#বুকভরা ভালোবাসা
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা মনি
মুগ্ধ মেহুলের নিজ তাকিয়ে কি’লার স্মাইল দিয়ে বলে,
‘ভাইয়া আর তোমার মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েই আমি তোমার উপর প্রতিশোধ নেব।
মেহুল মুগ্ধকে কোন পাত্তা না দিয়ে স্নিগ্ধর দিকে এগিয়ে যায়। স্নিগ্ধর কাছে গিয়ে বলে,
‘সিনিয়র এই নাও তোমার জন্য একটা গিফট।
স্নিগ্ধ খুব বিনম্রভাবে বলে,
‘সরি। আমি এটা নিতে পারব না।
কথাটা শুনে মেহুলের মন খারাপ হয়ে যায়। স্নিগ্ধর মেহুলের জন্য একটু খারাপ লাগে। তাই হাত বাড়িয়ে গিফট টা নিতে চায়। কিন্তু তার আগেই মুগ্ধ গিফটটা নেয়। প্যাক খুলে দেখে একটা সুন্দর ঘড়ি।
মুগ্ধ মেহুলের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলে,
‘গিফটটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে ধন্যবাদ।
‘আমি এটা তোমার জন্য আনিনি স্নিগ্ধর জন্য এনেছি। ঘড়িটা আমাকে ফিরিয়ে দাও বলছি।
‘ভাইয়ার সব জিনিসে আমার অধিকার সবার আগে। তাইনা ভাইয়া?’
স্নিগ্ধ মাথা নাড়ায়। মেহুল রাগে কটমট করতে করতে মুগ্ধর দিকে তাকায়। মুগ্ধ মেহুলের কানে কানে বলে,
‘খেলা তো সবে শুরু হলো। আগে আগে দেখো আরো কি কি হয়।
মুগ্ধ স্নিগ্ধর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। মেহুল ভ্রু কুচকে ওদের যাওয়া দেখতে থাকে আর ভাবে,
‘এই মুগ্ধ নামক দেয়ালকে যে করেই হোক সরাতে হবে। নাহলে আমি কোনদিনও স্নিগ্ধর মনে নিজের জন্য যায়গা করতে পারব না।
৩.
স্নিগ্ধ গুনগুন করে গান গাইছিল,
❝তুঝমে খোয়া রাহু মে❞
মেহুল দূরে দাড়িয়ে চুপ করে গানটা শুনেছিল। এই গান শুনেই তো সে স্নিগ্ধর প্রেমে পড়েছিল। সে ভাবল একবার স্নিগ্ধর কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলবে।
মেহুল স্নিগ্ধর কাছে যাবে তখনই মুগ্ধ এসে তার সামনে দাড়িয়ে বলে,
‘হেই মেহু। তুমি এখানে? আমার সাথে দেখা করতে এসেছ?’
‘আমি তোমার সাথে দেখা করব কোন দুঃখে? কে হও তুমি আমার?’
‘আমি তো তোমার সব। তোমার জান,তোমার প্রাণ, তোমার মুগ্ধ।
মেহুলের ইচ্ছে করছিল মুগ্ধকে কাচা চি’বিয়ে খেতে। অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে মেহুল বলে,
‘আমার সাথে রেস্টুরেন্টে চলো। তোমকে ট্রিট দিতে চাই।
মুগ্ধ ভ্রু কুচকে বলে,
‘কিসের ট্রিট দিতে চাও?’
‘আরে বাবা চলোনা। গেলেই দেখতে পারবে।
মুগ্ধ কিছুক্ষণ মেহুলকে পর্যবেক্ষণ করে। তার মনে হচ্ছিল মেহুলের মনে কোন খারাপ মতলব তো আছেই। তাই সে ভাবে খুব সচেতনভাবে চলতে হবে।
মেহুল মুগ্ধকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে আসে। খাবার দেওয়ার পর মেহুল বলে,
‘যাও হাত ধুয়ে আসো।
‘হাত কেন ধুতে হবে? আমি তো চামচ দিয়েই খাবো।
‘হাতে অনেক জীবাণু তো থাকতে পারে। যাও ধুয়ে আসো।
মুগ্ধ কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে মেহুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বাকা হেসে সেখান থেকে চলে যায়। মুগ্ধ চলে যেতেই মেহুল তার ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে মুগ্ধর খাবারে মিশিয়ে দেয়। তারপর শয়’তানী স্মাইল দিয়ে বলে,
‘আমাদের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে তাইনা মুগ্ধ। এবার দেখি তুমি কি করো। নিজেকে সামলাবে নাকি আমাদের হিহিহি।
মুগ্ধ ততক্ষণে চলে আসে। মেহুলকে এভাবে একা একা হাসতে দেখে তার সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। মুগ্ধকে আসতে দেখেই মেহুল বলে,
‘তাড়াতাড়ি আসো। খাবার তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
‘আমি আসছি। তোমার খাবার আসেনি?’
