#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-২৯+৩০
বাসায় ফিরে শানের পা থমকে গেলো। ফ্ল্যাটের খোলা দরজার সামনে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে রেখা। কিছু সময়ের জন্য শান যেনো থমকে গেলো। হুঁশ ফিরতেই দ্রুত এগিয়ে গেলো রেখার দিকে। গালে থাপ্পড় দিয়ে কয়েকবার রেখা রেখা বলে ডেকেও রেখার রেসপন্স পেলো না। রেখাকে সেখানে রেখে ভেতরে গেলো দৌড়ে। তন্নতন্ন করে খোঁজেও শায়িনীর কোনো চিহ্ন পেলো না। ড্রয়িংরমে তার খেলনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কেবল। শান এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে এলো রেখার কাছে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে গালে থাপ্পড় দিতে লাগলো। বেশ কিছুটা সময় ধীরে ধীরে চোখ খুললো রেখা।
শায়িনী কোথায় রেখা আর তুই এখানে এভাবে পড়ে আছিস কেনো ?
রেখার মাথা ঘুরছে তখনো। মেডিসিনের রেশ কাটেনি পুরোপুরি। রেখা মনে করার চেষ্টা করলো কী হয়েছিলো।
শান অস্থির গলায় রেগে বললো, কী হলো রেখা চুপ করে আছিস কেনো ?
রেখা নিজের মাথা চেপে ধরে বললো, আসলে ভাইয়া আমি মনে করেছি তুমি এসেছো। তাই শায়িনীকে কোলে নিয়ে দরজা খোলে দিয়ে দেখি একটা অচেনা লোক দাঁড়িয়ে আছে। পরিচয় জানতে চাইলে লোকটা তোমার আর ভাবির নাম বলে জিজ্ঞেস করলো এটা তোমাদের বাসা কিনা। আমি হ্যাঁ বলতেই মুখে কিছু স্প্রে করে দিলো তারপর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসে আমার। এরপর কী হয়েছে কিছু মনে নেই।
শান রেগে গেলো রেখার কথা শুনে, তুই কে এসেছে না দেখে দরজা খুলেছিস কেনো ?
রেখা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, আমি ভেবেছি তুমি এসেছো।
শান নিজের মাথার চুল খামচে ধরলো। কী করবে বুঝতে পারছে না সে। মেয়েটা যে তার আর মৌয়ের জান। মৌ পাগল হয়ে যাবে মেয়েকে হারালে। শান ভাবলো মৌকে এখনই জানাবে না। আগে পুলিশকে ইমফর্ম করতে হবে। পুলিশকে কল করার জন্য পকেট থেকে ফোন বের করতেই মৌয়ের কল এলো।
শান ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো মৌয়ের ভেজা গলা, আমার শায়িনী কোথায় শান ?
শান অবাক হলো মৌয়ের কথায়। মৌ কোনোভাবে জেনে গেছে কিনা সেটাই ভাবছে।
শান কিছু বলবে তার আগেই মৌ বললো, আমাকে মিথ্যা বলবেন না শান। আমার কাছে কল এসেছিলো অচেনা নাম্বার থেকে, সে বলছে শায়িনী তার কাছে আছে তাই সত্যিটা বলুন।
শান বুঝতে পারলো মৌকে মিথ্যা বলে লাভ নেই তাই সবটা খোলে বললো।
মৌ অস্থির গলায় বললো, আপনি পুলিশকে ফোন করবেন না। তাহলে আমার মেয়েটার ক্ষতি করে দিবে। আমি না আসা পর্যন্ত কাউকে কিছু বলবেন না।
শান ব্যস্ত গলায় বললো, তুমি কোথায় যাবে ?
মৌ অসহায় গলায় বললো, জীবনে করা কিছু ভুলের মাশুল দিতে।
অস্থির হয়ে উঠলো শান, মৌ তুমি কোথাও যাবে না আমি এখনই আসছি তোমার কাছে।
শানের কথা না শুনে মৌ কল কেটে দিলো। শান ব্যস্ত ভঙ্গিতে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।
৩৩.
