#বুকভরা ভালোবাসা
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা মনি
মেহুল আর ইতি কথা বলছিল। মুগ্ধ হঠাৎ চলে আসে আর সোজা এসে মেহুলকে জরিয়ে ধরে।
স্নিগ্ধও মুগ্ধর সাথে এসেছিল। তাদের দুজনকে এভাবে দেখে স্নিগ্ধর কিছুটা খারাপ লাগে। মেহুল মুগ্ধকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলে,
‘কি করছ এসব?’
মুগ্ধঃআমি তো এভাবেই মানুষের কাছে ক্ষমা চাই। ভাইয়া তো বলেছিল তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে। তাই এভাবে,,,,
স্নিগ্ধঃতুমি মুগ্ধর ব্যবহারে কিছু মনে করোনা মেহুল। ও এইরকম একটু ছেলেমানুষ টাইপ। শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছে বুদ্ধি এখনো ক্লাস টুয়ের বাচ্চার মতো।
মুগ্ধঃআমাকে এভাবে ইনসাল্ট করো না ভাইয়া। ওকে আমি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি এখন চলে যাচ্ছি। বাই মেহু।
মেহুলঃআমার নাম মেহু নয় মেহুল।
মুগ্ধঃআমি নাহয় তোমাকে ভালোবেসে মেহু বলব। কেন আমি কি তোমাকে ভালোবেসে ডাকতে পারিনা।
মুগ্ধর কথাবার্তা শুনে মেহুলের মাথা গরম হয়ে যায়। তবে সে সেটা প্রকাশ করে না। মুগ্ধকে ইগনোর করে মেহুল স্নিগ্ধকে বলে,
‘আজ রাতে আমরা বন্ধুরা মিলে একটা পার্টি করব। তোমাকে কিন্তু আসতে হবে।
মুগ্ধঃভাইয়াকে একা বলছো কেন আমাকেও বলো। ভাইয়া না গেলেও আমি যাবো। আমি আবার মেয়েদের কথা ফেলতে পারি না।
স্নিগ্ধঃআচ্ছা তাহলে আমরা দুজন চলে যাব।
স্নিগ্ধর আসার কথা শুনে খুশি হলেও মুগ্ধ আসায় মেহুলের কিছুটা দুশ্চিন্তা হয়। না জানি এই ছেলে আবার কি কাণ্ড করে।
৫.
‘তখন থেকে এভাবে পায়চারি করছিস কেন মেহুল?’
ইতির কথাটা শুনে মেহুল ভ্রু কুচকে বলে,
‘স্নিগ্ধ তো এখনো এলোনা। প্রায় সবাই এসে গেল কিন্তু ওরা এখনো এলোনা।
ইতিঃতুই এত চিন্তা করিস না। স্নিগ্ধ চলে আসবে।
মোহনা আচমকা পার্টিতে এসে উপস্থিত হয়। মোহনাকে এভাবে আসতে দেখে ইতি মেহুলের কানে ফিসফিস করে বলে,
‘এই লেজকা’টা মেয়েটা আবার বিনা দাওয়াতে কেন চলে এলো? একটুও কি লজ্জা নেই। নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে।
‘তুই সবসময় এভাবে বলিস কেন ইতি? মোহনা এসেছ তো কি হয়েছে।
ইতিঃতুই ঐ মেয়েটাকে একদম ভালোমানুষি দেখাবি না। ওর যা ব্যবহার ওকে দেখেই আমার মাথায় রাগ উঠে যায়।
মোহনা তাদের এভাবে ফিসফিস করতে দেখে তাদের কাছে এসে বলে,
‘আমাকে নিয়ে নিশ্চয়ই সমালোচনা করছ।
ইতি(মনে মনে)ঃসমালোচনা করার মতো কাজ করলে তো সমালোচনা করবোই।
মেহুলঃনা। আমরা কেন এমন করব। তুমি এসেছ খুব ভালো হয়েছ। এনজয় করো।
মোহনাঃআমি তোমাদের মতো বড়লোক নই। তোমরা বড়লোকের মেয়েরা এভাবেই টাকা উড়াও। তোমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তো কোন চিন্তা নেই। আমার আছে। আমি পড়তে গেলাম।
ইতিঃতাহলে এখানে এসেছ কেন? যাও গিয়ে পড়ো। আমরা তোমার মতো মেধাবী নাই হতে পারি তারমানে এই না আমরা পড়াশোনা করি না। আমরা পড়াশোনাও করি সাথে অন্য অনেক কাজও করি। পড়াশোনাকে নিজের জীবন ভেবে তোমার মতো ভাব নিয়ে থাকি না। তোমার এরকম ফালতু ব্যবহারের জন্যই না তোমার কোন বন্ধু নেই।
মেহুলঃএখানে পার্টি হচ্ছে। এভাবে ঝগড়া করে আনন্দ নষ্ট করিস না ইতি।
মোহনাঃতোমাকে আর ঢং করতে হবে না মেহুল তোমার নাটক দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত।
স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ চলে আসে। মোহনা সবাইকে দেখিয়ে মেকি কান্না করতে থাকে। মুগ্ধ মোহনাকে এভাবে কাদতে দেখে মেহুলকে বলে,
‘মেহু তোমরা এভাবে মেয়েটাকে কাদাচ্ছ কেন?’