‘আমার তো পেট ভরা আছে। আমি শুধু কফি খাবো।
‘এটা কিভাবে হয়? তুমি আমাকে খেতে ডেকেছ আর এখন নিজেই বলছো খাবে না। এসো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।
মেহুল কিছু বলার আগেই মুগ্ধ জোর করে তাকে লুডুলস খাইয়ে দেয়। মেহুল চাইছিল বমি করে ফেলে দিতে। মুগ্ধর যাতে সন্দেহ না হয় তাই মেহুল খেয়ে নেয়। ভাবে এটুকু খেলে আর কি এমন হবে।
মেহুলের কিছু না হতে দেখে মুগ্ধ ভাবে খাবার একদম ঠিক আছে। তাই সেও খেতে শুরু করে। মুগ্ধ পুরো লুডুলসটা খেয়ে শেষ করে। মেহুল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কারণ মুগ্ধ যা খেল তাতে তো সে ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল। এতক্ষণে তো মুগ্ধর পেট খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা।
মুগ্ধ মেহুলকে বাই বলে সেখান থেকে চলে যায়। মেহুলও দ্রুত বাইরে চলে আসে।
মেহুলকে বাইরে আসতে দেখে ইতু বলে,
‘কিরে দেয়ালটাকে আই মিন মুগ্ধকে কি ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়েছিলি?’
মেহুল সামান্য রাগ প্রকাশ করে বলে,
‘ধুর। কি ওষুধ দিলি। ও তো পুরোটা খেলো তাও কিছু হলোনা।
‘ও তোকে তো বলাই হয়নি। যে ওষুধটা তোকে দিয়েছি সেটা সাথে সাথে কাজ করবে না এক ঘন্টা পর কাজ করবে। আর কেউ যদি সামান্য একটুও খায় সেটাই তার অবস্থা খারাপ করার জন্য যথেষ্ট।
মেহুল মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘আগে কেন বললি না?’
‘কেন কি হয়েছে? তুই আবার খেয়ে নিসনি তো?’
‘হুম খেয়েছি।
‘কি??????’
৪.
‘তোর হলো নাকি আরো সময় লাগবে?’
ইতির কথা শুনে মেহুল বলে,
‘সব দোষ তোর। তুই আমাকে আগে কেন সবকিছু বললি না? এখন তোর জন্য আমায় হা’গতে হা’গতে ম’রতে হবে।
‘তুই কোন চিন্তা করিস না মেহু। আমি তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি চল। ডাক্তার দেখলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
ইতি মেহুলকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় স্নিগ্ধ বাইরে বসে আসে আর মুগ্ধ বারবার টয়লেটে যাওয়া আসা করছে। মেহুল এগিয়ে গিয়ে বলে,
‘আপনারা এখানে কেন?’
স্নিগ্ধঃমুগ্ধর জানিনা কি হলো। সকাল থেকে তো সুস্থই ছিল। দুপুর থেকে হঠাৎ ওর পেট খারাপ হয়ে গেল।
ইতিঃমেহুলেরও তো একই অবস্থা।
স্নিগ্ধঃস্ট্রেঞ্জ। দুজনই একসাথে অসুস্থ হয়ে গেল।
মুগ্ধ এবার বাইরে এসে মেহুলকে দেখে রাগে কটমট করতে করতে বলে,
‘তুমিই নিশ্চয়ই কিছু মিশিয়েছ আমার খাবারে। তোমার জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।
মেহুল কাদো কাদো গলায় নাটক করে বলে,
‘আমাকে সবাই এভাবেই ভুল বোঝে। আমি তো নিজেই ভুক্তভোগী। আমারও তো পেট খাবার। আর তুমিও আমাকেই দোষ দিচ্ছ।
স্নিগ্ধর মেহুলের উপর মায়া হয়। তাই মুগ্ধকে ধ’মক দিয়ে বলে,
‘কোন কিছু না জেনে কারো নামে এরকম কথা বলা উচিৎ না।
মুগ্ধঃকিন্তু ওর সাথে রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার পর থেকেই তো আমার এই অবস্থা।
মেহুলঃরেস্টুরেন্টের খাবারেরও তো দোষ থাকতে পারে।
স্নিগ্ধঃহ্যা তাইতো। মুগ্ধ তুমি মেহুলের কাছে ক্ষমা চাও।
মুগ্ধঃক্ষমা তাও আবার এই মেয়েটার কাছে। নো নেভার। মরে গেলেও না।
স্নিগ্ধ আর কিছু বলতে যাবে তখন মেহুল তাকে থামিয়ে বলে,
‘থাক। আমার জন্য তুমি নিজের ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করোনা। আর দোষটা তো আমারই। আমিই তো ওকে ঐ রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে গিয়েছিলাম।
মুগ্ধঃসব এই মেয়েটার নাটক। তুমি ওকে বিশ্বাস করো না ভাইয়া।
স্নিগ্ধঃচুপ আর একটাও বাজে কথা বলবি না। মেহুলের কাছ থেকে ভদ্রতা শিখে নে।
মুগ্ধঃভদ্রতা না এই মেয়ের কাছ থেকে ভালো অভিনয় শিখতে পারবো। আমাকে অভিনয় শিখিয়ে দিন শ্রীদেবী।
স্নিগ্ধঃএবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
একজন স্টাফ এসে বলে,
‘মুগ্ধ কে? ডক্টর ওনাকে ডাকছে।
স্নিগ্ধ আর মুগ্ধ ভেতরে যায়। তারা বের হয়ে আসার পর মেহুলও যায়।
মেহুল বাইরে আসার পর স্নিগ্ধ তাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ডক্টর কি বলল? তোমার বেশি প্রবলেম হয়নি তো?’