একটা পুরনো বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামলো মৌ। এতক্ষণ চোখ বাঁধা অবস্থায় গাড়িতে বসে ছিলো মৌ তাই বুঝতে পারছে না জায়গাটা কোথায়। মেয়েকে পেতে হলে হসপিটালের সামনে থাকা গাড়িতে উঠে বসতে বলেছিলো ফোনে আর মৌ তাই করেছে। মেয়েটা যে তার জান।
গাড়িতে থাকা লোকটা কর্কশ গলায় বললো, ভেতরে চলে যান।
মৌয়ের নিজের জন্য ভয় হচ্ছে না। তার মনে হচ্ছে ভেতরে গেলে মেয়েকে পেয়ে যাবে তাই দেরি না করে ভেতরে চলে গেলো।
দরজার ওপারে পা রাখতেই কেউ বলে উঠলো, ওয়েলকাম মিসেস সুফিয়ান আহমেদ শান।
আওয়াজটা চিনতে এক সেকেন্ড সময় লাগলো না মৌয়ের, রায়হান তুই ?
যাক চিনতে পেরেছিস তাহলে। আমি তো ভাবলাম সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে আমাকে ভুলেই গেছিস বোধহয়।
কথা বলতে বলতে রায়হান দুতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। মৌ তখনো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার মেয়ে কোথায় রায়হান ?
বাহ্ মেয়েকে দেখছি খুব ভালোবাসিস। তোর ভালোবাসা ঠিক বুঝতে পারি না আমি। তুই নাকি পাগলের মতো ভালোবাসতি তাজকে। অথচ তাকে ভুলে ঠিক অন্যজনের সাথে সুখের সংসার করছিস। তাহলে মেয়ের জন্য এতো অস্থির হচ্ছিস কেনো বল তো ? আরেকটা মেয়ে দিয়ে এই মেয়ের অভাব পূরণ করে ফেলবি।
রায়হানের কথায় রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো মৌ, রায়হান ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দে।
সামনের একটা চেয়ারে আরাম করে বসলো রায়হান, আগে বল তো তাজকে ভুলে অন্যকারো সাথে কীভাবে সংসার করছিস ? না মানে আমি চেষ্টা করতাম তোকে ভুলে অন্যকারো সাথে জীবন সাজানোর।
একজনকে মনে রেখে অন্যকারো সাথে জীবন কাটানোর কষ্ট তুই বুঝতে পারবি না। একজনকে ভুলতে না পারার কষ্ট আর অন্যজনকে ভালোবাসতে না পারার কষ্ট প্রতিনিয়ত একটু একটু করে শেষ করে দেয় ভেতরটা।
গলা কাঁপছে মৌয়ের। মানুষকে উপর থেকে যতটা সুখী মনে হয় ভেতর থেকে সে কী ততটাই সুখী। এই উত্তরটা কারো কাছেই সহজ নয়। রায়হান মৌকে অনেক কিছু বলবে ভেবেছিলো কিন্তু বলতে পারছে না। তাজ যেদিন মৌয়ের বিয়ের কথা বলেছিল যন্ত্রণায় বুকটা জ্বলে পুড়ে গেছে রায়হানের কিন্তু তাজকে বুঝতে দিতে চায়নি। রায়হানও মৌকে সত্যি ভালোবেসেছিল হয়তো স্বার্থপরের মতো। তার ভালোবাসার ধরনই হয়তো ভিন্ন ছিলো।
কাউকে আসতে বললো রায়হান আর মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, শেষবারের মতো নিজের মেয়েকে দেখে নে।
মৌ ভীত গলায় বললো, মানে ?
রায়হান মুচকি হেসে বললো, তোকে পাইনি তবে আমার বেঁচে থাকার জন্যও তো কাউকে প্রয়োজন। আজ থেকে শায়িনী আমার মেয়ের পরিচয়ে বড় হবে। তোদের সবাইকে তার স্মৃতি থেকে মুছে দিবো আমি।
একটা মেয়ে শায়িনীকে কোলে নিয়ে সামনে এলো। মৌ নিজের মেয়ের দিকে এগিয়ে যেতে গেলে আরেকটা মেয়ে তাকে ধরে ফেললো। মৌ চিৎকার করে বলছে তাকে তার মেয়ের কাছে যেতে দিতে কিন্তু কেউ শুনছে না তার কথা। হঠাৎ ঘাড়ে সুচালো কিছু অনুভব করলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে লাগলো মৌ। এবার শায়িনীকে মৌয়ের কাছে দেওয়া হলো। মৌ আলতো করে বুকে জড়িয়ে নিলো মেয়েকে। তারপর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
চোখ খোলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করলো মৌ।
ধীরে ধীরে সব মনে পড়লে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের মেয়েকে খুঁজতে লাগলো, আমার মেয়ে কোথায় ?
