি আমাকে ইডিয়েট কফি দিয়ে তোর কাজে যা। (আয়াত)
আয়াতের বিরক্তিমাখা কন্ঠে মেহুল চুপচাপ কফির কাপ আয়াতের হাতে দিয়ে চলে যায় নিজের কাজে।কিছু অস্পষ্ট কথা মেহুলের কানে আসলেও কারো কথা আড়ি পেতে শুনার অভ্যাস নাই তাই দাড়ালো না সে।
আমি অবাক হচ্ছি জেনি এটা তোর কেমন ব্যাবহার এতো রাগ কেন তোর ওর ওপর। আমি না বললে তুই ওর কথা জানতে পারতি না তবুও এতো রাগ কোথাথেকে আসে। আমি আসার পড় থেকে দেখে আসছি জেনি তোর ব্যাবহার এগেইন আমি এসব দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। নেক্সট টাইম আমাকে টাচ করার দুঃসাহস ভুলেও দেখাবি না। ( আয়াত)
এইভাবে কেনো বলছিস আয়াত? উই আর ফ্রেন্ডস রাইট দেন আই কেন হাগ ইউ? ( জেনিফার)
ইউ আর রাইট উই আর ফ্রেন্ডস বাট নট মোর দেন এনিথিং জেনি, এইটা বাংলাদেশ এখানের কালচার আলাদা মাইন্ড ইট। (আয়াত)
অপমানে মুখ কালো হয়ে গেলো জেনির সে আয়াতের রুম থেকে বেরিয়ে মিরার রুমে চলে গেলো।
মেহুল কাপড় কাচ্ছে আর কিছুক্ষন আগের ঘটনা ভাবছে।
পানির আওয়াজে আমি শুনতে পাই নাই যে আয়াত ভাইয়া কফি চাচ্ছে। (মেহুল)
হইছে হইছে আর নাটক করা লাগবে না, যা আমার ছেলেকে এক কাপ কফি করে দিয়া আয়। এইটা ভাবিস না কফি করতে গেলে সব কাজ মাফ। কফি বানানোর পড় দিয়া আসবি, দিয়ে এসে সব কাপড় কাচা শেষ করবি। (ফুপি)
ফুপি চলে গেলো আর ভাবছি আমার জিবন এতো অগোছালো কেনো কোন ছোট বেলায় কি করেছি আমার নিজের ই মনে নাই। অথচ সেই কাজের শাস্তি প্রতি নিয়ত পেয়ে যাচ্ছি। মিরা বাসায় নাই থাকলে হয়তো আমাকে সাপোর্ট করতো। এই বাসায় মিরা আর দাদু ছাড়া তো কেউ আমাকে ভালোবাসে না। কফি বানিয়ে আয়াতের রুমে সোজা ঢুকে পড়লো মেহুল কারন তার অনেক তারা ছিলো। রুমে ঢুকে দেখে জেনিফার আয়াত কে জরিয়ে ধরে রেখেছে। পড়ের ঘটনা তো জানাই
এসব ভাবনা বাদ দিয়ে মেহুল কাপড় গুলো নিয়ে ছাদে চলে গেলো। প্রায় বিকেল এই টাইমে এতো কাপড় কেউ কখোনো ধোয় না,কিন্তু মেহুল জানে তার ফুপি তাকে খাটানোর জন্য এতো কাপড় ভিজিয়েছে। ভিজা কাপড়ের ওজন বেশি হয় বালতি ভরে কাপড় নিয়ে মেহুলের উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তবুও উঠে সব কাপড় মেলে দিলো। এ বাড়িতে ওয়াসিনমেশিন আছে তবে তা ব্যাবহার হয় না। কাপড় মেলা শেষে মেহুলের এখন নিচে নামার ইচ্ছে হলো না। কাটা খুলে দিলো ভিজে চুল বেধে রাখলে তার মাথা ব্যাথা করে। চুল থেকে কাটা খোলার সাথে সাথেই চুল গুলো ছড়িয়ে পড়লো পিঠ জুরে। হাট অব্দি লম্বা ঘনো কালো চুল বাতাসের সাথে উড়ছে।
কি সুন্দর বাতাস চারোদিকে আর মেহুল সুদুর আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এসব থেকে কি তার মুক্তি আছে৷ ভাবনায় এতোই মশগুল মেহুল কেউ যে পিছ থেকে তাকে গভির ভাবে পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে তা সে টের ই পাচ্ছে না।
কি ব্যাপার এই অবেলায় ছাদে চুল ছেড়ে কাকে নিজের রুপের মায়ায় ফেলতে চাচ্ছিস মেহুল? ( আয়াত)
আয়াতের কন্ঠে ঘোর থেকে বেরিয়া আসে মেহুল, কিছুক্ষন লাগে আয়াতের তাচ্ছিল্য মাখা কথার মানে। শান্ত কন্ঠে যে আয়াত তাকে অপমান করছে বুঝতে পারলো সে।
আপনি আপনার কাজে মনোযোগ দেন ভাইয়া আমার কাজে হস্তক্ষেপ না করলে খুশি হবো। (মেহুল)
ভালো কথা কি ভালো লাগবে তোর বুঝিস ই তো কিভাবে ছেলেদের রুপ দেখিয়ে পাগল করতে হয়।(আয়াত)
আয়াতের কন্ঠে এবার রাগের আভাস স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে৷ কিন্তু সামান্য ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা অপরাধ যে তাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে আয়াত?
