#বুকভরা ভালোবাসা
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা মনি
মেহুল বলে ওঠে,
‘আমিও ভালোবাসি তোমায় স্নিগ্ধ।’
মেহুল কথাটি বলার পরপরই তার সামনে চলে আসে স্নিগ্ধ। সেই মেহুলকে চিঠিটা দিয়েছিল। চিঠিতে স্নিগ্ধর নামও লেখা ছিল। মেহুল আর স্নিগ্ধর এই ভালোবাসার সাক্ষী হলো ভার্সিটির সবাই।
সবাই তাদের অভিনন্দন জানাতে লাগল। দূরে দাড়িয়ে এসব দেখছে এক মনভাঙা প্রেমিক। সেও তো বুকভরে ভালোবেসে ছিল মেহুলকে। তবে তার ভালোবাসা বোধহয় পূর্ণতা পেল না। মুগ্ধর চোখে অজান্তেই জল চলে আসে।
চোখের জল মুছে সামনে এগিয়ে আসে মুগ্ধ। স্নিগ্ধ,মেহুল দুজনেই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। মুগ্ধ এগিয়ে এসে মেহুলকে বলে,
‘তাহলে তুমি শেষপর্যন্ত নিজের কথা রাখলে। তোমারই জয় হলো। আমি খুব খুশি হলাম আজ। এতদিন তোমাদের ভালোবাসায় দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছিলাম। আজ নিজে থেকেই সরে গেলাম। এখন থেকে তোমরা নিশ্চিন্তে প্রেম করতে পারো। কেউ তোমাদের মধ্যে সমস্যা তৈরির চেষ্টা করলে আমি রুখে দাড়াব।’
স্নিগ্ধ মুগ্ধর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে,
‘পাগল ছেলে একটা। মেহুল আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার ভাইটা মোটেই খারাপ মানুষ নয়। আজ প্রমাণ পেলে তো।’
মেহুল কোন উত্তর দেয়না। শুধু মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়।
১৫.
‘তুই কেন এমন করলি মেহুল? তুই তো স্নিগ্ধকে না মুগ্ধকে ভালোবাসতি।’
ইতির কথাটা শুনে মেহুল বলতে শুরু করে,
‘হ্যা বাসতাম। আমি আগে মুগ্ধকেই ভালোবাসতাম। প্রথম যেদিন মুগ্ধকে দেখি সেদিনই ওর প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু আমাদের প্রথম দেখাটাই এমনভাবে হয়েছিল যে আমি কিছুতেই মুগ্ধকে কখনো নিজের মনের কথাটা বলতে পারিনি। তারপর নতুন ফন্দি করলাম। মুগ্ধ তার ভাই স্নিগ্ধর ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। তাই আমি প্ল্যান করলাম স্নিগ্ধর মাধ্যমে মুগ্ধকে জয় করতে হবে। তাই আমি সেদিন সবার সামনে স্নিগ্ধকে প্রপোজ করেছিলাম। আমি জানতাম মুগ্ধ এত সহজে সবকিছু মেনে নিতে পারবে না। আর আমার ভাবনাকে ঠিক প্রমাণ করে মুগ্ধ আমাদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়ালো। আমি ভেবেছিলাম এভাবে ধীরে ধীরে মুগ্ধ আমার প্রেমে পড়ে যাবে। আর স্নিগ্ধর সম্পর্কে যতটুকু জানতাম তিনি আমার মতো কোন মেয়ের প্রেমে পড়বে না। কিন্তু কিভাবে জানি আমার সব ধারণা ভুল প্রমাণ হলো। মুগ্ধ আমার শত্রুতে পরিণত হলো, স্নিগ্ধ আমায় ভালোবেসে ফেলল। আর এদিকে আমিও মুগ্ধর দিক থেকে কোন সাড়া না পেয়ে নিজের মন বদলে ফেললাম। স্নিগ্ধর সাথে ভালোবাসার নাটক করতে করতে আমি স্নিগ্ধকে সত্যি ভালোবাসতে শুরু করলাম।’
ইতিঃযদি এমন হয় যে মুগ্ধ তোকে ভালোবাসে তাহলে তুই কি করবি?
মেহুলঃমুগ্ধ আমায় ভালোবাসেনা। আমি এতদিনে সেটা বুঝে গেছি। বাই এনি চান্স যদি ভালোবেসেও ফেলে তাহলেও আর কিছু করার নেই। কারণ এখন আমি স্নিগ্ধকে ভালোবাসি।
ইতিঃজানি না তোর কি হলো। তবে আমি আশা করব স্নিগ্ধ ভাইয়ার সাথে তুই সুখী হবি।
মেহুল আজ ঠিক করেছে স্নিগ্ধর সাথে ঘুরতে যাবে। তাই ইতিকে বাই বলে চলে যায়। ইতি মেহুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
‘তুই অনেক বড় একটা ভুল করলি। মুগ্ধ সত্যি তোকে ভালোবেসে ফেলেছে। দুই ভাই এখন তোকেই ভালোবাসে। অথচ তুই ভালোবাসিস স্নিগ্ধকে। মুগ্ধর এখন কি হবে তুই ভেবেছিস একবারো?’
১৬.
মন খারাপ করে বসে আছে মুগ্ধ। আজ আর কোনকিছুই তার ভালো লাগছিল না। আশা মুগ্ধকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তার দিকে আসে।
আশাঃকি করছেন মুগ্ধ ভাইয়া?