মৌয়ের আওয়াজ শুনে শান দ্রুত এগিয়ে এলো। চোখমুখ লাল হয়ে গেছে শানের, চোখের নিচে কালি পড়েছে। দুদিন ধরে মৌয়ের জ্ঞান ছিলো না আর এদিকে মেয়ের কোনো খোঁজ নেই। পুলিশ কোনো খোঁজ পায়নি শায়িনীর। অজ্ঞাত কেউ মৌকে হসপিটালে পৌঁছে দিয়ে গেছে।
মৌ শানের দিকে তাকিয়ে অস্থির গলায় সবটা খোলে বললো শানকে তারপর বললো, আমাদের শায়িনী কোথায় শান ?
কী উত্তর দিবে শান ? তার কাছে যে এই প্রশ্নের উত্তর নেই। মৌয়ের সাথে একটা চিরকুট পেয়েছে শান।
“আপনার বউকে ফিরিয়ে দিলাম তবে মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিন।”
টপ করে এক ফোটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়লো শানের চোখ থেকে।
শানের চোখে পানি দেখে মৌ বললো, তারমানে রায়হান সত্যি নিয়ে গেছে আমার শায়িনীকে।
দু’জন যখন থম মেরে আছে তখনই কেবিনে ঢুকলো তাজ আর আহান। একই শহরে থেকেও দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেখা মৌয়ের সাথে তাজের। ইকবাল খান হসপিটাল থেকে রিলিজ হওয়ার পর আর কোনোদিন মুখোমুখি হয়নি দু’জন। তাজ তাকিয়ে দেখলো এক সন্তান হারানো বিধস্ত মাকে। কী বলে শান্তনা দিবে বুঝতে পারছে না। তাজ ভেবেছিলো রায়হান হয়তো নতুন করে তার জীবনে আবার কোনো ঝড় নিয়ে আসছে। কিন্তু সে ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই রায়হান মৌয়ের জীবন এলোমেলো করে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে৷ কোথায় গেছে কেউ জানে না। বাংলাদেশে নেই সেটা নিশ্চিত হয়েছে তাজ, কারণ গত পাঁচ বছর আগের তাজ আর এখনকার তাজের অনেক তফাৎ। আগের তাজ কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইতো না তাই সবসময় জীবনের সোজা পথে হেঁটেছে। তবে এই তাজ সোজা পথের সাথে বাঁকা পথটাও চিনে নিয়েছে। সেই বাঁকা পথের সাহায্যেই তাজ জেনেছে রায়হান দেশ ছেড়েছে সমুদ্র পথে। সেই খবর শানকে জানাতে এসে দেখলো মৌয়ের জ্ঞান ফিরেছে। মৌ কান্না করছে না কেমন থম মেরে বসে আছে। এতবছর পর তাজকে দেখেও তার কোনো রিয়াকশন হলো না। তাজ শানকে একটু অন্যদিকে ডেকে সবটা খোলে বললো রায়হান দেশ ছেড়ে চলে গেছে। শান পড়ে যেতে নিয়েও দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো। অসহায় চোখে তাকালো পুতুলের মতো বসে থাকা মৌয়ের দিকে।
৩৪.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো বেশ কয়েকটা দিন। মৌ একদম চুপ হয়ে গেছে। সেদিনের পর মুখে একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি সে আর না একটুও কান্না করেছে। শান মৌকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে চলেছে। একদিকে মেয়েকে হারিয়ে, অন্যদিকে মৌয়ের এমন অবস্থায় শান নিজেও ভেঙে পড়েছে। দুজনের বাবা সব জেনে চলে এসেছে তাদের কাছে। সবাই মিলে মৌকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। এদিকে পুলিশ আর রায়হানের কোনো খোঁজ পায়নি আর না তাজ পেয়েছে।
আহান এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে সবাইকে নিয়ে। রায়হানের জন্য কয়েকদিন পিছিয়ে গেছে লন্ডন ফিরতে। তবে আজ চলে যাচ্ছে কিন্তু তাজ আসেনি তাদের ছাড়তে। আসার আগে আহানের হাত ধরে শুধু বলেছে ধ্রুবকে সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখতে। আহান বুঝতে পারছে না তাজের এমন শান্ত আচরণের মানে।