আমার ব্যাপার বুঝার আপনার প্রয়োজন নাই। আমার ভালো খারাপ বুঝার লোক আছে। ( মেহুল)
আয়াতের জবাবের অপেক্ষা না করে বালতি নিয়ে নিচে নেমে গেলো। বাড়ির কেউ যদি তাকে এইখানে আয়াতের সাথে দেখে তাহলে আবার তাকে মার*নয়তো বকা খাওয়া লাগবে।
মিরাকে মায়ের সাথ পাঠানোর কি কোনো প্রয়োজন ছিলো মায়া? (মেহুলের বাবা)
আমি কি করে জানবো বলো আমার কথার দাম কি তোমার মা দেবে। নিয়ে গেছে সাথে করে। ( মেহুলের মা)
মেয়েটাও হয়েছে বলদ আয়াত আসছে বাসায় কই আয়াতের সাথে সাথে থাকবে তা না দাদির আচল ধরে ঘুড়বে। আয়াত একা আসেনি সাথে করে এক বিদেশিনি নিয়া আসছে যে করেই হোক একে তারাতে হবে মায়া। ( মেহুলের বাবা)
বুঝতে পারছি আমি তুমি চিন্তা করো না, আসুক আমি দেখবো আর এই জেনিকে তারাতে হবে। কিন্তু মেহুলের সাথে বেশি অন্যায় করা হচ্ছে না মেয়েটাকে তো হড় আপা মা*র*তেই থাকে। ( মেহুলের মা)
খুনি মেয়ের প্রতি দরদ কি তোমার উতলে পড়ছে না কি মায়া, এতো ভালোবাসা থাকলে নিজে কেনো কাছে টেনে নিচ্ছো না। (মেহুলের বাবা)
মেহুলের বাবার তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথায় চুপ করে যায় সে, নিজের শুখের জন্য সে মেয়েটা কে বলি দিয়েছে। ভালো থাকার জন্য বর আর ননদের কথায় উঠা বসা ছাড়া আর কিছু করার নাই।
রাতের রান্না চড়িয়ে দেয় মেহুল,তখন রান্না ঘড়ে মায়া বেগম এর প্রবেশ। মা কে দেখে মেহুল কিছু বলে না কারণ হুহা ছাড়াত তার মা তার সাথে কথা বলে না অথচ মিরাকে সে কি আদর। মেহুল মিরা কে হিংসা করে না কিন্তু কষ্ট লাগে। মেহুলকে সবাই একটু ভালোবাসলে তো কোনো ক্ষতি হতো না।
আজকের রান্না আমি করবো তুই গিয়ে পড়তে বস কাল থেকে না তোর পড়িক্ষা? (মেহুলের মা)
মায়ের কথায় অবাক পানে তাকিয়ে থাকে মেহুল এই প্রথম তার মা তার সাথ কথা বলছে তাকে নিয়ে ভাবছেন। খুশিতে চোখের কোনে পানি জমাট বাধল তার।
হ্যাঁ কিন্তু ফুপি দেখলে তো আমাকে বকবে সমস্যা নাই আমি করতে পারবো আপনি জান। (মেহুল)
আমি একবার বলছি না তুই যা আপাকে আমি বলবো আজ আমার ইচ্ছে করছে আয়াত কে রান্না করে খাওয়াতে। (মেহুলের মা)
মেহুল মায়ের কথা মতো রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে চিলেকোঠার ঘড়ে চলে গেলো। ওয়াসরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসে মেহুল, রুমের মধ্যে ছোট একটা চৌকি, একটা পুড়ানো আলনা, সাইডে চেয়ার টেবিল আএ ছোট্ট একটা ফ্যান। প্রথম প্রথন একটু কষ্ট হলেও এখোন কোনো সমস্যা হয় না তার।
টেবিলে গিয়ে বই খুলে বসলো মেহুল।
…#চলবে..??