মোহনাঃআমি গরীব জন্য কেউ আমায় সহ্য করতে পারে না।
স্নিগ্ধঃতুমি কিছু মনে করো না মোহনা। বন্ধুদের মধ্যে এরকম সামান্য সমস্যা হতেই পারে। তুমি পার্টিটা এনজয় করো।
মোহনাঃআমার মতো গরীবদের জন্য এসব পার্টি না।
কথাটা বলে মোহনা কান্না করতে করতে বাইরে আসে। বাইরে এসে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে,
‘আজ সবাই নিশ্চয়ই মেহুলকে খারাপ ভেবেছে। খুব ভালো হয়েছে। এখন সবাই আমার প্রতি সবাই সমব্যাথী হবে। এটাই তো আমি চাই যে সবাই মেহুলকে খারাপ ভাবুক আর আমাকে ভালো ভাবুক।
পার্টির মুড চেঞ্জ করার জন্য মেহুল বলে,
‘স্নিগ্ধ ভাইয়া যে কত ভালো গান বলে সেটা তো আমরা জানি। তো আজ এই পার্টিতেও তার গান শুনতে চাই।
স্নিগ্ধঃগান কি শোনাতে হবেই?
পার্টিতে উপস্থিত সবাই বলে ওঠে,
❝ইয়েস, ইয়েস। ❞
তখন স্নিগ্ধ গাইতে শুরু করে,
❝রাতান লাম্বিয়ান❞
স্নিগ্ধর সাথে মেহুলও গলা মেলায়। তাদের যুগলবন্দী সবার পছন্দ হয়। কিন্তু মুগ্ধর তাদের এভাবে দেখে কেন জানি ভালো লাগছিল না। গান শেষ হতেই মুগ্ধ মেহুলকে টেনে নিয়ে আসে।
৬.
‘কি হলো আমাকে এভাবে অসভ্যর মতো টেনে আনলে কেন?'(মেহুল)
মুগ্ধঃএটা কি নিরামিষ পার্টির আয়োজন করেছ? বিয়ার কোথায়?
মেহুলঃআমরা কেউ এসব বিয়ার টিয়ার খাইনা। তোমার যদি খেতে ইচ্ছে হয় তাহলে বার আছে বারে গিয়ে খাও। আর নাহলে কোল ড্রিংক খেয়ে পেট ভরাও।
মুগ্ধঃআমি তো কোল ড্রিংক খেয়ে নেব। আমি এমনিতেও বিয়ার খাইনা। ওসব তো ভাইয়া খায়।
মুগ্ধর কথাটা শুনে মেহুল তো খুবই অবাক হয়। সে বিশ্বাসই করতে পারে না যে স্নিগ্ধ ড্রিংক করে। তখন মুগ্ধ বলে,
‘ভাইয়া তো অনেক বছর বিদেশে ছিল। তখন থেকেই ড্রিংক করে। এত বেশি ড্রিংক করে যে কি আর বলব। আমার তো আমার হবু ভাবীর জন্য কষ্ট হয়। ঐ টিভিতে দেখায় না স্বামী মদ খেয়ে এসে বউয়ের উপর অত্যা*চার করে।
মেহুলঃএসব বাজে কথা বলা বন্ধ করো। তুমি কি ভেবেছ এসব কথা বলে আমাকে স্নিগ্ধর থেকে দূরে সরাতে পারবে?
মুগ্ধঃআমি তো তোমাকে সাবধান করলাম। এখন তুমি যদি জেনেশুনে নিজের কপালে আগু*ন লাগাতে চাও সেটা তোমার সমস্যা।
ইতিঃমেহুল ঐদিকে কি করছিস আয় এখানে। তোকে একটা জিনিস দেখাই।
মেহুলঃকি দেখাবি রে?
ইতিঃআয় এলেই দেখতে পাবি।
মেহুল ইতির কাছে গিয়ে দেখে ইতি একটা ডায়মন্ড রিং কিনেছে। মেহুল ইতিকে জিজ্ঞেস করে,
‘এই রিং তুই কোথায় পেলি?’
ইতিঃআরে তোর মনে নেই? তুই তো নিজেই স্নিগ্ধকে পার্টিতে প্রপোজ করবি জন্য এই রিং অর্ডার করেছিলি।
মেহুলঃহ্যা তাইতো। আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল। সব এরেঞ্জমেন্ট রেডি তো?
ইতিঃহুম। এখন তুই শুধু একটু সাহস দেখিয়ে প্রপোজটা কর।
মেহুলঃআমি কত সাহসী তুই জানিস বা?
ইতিঃহুম জানিতো এখন যা। গিয়ে প্রপোজ কর।
আচমকা পার্টির সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়। কম্পিউটার স্ক্রিনে স্নিগ্ধর অনেক ছবি দেখানো হতে থাকে। যেগুলো মেহুল লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছিল।
আর একটা সাউন্ড বক্স থেকে মেহুলের আওয়াজ ভেসে আসে,
❝সেদিন ছিল ৩ রা ফেব্রুয়ারী। ভালোবাসার মাসে আমি প্রথম তোমায় দেখি। তোমাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল উই আর মেড ফর ইচ আদার। তোমার গানের সুমধুর গলাও তোমাকে ভালোবাসার একটি কারণ। যতবার তোমার গান শুনি আমার নেশা ধরে যায়। তোমাকে পাওয়ার নেশা। তুমি কি আমার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা গ্রহণ করবে সিনিয়র? ইতি তোমার মেহুল❞
কথাটা বলা শেষ হতেই মেহুল হাতে একটি রিং নিয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনের পেছন থেকে বেরিয়ে এসে হাটু মুড়ে বসে স্নিগ্ধকে প্রপোজ করে।
❝আই লাইক ইউ স্নিগ্ধ। উইল ইউ লাভ মি?❞
স্নিগ্ধ কোন উত্তর দেওয়ার আগেই মুগ্ধ তাকে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। মেহুল সবার সামনে এভাবে অপমানিত হয়ে কেদে দেয়।
চলবে কি?