আহান চিন্তা করছে তাজ কেনো ফিরে চাইলো না ধ্রুবকে। আহানের হঠাৎ তিতিরের কথা মনে পরে গেলো। তিতির চিঠিতে লিখে গিয়েছিলো তাজ যদি ধ্রুবকে ফিরে চায় তবে ধ্রুবর আঠারো বছর হলে সে ঠিক করবে তাজের কাছে ফিরে যাবে কিনা। হয়তো তাজকেও এমন কিছুই বলেছে ডাইরিতে। কিন্তু তিতির তো ভেবেছিলো তাজ বিয়ে করে নিজের জীবনে সুখী আছে তাই ধ্রুবকে ফিরিয়ে দিতে চায়নি। ভেবেছিলো ধ্রুবর থাকা না থাকায় তাজের খুব একটা অসুবিধা হবে না। সেসব তো ঠিক নয়, তাজ ভালো নেই সেটা আহান নিজের চোখের সামনে দেখেছে। আহান তাকালো ধ্রুবর দিকে, সে আহানের কোলে বসে বাইরেটা কৌতুহলী চোখে দেখছে। আসার সময় তাজের জন্য কান্নাও করছিলো, কয়েকদিনে তাজের প্রতি ধ্রুবর একটা মায়া তৈরি হয়েছে আহান বুঝতে পারছে। তাজকে ফেলে আসতেই চাইছিলো না, হয়তো এটাই রক্তের টান। তাজ ধ্রুবকে কোল থেকে নামিয়ে তিতিরের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে আর বের হয়নি।
আহান কিছু চিন্তা করে ব্যস্ত গলায় বললো, ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে খান ভিলায় চলুন।
আহানের কথায় সবাই খানিকটা অবাক হলো। আধঘন্টার মধ্যে তাদের ফ্লাইট আর আহান এখন ফিরে যাওয়ার কথা বলছে।
ন্যান্সি বললো, কী হলো মাই সান ?
আহান চিন্তিত গলায় বললো, আমার কিছু একটা গন্ডগোল লাগছে। এখনই খান ভিলায় না পৌঁছালে বিপদ হয়ে যাবে।
তিতিরের রুমে বসে আছে তাজ। একহাতে তিতিরের একটা ওড়না আর অন্যহাতে পি*স্ত*ল। তিতির হুট করে চলে যাওয়ায় তার সব জিনিস এই রুমেই থেকে গিয়েছিলো। আট মাস পরে তাজ দেশে ফিরে একরাতে তিতিরের রুমে গিয়েছিলো অজানা কারণে। রুমে ঢুকতেই ভ্যাপসা গন্ধ আর ধুলো নাকে এসে লাগে। নিজের হাতেই রুমটা পরিষ্কার করেছিলো আর তারপর থেকে নিজেই এই রুমটা পরিষ্কার করে। তিতির হয়তো তাড়াহুড়ায় চেঞ্জ করা জামা ভুলে বেডে রেখে গিয়েছিলো। তাজ সেটা বেডেই পড়ে থাকতে দেখে ধুলোয় মাখামাখি হয়ে। জিনিসগুলো আগের মতোই রেখেছে তাজ। মনটা বড্ড বেশি অস্থির হয়ে উঠলে এই রুমেই দরজা বন্ধ করে বসে থাকে আগে থেকেই ৷ তাই আজ ইরিনাও মাথা ঘামায়নি বিষয়টা নিয়ে। ইকবাল আর ইরিনা ধ্রুবকে রাখার কথা বলতে চেয়েছিল আহানকে কিন্তু তাজের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় আগানোর সাহস পায়নি।
তিতিরের ওড়না হাতে পেঁচিয়ে পি*স্ত*লে গুলি লোড করতে লাগলো তাজ আর মাত্র কয়েকটা মিনিট তারপর তো ধ্রুবকে নিয়ে আকাশে উড়ে যাবে ফ্লাইট আর হয়তো তাজের প্রাণও তখনই মুক্তি পাবে দেহ থেকে।
গাড়ি থামতেই ধ্রুবকে নিয়ে দৌড়ে ভেতরের দিকে যেতে লাগলো আহান।
লোড করা হয়ে গেলে পি*স্ত*লের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তাজ, আম কামিং মুসকান, আম কামিং। জীবনটা নিজের কাছেই বোঝা হয়ে গেছে আর বইতে পারছি না।
চোখ বন্ধ করে পি*স্ত*ল মাথা লাগাতেই কেউ দরজায় নক করলো তাজের কানে ভেসে এলো ধ্রুবর গলা, বাবা।
তাজ ভাবলো হয়তো সে ভুল শুনেছে।
পরক্ষণে আবারও ধ্রুবর গলা শোনা গেলো, বাবা দরজা খোলো না কেনো ?