মুগ্ধঃতুমি প্লিজ আমায় বিরক্ত করোনা। আজ আমার মন মেজাজ একদম ভালো নেই।
আশাঃজানি কেন ভালো নেই কারণ আপনি মেহুল আপির কাছে হেরে গেছেন। এবার আপনাকে আমার কাছেও হারতে হবে। আমি আপনার সাথে বাজি ধরেছিলাম না আপনাকে আমার প্রেমে পড়তেই হবে। এবার দেখবেন আপনি আমার কাছেও হেরে যাবে।
মুগ্ধঃআর একটা কথা বললে থাপ্প’র মে’রে তোমার গাল লাল করে দেব। এইটুকু মেয়ে তার আবার এত বাজে কথা। আমার চোখের সামনে থেকে এক্ষুনি চলে যাও।
আশা কাদতে কাদতে চলে যায়। মুগ্ধর নিজেরও খুব খারাপ লাগছিল আশার সাথে এরকম ব্যবহার করে। কিন্তু কি করবে মুগ্ধ? তার মন যে আজ একটুও ভালো নেই। মেহুলকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না। যতই ভোলার চেষ্টা করছে তার কথা আরো বেশি মনে পড়ছে।
স্নিগ্ধর সাথে লং ড্রাইভে বেরিয়েছে মেহুল। আজ তার মন খুব ভালো। তাই স্নিগ্ধকে বলে,
‘ভালো একটা গান শোনাও তো সিনিয়র।’
স্নিগ্ধ গাইতে শুরু করে,
❝তুম হি হো❞
মেহুল চোখ বন্ধ করে মুগ্ধর কথাই ভাবে। মুগ্ধ ছিল তার জীবনের প্রথম ভালো লাগা। হয়তো জীবনের প্রথম মায়া। সেই মায়া এখন কে’টে গেছে। মেহুল ভেবে নিয়েছে এখন থেকে স্নিগ্ধ ছাড়া আর কারো কথা ভাববে না সে।
গান গাওয়া শেষ করে স্নিগ্ধ বলে,
‘জানো মেহুল আমার আম্মু আমার খালাতো বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।’
মেহুলঃকি বলছ এসব।
স্নিগ্ধঃতুমি কোন চিন্তা করোনা। আমি আজই তোমাকে নিয়ে গিয়ে আমার আম্মুর সাথে দেখা করাবো। আমার অভিভাবক বলতে এখন শুধু আম্মুই আছেন। আব্বু অনেকদিন থেকে দেশের বাইরে আছেন। বিজনেসের কাজে বেশিরভাগ সময় তার দেশের বাইরের কা*টে।
মেহুলঃআজই দেখা করতে হবে?
কথাটা বলে ঢোক গিলতে থাকে মেহুল।
স্নিগ্ধঃহ্যা আজই। আমি আর দেরি করতে চাইছি না। তাছাড়া আজ খালামনিরও আসার কথা। তাই আমি ভেবে রেখেছি আজকের দিনটাই একদম ঠিক হবে।
মেহুল মানা করা স্বত্বেও স্নিগ্ধ জোর করে তাকে নিয়ে চলে আসে নিজের বাড়িতে।
স্নিগ্ধর মা ফরিদা তার বোন তানজিনের সাথে বসে স্নিগ্ধ আর তানজিনের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল।
স্নিগ্ধ মেহুলকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িতে আসে। মেহুলকে দেখে ফরিদা জিজ্ঞেস করে,
‘এই মেয়েটা কে রে স্নিগ্ধ?’
স্নিগ্ধ কাপা কাপা গলায় বলল,
‘ও মেহুল। আমরা একে অপরকে,,,’
স্নিগ্ধ কথাটা বলে শেষ করার আগেই তার খালা তানজিন বলে,
‘মেয়েটাকে তুই ভালোবাসিস তাইতো?’
‘হুম।’
ফরিদাঃএসব কি বলছিস তুই স্নিগ্ধ? তুই জানিস না তোর খালার মেয়ের সাথে আমি তোর বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। আর তুই কিনা একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বলছিস ভালোবাসি।
স্নিগ্ধঃআম্মু আসলে,,,,
তানজিনঃফরিদা তুই স্নিগ্ধকে কিছু বলিস না। ও একদম ঠিক কাজ করেছে। যদি স্নিগ্ধ না জানাত তাহলে ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পেতোনা। দুলাভাই তো সারাবছর বিদেশেই থাকেন। আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরছে। আমরা একটা কাজ করি আগামী সপ্তাহে দুলাভাই আসলে তাকে নিয়ে মেয়েটার বাড়িতে চলে যাই বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে চলে যাই।
ফরিদাঃকিন্তু,,,
তানজিনঃকোন কিন্তু নয়। আচ্ছা কি যেন নাম তোমার?
‘মেহুল’
তানজিনঃআচ্ছা এসো আমার পাশে বসো। তোমার সাথে কিছু কথা বলি।
মেহুল তানজিনের পাশে বসে। তারা অনেক বিষয়ে গল্প করতে থাকে। তানজিনের মেহুলকে খুব ভালো লাগে। কিন্তু ফরিদার মেহুলকে সেরকম পছন্দ হয়না।
তানজিন একসময় জিজ্ঞেস করে,
‘আচ্ছা তোমার বাবার নাম কি আর তিনি কি করেন?’
মেহুলঃআপনারা হয়তো আমার বাবাকে চিনবেন। বিখ্যাত গায়ক মনির চৌধুরী আমার বাবা হন।
ফরিদা খুশি হয়ে বলে,
‘কি বললে তুমি মনির ভাইয়ের মেয়ে!’
তানজিনঃএই বিয়ে হবে না। আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দেব না।
চলবে কি?