মেহুলঃডক্টর বলল আরেকটু বেশি খারাপ হলে আমাকে হসপিটালে এডমিট পর্যন্ত হতে হতো।
স্নিগ্ধঃদেখেছিস মুগ্ধ মেয়েটার কি খারাপ অবস্থা। আর তুই মেয়েটাকে কত খারাপ কথা বললি।
মুগ্ধ ভ্রু কুচকে বলে,
‘তাই নাকি? এত খারাপ অবস্থা তাহলে এত স্বাভাবিক লাগছে কেন তোমাকে মেহুল?’
মুগ্ধর কথাটা শুনে মেহুল দূর্বল হওয়ার অভিনয় করতে থাকে। তখন স্নিগ্ধ এসে তাকে ধরে বলে,
‘ঠিক আছো তুমি?’
মেহুল মৃদু হেসে বলে,
‘একদম।
মুগ্ধ এবার খুব রেগে যায়। মেহুল তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে মনে মনে বলে,
‘দেখো শেষপর্যন্ত তোমার ভাইয়ের কাছে এসেই গেলাম। তুমি দেয়াল হয়ে কোন লাভ করতে পারলে না।
মুগ্ধও মনে মনে বলে,
‘আমি কিছুতেই তোমাদের এক হতে দেবোনা।
মুগ্ধঃভাইয়া আম্মু ম্যাসেজ করেছিল। আমাদের তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে।
স্নিগ্ধঃআচ্ছা চল। মেহুল তুমি নিজের কেয়ার করো। প্রয়োজনে রেস্ট নাও আজকের দিনটা। আমি আসছি।
স্নিগ্ধ চলে যেতেই মেহুল লাফিয়ে ওঠে। তারপর ইতিকে গিয়ে বলে,
‘দেখলি তো শেষপর্যন্ত ছেলেটাকে পটিয়েই নিলাম।
আচমকা মোহনা ওখানে চলে আসে। এসেই সে বলে,
‘সবাই কি আমাকে চাকরানি ভেবেছে? ওনাদের মেয়ে অসুস্থ হবে আর আমি এসে সেবা করব।
মেহুলঃএভাবে কেন বলছ মোহনা? মা-বাবাকে তো আমি বলেছিলাম টেনশন না করতে। আমি তাদের একমাত্র মেয়ে তাই হয়তো আমার খোঁজ নেওয়ার জন্য তোমায় পাঠিয়েছে। সেবা করতে তো বলেনি। আমি নাহয় তাদের বলে দেব তোমাকে যেন আর কোনদিনও কোন কিছু করতে না বলে।
মোহনা বলেঃতোমরা তো আমাকে নিজের কাজের লোকই ভাবো। আমরা কিন্তু কাজের লোক নই। আমার মা বিপদে পড়েই তোমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।
মেহুলঃএসব তোমার ভুল ধারণা মোহনা। আমি তোমাকে নিজের বোনের মতোই মনে করি।
মোহনাঃযদি বোন মনে করতে তাহলে আমায় দিয়ে এভাবে কাজ করাতে না।
ইতিঃএবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে মোহনা। মেহুলকে তুমি কেন সহ্য করতে পারো না? ও তো কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।
মোহনাঃআমি সব বুঝি। নিজে ভালো সাজার জন্য চুপ থাকে। কিন্তু তোমাকে দিয়ে আমাকে অপদস্ত করায়।
কথাটা বলেই মোহনা মেকি কান্না করতে করতে চলে যায়। মেহুল ইতিকে বলে,
‘তুই এভাবে বলতে গেলি কেন? মেয়েটা কত খারাপ ভাবল।
‘খারাপ ভাবলে কিছু করার নেই। যে যেমন তার সাথে তেমন ব্যবহারই করা উচিৎ।
তাদের কথার মাঝে সেখানে মুগ্ধ হঠাৎ চলে আসে আর সোজা এসে মেহুলকে জরিয়ে ধরে।
চলবে কি?