তাজ উঠে ছুটে গিয়ে দরজা খোলে দিলো। দরজার সামনে ছোট্ট ধ্রুবকে দেখে চোখ ভিজে উঠলো। জাপ্টে কোলে তুলে নিয়ে সারা মুখে অজস্র চুমুতে ভড়িয়ে দিলো।
আপনার মতো মানুষের থেকে এমনটা আশা করিনি তাজ ভাইয়া।
আহানের মলিন আওয়াজ শুনে তার দিকে তাকালো। তাজের হাতে এখনো পি*স্ত*লটা রয়েছে। আহান সেটা তাজের হাত থেকে নিয়ে নিলো।
প্রথম থেকেই আপনার এমন স্বাভাবিক আচরণই আমার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিলো। গাড়িতে বসে পুরোটা বিষয় চিন্তা করলে হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল করেছি মনে হলো। আপনি যখন ধ্রুবকে কোল থেকে নামিয়ে তিতিরের রুমের দিকে যাচ্ছিলেন তখন আপনার কোমরে গুঁজে রাখা পি*স্ত*লের এক অংশ চোখে পড়ে আমার। তখন ব্যাপার গুরুত্ব না দেওয়ায় বুঝতে পারিনি। কিন্তু গাড়িতে বসে সবটা চিন্তা করতেই হিসাব মিলে গেলো। এটা আপনি কী করছিলেন ? ভাইয়া আত্মহত্যা মহাপাপ সেটা কী আপনি ভুলে গিয়েছিলেন ? ইহকালের সামান্য কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়ার পথ বেছে নিচ্ছিলেন ? সেই অসহনীয় কষ্ট কীভাবে সহ্য করতেন একবার ভেবেছিলেন। সেখান থেকে কোথায় পালাতেন ? একবার ধ্রুবর কথা মনে হয়নি আপনার ? ছেলেটা জন্মের পর থেকেই মাতৃহারা, এখন আপনি ওকে পুরোপুরি এতিম করে দিচ্ছিলেন।
তাজ এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো, এতকিছু মাথায় আসেনি আহান। শুধু মনে হয়েছে আমার ছেলেটা যদি সব সত্যি জেনে আমাকে ঘৃণা করে ? নিজের সন্তানের ঘৃণার দৃষ্টি মনে হতেই আমার কলিজা কেঁপে উঠে আহান। আমি অপেক্ষা করতাম আমার সন্তানের জন্য কিন্তু সব জেনে সে যদি আমায় ঘৃণা করে। সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না আহান।
মুচকি হাসলো আহান, এখনও চিনতে পারলেন না আমার তুতুলকে।
তাজ প্রশ্নবোধক চাহনি তাকালো, মানে ?
ভাইয়া আমি আপনাকে বলেছিলাম আমার বাবা কতটা জ*ঘ*ন্য অন্যায় করেছিলো তুতুলের পরিবারের সাথে। তবু তুতুল বাবার কোনো অন্যায়ের কথা আমাকে বলেনি। কারণ ও চায়নি আমি আমার বাবাকে ঘৃণা করি। মেয়েটা নিজের বাবাকে খুব বেশি ভালোবাসতো। ও কখনো চায়নি একজন সন্তানের সামনে তার বাবা ছোট হয়ে যাক। সেখানে তুতুল আপনাকে ভালোবাসে তাজ ভাইয়া। সে কীভাবে চাইবে আপনার সন্তান আপনাকে ঘৃণা করুক ? আর আপনাকে ঘৃণা করে আপনাদের সন্তানও নিশ্চয়ই খুব ভালো থাকবে না। কোনো মা চাইবে তার সন্তান খারাপ থাকুক ?
তাজ এতকিছু ভেবে দেখেনি। তার শুধু মনে হয়েছে ধ্রুব যদি জানে সে তার বাবার হিংস্রতার ফল, তবে তাজ তাকে মুখ দেখাতে পারবে না। এসব চিন্তায় তাজ নিজের হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। ঠিক ভুল বিচার করতে ভুলে গিয়েছিলো।
তাজ একহাতে জড়িয়ে নিলো আহানকে, এতবড় পাপ করা থেকে তুমি আজ বাঁচিয়েছো আমায়। তোমার এত ঋণ আমি কীভাবে শোধ করবো আহান, ভাই আমার ?
আহান মুচকি হেসে বললো, ভাইয়া বলে ডেকেছি আপনাকে। ভাইয়ের কাছে ভাইয়ের কীসের ঋণ ?
তাজ আহানকে ছেড়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো। কে বলবে রায়হান আর আহান একই মায়ের পেটের দুই ভাই। দু’জন সম্পূর্ণ দুই মেরুর মানুষ। রায়হান হয়েছে তার বাবার মতো দূষিত মস্তিষ্কের আর আহান হয়েছে তার মায়ের মতো।
আহান ধ্রুবর গালে হাত রেখে কাঁপা গলায় বললো, আপনার আমানত আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিলাম। বাবাইয়ের আঠারো বছর হলে সে তার মায়ের ডায়েরি পড়ে নাহয় ঠিক করবে আপনার কাছে থাকবে কিনা। এখন বরং আপনার কাছেই থাক।
আহান ভেজা চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের মনে হচ্ছে নিজের কলিজা ছিঁড়ে অন্যকারো হাতে তুলে দিয়েছে। ধ্রুবর কপালে চুমু খেয়ে কিছু বলতে চাইলো ধ্রুবকে কিন্তু গলা দিয়ে কথা বের হলো না।
তাজের উদ্দেশ্যে বললো, নিজের কলিজা ছিঁড়ে আপনার হাতে দিয়ে গেলাম।
আহান চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাজ বললো, ভাইয়া বলে ডেকেছো। ভাইয়ার কাছে থেকে যাওয়া যায় না ? মা তো পায়নি আমার ছেলেটা, দুই বাবার ভালোবাসা পেয়ে নাহয় বড় হোক।
আহান ঘুরে তাকালো না, আমি যেখানেই থাকি আমার সব ভালোবাসা থাকবে আমার বাবাইয়ের জন্য।
আহান দ্রুত বের হয়ে গেলো খান ভিলা থেকে। ন্যান্সি বারবার কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। তাজ আর আহানের কথার মাঝে ইরিনা, ন্যান্সি আর পাখি ছিল নিরব ভূমিকায়। সব শুনেছে তাই কিছু বলতে পারছে না ন্যান্সি। এদিকে পাখি ধ্রুবর জন্য কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। ধ্রুবকে ছাড়া যে পাখিরও এক মুহূর্ত চলে না। ন্যান্সি দুধের শিশুকে কোলেপিঠে করে এতবড় করেছে তারও বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা তো মানতেই হবে ধ্রুব তাদের কাছে ছিলো আমানত হিসাবে। আহান বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, টপটপ নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে চোখ থেকে। অনেকগুলো বছর পর আবার হারানোর যন্ত্রণায় পুড়ছে আহান। জীবনের হিসাবের খাতা খোলে বসেছে সে। প্রথমে তুতুলকে হারালো সেই ছোটবেলায়, তারপর বাবা-মা থেকে দূরে চলে যেতে হলো, মাকে হারিয়ে ফেললো চিরতরে, ভাই তো থেকেও ছিলো না কখনো। আহানের আজ নিজেকে বড্ড একা লাগছে। আহান লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে পাখিকে দেখলো। এই পুতুলটা ছাড়া জীবনের প্রাপ্তির খাতায় আর কিছু পেলো না আহান। চোখদুটো ঝাপসা হলো আবার।
৩৫.
ছেলেকে নিজের হাতে রেডি করিয়ে দিচ্ছে তাজ। নিজের মতো ছেলেকেও সাদা পাঞ্জাবি পড়িয়ে মাথায় টুপি দিয়ে দিলো। আজকাল তাজ প্রায় সবসময় সাদা পড়ে আর ছেলেকেও পড়ায়। ছেলের হাত ধরে চললো মসজিদের উদ্দেশ্যে। এখন প্রতিটা সকাল এভাবেই শুরু হয় বাবা ছেলের।
মসজিদ থেকে এসে আবারও নিজের সাথে ম্যাচিং করে সাদা আর কালো রঙের কম্বিনেশনে জগিং সুট পড়িয়েছে ছেলেকে আর পায়ে সাদা কেডস। দেখে মনে হচ্ছে জুনিয়র তাজওয়ার খান তাজ। রেডি করিয়ে ছেলের কপালে আর দুই গালে চুমু খেলো তাজ।
মাশাআল্লাহ আমার ছেলেকে একদম প্রিন্স লাগছে। বাবাকে আদর দিবে না বাবার প্রিন্স।
ধ্রুব দাঁত বের করে হেঁসে বললো, দেবে তো।
ধ্রুব নিজের ছোট ছোট হাতদুটো তাজের দুই গালে রেখে কপালে আর দুই গালে চুমু খেলো।
তাজ ছেলেকে কোলে তুলে বললো, আমার সোনা বাবাটা৷ চলো এবার আমরা জগিংয়ে যাবো।
ধ্রুব কোলেই লাফিয়ে উঠে বললো, ইয়ে চলো।
তাজ ধ্রুবকে নিয়ে বাড়ির সামনে গার্ডেনে এক্সারসাইজ করতে লাগলো। ছোট্ট ধ্রুব বাবার সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে। ধ্রুবকে পিঠে বসিয়ে পুশআপ করছে তাজ। এভাবেই ছেলের সাথে সব এক্সারসাইজ করছে তাজ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাদের দেখছে ইরিনা খান। বাড়িটা এখন আর নিরবতায় ছেয়ে থাকে না এখন। ধ্রুব সবসময় মাতিয়ে রাখে বাড়ি। প্রথমদিকে ধ্রুবকে সামলানো কষ্ট হয়েছিলো তাজের। আহান, পাখি আর ন্যান্সির জন্য অনেক কান্না করতো। তাজ এক মুহূর্তের জন্য ছেলেকে কাছ ছাড়া করেনি। দেখতে দেখতে মাস পার হয়ে গেছে। ধ্রুব তাজের সাথেই হাসিখুশি থাকে, তাজকে ছাড়া কিছু বুঝে না। তবে আহান, পাখি আর ন্যান্সিকে খোঁজে মাঝে মাঝে। তখন তাজ বলে নিয়ে যাবে তাদের কাছে।
ইরিনা চলে গেলো ব্রেকফাস্ট বানাতে। ধ্রুবর খাবার ইরিনাকে নিজের হাতে বানাতে হয়। ধ্রুবর খাবার নিয়ে অন্যকারো উপর ভরসা করে না তাজ।
এক্সারসাইজ করে রুমে চলে এলো বাবা-ছেলে। একসাথে শাওয়ার নিয়ে নিলো। তাজ অফিসের জন্য রেডি হয়ে ধ্রুবকেও রেডি করিয়ে দিচ্ছে। স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে ধ্রুবকে। ধ্রুবও স্কুলে যেতে খুব আগ্রহী তার নতুন বন্ধু হয়েছে এখানে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে তাজ নিজে খাচ্ছে আর ধ্রুবকেও খাইয়ে দিচ্ছে। ইকবাল খান খাবার রেখে ছেলে আর নাতির দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ ধ্রুব বললো, তুমি খাচ্ছো না কেনো দাদাভাই ?
চমকে উঠলো ইকবাল খান। ধ্রুব তাকে যতবার দাদাভাই বলে ডাকে ইকবাল অনুশোচনার আগুনে পুড়ে। তিতিরের কথা মনে পড়ে যায়, কতই না ভুল বুঝেছিল মেয়েটাকে। ইকবাল ভাবে মেয়ের কদর করতে জানে না বলেই হয়তো আল্লাহ তাকে একটা মেয়ে দেননি।
ইকবাল দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, খাচ্ছি তো দাদাভাই। তো আজ ধ্রুব সোনা কার সাথে স্কুলে যাবে দাদাভাই নাকি দাদুমণি ?
ধ্রুব মিষ্টি হেসে বললো, দাদুমণির সাথে যাবো।
তাজ ধ্রুবর মুখ মুছিয়ে দিয়ে বললো, তুমি সোফায় গিয়ে বসো, বাবা এখনই আসছে। তোমাদের ড্রপ করে দিয়ে আমি অফিসে যাবো।
ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে ছুটে সোফায় গিয়ে বসলে তাজ সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ছেলেটা এতো বাধ্য, ভাবলে অবাক হয় তাজ।
আগামীকাল ধ্রুবকে নিয়ে লন্ডন যাচ্ছি আমি।
ইকবাল আর ইরিনা তাকালো তাজের দিকে, হঠাৎ লন্ডন কেনো ?
আহান আর পাখিকে ফিরিয়ে আনতে। ওরা ধ্রুবকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছে পাঁচটা বছর। ধ্রুবকে ছেড়ে ওদের কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। আমি চাই ওরা আমাদের সাথেই থাকুক, ধ্রুবর সাথেই থাকুক।
আহান তো এখানে থাকতে জানি হয়নি সেদিন।
আহান খুব আত্মসম্মান সম্পূর্ণ মানুষ। সে আমাদের বাড়িতে এভাবে থাকতে রাজি হবে না মা।
ইকবাল চিন্তত গলায় বললো, তাহলে ?
আমাদের বাড়ির সামনের বাড়ি শান্তিনিড় বিক্রি হবে। সেটা কেনার জন্য আমি এডভান্স করে দিয়েছি। আহান আমাদের বাড়িতে না থাকুক সামনের বাড়িটা কিনে সেখানে থাকবে। আগামীকাল গিয়ে আহানকে সবটা বুঝিয়ে বলে সাথে করেই নিয়ে আসবো।
ইকবার খাবার নাড়াচাড়া করে বললো, যদি না আসে ?
বাবা আহান ধ্রুবকে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ধ্রুবকে কাছে পেতে সে অবশ্যই আসবে।
৩৬.
ধ্রুবর একটা টেডিবিয়ার বুকে জড়িয়ে শুইয়ে আছে পাখি। তার মাথার কাছে বসে আছে আহান। তিতির চলে যাওয়ার পর পাখির পাগলামি যেমন বেড়েছিল, ধ্রুবকে রেখে আসার পর আবার পাখি তেমন হয়ে গেছে। আহানের নিজেকে অসহায় লাগে আজকাল। সে কোন মুখে তাজের কাছে ধ্রুবকে ফেরত চাইবে। সে তো নিজের ইচ্ছেতে ধ্রুবকে ফিরিয়ে দিয়েছে। ধ্রুবকে ছাড়া আহানের নিজেরও তো অনেক কষ্ট হয় কিন্তু তার কষ্ট দেখার মতো কেউ কী আছে ? আহান একবার ভাবছে বাংলাদেশে ফিরে যাবে। তাজের বাড়িতে থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে কিন্তু আশেপাশে থেকে ধ্রুবকে তো দেখতে পারবে যখন ইচ্ছে তখন। এই বাসাতে ধ্রুবকে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে সবার। ন্যান্সিও কেমন চুপচাপ নিজের কাজ করে, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। আহান কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।
মাঝে একদিন কেটে গেলো, পাখি এখন কিছুটা সুস্থ। আহান সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজে ফ্রেশ হয়ে পাখিকেও ফ্রেশ করিয়ে দিলো। ওয়াশরুমে ধ্রুবর ছোট্ট ব্রাশটা দেখে বুকের ভেতরে জ্বালাপোড়া বাড়লো আহানের। পাখিকে বেডে বসিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলো আহান আর ভাবতে লাগলো ধ্রুবর কথা। কেমন আছে ছেলেটা ? ফোনেও কথা বলার সাহস হয় না আহানের। ছেলেটাকে দেখে বা তার আওয়াজ শুনে নিজেকে সামলাতে পারবে কিনা বুঝতে পারে না। তাই কল করতে গেলেও ফোনটা রেখে দেয় আর তাজ দিলেও ধরে না।
আহান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে পানির গ্লাস টেবিল থেকে নিতে যাবে তার আগেই কেউ আহানের চোখ চেপে ধরে। পাখি চোখ বন্ধ করে আছে তাই সেও দেখতে পায়নি। আহানের এই কোমল স্পর্শ খুব ভালো করে চেনা। আহান নিজের চোখের উপর রাখা ছোট ছোট হাতের উপর নিজের কাঁপা হাতটা রাখলো আলতো করে।
কাঁপা গলায় বললো, বাবাই ?
বাবাই শব্দটা কানে যেতেই পাখি ফট করে চোখ খুললো।
ধ্রুবকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো, ধ্রুব।
ধ্রুব আহানের চোখ ছেড়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে, খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো।
দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো তাজ আর ন্যান্সি। ন্যান্সির চোখ দু’টো ভেজা। সকালবেলা গোমড়া মুখে ব্রেকফাস্ট করছিলো সে। ধ্রুব নেই আর পাখি অসুস্থ বাসাটা তার কাছে মরা বাড়ি মনে হচ্ছিল। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলে বিরক্তি নিয়ে দরজা খোলে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি হেসে আর তার পেছনে তাজ। ন্যান্সি চিৎকার করতে গেলে তাজ আর ধ্রুব নিজেদের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে চুপ থাকতে ইশারা করে। এদিকে আহান অন্যমনস্ক থাকায় কলিংবেলের আওয়াজ খেয়ালই করেনি। আহান হাতের প্লেটটা রেখে ধ্রুবকে ছুঁ মেরে কোলে তুলে নিলো। বুকের সাথে মিশিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আর তার বন্ধ চোখের কোণে জমা হলো আনন্দঅশ্রু।
চলবে,,,